-শ্রুতি, তুমি কি বের হতে পারবা এখন?
-কি! মাথা খারাপ হইছে তোমার!!!
-মাথা ঠিক ছিল কবে? বিয়েতে মত দেওয়াটা কি খুবই জরুরী?
-দ্যাখো, ক্লাসের নিয়ম ভাঙা মেয়েটি কখনোই ছিলাম না আমি। তুমি জানো এটা।
-তাহলে ভালোবেসেছিলে কেন?
-তুমি শিওর, যে আমিই তোমাকে ভালোবেসেছিলাম!
-প্লিজ, পুরানো কথা রাখো। সারাজীবনের ব্যাপার এটা। তোমার সুখ তোমার বাবা-মায়ের উপর ডিপেন্ড করে না। করে তোমার উপর।
-তো! তুমি বলতে চাচ্ছ তোমার মত ভ্যাগাবন্ড আমাকে সুখী করবে!!!
-হুম, করব কথা দিচ্ছি।
-কোন যোগ্যতায়?
-অভিমান করে থাকার সময় নেয় এখন, প্লিজ। তোমার বাড়ির সামনে সাদা মাইক্রোবাস রাখা আছে। তুমি আসো। দয়া করো একটু। তুমি ছাড়া আমার আমিত্ব অসহায়। হাতজোড় করছি।
-বাজে কথা রাখো। বাড়ি ভর্তি লোকজন। বের হওয়া ইমপসিবল। ইচ্ছা এবং সুযোগ দুইই অনুপস্থিত। সরি। আমাকে মাফ করো। পরের জনমে ঈশ্বর তোমার সাথে আমার মিলিয়ে দিবেন। ভালো থেকো।
-কিন্ত…আমি তো পুনঃর্জন্মে বিশ্বাসী না। হ্যালো…হ্যালো…
অভিমান, কখনো শূণ্য থেকে আসে না। অজস্র রাগ আর ক্ষোভের জটিল সংমিশ্রণ এটা। আজ বৃষ্টি নেই, জ্যোৎস্না নেই; কিন্তু রাতের স্নিগ্ধসরল মাদকতা ঠিকই আছে। ‘নো আনসার’ এর বিপটোনে রাতের নিস্তব্ধতা অসীম শূণ্যতায় গভীর থেকে গভীরতরে ধাবিত হচ্ছে নক্ষত্রবেগে। এই শূণ্যতাকে তাহলে শেষমেষ নিঃশেষে রুপান্তরিত করায় বাকি এখন।
-হ্যালো, কই তুই?
-এই তো দাদা, আমি…
-বাবা স্ট্রোক করেছে। এক্ষুণি হসপিটাল নিতে হবে। এ্যাম্বুলেন্স অথবা গাড়ি যা পাস নিয়ে আয় শীঘ্রই।
নিয়তির নির্মম পরিহাস বোধহয় একেই বলে। আজকের দিনটাতেই এমন হতে হলো! সাদা মাইক্রোবাসটি নিঃসন্দেহে এক জীবনের ছোট্ট ইতিহাস হতে চলেছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি বাবার। রাত ২.৩০ মিনিট। শ্রুতি বিয়ের পিঁড়িতে, আর বাবা হসপিটালে। খারাপ লাগার একটা সীমা থাকে। বর্তমান পরিস্থিতি সেই সীমাকে অতিক্রম করেছে।
চোখের জল কখনো কখনো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। আজকের চোখের জল আমাকে নিরুত্তর করেছে। নিরুপায় করেছে। বুকের ভিতর হাতুড়ির তীব্র আঘাতে পাঁজরগুলো এখনো কিভাবে অক্ষত আছে কে জানে! কি অসম্ভব যন্ত্রণা। মানুষের এই চরম সংকটাপন্ন সময় বোধহয় কাউকে পাশে না পাওয়ার জন্যই। একা ভেঙে পড়ার জন্যই।
১১৩ তম বার। ফোন দিতে যেয়েও হাত কেঁপে উঠলো। নাহ, অনেক হয়েছে আর না। যে যেতে চায় তাকে যেতে দেওয়ায় শ্রেয়। ১১২ তম বারের ফোনকলই হোক তোমার অস্তিত্বে আমার শেষ স্পর্শ। ভালো থাকো তুমি আর তোমার সাজানো স্বপ্ন।
একটা গল্প মনে পড়ছে এই মূহুর্তে এক বালক চাল চুরি করে ক্ষুধার্ত পাখিদেরকে খাওয়াতো। চুরি করা পাপ অন্যথায় ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো পুণ্য। পাপ-পুণ্যে কাটাকাটি। এজন্যই বোধহয় তোমাকে হারিয়ে বাবাকে পেয়েছি। হয়তবা তোমাকে পেতে গেলে হারাতে হতো অন্য কোনো সুখকে। স্বপ্ন তো মরেছে সেই কবেই।
নতুন অধ্যায়ের সূচনায়, ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা তিনি যেন কখনোই আমাকে তোমার সামনাসামনি না করেন। আমি সহ্য করতে পারব না, বিশ্বাস করো। তবুও তোমাকে দেখার ইচ্ছাটা আমার আকুতি আর না দেখতে চাওয়াটা প্রার্থনা। আকুতি মনের, প্রার্থনা ঈশ্বরের। ঈশ্বর সহায় হোন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩১