" আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) একদা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করতেন আমি কি তোমাদের সেভাবে ছালাত আদায় করে দেখাব না? অতঃপর তিনি ছালাত আদায় করলেন। কিন্তু তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত অন্য কোন সময় দু’হাত উত্তোলন করলেন না’ (তিরমিযী ১/৩৫)।
তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আবার বারা ইবনে আযিব (রাঃ) বলেন, ‘নবী করীম (ছাঃ) তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত আর কখনো হাত উঠাতেন না’ (আবূদাঊদ ১/১০৯)। এক্ষণে ছালাতে রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন (Raf-ul-Yadain) করার প্রমাণে হাদীসদ্বয়ের বিপক্ষে যুক্তি কি?"
: প্রশ্নে বর্ণিত হাদীস দু’টি সহ ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’ না করার পক্ষে যে সকল দলীল পেশ করা হয়, তার সবগুলিই যঈফ।
প্রশ্নে বর্ণিত ১ম হাদীসটি ইমাম আবুদাঊদ বর্ণনা করে বলেন,
هَذَا مُخْتَصَرٌ مِنْ حَدِيثٍ طَوِيلٍ وَلَيْسَ هُوَ بِصَحِيحٍ عَلَى هَذَا اللَّفْظِ
‘এটা লম্বা হাদীসের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর এই শব্দে এটি সহীহ নয়’ (আবুদাঊদ হা/৭৪৮)।
উল্লেখ্য যে, উপমহাদেশের ছাপা আবুদাঊদে হাদীসের শেষে ইমাম আবুদাঊদের উক্ত মন্তব্যটি নেই। কিন্তু অন্যান্য ছাপা আবুদাঊদে তা রয়েছে। এদেশে ছাপা আবুদাঊদ থেকে উক্ত মন্তব্য তুলে দেওয়ার রহস্য অজ্ঞাত।
দ্বিতীয় হাদীসটি সম্পর্কে তিনি বলেন,
هَذَا الْحَدِيثُ لَيْسَ بِصَحِيحٍ ‘এই হাদীস সহীহ নয়’ (আবুদাঊদ হা/৭৫২)।
তাছাড়া বারা ইবনু আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত অন্য আরেকটি বর্ণনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অতঃপর তিনি আর হাত উঠাননি’ অংশটুকু অন্য সনদে তিনি বলেননি। সুফিয়ান বলেন, আমাদেরকে অনেক পরে কূফাতে ‘অতঃপর তিনি আর হাত উঠাননি’ অংশটুকু বলা হয়েছে।
ইমাম আবুদাঊদ আরো বলেন, ইয়াযীদ থেকে হাদীসটি হুশাইম, খালেদ, ইবনু ইদরীসও বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারা ‘অতঃপর তিনি আর হাত উঠাননি’ অংশটুকু বলেননি’ (আবুদাঊদ হা/৭৫০)।
এভাবে ইমাম আবুদাঊদ (২০২-২৭৫) রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন না করার হাদীস সমূহকে নাকচ করে দিয়েছেন।
ইবনু হিববান বলেন, ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’ না করার পক্ষে কুফাবাসীদের এটিই সবচেয়ে বড় দলীল হ’লেও এটিই সবচেয়ে দুর্বলতম দলীল, যার উপরে নির্ভর করা হয়েছে। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে যা একে বাতিল বলে গণ্য করে (নায়লুল আওত্বার ৩/১৪ পৃঃ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/১০৮)।
ইমাম তিরমিযী (মৃঃ ২৭৯হিঃ) ১ম হাদীসটিকে সনদের দিক থেকে ‘হাসান’ বললেও তার আগের হাদীসে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকের বক্তব্য তুলে ধরেছেন, لم يثبت حديث ابن مسعود‘ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর হাদীস প্রমাণিত হয়নি’ (তিরমিযী হা/২৫৫-এর আলোচনা)।
আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদীসটিকে সহীহ মেনে নিলেও তা ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’-এর পক্ষে বর্ণিত সহীহ হাদীস সমূহের বিপরীতে পেশ করা যাবে না। কেননা এটি না বোধক এবং ঐগুলি হ্যাঁ বোধক। ইলমে হাদীসের মূলনীতি অনুযায়ী হ্যাঁ-বোধক হাদীস না-বোধক হাদীসের উপর অগ্রাধিকার পাবে। পক্ষান্তরে রাফ‘ঊল ইয়াদায়নের পক্ষে বহু সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সালাতের শুরুতে, রুকূতে যাওয়াকালীন ও রুকূ হ’তে উঠাকালীন সময়ে... এবং তৃতীয় রাক‘আতে দাঁড়ানোর সময় রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন করতেন’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৭৯৩-৯৪)। ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার খলীফা সহ প্রায় ২৫ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীস সমূহ রয়েছে। একটি হিসাব মতে ‘রাফ‘ঊল ইয়াদায়েন’-এর হাদীসের রাবী সংখ্যা আশারায়ে মুবাশশারাহ সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৭ পৃঃ) এবং সর্বমোট সহীহ হাদীস ও আসারের সংখ্যা অন্যূন চারশত (মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, সিফরুস সা‘আদাত ১৫ পৃঃ; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ৯২-৯৬)।
এর মধ্যে একশত আটানব্বইটির মতন আমার কাছে আছে।ইনশাল্লাহ লিখবো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:০৬