somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণে মিডিয়ার পরোক্ষ ভূমিকা!

০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইদানীং এটা প্রায় অসম্ভব যে আমরা টিভি খুলেছি অথবা পত্রিকা পড়ছি কিন্তু ধর্ষণের নিউজ পাইনি। মিডিয়াগুলোকে ধন্যবাদ আমাদেরকে ২৪/৭ এসব নিউজ প্রোভাইড করার জন্য। কেননা এই সহিংস নিউজগুলো যে শুধুমাত্র আমাদেরকে সংবাদ জানান দিচ্ছে তা নয়; আমাদের মাথাও খাচ্ছে বৈকি! একটা উদাহরণ দিই-


২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার সময় মুনিরকা থেকে ধরকাগামী বাসে ভারতের রাজধানী দিল্লির অদূরে হরিয়ানার রোহটাক জেলায় ২৩ বছর বয়সী এক যুবতীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনা ঘটেছিল ভারতে, ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল বাংলাদেশী মিডিয়াতেও।


ফলাফলস্বরূপ, ঠিক এর পরপরই এক মাসের মাথায় ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক গার্মেন্টসকর্মী। সেইম স্টাইল মেইন্টেইন করা হয়েছিল। এর আগে বাসে ধর্ষণ করা যায় এমন কনসেপ্টই আসেনি ধর্ষকদের মাথায়! কি বলবেন? মিডিয়ার ইনফ্লুয়েন্স নাই!


বিজ্ঞানী শানা গাদারিয়ান ওয়াশিংটন পোস্টে লিখেছিলেন, "মিডিয়া প্রতিযোগিতা মানেই অধিক শ্রোতা লাভের আশায় সাংবাদিক ও সম্পাদক কর্তৃক আবেগঘন দৃশ্য এবং লাইনগুলি সংকুচিত ও রসালো করে পাবলিশড করা। এক্ষেত্রে ধর্ষণের খবর গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি স্বতন্ত্র নাটকীয়!"


এধরণের পক্ষপাতদুষ্ট নিউজগুলো আমাদের ধর্ষণের বিষয়গুলির উপর আরো মনোযোগ দিতে সহায়তা করে অথবা আংশিকভাবে নেগেটিভলি বায়াসড করে ফেলে! কিছু কিছু মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মিডিয়াগুলির নেতিবাচক এবং হিংসাত্মক নিউজ এক্সপোজারে গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক প্রভাব ফেলে।


বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. গ্রাহাম ডেভি প্রচার মাধ্যমের সহিংসতার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবগুলি নিয়ে কাজ করে থাকেন। তিনি 'দ্য হফিংটন পোস্ট' বলেছেন, "সহিংস মিডিয়া এক্সপোজার চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং এমনকি পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসর্ডার (PTSD) বাড়াতে বিশেষভাবে অবদান রাখে। নেতিবাচক খবর আপনার মেজাজকে প্রভাবিত করে এবং আপনি আপনার চারপাশের জগৎকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন এবং কীভাবে ইন্টারঅ্যাক্ট করবেন তার উপরও প্রভাব ফেলে"।


উদাহরণস্বরূপ, যদি নেতিবাচক ঘটনাগুলো আপনাকে আরও উদ্বিগ্ন বা দুঃখজনক করে তোলে, তাহলে আপনি নেতিবাচক বা হুমকির ঘটনাগুলির মধ্যে আরো বেশি মনোনিবেশ করা শুরু করবেন এবং আপনি অস্পষ্ট বা নিরপেক্ষ ঘটনাগুলিও নেতিবাচক হিসাবে দেখা শুরু করবেন।


মজার ব্যাপার হলো, একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব সাংবাদিকেরা আনসেন্সরড ইমেজ পুনর্বিবেচনা, পরিহার এবং এ রিলেটেড গ্রাফিক ডিজাইনের সাথে সম্পৃক্ত তারা একসময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং তারা মদ্যপান, বিষণ্নতা এবং সোমাটাইজেশনে PTSD সূচকের উপর সর্বোচ্চ স্কোর করেছেন।


আমাদের দেশে আইসিটি আইন এত শক্ত! ৫৭ ধারা এত সচল! অথচ দেখলাম না কুরুচিপূর্ণ এবং এইসব রসালো গল্পের ফাঁদ পাতা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করল। কারো নিবন্ধন বাতিল হলো। আমি বলছি না ধর্ষণের সংবাদ পত্রিকাতে না আসুক। আমি বলছি সংযতভাবে আসুক! অপরাধকে অপরাধ হিশেবে তুলে ধরা হোক। শাস্তি সম্পর্কে অবগত করা হোক।


ধর্ষণের সংবাদ যত সমারহে প্রচার করা হয়; ধর্ষকদের শাস্তির সংবাদ অত মহাসমারহে প্রচার করা হয় না। দিল্লী কিংবা মানিকগঞ্জের ধর্ষণের ঘটনা আমরা সবাই জানি। বুকে হাত দিয়ে বলেন তো, কয়জন জানি বিচার কি হয়েছিল? আমাদের দূর্ভাগ্য এখানেই। কেননা আমরা পাঠকেরা শাস্তির নিউজ পড়তে আগ্রহী না। আমরা ধর্ষণের স্টাইল জানতে বেশি আগ্রহী। গোড়াতেই যখন গলদ তখন এর নির্মূল কোথায়?


আমরা যেভাবে চেষ্টা করছি এভাবে হবে না। আমাদেরকে অন্যভাবে চিন্তা করতে হবে। সমূলে উৎপাটনের চিন্তা করতে হবে। মিডিয়া থেকে মন্ত্রণালয়, আইন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ, জনগণ থেকে প্রধানমন্ত্রী সবাইকেই ধর্ষণের বিরুদ্ধে "জিরো টলারেন্স" প্রদর্শন করতে হবে। অন্যথায় "এক ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠান" কেন্দ্রিক আন্দোলন "অযথা"!


আমি তো প্রতিকার দেখি না। এর একমাত্র কারণ হলো- "সমন্বয়হীনতা"! সুতরাং শিক্ষাদান শুরু করুন পরিবার থেকেই!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৩:১৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×