কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-১)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-২)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-৩)
তরুন তুর্কী আন্দোলনঃ
তরুন তুর্কী আন্দোলন ছিল ১৯০৮ সালে খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের বিরূদ্ধে আন্দোলন। খলিফা ১৮৭৬ সালে রাজতন্ত্র চালু করেন এবং সংবিধান স্থগিত করেন। এই আন্দোলনে কতগুলো আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করে, এরা হলো ‘Committee of Union of Progress’, ‘Freedom and Accord Party’ এবং ‘Ottoman Socialist Party’
এদের উদ্দেশ্য ছিল, সংবিধানের পুনরূদ্ধার এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও খলিফা আব্দুল হামিদ কে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা।
তরুন তুর্কী আন্দোলনের সূতিকাগার ছিলো সালোনিকা। তখন সালোনিকার জন সংখ্যা ছিলো ১৪০০০০ যার মধ্যে ৮০০০০ ছিলো স্প্যানিশ ইহুদী আর ২০,০০০ ছিলো Domneh সম্প্রদায় নামক গুপ্ত ইহুদী।
এই ইহুদী এবং গুপ্ত ইহুদীরাই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করে, যাদের অনেকেই ছিলেন ফ্রীমেসন্স। মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বাধীন ভাতান আন্দোলন( কট্টোর জাতীয়তাবাদী এবং সেকুলার সংগঠন) এই আন্দোলনের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক সহ সেনাবাহিনীর অনেক তরুন অফিসার বিদ্রোহ করে। যদিও দেনা কমাতে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ যথেষ্ট কৃতিত্ব ও সফলতার পরিচয় দেন, তবুও তরুন তুর্কীরা তাকে বিদায় নিতে বাধ্য করে।
আব্দুল হামিদকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য মন্ত্রীপরিষদ প্রধান তৌফিক পাশাকে ডেকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তিনি তা করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। পরে তারা চার জনের একটি দলকে পাঠান যাদের মধ্যে ছিলেনঃ আরেফ হিকমত, আরাম আফেন্দী ( আর্মেনিয়ান), আসাদ তোবাতানি এবং ইমানুয়েল ক্রা’শ (ইহুদী)। যখন তারা তার অফিসে প্রবেশ করেন, তিনি তখন শান্তভাবে দাঁড়িতে ছিলেন। আরেফ হিকমত তার বিরূদ্ধে যখন রায় পড়ে শোনান এবং আসাদ তোবাতানি এগিয়ে আসেন এবং বলেন, “ জাতি আপনাকে আপনার পদ থেকে অপসারন করেছে”
তিনি তখন রাগান্বিত হন এবং বলেন, জাতি আমাকে আমার পদ থেকে অপসারন করেছে, ঠিক আছে, তবে তোমরা কেন ইহুদীকে খলিফার কক্ষে নিয়ে এসেছ? তিনি ইমানুয়েল ক্রা’শ এর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেন।
আব্দুল হামিদ স্পষ্টতঃ তাকে উৎখাতের প্রকৃত কারণ অনুধাবন করেছিলেন।
এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেও এর প্রকৃত কারণ এবং পটভুমি ছিল ভিন্ন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে উসমানী শাসক বৃন্দ একটি মারাত্মক পাপকাজে লিপ্ত হয়। ইসলামের ও মুসলমানদের অভিভাবক হয়েও খলিফা ইহুদী ব্যাংকারদের কাছে থেকে সুদে অর্থ ধার করেন। যে কাজটি করতে কুরান ওই সুন্নাহয় সুস্পষট ও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। আর এর দরুন উসমানী সম্রাজ্যে সুদী ব্যাঙ্কিং প্রথার প্রচলণ ঘটে। কিন্তু উসমানী সুলতানরা এই দেনা শোধে ব্যার্থ হন। এই ব্যাংকাররা সুলতান আব্দুল হামিদের কাছে প্রস্তাব রাখেন, এই দেনার বিনিময়ে প্যালেস্টাইন ইহুদীদের নিকট লিখে দিতে। সুলতান ২য় আব্দুল হামিদ তা রীতিমত প্রত্যাখ্যান করেন।
ইহুদী রাব্বি হাইম নাহুম হলো সেই ব্যাক্তি, যিনি খলিফা আব্দুল হামিদ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হন, কারন সে প্যালেস্টাইন চেয়েছিলো। যারা আব্দুল হামিদকে ক্ষমতাচ্যুত করে, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তার পরিবার ছিলো তৎকালিন বৃহত্তম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা এবং তুরস্কে ইহুদীদের অধিকার রক্ষাকারী।
পরবর্তীতে এই ইহুদী রাব্বি হাইম নাহুম-ই সেই ব্যাক্তি যিনি লর্ড কার্জনকে বলেন, তুরস্কের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিন এবং আমি আপনার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, তারা এমন এক শর্তে রাজী হবে, যাতে করে তারা ইসলাম এবং যা ইসলামকে প্রতিনিধিত্ব (খিলাফত) করে তাকে পদদলিত করবে।
হাইম নাহুম ঘনিষ্ঠ ভাবে মুস্তফা কামাল এবং অন্য একজন মহিলার সাথে কাজ করেন, যিনি ব্রিটিশ সিক্রেট এজেন্সীর সদস্য ছিলেন। যিনি ইসমেত ইনোনুর ( তুরস্কের প্রধান মন্ত্রী, পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট) খুবই ঘনিষ্ঠ হন। তাদের ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কুটনৈতিক মহল পর্যন্ত উদবিগ্ন হয়ে উঠে।
তরুন তুর্কী আন্দোলনের সফলতা সেনাবিহিনীতে মুস্তফা কামালকে পাদ-প্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে, এবং সেনাবাহিনীর একজন প্রভাব শালী সদস্যে পরিণত হন এবং রাজনীতিতে প্রকাশ্য ভুমিকা রাখার সুযোগ পান। যা পরবর্তীতে তাকে সাফল্যের চুড়ায় নিয়ে যায়।
তরুন তুর্কী আন্দোলনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন যে, পরিপুর্ণ ভাবে ফ্রী-মেসন্স দ্বারা সংঘটিত হয়েছিলো তার প্রমাণ নিম্ন লিখিত পত্র থেকে জানা যায়ঃ
পত্রটি কন্সটান্টিনিপল এ নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ রাস্ট্রদূত স্যার জেরাল্ড লোথার কর্তৃক প্রখ্যাত ব্রিটিশ ইতিহাস বেত্তা স্যার চার্লস হারডিং এর প্রতি প্রেরিত।
প্রাচ্য কিভাবে হারল
গোপণীয়
স্যার জেরাল্ড লোথার কর্তৃক স্যার চার্লস হারডিং এর প্রতি প্রেরিত।
(ব্যাক্তিগত ও গোপণীয়)
কন্সটান্টিনিপল
২৯শে মে, ১৯১০
প্রিয় চার্লস,
