আমার নাম লালু। নদীর তীরবর্তী সুন্দর এক গ্রাম যার নাম রসুলপুর, সেখানেই আমার জন্ম। এই রসুলপুর বাংলাদেশের কোথায় আমার জানা নেই কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এই বিশাল দেশের ভেতর এটাই সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম যা আমার ছোট্ট জীবনে আমি দেখেছি। আমার নাম লালু আমি জেনেছি কারন আমার মালিক জব্বর মোল্লা আমাকে ঐ নামে ডাকতো। যখন ছোট ছিলাম তখন কিছু বুঝতামও না। মায়ের চারপাশে চারটি ছোট কচি পায়ে নাচানাচি করতাম, আবার উল্টে পড়ে যেতাম। মা তখন আমাকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে আবার দাঁড় করিয়ে দিতো। ছোটবেলায় মায়ের দুধের বাঁটের প্রতি যে পরিমান আগ্রহ ছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা। মায়ের দুধ ছিলো আমার জন্য নহর। কিছুন পর পর আমি দৌড়ে যেতাম মায়ের কাছে আর চুক চুক করে খেতাম মায়ের বাঁটের দুধগুলো। কি অসাধারন সেই স্বাধ যে স্বাধ আজও আমার জিভে লেগে আছে।
একটু বড়ো হতেই মা যেন দুরে সরে গেল আমার কাছ থেকে। যখনই দুধ খেতে যেতাম তখনই শিং নেড়ে তেড়ে আসতো আমার দিকে। মাকে তখন থেকেই ভয় আমার। বুঝেছি মা আমাকে আর তার দুধ খেতে দেবেনা। কারন আমি বড়ো হয়ে গেছি। আমার বয়স এখন এক বছর। মা চায় আমি এখন ঘাস লতা পাতা খাই। কিন্তু কি করি? আমি তো দুধ ছাড়া আর কিছুই খেতে পারিনা। আমার খালি টান মায়ের দুধের বাঁটের দিকে। নাহ বুঝেছি মা আমাকে আর তার দুধ খেতে দেবেনা। কিন্তু কি আশ্চর্য! ্ওই লোকগুলো যখন মায়ের দুধ টেনে টেনে দুইতে থাকে তখন মা একটুও হইচই চিল্লা চিল্লি করেনা। জব্বর মোল্লার বউ একটা বালতি নিয়ে প্রতিদিন মায়ের দুধ দুয়ে নিয়ে যায়। আর মা তখন খড় চিবুতে ব্যস্ত থাকে। আর আমি কিনা দুধ খেতে গেলেই যতো বিপত্তি!
একটা অভিমান গড়ে ওঠে আমার বুকের ভেতর। না, আজ থেকে আমি আর মায়ের দুধ খাবোনা। একদম খাবোনা। সত্যি বলছি একদম খাবোনা। আমার মা চায়না আমি তার দুধ খাই। মা চায় আমি ঘাস লতাপাতা আর খড় খাই। আর এবাড়ির সবাই আমাকে অবশ্য তাই খাওয়াতে চায়। মায়ের মতো আমাকেও এরা ঘাস লতাপাতা আর ভুষি এনে খাওয়ায়। এখন অবশ্য ওসব খেতে আমার একটুও খারাপ লাগেনা। বরং মায়ের দুধের মতোই মনে হয়। এটা বোধহয় বয়সের একটা হিসাব।
আমি একটু বড়ো হতেই এ বাড়িতে একটা কাজের লোক এসে গেল। লোকটার কাজ হলো আমাকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যাওয়া। কাছেই অনেক বড়ো একটা মাঠ আর সেখানে আমাকে আর তিনটা ছাগল নিয়ে প্রতিদিন চলে যায় ছেলেটা। সেখানেই সারাদিন কেটে যায় আমার। কখনো গাছের নিচে বসে বসে জাবর কাটা, কখনো নদীর হাঁটু পানিতে লাফ ঝাঁপ, আবার কখনো ছাগলদের সাথে গুঁতোগুঁতি। রাখাল গাছের তলায় বসে কখনো বাঁশি বাজায়, আবার কখনো চোখের সামনে কি যেন ছোট একটা বই মেলে ধরে পড়ার চেষ্টা করে। কোনদিন দুপুরে থালাভরা ভাত নিয়ে যখন খেতে বসে আমি মাঝে মাঝে কাছে গেলেই লোকটা কিছুটা ভাত আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে বলে নে খা।
