(দ্বিতীয় পর্বের পর)....চারদিন পার হয়ে যায়।এরিক মোবাইল ট্র্যাক করে মামাকে খুঁজে পায়না।সর্বশেষ লোকেশন দেখায় কয়েম্বাটুর।এরপর আর কোন খোঁজ নেই।আরও চারদিন পার হয়ে যায়।হঠাৎফোন দেয় জাহিদ। বলে, আমি মাদুরাই যাচ্ছি।শেলী জিজ্ঞেস করে, ‘এটা কোথায়?’ জাহিদ বলে,‘আরও দক্ষিনে।’
ব্যাস এতোটুকু।জাহিদ ফোন কেটে দেয়।এরিক অবাক হয়ে দেখে যে নাম্বার থেকে জাহিদ কল দিয়েছিল তা হচ্ছে 000000 বা ছয়টা শূন্য।কল আসার কথা ছিল ভারতীয় নাম্বার থেকে।অথচ এমন একটা সংখ্যা আসলো যেটা অবিশ্বাস্য।এরিক ভাবলো নিশ্চয় এটা কোন ইন্টারনেট কল ছিল।তারপরও খচখচানিটা মনের মধ্যে রয়ে গেল তার।
শেলী অপেক্ষা করে জাহিদ কখন কল দেবে।জাহিদ ফোন দেয়না।এক দিন দুইদিন করে ছয় দিন কেটে যায়।এরিক বারবার ট্র্যাক করার চেষ্টা করে।কিন্তু লাভ হয়না।মাদুরাই নামের অঞ্চলকে শো করেনা ডিভাইস।আট দিন, দশ দিন, বারো দিন পর ফোন দেয় জাহিদ।বলে মাদুরাইয়ের ডাক্তারগুলো ভালোনা।সে চেন্নাই যাচ্ছে।ওখানে ভালো কিছু হাসপাতাল আছে।সেখানকার ডাক্তারদের সাথে কথা হয়েছে ফোনে।তারা বলেছে কিছু ওষুধ দিলেই সেরে যাবে তার সব সমস্যা।শেলী প্রায় কেঁদে ফেলে।বলে,‘তোমার চিকিৎসার দরকার নেই।আমি তোমার চিকিৎসা ঢাকাতেই করাবো।তুমি চলে এস।’
‘এখন আর আসা সম্ভব নয়।’জাহিদ বলে।‘অনেক টাকা পয়সা চলে গেছে।আমি এখানেই চিকিৎসা করিয়ে ফিরবো।’
‘কিন্তু তোমার মোবাইল কোথায়?মোবাইল কি তুমি কোথাও রেখে এসেছো? তোমাকে দেখা যাচ্ছেনা কেন?’ শেলী বেশ উৎকন্ঠার সাথে জিজ্ঞেস করে।
জাহিদ ফোন রেখে দেয়।এরিক দিনের পর দিন ট্র্যাক করার চেষ্টা করে।বিফল হয়।শেষ লোকেশন কয়েম্বাটুরই দেখায় বারবার।জাহিদ এবার দীর্ঘসময় ফোন দেয়না।সবার ভেতর উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে।শেলী মুষড়ে পড়েছে একেবারে।মানুষের একটা ধৈর্য্ভসীমা আছে।এর বাইরে যখন কোনকিছু চলে যায় সে অস্থির হয়ে যায়।ষোল দিন পর জাহিদ সেই একই নাম্বার 000000 থেকে ফোন দেয়।শেলী প্রায় চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে,‘তুমি কোথায়?’
জাহিদ বলে,‘আমি চেন্নাই থেকে বিশাখাপট্টম যাচ্ছি।সেটা বেশ স্বাস্থকর জায়গা।ওখানে গেলে এমনিই রোগ সেরে যাবে।কোন অপারেশন লাগবেনা।’
‘কেন, চেন্নাইতে কি হয়েছে? এতোদিন কোথায় ছিলে?’শেলী উদগ্রীব হয়ে ওঠে।‘প্লিজ তুমি ফিরে এস।বাচ্চারা প্রতিদিন কান্নাকাটি করছে তোমার জন্য।’
‘এখন আর আসা সম্ভব নয় শেলী।’ জাহিদ দুর্বল গলায় বলে।‘এইতো কিছুক্ষন পর বিশাখাপট্টম ট্রেন থামবে।ফোন দিতে দেরী হলে চিন্তা করোনা।’
ফোন রেখে দেয় জাহিদ। শেলী দেশে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় কারন তার বাচ্চাগুলো তাকে না দেখে একেবারে মুষড়ে পড়েছে।দেড় মাসের বেশী সময় সে ঢাকাতে আছে।এই সময়ে জাহিদের ভাই আর ভাবী বাচ্চাগুলোকে তদারকি করছিল।তারা আর কতদিন এই বাচ্চাগুলোকে দেখেশুনে রাখবে?তাদের নিজেদেরও তো সংসার আছে।
শেলী দেশে ফিরে যায়।জাহিদ আর কোন ফোন দেয়না।ধীরে ধীরে উদ্বিগ্নতা কমে আসে সবার।কারন সবাই ব্যস্ত এই দুনিয়াতে।সবাই সবার পেটের দায়ে সকাল সন্ধ্যা পরিশ্রম করছে।কে কার খবর রাখতে পারে দীর্ঘসময় ধরে? এরমধ্যে জাহিদ আর ফোন দেয়না।একমাস পরে শেলী আবার ঢাকায় আসে তার বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে। উদ্বিগ্ন হয়ে স্বামীর খবর জানতে চায় শাহানার কাছে।শাহানা জানায় এর মধ্যে জাহিদ তাকে কোন ফোন দেয়নি।শুনে কান্না শুরু করে শেলী।ও ভেবেছিল শাহানা বুঝি তার কোন খবর জানে।
ঠিক যেদিন শেলী ঢাকায় এল সেদিন রাতে ফোন দেয় জাহিদ সেই 000000 নাম্বার থেকে।বলে,‘আমি বিশাখাপট্টম থেকে মুম্বাই এসেছি।অনেকদিন ইচ্ছা ছিল জুহু বিচ দেখার।অনেক ইচ্ছা ছিল শাহরুখ খানের বাড়ি মান্নত দেখার।তাই শখগুলো পূর্ন করছি।’
শেলী কাঁদতে কাঁদতে বললো,‘তুমি তো তোমার শখগুলো পুরন করছো।তুমি জানো আমরা কি অবস্থায় আছি?আমরা বলতে গেলে না খেয়ে আছি।দোকানটার সব মাল তুমি বিক্রি করে দিয়ে গেছ।বাড়িতে কোন টাকা নেই।আমরা কি করবো?বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তুমি তাকালেনা।গেলে চিকিৎসার নাম করে এখন ঘুরে বেড়াচ্ছো সারা ইন্ডিয়াতে।’
লাইন কেটে দেয় জাহিদ।..(চলবে....শেষাংশ খানিক পরই প্রকাশিত হবে।)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