(১)
আমার জন্মস্থান চুয়াডাঙ্গা শহরে। হ্যা ঠিক ধরেছেন, ‘চরমপন্থীর আঁতুড়ঘর’ হিশেবে পরিচিত সবুজ, সাজানো-গোছানো, শান্ত, ছোট্ট শহর। প্রথম দেখাতে আপনাকে বিশ্বাস করানো কঠিন হবে যে এটাই সেই চরমপন্থীদের আঁতুড়ঘর। বিলিভ ইট অর নট!
সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে লিখতে যেহেতু বসেছি সেহেতু একটু ফ্লাশব্যাকে যাই। ২০০৪/০৫ সালের দিকের ঘটনা। আপনারা যে কাহিণী দেখে আজ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন এরকম একটা কাহিণীর শিরনাম পড়ে আমরা প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। আমার এক বন্ধুর বাসা হাসপাতালের দিকে। ও সেদিনও বলছিল, “এমন একটা সময় ছিল যে, হাসপাতাল মর্গের সামনে একটা জবাই করা লাশ না দেখলে মনে হত আজ কি যেন একটা মিসিং”। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।
আইএসের খুন করার যে স্টাইল দেখে আপনারা ভীতসন্ত্রস্ত ঠিক তার থেকে বীভৎস স্টাইলে জোড়া জবাই দিয়ে শুরু হয়েছিল ‘পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি’র পথচলা। ব্যস, তারপর একের পর এক ধড় থেকে মাথা আলাদা। মাঝে এরা স্টাইলের পরিবর্তন এনেছিল। ঘটনাটা ছিল এরকম যে, ওরা যাকে টার্গেট করত তাকে মারার ঠিক ওই সময়টাতেই আমাদের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা অফিসে ফোন দিয়ে দায়-দায়িত্ব স্বীকার করত।
ধরণটা ছিল- “আমি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি-এমএল জনযুদ্ধ (লাল পতাকা)’র খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমান্ডার আবির হাসান বলছি। আজ রাত **টার সময় অমুকজনকে আমরা হত্যা করেছি। কেননা ও বেশ কিছুদিন যাবত দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিল। তাই দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার দায়ে ওকে হত্যা করা হলো”। এই নিউজ আমাদের দৈনিক পত্রিকার প্রতিদিনের শিরনাম ছিল।
আইএসের যে স্টাইল দেখে আপনি মুগ্ধ সেটা অনেক পুরোনো। বুঝলেন তো? ওরা একটু স্মার্টলি করছে এই যা। পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির অস্তিত্ব থাকলে কপিরাইট আইনে মামলা ঠুকে দিতে পারত। ঈশ!
(২)
এবার আসি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। ১৯৭১ এর পর থেকে আমরা যে খুব একটা ভালো আছি তা কিন্তু না। বাকশাল, স্বৈরাচারতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, তত্ত্বাবধায়কের স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি কারণে যারযারপণায় আমরা অতিষ্ঠ। এর সাথে রাতবাহিণী, বিভিন্ন সন্ত্রাস কর্মকান্ড, খুন, গুম, হত্যা, জেএমবির মত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাটক আমরা দেখেছি, দেখছি এবং দেখব।
জাতি হিশেবে আমরা চরম সহনশীল। ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা যদি আমরা ন্যাচেরালি নিতে পারি তাহলে গুলশানে জঙ্গি হামলাও আমরা খুব ন্যাচেরালি নিতে পারব আশা রাখি। আরে এ তো ২০ জন! আপনাদের মনে আছে? স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কথা? লগি-বৈঠা আন্দোলনের কথা? ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা? ২৫শে ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের কথা? কি মনে নেই???
সিরিয়াসলি!!!
যায় হোক ৬৩ জেলায় বোমা হামলার পর আপনার অন্তত বোঝা উচিৎ ছিল নেটওয়ার্কিং ব্যাপারটা কি? সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ ব্যাপারটা কি? তখন যখন বোঝেন নি এখনও বুঝবেন না এটা শিওর।
ব্যাপার নাহ! ডুড। চিল, জাস্ট চিল।
(৩)
আরে ভাই এগুলা কি কন, মিয়া? ওগুলা আর আইএসের হিশেব আলাদা। আপনি মিয়া কি চিল-ফিল কন? মাথার ঠিক আছে ভাই?
জ্বি ভাই আছে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত আইএস বাংলাদেশে সুবিধা করতে পারবে না। আইএসের জন্ম-উদ্দেশ্য-কার্যক্রম যা, তা পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, মধ্যপ্রাচ্য ব্যতীত বাংলাদেশ ওদের টার্গেট হতেই পারে না। হ্যা, এর পিছিনে মূল কারণ হলো, জিওগ্রাফিক্যালি এন্ড পলিটিক্যালি বাংলাদেশের অবস্থান।
আইএসের যারা বাপ-মা, আব্বু-আম্মু, ড্যাড-মম এবং পাপ্পা-মাম্মি তারা সবাই বাংলাদেশে আসন গারতে চাই এটা যেমন সত্য, তেমনি আপনাকে এও মনে রাখতে হবে যে অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট। আমেরিকা বাংলাদেশকে যে কারণে চায়, ভারত কিন্তু সে কারণে চায় না। কিংবা চীন অথবা জাপান কারোরই কিন্তু উদ্দেশ্য এক না। অভিন্ন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী।
ঠিক একারণেই একজন যখন রাজত্ব কায়েম করতে চাইবে যৌক্তিক কারণেই নিজ স্বার্থে অন্যজন তা প্রতিহত করবে। প্লেইন এন্ড সিম্পল। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল একাত্তরে। জ্বি ভাইয়া, শুধুমাত্র কাস্তে-কোদাল নিয়ে তো আর যুদ্ধ হয় না!!! অস্ত্র-গোলাবারুদও লাগে। যার বেশিরভাগ ব্যবস্থা করেছিল ভারত। এমনকি ওদের সৈন্য এসে এখানে জীবন পর্যন্ত দিয়েছিল।
কি মনে হয়? কেন জীবন দিয়েছিল? বাংলাদেশের জন্য? হাহ! ভাই আপনি এখনো মায়ের গর্ভে আছেন। ওরা জীবন দিয়েছিল একচ্যুয়ালি ওদের জন্যই। কিন্তু সেন্টিমেন্টালি ব্যাপারটা আমরা আমাদের মত করে নেই।
(৪)
সো গাইজ। রিলাক্স। এত টেনশনের কিছু নেই। আমরা কোনসময়ই নিরাপদ ছিলাম না, এখন নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকব না। তারপরেও যতটুকু সেইভ থাকা যায়। সাবধানের মাইর নায়। তাই সাবধানতা শুরু হোক পরিবার থেকেই। খোঁজ রাখুন আপনার সন্তানের। তাকে সময় দিন। আপনার ধর্ম তো মানুষ খুন করতে শেখায় না। সেটা শেখান আপনার সন্তানকে। সঠিকটা শেখান।
কেমন বাবা-মা আপনি! যে আপনার ছেলের মাথা আপনি অপেক্ষা ভালো অন্য কেউ ওয়াশ করতে পারে! সন্তান আপনার গড়বেন আপনি। অন্য কেউ কেন মাতব্বরি করবে? সস্তা নাকি। এটা অবশ্যই আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ। এক্সসেপ্ট ইট। ইয়েস, এক্সসেপ্ট ইট।
শুরু করুন পরিবার থেকে। দেখবেন একদিন ছেয়ে যাবে দেশটাতে। সুখী সুন্দর দেশ। বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০২