somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টিবিলাস এবং "ব্রেক দ্য রুল" !!!

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চায়ের দোকানে খোশ-মেজাজে গল্প করছি। মাঝখানে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হলো- টিএসসিতে বৃষ্টিস্নাত দুপুরে একটা কাপলের চুম্বনদৃশ্যের যে ফটোটা ভাইরাল হয়েছে সে বিষয়ে আপনার মতামত কি? আমি তৎক্ষণাৎ ভেবে উত্তর দিতে পারলাম না। কেন পারলাম না? তা বুঝতে একটু গভীরে যেতে হবে। কালচার; বাংলাতে সংস্কৃতি। এই শব্দটা দিয়েই শুরু করা উচিৎ।


কালচার বলতে আমরা সোজা বাংলায় বুঝি কোন স্থানের মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবিকার উপায়, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য, নাট্যশালা, সামাজিক সম্পর্ক, ধর্মীয় রীতি-নীতি, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয় সেটাকে। উক্ত ঘটনা বর্ণনায় ম্যালিনোস্কির বক্তব্য উল্লেখ করে রাখা যেতে পারে যে- কালচার হল মানব সৃষ্ট এমন সব কৌশল বা উপায় যার মাধ্যমে সে তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে।


ভারতীয় উপমাহাদেশে পাশ্চাত্যকরণ বলতে আমরা বুঝি- ব্রিটিশ কালচার। শুধু ব্রিটিশ কালচার বললে ভুল হবে। আমি এর নামকরণ করতে চাই “ইন্দো-ব্রিটিশ কালচার” হিশেবে। কেননা আমরা যদি পুরোপুরি ব্রিটিশ কালচার ফলো করতাম তাও হতো। এসব তর্ক আসত না। পক্ষান্তরে উপমহাদেশীয় কালচার প্র্যাকটিস করলেও এসব বিতর্ক আসত না। অনেকক্ষেত্রে এসব ঘটনারই জন্ম নিত না।

ব্রিটিশদের কাছ থেকে আমরা যা আত্তীকরণ করেছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

ক) ভাষাঃ ইদানিং একটা বিষয় লক্ষণীয় যে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে উৎসাহিত করেন। যা মাতৃভাষার জন্য নিন্দনীয়। অপমানজনক। ইংরেজিতে কথা বলতে পারাটাকে আমরা একটা যোগ্যতা হিশেবে দেখি।

খ) পোশাক-পরিচ্ছদঃ নিশ্চিতভাবে শার্ট, ট্রাউজার্স, টি-শার্ট, টপস, জিন্স ভারতীয় উপমহাদেশে পরিধানযোগ্য ছিল না। এখন তো এভেইলএবল।

গ) ফ্যাশনঃ কেউ কেউ এখন চুল ছোট রাখাকে যুগের চাহিদা বলে থাকেন। যা উপমহাদেশে গ্রহণযোগ্য ছিল না কখনোই।

ঘ) আইন-কানুনঃ উপমহাদেশীয় সমগ্র আইনী ব্যবস্থা ব্রিটিশ আইন থেকে এসেছে।

ঙ) সংসদীয় ব্যবস্থাঃ আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থা "ব্রিটিশ" দ্বারা অনুপ্রাণিত।

চ) চলচ্চিত্রঃ আজকের চলচ্চিত্রে সঙ্গীত (এবং নাচ); উপমহাদেশীয় ক্লাসিক্যালের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।

ছ) ক্যালেন্ডার: ধর্মীয় উত্সব ব্যতীত আমরা এখন সবকিছুর জন্য গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকি। ব্রিটিশদের থেকেই উপমাহাদেশে এই ক্যালেন্ডারের বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে।

জ) ড্রাইভিংঃ ডান দিকে স্টিয়ারিং এর ধারণা ব্রিটিশদের থেকেই আমরা পেয়েছি। এটা ব্রিটিশদের স্বতন্ত্র একটা বৈশিষ্ট্য।

ঝ) শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থাঃ ব্রিটিশদের চাকর-বাকর দরকার ছিল; ক্লার্ক বা অফিসার নয়। এজন্য তারা আমাদের শোষণ করেছে। আমরা চাষবাস করতাম ঠিক, কিন্তু মনে মনে অফিসারও হতে চাইতাম। হয়েছিও। এখন তো ছোট কাজ করতে আমাদের আত্মসম্মানে লাগে। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষেরা গোলামী করেছে।

এছাড়াও আরও অনেক কিছুই আছে যা এখন আলোচনাতে আনা অপ্রাসঙ্গিক হবে বৈকি। কিন্তু একটা বিষয় না বললেই নয় যেটা সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো- “বিধিবিধান অমান্য এবং অসম্মান”। যদিও এটা তাদের কালচারে নেই কিন্তু উপমহাদেশে এই কালচার প্র্যাকটিসে তাদের প্রভাব অনস্বীকার্য।

কিভাবে?

যদি কেউ আপনাকে ২০০ বছর ধরে শাসন করে, স্বভাবতই আপনি একদিন না একদিন তা প্রত্যাখ্যান করবেনই। এই উপমহাদেশ করেছিলও। প্রথমে আমরা ব্রিটিশ হটিয়েছিলাম, তারপর পাকিস্তানিদের। অর্থাৎ এদেশের মানুষ প্রথমে ব্রিটিশ আইন প্রত্যাখ্যান করেছিল তারপর পাকিস্তানি আইন। বংশপরম্পরায় আমাদের রক্তে প্রবাহিত হচ্ছে- “ব্রেক দ্য রুল” “ব্রেক দ্য রুল”!

তারও আগে অর্থাৎ মোগল আমল থেকেই আমরা এরকম “বর্বর” এবং “অসভ্য” হিশেবে উপহাসের শিকার হয়েছি। ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন উপমহাদেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের সংস্কৃতি ছিল সবসময়ই সৌন্দর্যের সর্বোচ্চ রূপ। তাজমহল, বাদশাহী মসজিদ এবং ময়ূর সিংহাসনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা যায় এদেশের মানুষ মণি-মুকুট-অলঙ্কারের জন্য তৎকালীন বিশ্বে সর্বোচ্চ খরচ করেছে এবং সমালোচিত হয়েছে। যা কিনা এখনও পুরোপুরি আনপ্রোডাক্টিভ হিসেবেই বিবেচিত হয়।

একেবারে জগাখিচুড়ি অবস্থা! আমাদের বাইরে ষোলআনা পাশ্চাত্যতা আর ভেতরে পুরোটা উল্টো; ষোলআনাই বাঙালিয়ানা। উপরে উপরে বলছি “ইটস ওকে!” প্রাপ্ত বয়স্ক দুইজন তাদের প্রাইভেসির মাথা খেয়ে পশু-পাখির মত রাস্তাঘাটে যাচ্ছেতাই করুক! একইসাথে এদিক-ওদিক কানাঘুষা করছি- একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্মুক্ত জায়গায় “বেল্লাপণা” করা একদম ঠিক হয়নি।

সর্বপরি আমাদের “রক্ত” এক কথা বলে আবার “মানসিকতা” আরেক কথা বলে। আমি বলি- দুইটা স্কুল আছে ক্যাম্পাসে। অভিভাবকের সাথে বাচ্চা-কাচ্চা আছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। শিক্ষা আছে। মূল্যবোধ আছে। সবচেয়ে বড় কথা –এক্সেপ্টেন্স। সেটা আছে কি? সে যা হোক, চায়ের দোকানে বসে আমার দিকে যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল তা যদি আমাকে তৎক্ষণাৎ উত্তর দিতে হত তাহলে কি দিতাম উত্তর?

“ব্রেক দ্য রুল!”; যেটা রক্তে আছে!

হয়তবা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ২:৩৯
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×