সন্ধ্যা হতে বেশী বাকি নেই।আমাদের যেমন করেই হোক সন্ধ্যার মধ্যেই মিরেরসরাই পৌছতে হবে এবং অন্তত একটা হলেও ঝর্না দেখে আসতে হবে।পশ্চিম আকাশের হেলে পড়া রক্তাভ লাল সূর্যকে বিদায় দিয়ে নামতে শুরু করলাম দুরন্ত গতিতে।কিন্তু চাইলেই তো সবখানে আর দৌড়ে নামা যায়না।যদিও ওঠার রাস্তা থেকে নামার রাস্তাটা অনেকটাই প্রশস্ত।তারপরেও নামতে নামতে ৩০ মিনিট লেগে গেল।দেরী না করে সিএনজি নিয়ে চলে এলাম আমবাড়িয়া।দেখি গাইড আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।এদিকে খিদেয় পেট চো চো করছে।এতক্ষন খিদের কথা মনেই ছিলনা।কি আশ্চর্য!নিজাম ভাই এর বাড়িতে আবার আমাদের জন্য রান্না হয়েছে।কিন্তু সময় কোথায় বৃথা সময় নষ্ট করিবার!তাই সামনের দোকান থেকে কেক কলা খেয়েই দে ছুট।
ইতোমধ্যে সূর্য ডুবে গেছে।সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাতের আগমনী বারতা টের পাচ্ছি।শুরু করে দিলাম এক অসম্ভব রোমাঞ্চকর,ভয়ঙ্কর ট্রেকিং।একেতো অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে সাথে কয়েকদিনের বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু পরিমান কাদার পাহাড়।সেই বীভৎস কাদার রাজ্যে হাটাই যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে আমরা রীতিমতো দৌড়েছি ঝর্ণার মাদকতাময় আহবানে।হাতের লাথিটার গুরুত্ত এবার খুব বেশি টের পাচ্ছিলাম।আধো আলো আধারিতে এবড়ো থেবড়ো রাস্তায় কতবার যে চিৎপটাং খেতে হতো তার হিসেব রাখার জন্য হিসাবরক্ষক নিয়োগ দেয়া লাগত। তারপরেও যে দুই এক বার কাদামাটি তে গড়াগড়ি খাইনি তা কিন্তু বলছিনা।গোপন কথা থাকনা গোপন। আমাদের নিজাম ভাই তার মুখস্ত রাস্তায় স্বভাবতই উসাইন বোলটের গতিতে হাঁটছে সবার আগে।পিছনে আমরা দৌড়াচ্ছি।আমি কিন্তু তার পিছনে আঠার মতই লেগে ছিলাম।
কাদার রাস্তার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝেই ঠাণ্ডা ঝিরি পেয়ে যাচ্ছিলাম যা আমাদের জন্য ছিল আশীর্বাদের মত।কখনও কখনও উত্তাল ঝর্না বেয়ে নেমে আসা কোমর পরিমান পানির স্রোত পাড় হতে হয়েছে যা বেশ ভয় পাওয়ার মত বিশেষ করে অনিশ্চিতের রাস্তায় যে সাঁতার পারেনা তার জন্য আধো অন্ধকার রাতে স্রোতস্বিনী পানির পানির ঢেউ পাড় হওয়া সাহসের বটে তবে সেই সাথে নিজেদের কে রিচারজও করে নিয়েছি,ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা মেরে আবার রিলোড করেছি আমাদের।
আমাদের রাস্তা যেন আর ফুরায় না।আমরা নিজেরাও মাঝে মাঝে নিজেদের কে হারিয়ে ফেলছিলাম।একজন এই ট্রেইলে একেবারেই নতুন অন্যজন বেশ অভিজ্ঞ,দলনেতা সে।সবার মধ্যে একই গতি রেখে ট্রেকিং করা খুব মুশকিল বিশেষ করে এরকম যখন দৌড়ের উপর থাকতে হয় কারন সবার ফিটনেস লেভেল এক না যে জন্য আগের জন কে অপেক্ষা করতে হয় পিছিয়ে পড়া ট্রেকারের জন্ন।এটাও একটা অন্য মজা,সবার মধ্যে একতাবদ্ধতা তৈরি করে।এক টা টিম হয়ে কাজ করার,এগিয়ে যাওয়ার।
ঠাণ্ডা পানির শীতল স্রত,কাদাজল মাড়িয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি।কিছুদিন আগে উত্তাল বেগে বয়ে আসা ঝর্ণার পানির উন্মত্ততার নিদর্শন পাচ্ছি একটু পর পরি।কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে পাহাড়ি ঢল তার প্রমান রেখে গেছে সে।তার বিষাক্ত দংশনে বিভিন্ন রকমের বাগান উজাড় হয়ে গেছে,ভেসে গেছে ফলের বাগান থেকে শুরু করে সবুজ ফসলের খেত।নিজাম ভাই জানালো এক মাস আগেই এই এলাকা কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত ভেসে গেছিল পানির ভেলায়।
এতক্ষনে শুনতে পাচ্ছিলাম নোয়াতেখুম ঝর্ণার সুতীব্র আহবান।এক অদ্ভুত গন্ধ ভেসে আসছিল বাতাসে।উত্তগ্ন মাদকতা সেই বাতাসে।যারা ঝর্না ভালবাসেন,যাদের সাধ্য নেই তার উন্মত্ত ডাক এড়ানোর তারাই চিনেন এই গন্ধটা।নেশা ধরিয়ে দেয় সমগ্র শিরা উপশিরায়,এমনি বজ্জাত এই গন্ধ।গন্ধ শুকতে শুকতে আশ্চর্য সম্মোহনের মতো গিয়ে দাড়ালাম অনিন্দ্য রুপসি নোয়াতেখুমের সামনে।তারপরের গল্প নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ......
এবার চলুন কিছু মন ভোলানো ছবি দেখে নেই
চলবে....
প্রথম পর্ব এখানে :
http://www.somewhereinblog.net/blog/tushar007007/29986875
সীতাকুণ্ড,মিরসরাই ট্রেক,ভবঘুরে জীবনের গল্প...(দ্বিতীয় পর্ব)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সত্যি বলছি, চাইবো না
সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্থান.....
শেখস্থান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন