ছোট্ট ছানাটির জন্ম হল, তখনও হাঁটতে শেখেনি, ছানার মায়ের খুব চিন্তা হল! ‘এক বছর তো হয়ে যাচ্ছে তবু হাঁটছে না কেন ছোট্ট ছানাটি?’ ভাবতে লাগলেন ছানার মা! ‘কোন সমস্যা নয় তো!’ নাহ, কোন সমস্যা ছিল না, শুধু ছানাটিকে হাঁটতে শেখার সুযোগই দেয়া হয়নি, ছোট্ট ছোট্ট পা ফেলে হাঁটতে না শিখেই শুধু কোলে কোলে ঘোরাঘুরি! এই এত মানুষের পুরো বাড়িতে প্রথম ছোট্ট ছানা। সেই ছানাকে নিয়ে লেগে যেত হুড়োহুড়ি! কে কোলে নেবে, কার কাছে যাবে! একে দিলে সে নারাজ,ওকে দিলে অন্যকেউ! ছানার মা পড়ে গেলেন ভীষণ বিপত্তিতে। এর মধ্যে ছানাকে হাঁটতে শেখাতে হবে, মায়ের খুব ইচ্ছে ছানার প্রথম জন্মদিনে ছানার টুকটুকে লাল আলতা মাখানো পা নিয়ে ছানা হেঁটে হেঁটে সবাইকে অবাক করে দিক, আর ছানার বাবার শখ হল ছানার পায়ে ছোট্ট নুপুরের রুন ঝুন শোনার! কি করা যায়, কি করা যায়। ছানাকে কোলে নেবার প্রতিযোগীদের দায়িত্ব দেয়া হল ছানাকে হাঁটতে শেখানোর। অনেক আগ্রহ আর আনন্দ নিয়ে তাঁরা উঠে পড়ে লেগে গেলেন ছানাকে হাঁটতে শেখাতে... অবশেষে ঠিক জন্মদিনের আগের দিন, ছানা শিখে ফেলল হাঁটতে শেখা... সে থেকেই শুরু, ছানাটি হাঁটছে, আজ অবধি!
তাঁরপর অনেক গুলো বছর কেটে গেল! যে ছানাকে আগলে রাখা, সেই ছোট্টটি থেকে ধীরে ধীরে বড় করে তোলা, এপর্যন্ত নিয়ে আসা, যেখান থেকে সেই ছোট্ট ছানাটি মাথা উচু রেখে নিজের অস্তিত্বের জানান দিতে পারে! এমন ভাবে বাঁচতে শেখানো যেভাবে ছানাটি নিজের অভিমত, অভিমান, আত্মসম্মানবোধ নিয়ে বেড়ে ওঠে, পুরো জীবন সেই একই বোধগুলো নিয়ে কাটিয়ে দেয়... যাতে ছানাটিকে কখনো হারতে না হয়, কারও কাছে মাথা নত না করতে হয়! যাতে ছানাটি নিজের মহিমায়, নিজেকে আলোকিত রেখে জীবনের বাকি পথ গুলো কাটিয়ে দিতে পারে, নির্দ্বিধায়, আনন্দে, স্বেচ্ছায়...
উৎসর্গঃ বাবা, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষ। বাবা হলেই তো ভালবাসতে হয়, কিন্তু সত্যিই একজন সত্যিকারের বাবা হয়ে কজন পারে পাগলের মত তাঁর সন্তানকে ভালবাসতে? আমার বাবা, যিনি মানুষ হিসেবে শক্তিশালী, নিজের মননে, মেধায়! তবু খুব খুব বেশী দুর্বল শুধু একটি জায়গায় এসে! নিজে কারও কাছে হারবেন না বলে পণ করেন, সেই মানুষটি মেয়ের রাগ ভাঙ্গাতে গলে যান, গলায় দলা পাকায় কষ্টগুলো, গলা ভারী হয়ে আসে... মেয়েকে দূরে রাখতে এসে! বাবা, জানি, তোমার সমস্ত দুর্বলতা জুড়ে আমি আছি, তোমার সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আমি আছি, এটাও জেনো, আমার পুরোটা জুড়ে তুমিও আছো, আমি তো তোমারই মেয়ে।
মা, আমার জীবনের সবচে আপন, কাছের আর নির্ভেজাল বন্ধু। যিনি নিজেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আমাকে গড়েছেন। যার প্রতিটা আত্মত্যাগে ছিল আমার জন্য বাঁধানো কিছু সুখ! মা, তোমাকে ছাড়া জীবনে কোনদিন একা থাকতে হতে পারে, এটা চিন্তা করলেই আমার সমস্ত অস্তিত্ব বিদ্রোহ শুরু করে, চিৎকার করে ফুপিয়ে ওঠে কান্না গুলো। বাবা যেমন আমার পুরোটা জুড়ে আছে, ঠিক তেমন তুমি আমার পুরোটাই।
আমি আজ এই যে আমি, তা শুধু তোমাদের জন্য, আজকের এই দিনটির জন্য। আমি কৃতজ্ঞ তোমাদের কাছে, এই দিনটির কাছে। আর প্রতিবারের মতন এই যে এবারও তোমাদের প্রথম হবার নির্মল প্রতিযোগিতা, কে আগে উইশ করবে আমাকে, কে ফার্স্ট হবে, কি মিষ্টি একটা খেলা, জেনো শুধু এটার জন্যই আমি চাইবো আমি বাঁচি হাজার হাজার বছর, তোমাদের নিয়ে, যাতে প্রতিবার তোমরা খুনসুটি করতে পারো আমাকে আগে আগে উইশ করে ফেলার জন্য! আর আমি সেই মিষ্টি খুনসুটি দেখে মুগ্ধ হতে থাকি, আজীবন!