যে বস্তু দিয়ে এত বিভাজন, যে বিভাজনে মানুষের বহুদিনের অভিযোজন তা ভাঙ্গতে গেলে তারা মানবে কেন? কবিকে মানল না, দিল অক্সফোর্ড থেকে বের করে।
অপরাধ, তিনি ‘নাস্তিকতার প্রয়োজনিয়তা’ শিরনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। দুই বন্ধু মিলে প্যাম্পলেট আকারে অক্সফোর্ডের দেয়ালে দেয়ালে ঈশ্বরযুগে তা প্রকাশও করেছিলেন। এমনিতেই ব্যাঙ্গার্থক কবিতা লেখার জন্য শিক্ষকেরা তাঁর উপর খ্যাপা ছিলেন। তারপর আবার প্যাম্পলেট প্রকাশ তো রীতিমত –আগুনে ঘৃতাহুতি।
ফলাফল- দুই জনকেই অক্সফোর্ডের মত নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার! সাংসদ পিতার মধ্যস্থতায় আবার অক্সফোর্ডে ফিরতে পারতেন। কিন্তু তিনি যা করেছিলেন তা সঠিক বলেই জানতেন, এজন্য পিতার সাহায্য নিতে রাজি হন নি। ফলে পিতার সাথে সম্পর্ক চুকে যায়। ঘর ছাড়তেও আর কোন বাধা থাকে না কবির।
তাতে কী?
জীবনের গান গাইবার জন্য যার জন্ম ঈশ্বরের সাধ্য নেই তাঁকে থামানোর। অক্সফোর্ডে কবিকে সবাই পাগল বলত। তা বলুক; সৎ, সত্য, সুন্দরের শক্তিতে যার সাথে সাধারন মানুষ পারে না তাকে পাগল বলে এই সব মানুষেরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চেয়েছে যুগে যুগে। কবির সাথেও হয়েছে এমনটিই।
পথ হারাবেন আবার পথ খুঁজে পাবেন, নিজে হারিয়ে যাবেন, পথ করে যাবেন মানুষের জন্য- এই মূলমন্ত্র অন্তরে ধারণ করে কবি মানুষের জয়গান গেয়েছেন। আমৃত্যু মানুষকে সত্য-সুন্দরের পথ দেখিয়ে গেছেন। ‘নাস্তিকতার প্রয়োজনিয়তা’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি পাঁচটি মৌলিক প্রশ্ন করেছিলেন। যা সকল যুগের সকল ভুয়া পন্ডিতদের পান্ডিত্য পন্ড করার জন্য যথেষ্ঠ।
প্যাম্পলেট আকারে প্রকাশিত প্রশ্ন পাঁচটি ছিল এমন-
i) If he is infinitely good, what reason should we have to fear him?
ii) If he is infinitely wise, why should we have doubts concerning our future?
iii) If he knows all, why warn him of our needs and fatigue him with our prayers?
iv) If he is everywhere, why erect temples to him?
v) If he is just, why fear that will punish the creatures that he has filled with weakness?
কবি মন অস্থির; প্রকৃতির প্রেমে সে পড়বেই। তাই বলে মোহময় প্রকৃতিকে সে কখনোই রক্তাক্ত করবে না। বিপরীতে রক্তক্ষরণ হবে তাঁর নিজের হৃদয়েই। কবি প্রেমে পড়েছেন বহুবার। টেকে নি কোনটাই। কবির চিত্ত চির-স্বাধীন। সবসময়ই কল্পনার মধ্যে খুঁজে ফিরেছেন এক অনাগত যুগকে। যেখানে থাকবে স্বাধীনতা।
কবি তাঁর জীবদ্দশায় সবসময়ই সন্ধান করেছেন এমন এক আদর্শ জগৎ-কে- যেখানে থাকবে প্রেম, সৌন্দর্য্য এবং সৌহার্দ্য। তিনি দেখতে পেয়েছেন পৃথিবীর মানুষ সেই পথেই এগিয়ে চলেছে। স্কাইলাক পাখির ডানায় ভর দিয়ে কবি স্বপ্ন দেখেছেন- একদিন সব অন্ধকার দূর হবে, পশ্চিমা বাতাস সব দূর করে দেবে, মৃত চিন্তা সব উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কবি লিখেছেন-
“The trumpet of a prophechy! O Wind,
If Winter comes, can Spring be far behind?”
শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পাবার জন্যে সাগর তীরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন কবি। সমুদ্র ভালোবাসতেন কবি খুব; কিন্তু সাঁতার জানতেন না। সেদিন আবহাওয়া ভালো ছিলো না। জেলেরা কবিকে নৌকায় চড়তে না করেছিলেন। জেলেদের কথায় পাত্তা দিলেন না পাগল কবি। নৌকা নিয়ে ভেসে চললেন।
কিছুক্ষণ পরেই ঘন মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ। ঝড়ে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যেই ঝড় থেমে যায়। মেঘও কেটে যায়। কিন্তু হায়! কবির নৌকা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। কয়েকদিন পরে সমুদ্র তীরে একটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতদেহের জামার এক পকেটে ছিল সফোক্লিসের নাটক এবং আরেক পকেটে ছিল কিছুদিন আগেই প্রয়াত কবির সবচেয়ে কাছের বন্ধু, ‘সৌন্দর্য্যের কবি’ নামে খ্যাত কীটসের লেখা একটি কবিতা-
“My heart aches, and a drowsy numbness pains. My sense, as though of hemlock I had drunk.”
এই পাগল কবিকে প্রথমে সমাহিত করা হয় ইতালিতে- ওই সমুদ্র তীরেই; যেখানে তাঁর মৃতদেহটি পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে কবির বন্ধু লর্ড বাইরন, এডওয়ার্ড এবং হান্টের অনুরোধে কবিকে চিরমুক্তি দেওয়ার জন্য সমাধিস্থল থেকে আবার তুলে এনে পোড়ানো হয়। এই পোড়ানোর দৃশ্যের একটি নামকরা শিল্পকর্ম আছে- লুইস এডওয়ার্ড ফর্নিয়ারের আঁকা।
তারও পরে কবির মৃতদেহের পোড়ানো ভস্ম রোমের প্রোটেস্টেন্ট সিমেটারিতে স্থায়ী ভাবে সমাধিস্থ করা হয়। কবির সমাধিতে আজও লেখা রয়েছে-
“ Nothing of him that doth fade
But doth suffer a sea-change
Into something rich and strange.”
ওহ, শেলি!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৪:২২