দৃশ্য-১
মোমিন-হ্যালো,তুষার,কই তুই?
তুষার-এইতো,আমি পাবলিক হল মোড়ে আছি
মোমিন-কি,বুঝলাম না?
তুষার-আরে ব্যাটা বীণাপাণির সামনে আছি,এবার চিনছিস?
মোমিন-হুম,চিনছি
তুষার-এবার ত চিনবাই
মোমিন-তুই থাক ওইখানে,আমি আসতাছি
তুষার-O.K
মোমিন-O.K,Bye
দৃশ্য-২
মোমিন-কি অবস্থা?আছিস ভাল?
তুষার-এইতো,তোর কি খবর?
মোমিন-হুম ভাল,চল লেকে গিয়ে বসি
তুষার-চল
(হাটতে হাটতে দুজনের মাঝে কথোপকোথোন)
মোমিন-দোস্ত,শোন,সামনে তো ২১শে ফেব্রুয়ারী,তাই ভাবতেছি একটা মঞ্চ নাটক করবো আমাদের Versity function এ
তুষার-হুম,ভাল তো কর,সমস্যা কি?
মোমিন-কিন্তু একটা স্ক্রিপ্ট তো লাগবে!
তুষার-যোগাড় কর
মোমিন-তুই তো লেখালেখি করিস,তুই একটা লিখে দে না!
তুশার-আরে ধুর,এখন হবে না,আগে বললে হত
(শাহরিয়ার এর প্রবেশ)
শাহরিয়ার-কিরে তোরা এইখানে,কি নিয়ে আলাপ করিস?
তুষার-আরে বলিস না,ঐ মোমিন ভাবতেসে একটা মঞ্চ নাটক করবে ওদের Versity তে ২১শে ফেব্রুয়ারী তে তাই,আমারে বলতেসে,একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখে দিতে…
শাহরিয়ার-তাহলে দে,সমস্যা কি?তুইতো ফ্রী আছিস
তুষার-আরে নাহ,হাতে আছে আর মাত্র ২০দিন,এর মধ্যে হয় নাকি?
মোমিন-ঐ নেওয়াজ রে ফোন দিচ্ছি মনে হয় ৩ ঘন্টা হইছে,অথচ শালার আসার নাম নাই।ওর সময় জ্ঞান কোন দিনই হবে না বলে আমার মনে হয়
তুষার-ঐ যে আসছে মিঃ লেটম্যান
নেওয়াজ-দোস্ত কান ধরতেছি,আর কোনদিন লেট করবনা,এই শেষ
তুষার-প্রতিদিন তোর এক প্যাচাল শুনতে ভাল্লাগে না,বাদ দে তো
মোমিন-যাই হক এখন স্ক্রিপ্ট এর কি হবে?
নেওয়াজ-কিসের স্ক্রিপ্ট?
তুষার-তোর জানা লাগবে না
নেওয়াজ-আরে বল না
শাহরিয়ার-আসলে হইসে কি,২১শে ফেব্রুয়ারীতে একটা নাটক করবে মোমিন,তাই আমাদের বলতেছিল আরকি
নেওয়াজ-তাহলে আমি একটা ভাল বুদ্ধি দিতে পারি,আমার বাসার পাশে একজন বৃদ্ধ লোক আছে,উনার বয়স প্রায় ৮০/৮৫ বছর।উনি এই বিষয়ে নিশ্চয়ই কিছু বলতে পারবেন,তাছাড়,উনি মুক্তিযোদ্ধা ও ছিলেন
মোমিন-দাড়া দাড়া,উনি কথা ঠিক মত বলতে পারেন তো?
নেওয়াজ-আরে পারে,উনার নাতনির সাথে একদিন গল্প করছিলেন,তখন আমি শুনছি
শাহরিয়ার-ও নাতনি!তার মানে কি নেওয়াজ,সামথিং!সামথিং!
(এক সাথে হাসি)
শাহরিয়ার-তবে যাই হোক,ও কিন্তু খারাপ বলে নাই
তুষার-তাহলে এক কাজ কর,এখনি চল,সময় তো আছেই
মোমিন-ওকে,চল তাহলে
দৃশ্য-৩
(বৃদ্ধের বাসার সামনে গিয়ে)
তুষার-আরে মেয়েটাতো সুন্দর আছে,আমার তো দেখতাছি পছন্দ হয়ে গেছে,কে এইটা?
