প্রথম দেখা
আমার সেদিনের কথা এখনো মনে আছে।মনে থাকবেই না কেন,এই দিনের কথা কি ভুলা যায়।হঠাৎ করেই সেদিন বৃষ্টিটা শুরু হয়ে গেছিল।দৌড়ে গিয়ে একটা কফিশপে ঢুকেছিলাম।কফিশপের দোরগোড়ায় ভিজে সিগারেট টা নিয়ে বাইরে মানুষের ছোটাছোটি দেখছিলাম।এমন সময় তোমাকে দ্রুত পায়ে এদিকেই আস্তে দেখলাম।তুমি দৌড়ে এসে আমার পাশেই দাড়ালে।তোমার ভিজে চুলগুলোর কেমন জানি জট পাকিয়ে গিয়েছিল আর তুমি তা খোলার চেষ্টা করছিলে।তোমার মুখের হাল্কা মেক-আপ বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছিল।কিন্তু আমার কাছে লাগছিল তুমি যেন রুপকথার কোন কাল্পনিক রূপসী ভুল করে বই থেকে উঠে এসেছ।অনেক চিন্তা করছিলাম কিভাবে তোমার সাথে কথা বলা যায়।কিভাবে এই কাল্পনিক রূপসীর কণ্ঠস্বর শুনতে পারি।
“আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?আগে কি কোন মেয়েমানুষ দেখেন নি?”
আমি এমনিতেই লাজুক প্রকৃতির ছিলাম।আমার এই ছাব্বি বছরের জিবনে প্রেমের দেখা দুরে থাকুক মেয়েদের সাথে স্বস্তি নিয়ে কথাই বলতে পারি নি।কেমন জানি অস্বস্তি লাগে।তোমাকের দেখার পরেই মনে হচ্ছিল সব অস্বস্তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে হলেও তোমার সাথে আমার কথা বলতেই হবে।কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বর শুনে সব কেমন জানি গুলিয়ে গিয়েছিল।
“কি হল কথা বলছেন না কেন?”
কি বলব কি বলব?আমার মাথা কেমন জানি করছিল,আমার মনে হচ্ছিল আমার হৃদকম্পন বুঝি তুমি শুন্তে পাচ্ছিলে।এত জোড়ে চলছিল যেন আমার বুক ছিড়ে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে।আচ্ছা এটাই কি ভালবাসার পূর্বাভাস ছিল নাকি?
আমার সম্বিত ফিরেছিল তোমার মিষ্টি হাসি শুনে।
“ভয় পেয়েন না।আমি আপনাকে কামড় দিব না।তা ভিজে সিগেরেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?বাড়িতে গিয়ে রোদে শুকিয়ে আবার খাবেন বলে!”
তুমি এইকথা বলেই আবার হাসতস শুরু করলে।আচ্ছা তুমি এত সুন্দর করে হাসতে কিভাবে?সব মেয়েরাই কি এত সুন্দর করে হাসে!নাহ সিগেরেট্টা ফেলে দিতে হয়েছিল।তোমার হাসি যে থামছিলই না।
“আরে কি হল ফেলে দিলেন কেন?আমার কথায় কি রাগ করলেন?নাকি আজকে আর রোদ উঠবেনা দেখে ফেলে দিয়েছেন?”
আবার সেই হাসি।তুমি হাসতেও পারতে বটে।
“নাহ,আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম যে হাতে একটা সিগেরেট আছে”
“তাই নাকি?তা কি ভাবছিলেন এত মন দিয়ে?নাকি আমাকে দেখে সব ভুলে গিয়েছেন?”
তুমি আসলেই অনেক দুষ্ট ছিলে।মেয়েমানুষ এত দুষ্ট হতে পারে!
““হুম না,আসলে তা না।বৃষ্টি আমার খুব একটা প্রিয় না।তাই সুযোগ পেলেই এর অপকারিতা খুজে বের করার চেষ্টা করি।আপনাকে দেখে ভাবছিলাম এই বৃষ্টিপাত আপনাকে কি কি অসুবিধায় ফেলতে পারে?”
আমার মনে আছে আমি মনে মনে নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলাম।মনে হচ্ছিল চরম একটা উত্তর দিয়েছি।
“ও তাই নাকি?আপনি তো তাহলে অদ্ভুত একজন মানুষ! বৃষ্টি পছন্দ করে না এমন কেউ কি আছে নাকি?”
“পছন্দ করি না,তা কিন্তু নয়।বলেছি খুব একটা প্রিয় নয়।আর খুজলে অনেককেই পাবেন যে বৃষ্টি পছন্দ করে না”
“হুম মনে হচ্ছে আপনার কথা শুনে বৃষ্টি রাগ করেছে।বৃষ্টি কমতে শুরু করেছে।”
কিন্তু আমি প্রাণপনে চাচ্ছিলাম যেন বৃষ্টি না কমে,চাচ্ছিলাম না এই কফিশপ ছেড়ে যেতে।চাচ্ছিলাম না তোমার সান্নিধ্য ছেড়ে যেতে।
“কি জানি!আমার কথায় বৃষ্টি যদি থেমে যায় তাহলে তো ভালই”
প্লিজ আরেকটু বৃষ্টি পড়।অন্তত আরও ঘন্টাখানেক বৃষ্টি হোক।নাহ,সেদিন আমার ইচ্ছা পূরণ হয় নি।বৃষ্টি প্রায় থেমে গিয়েছিল।
“তাই তো মনে হচ্ছে।আমি তানিশা।**** ব্যাংকে কাজ করছি।আপনি?”
“অ,আমি হাসান।বেকার কর্পোরেশনে কয়েক বছর হল কাজ করছি।”
“আচ্ছা আসি তাহলে।আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগল।আর কোন মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন,অনেকে অনেক কিছু ভাবতে পারে”
আচ্ছা তুমি কি হাসি ছাড়া কথা বলতে পারতে না!তুমি হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছিলে আর আমি তোমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম,আর ভাবছিলাম দৌড়ে তোমার কাছে গিয়ে পুনরায় দেখা করার কথা বলব কিনা!কিন্তু কোথায় তুমি?তোমাকে যে মানুষের মাঝে হারিয়ে ফেলেছিলাম।তুমি চোখের আড়াল হতেই মনে হল আমার কোন মূল্যবান সম্পদ যেন হাতছাড়া হয়ে গেল।সম্পদ!তাছাড়া আর কি বলতে পারি বল?তোমাকে যে আমার ছাড়া আর কারো সাথে চিন্তাই করতে পারছিলাম না।হঠাৎ করে মনে হল আচ্ছা মেয়েটা কি বিবাহিত?নাহ কোনো বিবাহিত মেয়ে পরপুরুষের সাথে অপ্রয়োজনে এত কথা বলবে না।আর তাছাড়া আমি তোমার হাতে কোনো আংটি ও দেখি নি।তুমি ভাবতেও পারবে না ওই সময় আমার কেমন লাগছিল।এত স্বস্তি মনে হয় আগে কোনো দিন পাই নি।আচ্ছা মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড নেই তো?এত চিন্তা করে লাভ নেই,ব্যাংকের নামটা তো মনে আছে।বের করে ফেলতে পারব।কোনো সমস্যাই নেই।
প্রেমের পথে এটাই মনে হয় আমার প্রথম পদক্ষেপ ছিল।
“বাবা কি করছ?কি লিখছ তুমি?কিছু না বাবা।তোমার মা কোথায়?”
“মা রান্না করছে।চল বাবা ফারিজা কান্না করছে।মা তোমাকে ফারিজার কাছে যেতে বলেছে।”
“তুমি যাও।তোমার মাকে বল আমি এখনি আসছি।”