somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'গণতন্ত্রের বিজয়' অথবা 'গণতন্ত্র হত্যা' কোনটাই নয়; আজ ৫ই জানুয়ারি। সবাইকে 'পাখি দিবস' এর শুভেচ্ছা!!! :P

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে নাকি গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে তা বোঝার মত ক্ষমতা বাঙালি তথা আমাদের এখনো হয়নি। ‘বিজয়’ নাকি ‘হত্যা’ এ বিষয়ে পরে আসি। আপাতত মহাজ্ঞানী এরিস্টটলের “সাইকেল অব পলিটিক্যাল চেঞ্জ” থিওরি সম্পর্কে জ্ঞান নেওয়া যাক।


এরিস্টটল সাহেব একটা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে সামগ্রিকভাবে ৬(ছয়)টি পর্যায়ক্রমিক ভাগে ভাগ করেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন এই ভাগগুলো চক্রাকারে ঘূর্ণনশীল। ছয়টা ভাগের নামগুলো দেখে নেওয়া যাকঃ (১) রাজতন্ত্র, (২) স্বৈরতন্ত্র, (৩) অভিজাততন্ত্র, (৪) সামরিক শাসন, (৫) প্রশাসনিক শাসন ব্যবস্থা এবং (৬) গণতন্ত্র।

(৬নং শেষ হলে আবার ১নং থেকে শুরু হবে বলে এই চেঞ্জটাকে “সাইকেল অব পলিটিক্যাল চেঞ্জ” বলা হয়ে থাকে)


বিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ প্রকৃতার্থে রাজতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের স্বাদ আস্বাদন করেনি বলাবাহুল্য। বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্যি। আমরা যা পেয়েছি তা হলো পর্যায়ক্রমে অভিজাততন্ত্র, সামরিক শাসন এবং লোক দেখানো প্রশাসনিক শাসন ব্যবস্থার একটা প্যাকেট যা কিনা ‘গণতন্ত্র’ দিয়ে মোড়ানো!!! অথচ গণতন্ত্র নিজেই একটা আলাদা অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।


একটু যদি গভীরে যাই... (ক্রম ৩-৫)

ক্রম ৩ঃ অভিজাততন্ত্র বলতে বোঝায় সমাজের সর্বোচ্চ মর্যাদাধারী (যিনি মূলত বংশগত খেতাবে ভূষিত) কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত শাসনব্যবস্থা । বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে “শেখ সাহেব”; যিনি বাংলাদেশের স্রষ্টা হিসেবে সমাদৃত। পঁচাত্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অন্তরালে ‘বাকশাল' প্রতিষ্ঠা করে অভিজাততন্ত্র অনুশীলনের চেষ্টা করেছিলেন। যার বীজ বপন হয়েছিল অবশ্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই।


ক্রম ৪ঃ সামরিক শাসনের ধারণা এসেছে ইংরেজি ‘অলিগার্কি’ শব্দ থেকে, যাকে বলা হয় ‘দ্য রুল অব দ্য রিচ’। স্বাধীন বাংলাদেশে এই ক্রম ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিল; দুই ভাগে। (ক) জেনারেল জিয়ার শাসনামল (১৯৭৫-১৯৮১) এবং (খ) জেনারেল এরশাদের শাসনামল (১৯৮২-১৯৯০)।


প্রথম ভাগে জেনারেল জিয়া গণতন্ত্রের নতুন চমক দেখালেন। তিনি ‘সামরিক বিধি’ জারী করার সাথে সাথে অন্যান্য সামরিক শাসকদের মত তিনিও বেসামরিকীকরণ এবং গণতন্ত্রায়নের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় তার ব্যক্তিগত শাসনকে কেন্দ্রবিন্দুতে প্রতিষ্ঠিত করেন। ‘গণতন্ত্রায়ন’ শব্দের যথেচ্ছা ব্যবহার থাকলেও তা যথেচ্ছাই উপেক্ষিত হয়েছিল।


দ্বিতীয় ভাগে জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই এরশাদ তাঁর সরকারের বৈধতা অর্জনের উদ্দেশ্যে জনগণকে ‘গণভোট’ এর মাধ্যমে ‘গণতন্ত্র-গণতন্ত্র’ খেলা দেখিয়েছিল। যাকে সামরিক শাসন না বলে, কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে আমরা ‘স্বৈরতন্ত্র তথা স্বৈর শাসন’ বলে অভিহিত করি। সামরিক শাসন বললে পাছে আবার কারো জাত যায়, এইজন্য!!! আমরা পারিও বটে।


ক্রম ৫ঃ প্রশাসনিক শাসন ব্যবস্থা যা “দ্য রুল অব দ্য পিপল” নামে অধিক পরিচিত। এই শাসন ব্যবস্থা হলো সিভিল সরকার বা সংবিধানের একটি ফর্ম বা প্রক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ১৯৯০ সালে এরশাদ পতনের পর বাংলাদেশ আবার সংসদীয় গণতন্ত্রে(!) প্রবেশ করল। জনগণ তো মহাখুশি! এবার তা হলে প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের আসল রস আস্বাদন করা যাবে! কিন্ত ‘গণতন্ত্র’ নামক সেই মূলা আমাদের সামনে ঝুলেই থাকল!!! ছুঁয়ে দেখা হলো না আর কখনোই।


চলছে অদ্যাবধি...


আবার কেউ যদি ১৯৮৭ সালে শহীদ নূর হোসেনের বুকে লেখা 'স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক' স্লোগানকে আসলেই গণতন্ত্রের মুক্তি হিসেবে দেখে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে 'প্রহসন নির্বাচন' আখ্যা দিয়ে গণতন্ত্রের হত্যা নিশ্চিত করেন তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।


তবে মনে রাখা বাঞ্চনীয়- গণতন্ত্রের হত্যা নিশ্চিত করলে কিন্তু এত সহজে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। রাজতন্ত্র যেহেতু বিলুপ্তপ্রায় সেহেতু নিয়মানুযায়ী আপনি যদি এখনকার সময়কালকে স্বৈরশাসন বলে থাকেন, এরপর কিন্তু আসবে অভিজাততন্ত্র। যা মোটেই কল্যাণকর কিছু নয়।


তবে 'আমাদের গণতন্ত্রের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত' এহেন হতাশায় যারা নিমজ্জিত তাদের জন্য আশার আলো দেখিয়ে গিয়েছেন এরিস্টটল সাহেব। উনার “সাইকেল অব পলিটিক্যাল চেঞ্জ” অনুযায়ী আমাদের দেশে অদ্যাবধি যা চলেছে তা গণতন্ত্র নয়। ‘গণতন্ত্র’-কে বলা হয় “দ্য মব রুল”; অর্থাৎ “জনতার শাসন”। এরিস্টটলের মতানুসারে এখনো যার শুরুটাই হয়নি এদেশে!


সুতরাং, “গণতন্ত্রের বিজয়” বলেন অথবা “গণতন্ত্র হত্যা” বলেন…সবই গুজব, সব মিডিয়ার সৃষ্টি। বিভ্রান্ত হওয়ার কোনই প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন স্বয়ং এরিস্টটল সাহেব!


আজ সেই ৫ই জানুয়ারি! সবাইকে 'পাখি দিবস'-এর শুভেচ্ছা। :P :P :P
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:১৩
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×