নেওয়াজ-আরে এইটাইতো সেই নাতনি,দাড়া কথা বলিস না
এই কথা ভাল আছ?
কথা-হ্যা,ভাল আছি,আপনি ভাল আছেন?
নেওয়াজ- হ্যা,ভাল আছি,আমরা আসলে তোমার দাদুর কাছে আসছিলাম,উনি কি বাড়িতে আছেন?
কথা-না,আসলে দাদু তো নামাজ পড়তে গেছে……ঐ তো দাদু চলে আসছে
-আসসালামু আলাইকুম দাদু(সমস্বরে)
দাদু-ওয়ালাইকুম আসসালাম
নেওয়াজ-দাদু-ভাল আছেন?
দাদু-হ্যা,তোমরা ভাল আছ?
নেওয়াজ-জ্বী দাদু,আমরা আল্লাহর রহমতে ভালই আছি,আসলে দাদু আমরা আসছিলাম আপনার কাছেই,আমরা ২১শে ফেব্রুয়ারীতে একটা নাটক বানাবো,তাই আপনার সাহায্য লাগবে
দাদু-কি স্ক্রিপ্ট লাগবে তাই না?
মোমিন-Exactly দাদু
দাদু-(দাদু মৃদু হেসে)তোমরা বস,আমি আসছি…………এই কথা তুই ওদের সবাইকে চা দে
মোমিন-না,না ঠিকাছে দাদু,আমাদের কিছু লাগবে না
কথা-ঠিকাছে দাদু,আপনারা বারান্দায় এসে বসুন,আমি চা দিচ্ছি
(বারান্দায় যেতে যেতে)
তুষার-দেখলি,মেয়েটা কিন্তু বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল,মনে হয়,হয়ে গেছে মামা,হাঃ হাঃ
(সকলে বসার পর দাদু আসবেন)
দাদু-দেখো,দাদুরা আমার বয়স হয়েছে অনেক,অনেক কিছুই দেখলাম এ জীবনে,তোমরা হলে গিয়ে New Generation।তাই তোমাদের অবশ্যই জানতে হবে এ বিষয়গুলো,কিন্তু তোমরা আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও-এই যে আমরা ৫২তে ভাষা আন্দোলন করলাম,৭১এ মুক্তিযুদ্ধ করলাম।ছিনিয়ে আনলাম স্বাধীনতা,কিন্তু তারপরেও কি আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা কি সত্যি সত্যি স্বাধীনতা পেয়েছি?
(দাদুর চোখ অশ্রুসিক্ত,সবাই নিশ্চুপ)
(দাদু চোখ মুছে আবার শুরু করলেন)
দাদু-যাই হোক,তোমাদের যেহেতু স্ক্রিপ্ট লাগবে তাই বলছি শোন,প্রকৃত সত্য কাহিনী দিয়েই তোমরা তৈরী করবে স্ক্রিপ্ট
এখনও আমি চোখ বন্ধ করলে স্পষ্ট দেখতে পাই
১৪ই ফেব্রুয়ারী,১৯৫২ সাল,তোমরা এখন যাকে ভ্যালেনটাইনস ডে বল,ঐ দিন আমি,কবির,মামুন,নিশাদ,হাস্না,রাশিদা ও সাহানা এই বন্ঙবন্ধু কলেজ এ বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম,তখন সারা বাংলাদেশ এ ভাষা আন্দোলন নিয়ে তুমুল তোলপাড় চলছে,রেডিওতে শুনছি,এই নিয়ে ঢাকাতে নাকি অনেক কিছু হচ্ছে,সব জেলাতেই নাকি হচ্ছে,আমাদের গোপালগঞ্জেও হচ্ছে,তবে আমরা অবশ্য ওইসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতাম না,আমাদের বড় ভাইরা দেখতাম বেশ মিটিং মিছিল করত,তো যাই হোক আমাদের আড্ডা খুব জমে উঠেছিল,ঠিক তখন আমাদের Department এর দুজন সিনিওর ভাই আমাদের সামনে এসে হাজির
সিনিওর ভাই-১-কি ব্যাপার রফিক তোমরা এখানে বসে আড্ডা মারছো,অথচ এদিকে দেশের কত কি হয়ে যাচ্ছে,সে খেয়াল কি রাখো?
মামুন-আসলে ভাই আমরা ঐ সব পলিটিক্স পছন্দ করি না
সিনিওর ভাই-২-কি বললা,এই টা পলিটিক্স?তোমার মা তোমার কাছে পলিটিক্স?
কবির-কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলতেছেন ভাই?(রাগ করে)
সিনিওর ভাই-১-দাড়াও দাড়াও,শান্ত হও,আমি বুঝিয়ে বলছি,দেখ কবির,তোমরা হয়ত ভাল করে খোজ খবর রাখ না।তোমরা কি জানো যে,পশ্চিম পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্র করেছে যে,ওরা আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেবে,ওরা উর্দুকে আমাদের রাষ্ট্রভাষা করবে,অথচ দেখ জন্মের পর আমরা আমাদের মায়ের মুখ থেকে শুনেছি আমাদের এ মধুর ভাষা বাংলা।হেসেছি,কেঁদেছি,মনের অনুভূতি প্রকাশ করেছি এ বাংলা ভাষায়।তাহলে যে ভাষা আমরা আমাদের মায়ের মুখ থেকে পেয়েছি,সে ভাষা কি আমাদের মায়ের একটা অংশ নয়?আর এর জন্যই নাসির এ কথা বলেছে,দেখ সারা বাংলাদেশে আজ সকলে উঠে পড়ে লেগেছে এ বাংলা ভাষাকে আমাদের মাতৃভাষা I mean রাষ্টভাষা করার জন্য,আর আমরা কি করছি?
এখন তোমরা কি চাও না যে আমরা আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলি?
-অবশ্যই চাই(সমস্বরে)
সিনিওর ভাই-২-তাহলে এখন তোমরাই বল আমাদের সকলের কি উচিৎ না যে,আমরা সবাই এক হয়ে আমাদের মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন করি?
মামুন-অবশ্যই ভাইয়া,আমি এখন আমার ভূ্ল বুঝতে পারছি,I am extreamly sorry.কিছু মনে করবেন না
সিনিওর ভাই-২-না,না,ঠিক আছে,It’s okay.তোমরা যে বুঝতে পারছ এতেই আমি খুশি
সিনিওর ভাই-১-তাহলে এবার শোন সবাই,আগামি ১৮তারিখ আমাদের একটা মিটিং আছে,তোমরা সবাই থেকো
মামুন-ওকে ভাইয়া
দৃশ্য-৪
(১৮ তারিখ মিটিং এ)
সিনিওর ভাই-তাহলে শেষ কথা হল,আগামি ২১শে ফেব্রুয়ারী আমরা রাস্তায় বের হয়ে আমাদের প্রানের ভাষা বাংলার জন্য প্রতিবাদ করব,আর ঐ দিন সারা বাংলাদেশে আন্দোলন হবে,তোমরা সকলে এই কয়দিনে প্লে-কার্ড,ব্যানার শ্লোগান I mean সব কিছু প্রস্তুত রাখবা,আর হ্যা,রফিক তোমাদের দলের দায়িত্ব আমি তোমার হাতেই দিলাম
দৃশ্য-৫
রফিক-এই সাহানা,কই যাচ্ছিস?
সাহানা-এইতো ক্লাস শেষ,বাসায় যাচ্ছি
রফিক-শোন আগামিকাল তোরা সবাই আমার বাসায় থাকবি
সাহানা-কেন?
রফিক-কেন?মনে নাই?প্লে-কার্ড,ব্যানার বানাতে হবে না?
সাহানা-ও আচ্ছা,আচ্ছা,ঠিক আছে
রফিক-তুই বাকিদের খবর দিস,আমি যাই,সব কিছুর ব্যবস্হা করতে হবে
সাহানা-আচ্ছা,ঠিক আছে,তাহলে কালকে দেখা হচ্ছে
মামুন-কিরে,তোরা এখানে?