এভাবে আরো অনেক দিন কেটে গেল। গায়ে গতরে বেশ বড়ো সড়ো হয়ে উঠলাম আমি। এখন আমাকে দেখলে কেউ বলবেনা আমি সেই এক বছর আগের জীর্ণ শীর্ণ লালু যে সকালে উঠেই মায়ের দুধ খাবার জন্যে পাগল হয়ে যেত। মায়ের প্রতি এখন আমার সেই আগের টানটা নেই। আমি যেন নিত্য অন্য কিছুর খোঁজ করি যা আমি পাইনা। কি যেন খুঁজি, কি যেন চেয়ে বেড়াই প্রতিদিন। মাঠটায় গেলে আমি কি যেন ভাবি, আমি নিজেও বুঝিনা। মনে হয় খাবার বা খেলাধুলা নয়, এর চেয়েও বেশি খোঁজ করে আমার মনটা। না না, এ মায়ের দুধ নয়। রাখালের বাঁশির সুরও নয়। ঘাস লতাপাতা নয় বা কোন খড়ের ঢিবিও নয়। অন্যকিছু।
বিশাল মাঠটাতে যখন রাখল বালক বসে বসে বাঁশি বাজাত আর চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকতো আমি তখন একা একা চলে যেতাম দুরে। মাঠের ঠিক মাঝখানে ছিল একটা বড়োসড়ো বাগানের মতো একটা জায়গা। বিশাল বিশাল সব গাছপালা আর লম্বা লম্বা ঘাস ছিল সেখানে। আমারও প্রিয় জায়গা ছিল সেটা। চারপাশে যখন কঠিন রোদ আর গরম, সেখানে বেশ ঠান্ডা থাকতো। আমিও সারাদিন সেখানে বসে বসে জাবর কেটে ফিরে আসতাম সন্ধার ঠিক আগে আগে।
একদিন এভাবে দুপুরের দিকে ভরাপেট নিয়ে মরুদ্যানের মতো জায়গাটায় বসে আছি ঠিক সেই সময় আমার পিছনে খসখস একটা শব্দ পেলাম। কিছু যেন আমার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি মাথা ঘোরাতে দেখলাম একটা ছোট গরু দাঁড়িয়ে আছে আমার পেছনে। বিশ্মিত দৃষ্টি আমার দিকে। তারচেয়েও বিশ্মিত হলাম আমি নিজে। এতোদিন এখানে চরে বেড়াই অথচ এই গরুটাকে আজই প্রথম দেখলাম। একটা গাভি । বয়সেও আমার চেয়ে কম হবে। আমি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। আমার ঘাড়ের লোমগুলো খাড়া হয়ে উঠেছে। কি যেন একটা ছড়িয়ে পড়লো আমার মস্তিস্কের রন্ধে রন্ধে। আমার সারা শরীরে একটা শিহরন। বুঝতে পারলাম এতোদিন ধরে আমি যা চাইছিলাম তা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় থাকো তুমি?
সে বললো, আমি দনি দিকে গ্রামটায় থাকি, তুমি?
আমি থাকি উত্তরের গ্রামে।
কি নাম তোমার? সে জিজ্ঞেস করলো।
আমার নাম লালু। তোমার?
আমার নাম চম্পাবতী।
চম্পবতী! খুব সুন্দর নামতো! আমি তো তোমাকে কখনও দেখিনি চম্পবতী!
আমি তো সচরাচর এদিকে আসিনা। আমার মা আমাকে এদিকে আসতে দেয়না।
আজ আসলে যে!
দুর থেকে তোমাকে দেখতে পেয়েই এসেছি।
খুব ভালো কথা। এসো আমার পাশে বসো। দু’জন মিলে ঘাস খাই।
চম্পাবতী আমার পাশে বসলো। আমরা দু’জন মিলে ঘাস খেতে লাগলাম। অনেক কথা বললাম সেদিন আমরা। আমার মনের ভিতর যে একটা কষ্ট ছিলো তা নিমেষে কেটে গেল চম্পবতীর ছোঁয়ায়। আমি ওকে কথা দিলাম যে আমি আবার কাল দেখা করবো তার সাথে।
একইভাবে আমরা পরেরদিনও দেখা করলাম। চম্পবতী বললো, তার মা তাকে জিজ্ঞেস করেছে সে কোথায় যায়। সে বলেনি।
বিষয়টা নিয়ে আমিও চিন্তিত। আমার মালিক যদি জানে বা রাখাল বালক যদি টের পায় তাহলে হয়ত: আমাকে আর এদিকে আসতে দেবেনা। আর আমার এই মরুদ্যানে আসা হবেনা। কিন্তু না, কেউ টের পেলনা। আমি একটা মাস মনের আনন্দে চম্পবতীর সাথে খোস গল্প করলাম। একসাথে বসে ঘাস খেলাম, গল্প করলাম। আমার দুই বছরের নানা গল্প। চম্পবতীও তার কথা বললো।
আমাদের নিয়েও কেউ মাথা ঘামালোনা। আসলে গরুদের জীবনটাই এমন। আমাদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। মানুষদের প্রতি আমার বেশ কৃতজ্ঞতা আছে। এই দুইপেয়ে জীবগুলো কেন আমাদের এতো কষ্ট করে লালন পালন করে? কেন আমাদের এতো খরচ করে বড়ো করে? কেন মানুষেরা এতো নি:স্বার্থ? এটা কি শুধু আমাদের কিছুটা দুধ নেয়ার জন্যই আমাদের খাওয়ায়? নাকি গরু ছাগল পালতে পছন্দ করে?
আরও এক বছর কাটলো। আমি এখন পুর্নাঙ্গ একটা ষাঁড়। আর চম্পবতী বেশ ছোট সাইজের একটা গাভি। সেই দিনের পর থেকে একদিনের জন্যও চম্পাবতীকে আমি কাছছাড়া করিনি। চম্পাবতীও একদিনের জন্য অন্যদিকে যায়নি। এরমধ্যে একটা ঘটনা ঘটলো যেজন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা আমি। আমাদের গোয়ালের পাশেই থাকতো সেই তিনটা ছাগল। একদিন দুপুরে হঠাৎ বলা কওয়া নেই জব্বর মোল্লা একটা ছাগলের গলায় দড়ি বেঁধে টানতে টানতে কোথায় নিয়ে চলে গেল। বাকি দুটো ছাগল অনেকন ধরে চিৎকার করে ডাকাডাকি করেও কোন উত্তর পেলনা। পরে জব্বর আলি নিজে ফিরে এলেও ছাগলটা ফিরে এলোনা। সারারাত ধরে সতু আর পতু কান্নাকাটি করলো তাদের বাবার জন্য কিন্তু বাবা ফিরে এলোনা আর। আর কোনদিনই সতু আর পতু তাদের বাবার দেখা পায়নি। এই ঘটনায় আমরাও বেশ অবাক হয়ে গেলাম। সতু পতুর বাবাকে কোথায় নিয়ে গেল লোকটা? এ ব্যপারে জব্বর আলিকে জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পেলামনা কারন লোকটা হয়ত আমার এই জিজ্ঞাসাটাকে কেবল হাম্বা হাম্বা ডাকই মনে করলো।
আমাদের গোয়ালে ছিলাম আমি, আমার মা, আমার খালা রতœা, আরেকটা গাভি সমু। এই চারজনা। চারজনাই বেশ চিন্তিত হয়ে উঠলাম সতু পতুর কান্নাকাটিতে। গোয়ালের নিরিবিলি পরিবেশে একটা আপদ নিয়ে এলো জব্বর মোল্লা নামের লোকটা। তখন থেকে জব্বর মোল্লাকে এড়িয়ে চলতে লাগলাম আমি।
চম্পাবতীকেও জানালাম আমি এই ঘটনাটা। মানুষদের প্রতি চম্পাবতীর ধারনাটাও বেশ অদ্ভুত। মেয়েটা ভাবে মানুষ বিনা স্বার্থে তাদেরকে লালন পালন করেনা। এর পেছনে নিশ্চয় একটা কারন আছে। কারনটা আমি আর ভাবতেও চাইনা। চম্পবতীকে পেয়েছি এইই ঢের। সে আমার জীবনে একটা বিশেষ অধ্যায়।
আমার ইচ্ছে চম্পাবতীকে নিয়ে যেভাবে দিন চলছে সেইভাবে বাকি জীবনটা কেটে গেলেই চলবে। বাকি পথে কি আছে বা না আছে তা জেনে কি করবো? আমরা গরু। আমাদের জীবনটাই এমন। মানুষ শুধু আমাদের খাইয়ে খালাস। আমাদের যে একটা জীবন আছে এবং এই জীবনে যে আরও কিছু প্রয়োজন সেটা তারা কিভাবে বুঝবে? এটা চম্পার কথা। ওকে ইদানিং আমি চম্পা বলে ডাকি। মানে ডাকতে ইচ্ছা হয়। খুব সুন্দর একটা নাম। খুব সুন্দর একটা গরু সে। অনেক আগে থেকেই আমি ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। ইদানিং আমার মনের কথাটা তাকে আমি বলেছি। সে হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে থেকেছে। তারমানে সেও আমার ব্যপারে ঠিক এই কথাটা ভাবে। আমি এখন তাকে ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করতে পারিনা। সে আমার জীবনের একটা অধ্যায় হয়ে আছে।
এরমধ্যে আরও একটা ঘটনা ঘটলো যেটার কারনে মানব জাতীর প্রতি আমার ধারনাটা বেশ বদলে গেল। দুপুর টাইমটা আমার আর চম্পার একান্ত নিজের একটা সময় যখন আমরা দুজন পাশাপাশি বসে জাবর কাটতে কাটতে নানা কথা বলি। বেশীরভাগই আমাদের জীবনের কথা। ভবিষ্যতের চিন্তাগুলো কিভাবে পরিপূর্ন রূপ লাভ করবে তাই নিয়ে আমরা দুজন বেশ ব্যস্ত থাকি। এমনিভাবে গতকালও আমরা বসেছিলাম। ঠিক তখনই দেখতে পেলাম জব্বর মোল্লাকে। জব্বর মোল্লার সাথে আরেকটা লোক আছে। গলা ফুলিয়ে কি যেন সে জিজ্ঞাসা করছে রাখালকে। রাখাল হাত তুলে আমাদের দেখালো। আর সাথে সাথে জব্বর আমাদের দিকে হেঁটে আসতে লাগলো। চম্পা কিভাবে যেন সব বুঝতে পারলো। ও উঠে দাঁড়ালো। আমাকে বললো সে চলে যেতে চাইছে। কারন লোকদুটোর হেঁটে আসা সে কোনভাবে ভালো মনে করছেনা। আমিও তাকে সরে যেতে বললাম। আমার কাছে এসে দাঁড়ালো দুজন। জব্বর আমার কান ধরে আদর করে কি যেন সব বললো লোকটাকে। লোকটা আমার গায়ে থাপ্পড় মেরে, আমার রান টিপে টাপে কি যেন দেখলো। আমার ভীষন রাগ হলেও আমি কিছু বললামনা। এরপর লোকটা যা করলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা আমি। লোকটা পেছন থেকে আমার বিচিটা চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো,“বলদ!” আর আমিও এমন হতচকিত হয়ে পড়লাম যে লাফিয়ে উঠেই পা ছুঁড়লাম পেছন দিকে। আর এক লাথিতেই লোকটা ধপাস করে পড়লো পেছনে। আর সেই সাথে আর্তনাদ। লাথি মেরেই আমি ছুট দিলাম সামনে। জব্বরও আমাকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হলো। ছুটতে ছুটতে একবারে বনের কিনারায় এসে পড়লাম। চম্পা দাঁড়িয়েছিল সেখানটাতে। আমাকে ছুটতে দেখে সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? আমি জবাব দিতে না পেরে আবার দৌড়ালাম। জব্বর আমার পেছনে ছুটছে।
সেদিন রাতে অন্যরকম লাগলো আমার কাছে। এই মানুষগুলো তাহলে আমাদের সাথে বিশেষ কারনে ভালো ব্যবহার করে। নিজেদের স্বার্থে তারা আমাদেরকে ব্যবহার করে। আমি মায়ের সাথে এই ব্যপারে কথা বলতে চাইলাম কিন্তু মা আমার সাথে কোন কারন বশত কথা বলতে চাইলোনা। যাইহোক এরপর কয়েকটা দিন আমি খুব একা একা থাকলাম। মাঠে গেলেও চুপচাপ বসে থাকলাম। দুটো দিন চম্পাকেও দেখলামনা। এর পরদিন চম্পা এলো। ও খুব অবাক হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো সেদিন কি হয়েছিলো। আমি বললাম আমি জানিনা। ও বললো মানুষ খুব স্বার্থপর প্রানী। এদের থেকে দুরে থাকতে হবে। কিন্তু দুরে থাকি কিকরে? এরা বাড়ি বানিয়ে না দিলে আমরা কি মাঠে থাকবো?
আমি চম্পাবতীকে ছাড়া থাকতে পারিনা তাই যতো দুশ্চিন্তা মনে থাকুকনা কেন আমি আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলাম। আবার আগের মতোই তার সাথে গল্প করতাম। মাথা দিয়ে ঢুঁ মেরে দুষ্টুমি করতাম চম্পার সাথে।
কিন্তু যদি জানতাম এতো সহজে জীবনটা শেষ হয়ে যাবে আমার তাহলে আর জীবন নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখতামনা। সেই ঘটনার দিন পনেরো পর আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। সকালবেলা আমি মায়ের সাথে কিছুটা গুঁতোগুতি আর দুষ্টুমি শেষে চলে গেলাম মাঠে যেখানে রাখাল আমাকে নিয়ে ছেড়ে দিলো আর আমি হেঁটে হেঁটে গেলাম মরুদ্যানটায়। চম্পাবতী আজ একটু আগেভাগে চলে এসেছে। ওকে একটু ভীত আর সন্ত্রস্ত মনে হলো। ও বললো ওর বাবাকে যেন কোথায় নিয়ে চলে গেছে ওর মালিক। গত দুদিন ধরে ওর মা নাকি খুব কাঁদছে। চম্পাবতীও এই জন্য দুদিন আসেনি। ওর মনেও অনেক কষ্ট। আমি চম্পাকে সান্তনা দিলাম। একদিন না একদিন ওর বাবা ফিরে আসবে। মানুষ তো আর বাঘ ভালুক না যে তার বাবাকে মেরে মাংশ খেয়ে ফেলবে।
আমরা দুপুরের দিকে বসে বসে গল্প করছিলাম যখন জব্বর মোল্লা এসে আমাকে নিয়ে গেল বাড়িতে। আমিও চম্পাবতীকে তাড়াতাড়ি বিদায় জানিয়ে চলে এলাম। বাড়িতে এনে আর দেরি করেনি লোকটা। আমার গলায় দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে এলো বাইরে। আমি অবাক হলাম। আজ লোকটাকে ভয়ানক মনে হচ্ছে। দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে মাও কাঁদছে। মা যেন কিছু আঁচ করতে পেরেছে এমনি ভাব।
জব্বর আমাকে অনেক পথ হাঁটিয়ে নিয়ে এলো একটা হাটে। এখানে প্রচুর মানুষ। কাউকে চিনিনা আমি। এই হাটেও রয়েছে অনেক গরু। কেউ চিৎকার করছে আবার কেউ উচ্চস্বরে কাঁদছে। কিন্তু মানুষজনকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। জব্বর আমাকে আরেকটা লোকের কাছে দিয়ে একবার পিছন ফিরে তাকিয়ে চলে গেল। এদিনই আমি শেষ বারের মতো এই এলাকা থেকে চলে এসেছিলাম। সেদিনই ছিল চম্পবতীকে শেষ বারের মতো দেখা, মাকে শেষ বারের মতো দেখা, সেই মাঠ, আমার জন্মভুমিকে শেষবারের মতো দেখা। আমি জানতামনা কতো দ্রুত আর কতো নিষ্ঠুরতার সাথে শেষ হয়ে যাবে আমার জীবন।
এখান থেকে অন্য আরেকটা লোক এসে আমাকে নিয়ে বড়ো একটা গাড়িতে তুললো। জীবনে প্রথমবারের মতো গাড়ি দেখলাম তাই মনে অনেক ভয় সত্তেও গাড়িটাতে উঠলাম আমরা দু তিনটা গরু। গাড়িতে করে বেশ কিছুদুর নিয়ে যাওয়া হলো আমাদের। এতো গাড়ি নয় যেন সাাত মরন। আমাদের দাঁড় করিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাই গাড়ি যখন চলছিলো তখন কিছুতেই দাঁড়াতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো পড়ে যাবো নিচে। তারপরও অনেক কষ্টে পৌছুলাম আমরা একটা নদীর ধারে। জীবনে এই প্রথমবারের মতো এতো বড়ো নদী দেখলাম। এতো বড়ো আর গভীর নদী আমি কোনদিন দেখিনি। আমাদের একটা একটা করে টেনে নিয়ে যাওয়া হলো ঘাটের কাছে তারপর তোলা হলো নৌকায়। বেশ বড়ো নৌকা। প্রায় সারাদিন ধরে নৌকা চললো কিন্তু আমাদের পেটে খিদে থাকা সত্তেও কেউ কিছু দিলনা আমাদের। মনে হলো ভয়ানক কোন ডাকাতের পাল্লায় পড়েছি আমরা। আমি তো প্রতিদিন এক নিয়মে চলে অভ্যস্ত। খিদে পেলেই ঘাস চিবুই। তেষ্টা পেলে নদীর পানি খাই। এখানে কাউকে চিনিনা। কেউ আমাদের দিকে তাকাচ্ছেও না। সন্ধ্যার দিকে যাত্রা শেষ হলো। খুব কান্ত দেহে আমাদের কিছু খড় আর ভুষি খাইয়েই আবার তোলা হলো বড়ো একটা গাড়িতে। এবার শুরু হলো আরেকটা পথে যাত্রা। এ যাত্রার বুঝি কোন শেষ নেই। এই কান্তির বুঝি নেই কোন বিশ্রাম। শুধু চলা আর চলা। সারারাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম আমরা সেই গাড়িতে। হু হু করে চলছে ট্রাক। ঠান্ডা বাতাসে প্রান যায় যায় অবস্থা। দুটো গরু না পেরে বসে পড়লো। আরেকটা গরু প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে গেল। আমি কেবল শক্ত সমর্থ হওয়ায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। সারারাত কোন খাওয়া নেই বিশ্রাম নেই। সকাল বেলা থামলো ট্রাক। প্রায় জমে যাওয়া আমাদেরকে নামানো হলো নিচে। আমি অনেক কষ্টে দাঁড়াতে পারলেও বাকি গরুগুলো দাঁড়াতে পারলোনা। একটা পড়ে গিয়ে ছটফট করতে লাগলো। দুজন লোক ছুটে গিয়ে একটা ছুরি আনলো তারপর গরুটার গলা কেটে দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। চিৎকার করতেও ভুলে গেছি। লোকদুটো নিশ্চয়ই ডাকাত। ডাকাত না হলে গরুকে জবাই করবে কেন? গল গল করে গরুটার গলা দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে।
বেশিন সেই দৃশ্য দেখতে পেলামনা। আমাকে আর আমার সাথে আরও তিনটে গরুকে আলাদা করা হলো। নিয়ে যাওয়া হলো আরেকটা হাটে। এই হাটটা এতো বড় আর এতো গরু একসাথে আমি কখনও দেখিনি। বিশাল একটা মাঠ। মাঠটাকে বৃত্তাকারে ঘিরে আছে বড়ো বড়ো সব বাড়ি। এখানকার মানুষগুলোকে একটু আলাদা বলে মনে হলো আমার। কারন এদের পোশাক আশাক গ্রামের মানুষের মতো নয়। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বাড়ির জন্য খুব ব্যথা লাগছে মনে। মাকে ছাড়া একটা রাত কেটে গেছে আমার। খালাকে দেখিনি, চম্পাবতীকে দেখিনি। বুকের ভেতর এক অজানা কষ্ট। এই অচেনা জায়গাতে কেন নিয়ে আসা হয়েছে আমাদের? এতো গরু কেন এক জায়গায় জড়ো করা হয়েছে?
আমাকে একটা বাঁশের সাথে বাঁধা হলো। আমার সামনে রাখা হলো একগাদা খড় আর ভুষি মেশানো পানি। খুব ুধার্ত ছিলাম তাই দেরি করলামনা। গোগ্রাসে খেতে লাগলাম।
এই জায়গায় আমার গলার সাথে যে দড়িটা লাগানো হলো সেটা এতো ছোট যে আমি ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিলামওনা। এরই মধ্যে মানুষজন আমাকে টিপে টিপে দেখতে লাগলো যেন আমি একটা জ্যান্ত কুমড়া। ইচ্ছে হচ্ছিল দেই একটা লাথি। কিন্তু মানুষদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা থাকাতে আমি তা পারলামনা। ইচ্ছে করলে এই দড়ি ছিঁড়ে চলে যেতে পারতাম আমি। আমাকে ধরে রাখে এতো শক্তি কার আছে? কিন্তু তাদের প্রতি ভালোবাসা আমাকে তা করতে দিলোনা।
কিভাবে যেন আরও একটা দিন ওখানেই থাকলাম আমি। দু দুটো দিন আমার পরিচিত কাউকে দেখতে না পেয়ে আমি উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলাম। কিন্তু আমি জানি কেউ আমার এই কান্না বুঝলোনা।
তৃতীয় দিন আমাকে দড়িমুক্ত করা হলো। যে লোকটা আমার দেখাশোনা করছিলো সে আমাকে তুলে দিলো নতুন একটা লোকের হাতে। এই লোকটা কিছু কাগজ দিলো আগের লোকটাকে। এই কাগজগুলো এর আগেও আমি দেখেছি। প্রথম মালিক জব্বর মোল্লা যখন আমাকে দ্বিতীয়জনের হাতে দিলো তখন দ্বিতীয়জন প্রথম মালিককে এরকম কিছু নোট কাগজ দিয়েছিলো। যাইহোক, লোকটা আমাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। তার সাথে আরও দুজন লোক ছিলো যারা আমি দাঁড়িয়ে পড়লেই পেছন থেকে লেজটা মুচড়ে ধরে ঠেলা দিচ্ছিল বারবার। আমি নিজেও বুঝতে পারছিলামনা কোনদিকে যাবো। তাছাড়া কিছু কিছু যন্ত্র আর গাড়ি পাশ দিয়ে উচ্চস্বরে আর্তনাদ করতে করতে যাচ্ছিল যাদের দেখে চমকে উঠছিলাম বারবার। বুঝতে না পেরে লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম কোনদিকে যাবো। লোকটা কিছুই বুঝলোনা। সে আমার কথার কোন জবাব দিলোনা।
