somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন আসহাবে রসূলদের জানি ১

০২ রা জুন, ২০১৩ রাত ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন কিশোর,

তখনও যৌবনে পদার্পণ করেননি।কুরাইশ গোত্রের এক সর্দার 'উকবা ইবন আবু মু'ইতের একপাল ছাগল নিয়ে তিনি মক্বার গিরিপথগুলোতে চড়িয়ে বেড়াতেন।লোকে তাঁকে 'ইবন উম্মু আবদ' বলে ডাকতো।তার গোত্রে যে একজন নবীর আবির্ভাব ঘটেছে,সে সম্পর্কে নানা খবর এ কিশোর ছেলে সবসময় শুনতেন। তবে অল্প বয়স এবং বেশিরভাগ সময় মক্বার সমাজ জীবন থেকে দূরে অবস্থানের কারণে সে সম্পর্কে তিনি গুরুত্ব দিতেন না। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে উঠে 'উকবার ছাগলের পাল নিয়ে বের হয়ে যেতেন আর সন্ধ্যেয় ফিরতেন।

একদিন এ কিশোর ছেলেটি দেখতে পেলেন, দু'জন বয়স্ক লোক,যাদের চেহারায় আত্মমর্যাদার ছাপ বিরাজমান,দূর থেকে তার দিকেই এগিয়ে আসছেন।তারা ছিলেন এতোই পরিশ্রান্ত ও পিপাসার্ত যে,তাদের ঠোট ও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো। নিকটে এসে লোকট দু'টি সালাম জানিয়ে বললেন,

"বৎস! ছাগলগুলি থেকে কিছু দুধ দুইয়ে আমাদেরকে দাও।আমরা পান করে পিপাসা নিবৃত্ত করি এবং আমাদের শুকনা গলা একটু ভিজিয়ে নিই।"

ছেলেটি বললেনঃ " এ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। ছাগলগুলি তো আমার নয়।আমি এগুলোর রাখাল ও আমানতদার মাত্র।"



লোক দু'টি তার কথায় অসতুষ্ট হলেন না,বরং তাদের মুখমন্ডোলে এক উৎফুল্লতার ছাপ ফুটে উঠলো। তাদের একজন আবার বললেনঃ "তাহলে এমন একটি ছাগী আমাকে দাও যা এখনও পাঠার সংস্পর্শে আসেনি।" ছেলেটি নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছোট্ট ছাগীর দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন।লোকটি এগিয়ে ছাগীটি ধরে ফেললেন এবং "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" বলে হাত দিয়ে তার ওলান মলতে লাগলেন। অবাক বিস্ময়ে ছেলেটি এ দৃশ্য দেখে মনে মনে বললেনঃ "কখনও পাঠার সংস্পর্শে আসেনি এমন ছোট ছাগী কি দুধ দেয়?কিন্তু কি আশ্চর্য ! কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাগীর ওলানটি ফুলে উঠে এবং প্রচুর পরিমাণ দুধ বের হতে থাকে। দ্বিতীয় লোকটি গর্তবিশিষ্ট পাথর উঠিয়ে নিয়ে বাঁটের নীচে ধরে তাতে দুধভর্তি করেন। তারপর তারা উভয়ে পান করলেন এবং ছেলেটিকেও তাদের সাথে পান করালেন।ছেলেটির ভাষ্যঃ আমি যা দেখছিলাম তা সবই আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। আমরা সবাই যখন পরিতৃপ্ত হলাম তখন সেই পূণ্যবান লোকটি ছাগীর ওলানটি লক্ষ্য করে বললেনঃ " চুপসে যাও।" অমনি সেটি পূর্বের ন্যায় চুপসে গেলো।

তারপর আমি সেই পূন্যবান লোকটিকে অনুরোধ করলামঃ'আপনি যে কথাগুলি উচ্চারণ করলেন,তা আমাকে শিখিয়ে দিন"।

পূন্যবান লোকটি বললেন,"তুমি তো শিক্ষাপ্রাপ্ত বালক।"



ইসলামের সাথে এই বালক রাখালটির পরিচিত হনার এটিই ছিলো প্রথম কাহিনী।এ মহাপূন্যবান ব্যাক্তিটি আর কেউ নন, তিনি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আর তার সঙ্গীটি ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক(রাঃ)।

কুরাইশদের অত্যাচার উৎপীড়োন থেকে বাচার জন্য এ সময় তারা মক্বার নির্জন গিরিপথসমূহে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রাসূল(সাঃ) ও তার সঙ্গীকে যেমন ছেলেটির ভালো লেগেছিলো তেমনই তাদের কাছেও ছেলেটির আচরণ,আমানতদারী ও বিচক্ষণতে খুব চমৎকার মনে হয়েছিলো।তারা ছেলেটির মধ্যে কল্যাণ ও মঙ্গলের শুভলক্ষণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

এ ঘটনার অল্প কিছুদিন পরই বালকটি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিজেকে রাসূলুল্লাহর(সাঃ) একজ খাদিম হিসেবে উৎসর্গ করেন। রাসূলুল্লা(সাঃ) ও তাকে খাদিম হিসেবে নিয়োগ করেন। সেইদিন থেকে এ সৌভাগ্যবান বালক রাখালী থেকে সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠতম মানুষের খাদিমে পরিণত হন।তিনি ছায়ার মতন নিজের মনিবকে অনুসরণ করেন।সফরে বা ইকামাতে,গৃহের অভ্যন্তরে বা বাইরে সবসময় তিনি তার সাথে থাকতেন। রাসূল(সাঃ) ঘুমালে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন,গোসলের সময় পর্দা করতেন,বাইরে যাবার সময় জুতা পরিয়ে দিতেন,ঘরে প্রবেশের সময় জুতা খুলে দিতেন এবং তার লাঠি ও মিসওয়াক বহন করতেন। তিনি যখন হুজরায় অবস্থান করতেন,তখনও তার(সাঃ) কাছে যাতায়াত করতেন। রাসূল(সাঃ) তাকে যখনই ইচ্ছা তার কামরায় প্রবেশ এবং কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংকোচ না করে তার সকল বিষয় অবগত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। আরএ কারণেই তাকে "সাহিবুস সার" বা রাসূলুল্লাহর(সাঃ) সকল গোপন বিষয়ের অধিকারী বলা হয়।

উহুদ,খন্দক,হুদাইবিয়া,খাইবারসহ মক্বা বিজয়েও তিনি রাসূলুল্লাহর(সাঃ) সাথী ছিলেন।হুনাইন যুদ্ধে কাফিরদের অতর্কিত আক্রমণে দশ হাজারের মুসলিম বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে । মাত্র আশিজন যোদ্ধা নিজেরদের জীবন বাজি রেখে রাসূলুল্লাহর(সাঃ) চারপাশে অটল থাকেন। সেই সাহাবী সেই আশিজনেরই একজন ।

এ যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) মুশরিক বাহিনীকে লক্ষ্য করে যে এক মুঠো ধূলা নিক্ষেপ করেছিলেন,রাসূলুল্লাহর(সাঃ) হাতে তা তুলে দিয়েছিলেন ইনিই।

রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর ওফাতের পর দীর্ঘদিন যাবত সকল কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকেন।তবে হযরত উমারের(রাঃ) খিলাফতকালে হিজরী ১৫ সনে তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না।জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ইয়ারমুক যুদ্ধে বেরিয়ে পড়েন এবং বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন।



এবার বলুন মহান এই সাহাবী কে হন?
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×