দিনে দিনে অনেক বেলা তো পার হল । হাটি হাটি পা পা করে সেই যে প্রথম গেম খেলেছিলাম টারজান , সেই আমি এখন অনেক পরিনত গেমার । অনেক তো গেম খেলা হল , এবার নাহয় একটু স্মৃতিচারন । এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে এরকম একটা পোস্ট দেওয়ার চেষ্টা করব যেখানে আমি বলব আমার খেলা গেমগুলোর কথা । রিভিউ, গেমপ্লে, প্লট, আমার রেটিং আরও অনেক কিছু । তো আজকে শুরু করি আমার খেলা সবচেয়ে প্রিয় গেমটা দিয়ে ।
এসাসিনস ক্রিড ২ - থার্ড পারসন একশন এডভেঞ্চার - ২০০৯
আমার খেলা সবচেয়ে প্রিয় গেম এই এসাসিনস ক্রিড ২ । আমার খেলা এই ধরনের গেমের মধ্যে এটাই প্রথম আর এটাই সবচেয়ে প্রিয় । গেমের সবকিছুই ভালো তবে সুরগুলো আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে । একেবারে হৃদয় ছুয়ে যায় । আর গ্রাফিক্স গেমপ্লে আর গল্প নিয়ে কোন কথা নেই ।
ডেসমন্ড মাইলস নামের এক সাধারণ বারটেন্ডার অপহৃত হয় টেম্পলার অরগ নামক এক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে । তার পূর্বপুরুষের ইতিহাস থেকে তারা জানতে চায় এক বিশেষ বস্তুর কথা, যেটা ধারন করে আছে অসীম শক্তি । নাম তার পিস অব ইডেন । আর একমাত্র ডেসমন্ড মাইলসই দিতে পারে তার খোঁজ । এসাসিন্স ক্রিড ১ এ দেখা যায় আলতেয়ার কে জেরুজালেম দামেস্কে বিচরন করে বেড়াতে । কিন্তু ডেসমন্ড মাইলস পালিয়ে যায় এই ল্যাব ছেড়ে গেমের একদম শুরুতে । তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আরেক উন্নত মেশিনের কাছে যেখানে সে ফিরে যায় তার আরেক পূর্বপুরুষ ফ্লোরেন্সের এযিও আদিতরের কাছে । গেম এখন মাত্র শুরু হল ।
এযিও আদিতরে আর তার পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে এ গেমের মূল কাহিনী । স্মার্ট মেয়েভোলানো এযিওর জীবন কেটে যাচ্ছিল তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে নানান রকমের শয়তানি বদমাইশি করে আর মেয়েদের সাথে প্রেম করে । হঠাৎ তার জীবন পালটে যায় এক বড় ঝড়ে । তার বাবা তারই এক বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় মারা যায় বিচারের নামে মিথ্যা অভিযোগে । এযিও চেষ্টা করে তার বাবাকে বাঁচাতে কিন্তু সেই বিশ্বাসঘাতকের অনুচর গার্ডরা তাকে মেরে ফেলতে চায় । তখন সে পালায় তার জীবন বাঁচাতে । তারপর বাবার নির্দেশনা অনুযায়ী খুজে পায় সেই বিখ্যাত আলখেল্লা , যেটা পরিচয় বহন করে এসাসিনদের । তারপর তার পরিবারকে সে নিয়ে পালিয়ে যায় তার চাচার কাছে । আর তার আগে প্রতিশোধ নিতে ভোলে না । শেষ করে দিয়ে যায় সেই বিশ্বাসঘাতককে প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে । আর এর মধ্যেই তার পরিচয় হয় কয়েকজন অকৃত্তিম বন্ধুর সাথে যারা তাকে সাহায্য করে তার লক্ষে পৌছতে ।
তার চাচার কাছে যাওয়ার পর সে জানতে পারে তার আসল পরিচয় । সে জানতে পারে তারা হচ্ছে এসাসিন, যারা আলোকে প্রতিষ্ঠিত করে অন্ধকারে থেকে । তারপর সে তার চাচার কাছে প্রশিক্ষন নেয় এসাসিন হওয়ার জন্য । তারপর শুরু হয় তার অভিযান । সে অভিযানে তাকে শেষ করতে হয় সমাজের বিষাক্ত কীটগুলোকে, যারা অনেক বড় অপরাধী , কিন্তু অনেক ক্ষমতাবান । আর এই অভিযানে এযিওকে বিচরন করতে হবে ফ্লোরেন্স, টুস্কানা, ভেনিস, ফরলিসহ ইতালির ছোটো বড় শহরে । আর এরই ফাকে তাকে উদ্ধার করতে তার আগের পূর্বপুরুষদের স্মৃতিচিহ্ন আর উদ্ধার করতে হবে লুকিয়ে রাখা পিস অব ইডেনের এক চমকজাগানো সত্য।
গেমটির গেমপ্লে অসাধারণ । এযিওকে নিয়ে দৌড়ানো, দেয়াল বেয়ে ওঠা, ছাদের ওপর দিয়ে দৌড়ানো, পকেটমারি, সাতার কাটা, নৌকা চালনা, ঘোড়া দৌড়ানো সহ করা যাবে আরও অনেক কাজ । দোকান থেকে কেনাকাটা করা যাবে অস্ত্র বর্ম পোশাক আর অসুস্থ হলে ওষুধ খেতে হবে ডাক্তারের কাছ থেকে কিনে । সে সঙ্গে তলোয়ারের যুদ্ধের নানা কৌশল, গার্ডের কড়া চোখ ফাকি দিয়ে কার্যসিদ্ধি করে পালিয়ে আসা, ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া এসব বৈচিত্র্য গেমটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে ।
গেমটিতে অস্ত্রের সমাহার লক্ষ করার মত । রয়েছে নানা ধরনের তলোয়ার , গদা , হাতুড়ি ইত্যাদি । বিশেষ অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ডাবল হিডেন ব্লেড, হ্যান্ডলক পিস্তল, থ্রোয়িং নাইফ ইত্যাদি ।
গেমের আরেকটা চমৎকার দিক হচ্ছে এর সুর । শুনলে অদ্ভুত এক অনুভুতি হয় । মনে হয় চলে গেছি সেই আগের পৃথিবীতে । হাটাচলার শব্দ, ভিড়ের কোলাহল, আবহসঙ্গিত, মারামারির শব্দ প্রত্যেকটা শব্দতরঙ্গই মনকে মোহিত করে ।
গেমটির রেটিং আমি দেব ১০ এ ৯.৯ । গেমপ্লে, গ্রাফিক্স, কাহিনী, সুর প্রত্যেকটা কন্টেন্ট ই অসাধারণ মনমাতানো । গেমটি খেলে ভালো লাগবে না একথা নিশ্চিত বলা যায় ।
তাহলে এবার চলে যাওয়া যাক সেই আগের পৃথিবীতে, হারিয়ে যাওয়া যাক এই অসাধারণ গেমের সাথে !