-হ্যালো, কেমন আছো, মিলি?
-তুমি! তুমি কেন ফোন দিয়েছ আমাকে?
-না মানে, এমনিতেই।
-তুমি একটা চিট। একটা ফ্রট। আর কোন ফ্রটের সাথে অন্তত আমার কথা থাকতে পারে না।
-কি করো তুমি?
-তোমার কি তাতে? গোসল থেকে বের হয়েছি। চেম্বারে যাওয়ার তাড়া আছে।
-শুনেছি ঈশ্বর মেয়েদের সমস্ত সৌন্দর্য বিয়ের পর সিক্ত চুল আর আটপৌরে শাড়িতে উজাড় করে দেন। দেখতে ইচ্ছা করছে খুব।
-ভাইবার অন করো। ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-আমার তো স্মার্ট ফোন নেই। বন্ধুর মোবাইলে সিম ঢুকিয়ে কথা বলছি।
-আচ্ছা, তোমার ঠিকানা দাও। ফোন পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-তুমি বরং পলাশীর মোড়ে জগাই নাপিতকে ফোনটা দিয়ে আসো। বেচারি পরিবারের সাথে কথা বলতে পারে না ফোনের অভাবে।
-তুমি....তুমি না আস্ত একটা বলদ। বুঝবে না আমাকে কখনোই। কোথায় তুমি?
-আমি....হ্যালো...হ্যালো।
ফোনটা কেটে দিয়ে স্বস্তি লাগছে। না হলে মিলি স্বভাববসত কথা প্যাচাইতো। সূর্যদয় আর সূর্যাস্তের মতই ধ্রুব সত্য এই অভ্যাস। চিরন্তন সেই অভ্যাস। চিরচেনা সেই অভ্যাস। আমার থেকে আর ভালো কেই বা জানে।
পলাশীর মোড়ে ফুটপাতের উপরে কাঠের হাতলওয়ালা শক্ত চেয়ারে বসে আছি। এসএম হলের দেয়ালের গ্রিলে আয়না ঝোলানো। নিজেকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে। এক সপ্তাহেই এই অবস্থা!
জগাই নাপিত প্রতিভাবান লোক। আমার টাকা থাকলে ধানমন্ডিতে একটা বড় এসি সেলুন দিয়ে দিতাম। খুব ভালো হাতের কাজ ওর। আমার সাথে ভালো খাতিরও বটে। বছর দুই আগে মারামারির সময় বেচারির চেয়ার ভেঙে লাঠি বানিয়েছিল ছেলেরা। আমি টিউশনীর টাকা পেয়ে আবার কিনে দিয়েছি। সেই থেকে ভগবান মানে আমাকে। যদিও আমি ওইরকম গোছের কেউ নই।
নিম্নবিত্তদের এই এক সমস্যা। এদের অনেক ভগবান থাকে। সামান্য সহানুভূতিকে এরা ঐশ্বরিক কিছু মনে করে ফেলে। জগাই নাপিত জানে চুল-দাড়ি কাটানোতে আমার এলার্জি আছে। আমার খুব কষ্ট অনুভূত হলেই আমি এখানে আসি। ম্যাসেজ করাতে। ম্যাসেজ করালে অদ্ভুতভাবে কষ্টগুলো কমতে থাকে।
জগাই নাপিত ভালো ম্যাসেজ করে। চুল-ঘাড়-পিঠ মাড়িয়ে মাড়িয়ে জোর করে বের করতে চাচ্ছে কষ্টগুলোকে আজ। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে প্রতিভা মাঝেমাঝেই বাস্তবতার কাছে হার মেনে নেয় অতি সন্তর্পণে। আজও তাই হয়েছে। আর ভবিষ্যতেও বোধহয় হবে।