২৩ শে এপ্রিলে প্রাপ্ত গোরস্ট এর টেলেগ্রাম (স্যার এল্ডন গোরস্ট, কায়রোতে নিযুক্ত প্রধান ব্রিটিশ এজেন্ট) যা মোঃ ফরিদেকে কায়রোতে কন্সটান্টিনিপল ফ্রি-মেসন্স দের প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্তির গুজবের ব্যাপারে লিখিত, এটা ঘনিষ্ঠ ভাবে ‘Committee of Union of Progress’ এর সাথে সম্পর্কিত। তাই আমাকে তরুন তুর্কীর মাধ্যমে পরিচালিত মহাদেশীয় ফ্রী-মেসনরি সম্পর্কে তোমার কাছে একটি কষ্টকর লম্বা চিঠি লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাই ব্যাক্তিগত ও গোপনীয় ভাবে বলি, তুরস্কে এই নতুন ফ্রি-মেসনরি যা ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকার মত নয়, এর বিরাট অংশ রাজনৈতিক ও গোপণীয়তায় আচ্ছাদিত, একান্ত কঠোর গোপণীয়তার সাথেই কোনো তথ্য পেতে হয়। যখন কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন মাফিয়াদের হাতে এই তথ্যের গোপণীয়তা হুমকির সম্মুখীন হয়। কিছুদিন আগে একজন স্থানীয় মেসন কৌশল সংক্রান্ত গোপণ সংকেত প্রকাশ করলে তাকে এই বলে কোর্ট মার্শালে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়, যা আমাদের অবরোধের কারণে গঠিত।
যেহেতু তুমি জান, প্যারিসে তরুন তুর্কী আন্দোলন অনেকাংশে পৃথক ছিল, তার কারণ সালোনিকাতে কর্ম কৌশলের ব্যাপারে একটা বড় অংশই অজ্ঞ ছিলো। সালোনিকার জন সংখ্যা প্রায় ১৪০০০০, তার মধ্যে ৮০০০০ স্প্যানিশ ইহুদী, ২০০০০ হাজার সাবাতি জেভি সম্প্রদায়ের গুপ্ত ইহুদী যারা প্রকাশ্য মুসলমান হওয়ার ভান করে। আগের গ্রুপের অনেকেই অতীতে ইটালিয়ান নাগরিকত্ব গ্রহন করেছে, তারা ফ্রীমেসন্স এবং ইটালিয়ান লজের সদস্য। রোমের ইহুদী মেয়র নাথান একজন উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফ্রী-মেসন্স। ইহুদীদের প্রিমিয়ার লুজ্জাতি এবং সোন্নিও এবং অন্যান্য ইহুদী সিনেটরকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তারাও মেসন্সদের সদস্য পদ গ্রহণ করেছে।
তারা দাবী করে যে, তারা প্রাচিন স্কটিশ লজের অর্চনা পদ্ধতি অনুসরণ করে।
সালোনিকা ( কামাল আতাতুর্ক এই সালোনিকা থেকেই এসেছেন) আন্দোলনের অনুপ্রেরণা মুলতঃ ইহুদীদের দ্বারাই এসছে, যেখানে স্বাধীনতা সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি শব্দ গুলো, তরুন তুর্কীদের উদ্দেশ্য, ইত্যাদী ইটালিয়ান লজ থেকেই এসেছে। ১৯০৮ সালে বিপ্লবের পর যখন কন্সটান্টিনিপল এ তাদের কমিটি স্থাপিত হয়, তখন জানা যায়, এদের নেতৃস্থানীয় অনেকেই ফ্রিমেসন্স। এটা লক্ষণীয় যে, সকল বর্ণের দেশী-বিদেশী ইহুদীরা নতুন পরিস্থিতির উদ্যমী সমর্থক, যে পর্যন্ত একজন তুর্কী বলেছে, এই আন্দোলন মূলতঃ ইহুদীদের আন্দোলন, তুর্কীদের নয়-----------। ( Satanic voices Ancient and Modern-by David Musa Pidcock )
ব্রিটিশ এজেন্ট মুস্তফা কামাল পাশাঃ
মুস্তফা কামালের বীরত্বের কথা আমরা আগেই জেনেছি, তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ও পরবর্তীতে ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরূদ্ধে ও তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধে জয় লাভ করেন এবং জাতীয় বীরে পরিণত হন। কিন্তু কি কারণে সেদিন ব্রিটিশ নেতৃত্বাধীন মিত্র শক্তি তুরস্কের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছিলো, যারা ১ম বিশ্ব যুদ্ধে অক্ষ শক্তিকে পর্যদুস্ত করেছিল, কিন্তু তুরস্কের কাছে এসে হোঁচট খেলো, এটা কি মুস্তফা কামালের বীরত্ব না অন্য কিছু?