রফিক-ও তোকে পেয়ে ভালই হল,তুই সব জানিসই আগামিকাল সবাইকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আসিস,আমি আসি এখন
মামুন-ওকে (সকলের প্রস্হান)
দৃশ্য-৬
(২০ তারিখ সন্ধায়)
(রফিকের বাসায়)
(সকলে ব্যস্ত প্লে-কার্ড,ব্যানার বানানো নিয়ে)
(কাজ করতে করতে কথোপকোখন)
রাশিদা-এই শুনছিস,একটু আগে রেডিওতে শুনলাম যে,সারা বাংলাদেশে নাকি ১৪৪ ধারা জারি করছে,আগামিকাল বের হলেই নাকি গুলি চালাবে!
বাবর-আরে ওরকম কত কিছু বলে,এসবের কিছুই হবে না
নিশাদ-কিন্তু,সত্যি সত্যি যদি গুলি করে?
রফিক-তাহলে আর কি!সব মরে যাব!হাঃ হাঃ হাঃ
মামুন-শালা বিয়েটাই এখন পর্যন্ত করতে পারলাম না এর আগেই মরে যাব?হাঃহাঃ
সাহানা-দেখ,তোরা সিরিয়াস হ,দেশের জন্য যদি প্রান যায় তো দিলাম প্রান
(সবাই খুব গম্ভীর হয়ে যায়)
(কিছুক্ষন নিরবতা,তারপর……………)
কবির-আচ্ছা,আমরা সবাই আসলাম,কিন্তু হাসনা এখনও এলো না কেন?
সাহানা-ওকে দেখতে আসছে,ওর নাকি বিয়ে মোটামুটি ঠিক হয়ে আছে
মামুন-ও তার জন্যই কয়েকদিন যাবৎ ওনাকে দেখা যাচ্ছে না!
(সমস্বরে হাসি)
(এর মধ্যে হাসনার প্রবেশ)
(হাসনা খুব চিন্তিত মুখে,বোরকা খুলতে খুলতে)
হাসনা-এই বাইরে দিয়ে আসার সময় দেখলাম পুরা গোপালগঞ্জে মিলিটারিতে ভরে গেছে,এ ছাড়াও সকলে বলাবলি করছিল আগামিকাল নাকি ভয়ংঙ্কর কিছু হবে
রাশিদা-কি জানি ভাই,আল্লাহই জানে কি হয়?
রফিক-ঐ এইগুলাতে পেরেকগুলা মার তো
দৃশ্য-৭
(২১শে ফেব্রুয়ারী,সকাল ৮টা)
(সকলে জড় হয়েছে বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে,এখান থেকেই শুরু হবে মিছিল)
রফিক-তোমরা সকলে প্রস্তুত তো?
-হ্যা(সমস্বরে)
(সকলে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে যাবে,মিছিল করবে,হঠাৎ লাঠি চার্জ………নিশাদের মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়ে যাবে,মামুনের পা ভেঙ্গে যাবে,সাহানা জ্ঞান হারাবে)
(তখন স্টেজ হটাৎ করে অন্ধকার হয়ে যাবে)
দৃশ্য-৮
(এইটুকু বলে দাদু থামবেন,এরপর চোখের পানি মুছবেন)
দাদু-এখনও আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি
তুষার-তারপর কি হল দাদু?
দাদু-সব,সব শেষ হয়ে গেল,নিশাদ ওখানেই মারা গেল,মামুনকে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম,কিন্তু কোন কাজই হয় নি
কথা-আর বাকি সকলের দাদু?
(দাদু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলবেন)
দাদু-বাকীরা ভালই ছিল………………তারপর তো তোমরা জানই সারা বাংলাদেশে এরকম হাজারও ছাত্র আহত নিহত হয়,আর এর পর থেকেই তো বলতে গেলে শুরু হল যুদ্ধ(৫২ থেকে ৭১)শেষে ওরা আমাদের প্রবল মনোভাবের কাছে বাধ্য হয় হার মানতে,মেনে নেয় আমাদের দাবী
তবে তোমরা মনে রেখ,এ ভাষা শুধু আমাদের ভাষা নয়,লক্ষ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ ভাষা,ঐ দিন যারা শহীদ হয়েছিল তারা তো আমার বন্ধু ছিল না,তারা ছিল আমার ভাই,আমার ভাই…………আর তাইতো এখনও ২১শে ফেব্রুয়ারী এলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে……………
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভূ্লিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু ঝরানো ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভূলিতে পারি……………………”
(সবাই একসঙ্গে গেতে গেতে নাটিকাটি শেষ করবে)
(এরপর পর্দা পড়বে)