অনেক পথ হেঁটে আমি একটা বাড়ির সামনে পৌছুলাম। সারাটা পথ শুধু গরু আর গরু। গ্রামে থাকতেও আমি এতো গরু একসাথে দেখিনি। কোন গরু ছুটছে, কোন গরু পড়ে যাচ্ছে, কোনটা শুয়ে আছে রাস্তার ধারে। কোনটা আমার পাশে পাশে হাঁটছে। আমাকে যে ছোট মাঠের সামনে এসে দাঁড় করানো হলো সেখানেও আট দশটা গরু দাঁড়িয়ে বসে জাবর কাটছে। চারপাশে অনেক লোক রয়েছে। কেউ বসে বসে দেখছে আমাদের, কেউ বা খাবার বাড়িয়ে দিচ্ছে, আবার কেউবা এগিয়ে এসে ভয়ে ভয়ে হাত বুলাচ্ছে অনেক গরুর গায়ে।
আমাকে এককোনে বেঁধে রাখা হলো। এখানে বসে রইলাম প্রায় একটা দিন আর একটা রাত। আমার মতো সব গরুদের আনা হয়েছে অন্যান্য জায়গা থেকে। তারা কেউই এই জায়গার বাসিন্দা নয়। আমি প্রথম প্রথম কয়েকটা গরুকে জিজ্ঞেস করেও উত্তর পেলামনা। তারাও জানেনা কেন তাদেরকে এখানে এভাবে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমাদের ভেতর একটা ষাঁড় বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। সে চেঁচিয়ে উঠে বললো,‘আমরা এখানে থাকবোনা। তোমরা আমাদের বলো এখানে আমাদের কেন বেঁধে রেখেছো?’
কে উত্তর দেবে? মানুষগুলোর ভাব দেখে মনেও হলোনা যে তারা গরুটার কথা শুনতে পেয়েছে। আমি তাকে বললাম সে যেন চুপ করে থাকে। আমার কথা শুনে সে আরও রেগে উঠে চেঁচাতে থাকলো। কয়েকটা মানুষ এসে তার সামনে একটা পানির বালতি রেখে গেল। এটা দেখে সে আরও গেল েেপ। গরুদের ভাষায় সে গালি দিতে লাগলো মনুষ্য জাতিকে। এর মধ্যে ভিতু টাইপের একটা গরু আমাকে জিজ্ঞেস করলো,‘আচ্ছা ভাই, মানুষ কি গরু খায়?’
আমি নিজে তো কখনও দেখিনি যে মানুষ গরু খাচ্ছে। তাই তাকে বললাম,‘আমার মনে হয় না মানুষ গরু খেতে পারে। তাছাড়া যদি খেত তো আগেই খেত। আমাদের এখানে দাঁড় করিয়ে রাখতোনা। সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়ে কামড়ে খেত।’
ভিতু গরুটা মাথা নাড়লো,‘ঠিক বলেছো। তোমার কথায় যুক্তি আছে।’
কিন্তু একদিন পরই বুঝতে পারলাম যে আমার ধারনা ভুল। শুধু ভুল নয়, সম্পুর্ন ভুল। সেই সাথে মানুষদের প্রতি ধারনাটা বদলে গেল পুরোপুরি। সকাল থেকেই আমাদের গোসল করানোর ধুম পড়ে গেল। মানুষজন এসে বড়ো বড়ো গামলায় করে পানি নিয়ে আমাদের গোসল করাতে লাগলো। চরম শীতের ভেতর ঠান্ডা পানিতে গোসল আর খোলা মাঠে বাতাসের ধাক্কায় আমরা জমে গেলাম। প্রত্যেকটা গরু হি হি করে কাঁপছে আর লাফাচ্ছে আতংকে। আমাদের কষ্ট দেখে ছোট ছোট মানুষের বাচ্চারা হাসতে লাগলো, আনন্দে লাফাতে লাগলো। আমি বুঝতে পারলাম, মানুষ আসলে মানুষ নয় দুপেয়ে পিশাচ প্রজাতির প্রানী কিন্তু ছদ্মবেশ ধারন করে থাকায় তাদের চেনা যায়না।
খানিক পরেই আরও অনেক মানুষ ঢুকলো মাঠটার মধ্যে। দুজন সাদা টাইপ পোশাক পরা। তাদের মাথায় সাদা কি যেন রয়েছে যার জন্য তাদের চুল দেখা যাচ্ছেনা। তাদের হাতেও কি যেন রয়েছে লম্বা মতো। আমরা তখনও বুঝিনি কি ঘটতে যাচ্ছে। সবাই যখন একটা বড়ো গরুকে দড়ি দিয়ে পা বেঁধে মাটিতে শোয়ালো আমরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম সেদিকে। বড়ো গরুটা হতভম্ব হয়ে গেছে তাকে মাটিতে শোয়ানো হচ্ছে দেখে। সে বারবার উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করছে,‘আমাকে কি করবে তোমরা?’ কিন্তু কেউ বুঝতে পারছেনা বা বুঝেও কোন উত্তর দিচ্ছেনা।
সাদা কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকা আর মাথায় সাদা কাপড়ের টুকরো পরা লোকটা এগিয়ে এলো। তারপর হাতের লম্বা জিনিষটা তার গলার ওপর রেখেই টান দিলো। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এলো রক্ত। বড়ো গরুটা ছটফট করছে কিন্তু পারছেনা কারন মানুষগুলো চেপে ধরে রেখেছে তাকে। এক মিনিটের মধ্যে সব শেষ। তার গলা কাটা হয়ে যেতেই তাকে ছেড়ে সরে এলো তারা। বড়ো গরুটা তখনও লাফানোর চেষ্টা করছে। আমি আতংকিত চোখে দেখলাম তার গলাটা ফাঁক হয়ে আছে আর লাল রক্ত কি ভয়ানক গতিতে বেরিয়ে আসছে। আমি চমকে উঠে মানুষদের দিকে তাকালাম। ওরা কি আমাদেরও ওমন করে গলা কাটবে?