এর কারণ ছিল মূলত দুটি, প্রথমতঃ ইতিহাস থেকে মিত্র শক্তি জানত যে, মুসলমানদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে তারা কেমন ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তখন হয়ত কিছুদিনের জন্য তুরস্ক অধিকার করে রাখতে পারবে, কিন্তু একটি স্বাধীনতাকামি জনগোষ্ঠীর সাথে জনযুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে। সারা পৃথিবীর মুসলমান তাদের সাথে এসে মিলিত হবে। তারা এই ঝুঁকি নিতে চায়নি।
দ্বিতীয়তঃ তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো খিলাফত তথা উসমানী সম্রাজ্যের পতন। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য যদি যুদ্ধ ব্যাতিত অন্য কোনো উপায়ে সাধিত হয়, তাহলে যুদ্ধের আবশ্যকতা থাকে না।
ব্রিটিশ সরকার মূলতঃ মস্তফা কামালের সাথে খিলাফত ধ্বংস করার শর্তে পিছু হটেছিলো।
এর প্রমাণ পুর্বে উল্লেখিত লর্ড কার্জনের প্রতি ইহুদী রাব্বি হাইম নাহুম এর উক্তিতে।
১৯১৫ সালে গেলিপলুর ( বর্তমানে GELIBOLU) যুদ্ধে মিত্র শক্তির বিরূদ্ধে ডার্ডানেলস প্রণালী রক্ষা করার জন্য তৎকালীন কর্ণেল মুস্তফা কামাল রণ কৌশল সাজাচ্ছিলেন, তখন ব্রিটিশ বাহিনী রহস্যজনক কারণে তার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন এবং পিছু হটেন ( এই ঘটনা মুস্তফা কামালের রণ নৈপুণ্যের মাইল ফলক হয়ে আছে, যদিও প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা খুব কমই হয়েছে)। আর সেদিন থেকে মুস্তফা কামাল পরিণত হন ব্রিটিশদের ভবিষ্যত পরিকল্পণা বাস্তবায়নে দাবার বোর্ডে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ঘুঁটি এবং একজন পাপেট।
গেলিপলুর যুদ্ধের পর মুস্তফা কামাল পাশা (জেনারেল) উপাধি লাভ করেন। এবং খেলার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ১৯১৯ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে। মুস্তফা কামালকে নিয়ে ব্রিটিশ দের পরিকল্পণা ছিলো নিম্নরূপঃ
তিনি ইস্তানবুল ত্যাগ করেন বান্দিরমা ( আংকারায় আতাতুর্ক যাদুঘরে এই সুন্দর নৌকার একটি মডেল সংরক্ষণ করা হয়েছে) নামে একটি ছোট নৌকায়। সেখান থেকে তিনি কৃষ্ণ সাগর উপকুলে একটি ছোট শহর স্যামসান এ অবতরণ করেন। ১৯শে মে ১৯১৯ সালে ( পরবর্তীতে এ দিনটি তুরস্কের যুব দিবসের মর্যাদা লাভ করে) স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। তিনি তুরস্কের মানুষের কাছে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেন। ব্রিটিশরা এই ভাবে “দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নিপীড়িত জনগোষ্ঠী যারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত” তাদের একজন যোগ্য নেতার ব্যাবস্থা করেন।---- এই নেতা আর কেউ নন তাদেরই পুতুল মুস্তফা কামাল পাশা।
আর তাই ব্রিটিশ রাজা যুদ্ধ পরবর্তীতে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক কে ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রদান করতে উৎসাহিত হন।
তুরস্কের প্রথম ( মুস্তফা কামাল) ও দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টের ( ইসমেত ইনোনু) মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে বিষয়টি আরো উন্মোচিত হয়।
মুস্তফা কামালঃ ইসমেত তুমি মনযোগ দিয়ে আগ্রহ সহকারে কি পড়ছ? এটা কি সেই সম্মাননা যা দিয়ে ব্রিটিশ রাজা আমাকে সম্মানীত করবেন?
ইসমেত ইনোনুঃ এই সম্মাননাটা আসলে কি?
মুস্তফা কামালঃ তুমি কি আমেরিকান এবং সারা বিশ্বের খবরের কাগজ পড়নি যে, ইংরেজদের রাজা আমাকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দেবেন।
ইসমেত ইনোনু ঠান্ডা ভাবে জিজ্ঞাসা করেনঃ ঠিক আছে, কিন্তু কি কারণে তারা আপনাকে এই সম্মাননা দেবে?
মুস্তফা কামালঃ ইসমেত, সবার চেয়ে তোমার বেশী জানার কথা যে, ইংরেজরা আমাকে অনেক বেশী ভালোবাসে আর এর প্রমাণ লয়েড জর্জকে ( তুরস্কের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী প্রধান মন্ত্রী) সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে।
লুসানে চুক্তি ( তুরস্কের স্বাধীনতা দানকারী চুক্তি, যা ১৯২৩ সালের ২৪ শে জুলাই সুইজারল্যান্ডের লুসানে শহরে স্বাক্ষরিত হয়) শুধু একটি শান্তি চুক্তিই নয়, এটা ছিলো পাশ্চাত্য, বিশেষ করে ব্রিটেনের স্বার্থ রক্ষাকারী চুক্তি। এর প্রাথমিক লক্ষ ছিলো উম্মাহ এবং ইসলাম কে ধ্বংস করা। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লর্ড কার্জনের বিবৃতিটি এখানে প্রণিধান যোগ্য, “ তুরস্ক শেষ হয়ে গেছে, এখন থেকে এই জাতি আর মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবেনা, কারণ আমরা এর নৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছি”।
আর তাই, ১৯৮৩ সালের ১১ই নভেম্বর মুস্তফা কামালের উপর একটি নিবন্ধে ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকা লিখেঃ মুস্তফা কামালের মৃত্যু আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল। সে একমাত্র একনায়ক যিনি স্বভাবগত ভাবেই ইংরেজদের সত্যিকার সহযোগী ছিলেন।
এটা ছিলো একটি ত্রিভুজ, যা খিলাফাকে ধ্বংস করেছিল, আর এই ত্রিভুজের তিন বাহু হলো ব্রিটিশ, ইহুদী এবং মুস্তফা কামাল, যিনি নিজে একজন ইহুদী এবং ব্রিটিশ এজেন্ট (এরা সবাই ফ্রী-মেসন্স)। এরা খিলাফা ধংসের অন্তর্গত উদ্দেশ্য কে লুকিয়ে চতুরতার সাথে পরিকল্পণা প্রণয়ন করে, যাতে করে প্রথমে খিলাফা ও পরে ইসলামকে ধ্বংস করা যায়। এই মোনাফেকরা খিলাফা রক্ষার স্লোগান দিয়ে মানুষকে যুদ্ধের জন্য সংগঠিত করে যেমন, এস আমরা খিলাফা কে ও কুরানের শাসনকে রক্ষা করি। ক্ষমতা লাভের আগ পর্যন্ত তারা খলিফা কে অনুপুরক হিসাবে সামনে রাখে। তার পর মুষ্টিমেয় কিছু ইহুদী, মুস্তফা কামাল এবং ব্রিটিশরা তাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে। তারা ইসলাম ও খিলাফার ইতিহাসকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করে।
উপসংহারঃ
উপরোক্ত আলাচনা থেকে আমরা জেনেছি, কামাল আতাতুর্ক বংশ পরম্পরায় একজন গুপ্ত ইহুদী, যারা মূলত স্পেন থেকে বিতাড়িত ইহুদীদের বংশধর। কামাল আতাতুর্কের মা একজন আলবেনীয় বংশোদ্ভুত। জাতিসত্ত্বায় তিনি কোনো ভাবে তুর্কী নন। তথাপিও তিনি নিজেকে তুর্কি জাতির পিতা হিসাবে দাবী করেছেন।
তিনি ডোমনে সম্প্রদায় ভুক্ত সাবাতি জেভির বংশধর, একজন ফ্রী-মেসন, একজন ব্রিটিশ এজেন্ট যিনি খিলাফা ধ্বংস করেছেন। নাসিরুদ্দীন আলবানীর ভাষায় তিনি ইসলাম ত্যাগকারী একজন মুরতাদ।
.
(সমাপ্ত)
রেফারেন্সঃ
১। The City of Salonica: A true cross road by Victoria M. Lord
২। Weakipedia
৩।Exposed-ATATURK WAS A CRYPTO-JEWISH CABAL OPERATIVE & FREEMASON!
৪। FORWARD, A Jewish Newspaper published in New York, January 28, 1994
৫। How the world is controlled intellectually- A research by Siraj Wahaj
৬। "En Route to Global Occupation" by Gary H. Kah,
৭। Satanic voices Ancient and Modern-by David Musa Pidcock
৮। The Biggest Crises in the History of the "Secular" Republic
The Source of it & The Solution to it
RELATED READINGS:
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-১)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-২)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৩)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৪)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:১০