যখন তাশাহুদের জন্য বস,তখন আদবের সাথে বস এবং পরিস্কার বলো,নৈকট্যের যত কিছু রয়েছে-দরূদ হোক অথবা তাইয়্যেবাত তথা পবিত্র চরিত্র হোক,সকলই আল্লাহ তা'আলার জন্য।আত্তাহিয়্যাতুর অর্থ তাই।
এরপর নবী করিম(সা) এর পবিত্রে সত্তা অন্তরে উপস্থিত করে বলো,হে নবী আপনার প্রতি আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।মনে মনে সত্যিকারভাবে কামনা করো,এই সালাম তার কাছে পৌছুবে এবং তিনি এর জওয়াব অধিকতর পূর্ণতা সহকারে তোমাকে দান করবেন।এরপর তুমি নিজের প্রতি এবং আল্লাহ তা'আলার সকল নেক বান্দার প্রতি সালাম বলো এবং আশা করো,আল্লাহ তা'আলা তোমাকে এর জওয়াবে বান্দাদের সমান সংখ্যক পূর্ণ সালাম দান করবেন।এরপর আল্লাহ তা'আলার একত্ব ও মুহাম্মদ(সা) এর রেসালাতের সাক্ষ্য দাও এবং শাহাদাতের উভয় বাক্য পাঠ করে আল্লাহর অঙ্গীকারকে নতুন করো।দোয়ায় পিতামাতা ও সকল ইমানদারকে শরীক করো।সালাম বলার সময় ফেরেশতা ও উপস্থিত মুসুল্লীদের নিয়ত করো।সালাম দ্বারা নামাজ পূর্ণ করার নিয়ত করো এবং মনে মনে আল্লাহর শোকর করো,তিনি তোমাকে এই ইবাদতটি পূর্ণ করার তৌফিক দিয়েছেন। এটাকেই তোমার জীবনের শেষ নামাজ মনে করো।রাসুলুল্লাহ(সা) এক ব্যাক্তিকে উপদেশ ছলে বলেছিলেনঃ" বিদায়ী নামাজের মতো করে পড়ো।এরপর মনে মনে নামাজে ত্রুটি করার ভয় ও শরম করো এবং আশংকা করো,নামাজ কোথাও নামঞ্জুর হয়ে যায়।এর সাথে সাথে আশাও করো,আল্লাহ তা'আলা স্বীয় কৃপায় এ নামাজ কবুল করে নেবেন।"
ইয়াহইয়া ইবনে ওহাব নামাজ শেষে কিছুক্ষণ থেমে যেতেন,তখন তার মুখমন্ডলে বিষণ্ণতার ছাপ দৃষ্টিগোচর হতো।ইবরাহীম নাখায়ী নামাজের পর এক ঘন্টা অপেক্ষা করতেন যেন তিনি রুগ্ন।এ অবস্থা সেসব নামাজীর,যারা নামাজে খুশু করেন,সর্বক্ষণ নামাজের প্রতি লক্ষ্য রাখেন এবং সাধ্যানুযায়ী আল্লাহর সাথে মোনাজাতে ব্যাপৃত হন।
জেনে রাখো,নামাজকে আপদ থেকে পাক করা,একমাত্র আল্লাহর জন্য খাটি করা এবং উল্লেখিত খুশু,তাযীম,শরম ইত্যাদি শর্ত সহকারে পড়া অন্তরে নূর হাসিল হওয়ার প্রধান উপায়।এ নূর কাশফ তথা দিব্যদৃষ্টিতে দেখার চাবি।আল্লাহর ওলীগণ কাশফের মাধ্যমে যে আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্ব এবং প্রভুত্বের রহস্য জেনে নেন,তাও নামাজের মধ্যেই বিশেষত সেজদাবস্থায় জেনে নেন।কেননা,সেজদার মাধ্যমে বান্দা তার পরওয়ারদেগারের নিকটবর্তী হয়।এজন্যই আল্লাহ বলেন,
"সেজদা করো এবং নৈকট্য হাসিল করো।"
প্রত্যেক নামাজীর নামাজে ততটুকু কাশফ হয়,যতটুকু সে দুনিয়ার জঞ্জাল থেকে পাক পবিত্র থাকে।এটা বিভিন্ন রূপ হয়ে থাকে।কারও কাশফ শক্তিশালী,কারও দূর্বল,কারও কম,কারও বেশি,কারও সুস্পষ্ট,কারও অস্পষ্ট হয়ে থাকে।কারও সামনে হুবহু বিষয় উন্মোচিত হয় এবং কেউ বিষয়ের দৃষ্টান্ত জানতে পারেন।যেমন কেউ দুনিয়াকে মৃতের আকারে দেখতে পেয়েছেন,এবং শয়তানকে কুকুরের আকারে তার বুকের উপর লাগিয়ে থাকতে দেখেছেন।কাশফের বিষয়ও বিভিন্ন রূপ হয়ে থাকে।হাদীসে বর্ণিত আছে,বান্দা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন আল্লাহ তা'আলা নিজের ও তার মধ্যকার সকল পর্দা দূর করে দেন এবং তাকে নিজের সামনে নিয়ে আসেন।ফেরেশতারা তার কাধ থেকে নিয়ে শূন্য পর্যন্ত দন্ডায়মান হয়ে তার নামাজের সাথে নামাজ পড়ে এবং তার দোয়ায় আমিন বলে।নামাজীর উপর আকাশের শূন্য থেকে তার মাথার সিঁথি পর্যন্ত পূণ্য বর্ষিত হয়।একজন ঘোষক ঘোষণা করেন-যদি এই মোনাজাতকারী জানতো,কার সাথে সে মোনাজাত করছে,তবে এদিক ওদিক তাকাতো না। সেই নামাজীর জন্য আকাশের দরজা উম্মুক্ত হয়ে যায়।আল্লাহ তাআ'আ ফেরেশতাদের সাথে সেই নামাজীর সততা নিয়ে গর্ব করেন।আর আকাশের দরজা উম্মুক্ত হওয়া ও আল্লাহ তা'আলার নামাজীর মুখোমুখি হওয়া কাশফেরই ইঙ্গিত করে।তাওরাতে লিখিত আছে,আল্লাহ বলেন,হে আদম সন্তান!তুমি আমার সামনে ক্রন্দনরত অবস্থায় নামাজে দন্ডায়মান হতে অক্ষম হয়ো না।কেননা,আমি তোমার অন্তরের নিকটবর্তী এবং তুমি গায়েব থেকে আমার নূর প্রত্যক্ষ করেছো।বর্ণনাকারী বলেন,আমরা জানতাম,নামাজী অন্তরে যে নম্রতা ও ক্রন্দন অনুভব করে,তা এ কারণেই যে,আল্লাহ তা'আলা তার অন্তরের নিকটবর্তী হন,এ নৈকট্য স্থানের দিক দিয়ে নয় বিধায় হিদায়ত,রহমত ও পর্দা দূর করাই উদ্দেশ্য।
-ইমাম গাজ্জালীকৃত এহইয়াউ উলুমুদ্দিন।