ভিতু গরুটা ভয়ানকভাবে লাফাচ্ছে ভয়ে আর চেঁচাচ্ছে,‘আমাকে মেরোনা তোমরা। আমি বাড়িতে একটা বাচ্চা রেখে এসেছি। আমার সব শেষ হয়ে যাবে। আমি আমার ছেলেটাকে একবারের জন্য দেখতে চাই।’
আমি স্তব্দ। বাকি গরুগুলোও আতংকিত চোখে দেখছে বড়ো গরুটার লাফানো। খানিক পরেই তার লাফানো বন্ধ হয়ে গেল। আর তখনই লোকগুলো ছোট গরুটার দিকে এগিয়ে গেল। ছোট গরুটা বুঝে ফেলেছে এবার তার পালা। সে ভয় না পেয়ে একটা গালি দিয়ে বসলো,‘শালা শুওরের বাচ্চারা, আমাদের খাবি? খা, তবে মনে রাখিস গরুর গোস খাবি না গরুর মুত খাবি আর পরজন্মে গরু হয়ে জন্মাবি। আর তখন তোদের গলায় আমি ছুরি চালাবো।’
আমি ছোট গরুটার সাহস দেখে তাজ্জব বনে গেলাম। যাইহোক ছোট গরুটাকে হত্যা করার পর ভিতু গরুটার দিকে এগিয়ে গেল তারা। ভিতু গরুটা আর্তনাদ করছে,‘আমাকে ছেড়ে দাও ভাই। আমার ছোট বাচ্চাটাকে আমি দেখতে চাই একবার মাত্র। ওকে আমি একটা চুমো দিতে চাই তারপর তোমরা আমাকে যা করবে আপত্তি নাই। আমাকে এখানে আনার সময় তো কেউ বলেনি এটাই আমার সাথে ওদের শেষ দেখা।’ কেউ শুনলোনা তার কথা। আর্তনাদ করতে করতে পরপারে চলে গেল সে। এরপর আমার কথা। আমি জানি ঐ সব সাদা কাপড়ের বর্বরদের এসব কথা বলে কোন লাভ হবেনা। ওরা আমাকে মারবেই। মায়ের কথা মনে পড়লো আমার। আহ একবার যদি মায়ের দুধের বাঁটটা মুখে নিতে পারতাম সেই ছোটবেলার মতো! মায়ের পাশে একটা রাত কাটাতে পারতাম! কতো কথা বলার ছিলো। কেমন আছে চম্পাবতী? ও কি এখনও আসে প্রতিদিন সেই মরুদ্যানটার ভেতর? ওকেও কতো কথা বলার ছিলো কিন্তু জীবনটা এখানেই শেষ হয়ে গেল আমার। আমি শুধু ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলাম যেন পরজন্মে আমি আর চম্পাবতী মানুষ হয়ে জন্মলাভ করতে পারি। তাহলে আর আমাদের কেউ এভাবে আলাদা করতে পারবেনা। আর সব গরুর জীবনের শেষ বাসনাকে তুমি পূর্ন করো ইশ্বর। এই মানুষগুলোকে তুমি পরজন্মে গরু করে জন্ম দিও। আর ইশ্বর যেন ছুরিটা খুব ধারালো হয়.....বিদায় এই সুন্দর পৃথিবী বিদায়...........
(তুহিন রহমানের একটি কপিরাইটকৃত ছোট গল্প। )