somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (শেষ পর্ব)

২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ
মূলঃ মোঃ এলফি নিশায়েম জুফেরি
( ইংরেজী থেকে অনুদিত)


মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-১)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-২)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৩)

মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৪)

তুরস্ক
এমিল লেঙ্গায়েল, ১৯৪১, পৃষ্ঠা ১৪০-১৪১


কামালের কর্মজীবনের প্রথম দিকে, তার অনেক অনুসারীর এই ধারণা ছিল যে, সে ইসলামের এক মহানায়ক ছিল, তারা খৃস্টানদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তাকে তারা ‘খৃস্টানদের ধ্বংস কারী গাজী’ উপাধি দিয়েছিল। তারা যদি তার প্রকৃত মনোভাব সম্পর্কে জানতে পারত, তাকে তারা ‘ ইসলামের ধ্বংস কারী গাজী’ বলে ডাকত।

গ্রে উলফ, মুস্তফা কামালঃ একজন একনায়কের উপর নিবিড় আলোচনা।
এইচ, সি, আর্মস্ট্রং, ১৯৩৪


তিনি অত্যধিক পান করছিলেন। পানীয় তাকে উত্তেজিত করছিল, তাকে শক্তি দিচ্ছিল,কিন্তু তাকে ক্রুদ্ধ করছিল। ব্যাক্তিগত ও প্রকাশ্য উভয় ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বিদ্রূপাত্মক, নৃশংস এবং আকস্মিক। সামান্যতম সমালোচনায় তিনি তেলে-বেগুণে জ্বলে উঠতেন। তাকে বোঝানোর সকল প্রচেষ্টা তিনি নস্যাৎ করে দিতেন। ন্যুন্যতম বিরোধীতায় তিনি ক্রোধান্বিত হতেন। তিনি না কারো প্রতি আস্থা রাখতেন, না কাউকে সহযোগীতা করতেন। যখন একজন রাজনীতিবিদ তাকে নির্দোষ উপদেশ দিয়েছিলেন, তিনি তাকে অমার্জিত ভাবে বেড়িয়ে যেতে বলেছিলেন। যখন মন্ত্রীসভার একজন সম্মানীত সদস্য তাকে পরামর্শের সুরে বলেছিলেন যে, তুর্কী নারীদের জন্য প্রকাশ্য নৃত্য করা একটি অশোভন কাজ হবে, তিনি তাঁর দিকে একটি কুরানের কপি ছুঁড়ে মারেন এবং একটি লাঠি হাতে তাকে তার অফিস থেকে বের করে দেন।

পৃষ্ঠা ২৪১:

“প্রায় পাঁচশত বছর ধরে একজন আরব শেখের তত্ত্ব ও বিধান এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অলস এবং অকর্মন্য উলামারা তার যে ব্যখ্যা করেছেন, তার ভিত্তিতে তুরস্কের ফৌজদারী ও দেওয়ানি আইন গড়ে উঠেছে । তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সংবিধানের ধরণ কেমন হবে, কেমন হবে প্রত্যেক তুর্কী নাগরিকের জীবনপ্রণালী, তার খাদ্যাভ্যাস, তাদের ঘুমাতে যাওয়া বা জেগে উঠার সময়, তাদের পরিচ্ছদের আকার, যে সকল ধাত্রী তাদের সন্তানদের জন্মদানে সহায়তা করেন তাদের কার্যসুচী, তারা স্কুলে কি শিখছে, তাদের আচার-ব্যাবহার, তাদের চিন্তা-চেতনা, এমনকি তাদের একান্ত সম্পর্কের অভ্যাস গুলোর ব্যাপারে। ইসলাম- একজন নীতিহীন আরবের (নাউযুবিল্লাহ!) ধর্মতত্ত্ব- এটি একটি মৃত ব্যাপার। সম্ভবত তা মরুচারী গোষ্ঠী গুলোর জন্যই মানানসই। আধুনিক প্রগতিশীল রাস্ট্র-ব্যাবস্থার জন্য এগুলো ভালো নয়। কিসের আল্লাহর ওহি ! কোনো আল্লাহ নেই ! ( নাউযুবিল্লাহ!) এগুলো হলো শুধু শৃংখল, যদ্বারা ধর্ম-তাত্ত্বিকেরা ও মন্দশাসকেরা জনগণকে শৃংখলিত করে। একজন শাসক যার ধর্মের দরকার হয়, সে দুর্বল। কোনো দুর্বলের শাসন করার অধিকার নেই..।” এবং উলামারা ! তিনি কেমন তাদের ঘৃণা করতেন। অলস, অকর্মন্য মোল্লারা, যারা জনগণের টাকায় খেয়ে বাঁচত। তিনি তাদের মসজিদ এবং খানকা থেকে দূর করে দিতেন, মানুষের মত কাজ করে জীবন ধারণের জন্য। ধর্ম! তিনি তুরস্ক থেকে ধর্মকে এমনভাবে উপড়ে ফেলেন, যেমন ভাবে একজন মানুষ একটি চারা গাছ বাঁচাতে তার চতুর্পার্শ্ব থেকে আগাছা গুলোকে উপড়ে ফেলে।

পৃষ্ঠা ২৪৩:

এছাড়াও, এটা সর্বজন বিদিত ছিল যে, তিনি অধার্মিক ছিলেন, শিষ্টতার সকল নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন এবং পবিত্র জিনিস গুলোর প্রতি খড়গ হস্ত হয়েছিলেন। তিনি সর্বোচ্চ মুফতি ‘শাইখুল ইসলাম’ কে তার দপ্তর থেকে বিতাড়িত করেন এবং কুরানকে তার পিছনে নিক্ষেপ করেন। তিনি আংকারার নারীদের পর্দা বর্জন করতে বাধ্য করেন, তাদের বিদেশী ও খৃস্টান পুরুষদের সাথে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে নাচতে উৎসাহিত করেন।

তুরস্ক
এমিল লেঙ্গায়েল, ১৯৪১, পৃষ্ঠা ১৩৪


কামাল আল্লাহকে পরোয়া করতেননা; তার আগ্রহ ছিল তুরস্ক ও নিজেকে নিয়ে। তিনি আল্লাহকে ঘৃণা করতেন ও তুরস্কের দুর্ভাগ্যের জন্য তাঁকে দায়ী করতেন । তিনি মনে করতেন, আল্লাহর স্বৈরাচারী শাসন তুরস্কের হাতকে পক্ষাঘাত গ্রস্থ বানিয়ে রেখেছিল (নাউযুবিল্লাহ)। কিন্তু তিনি জানতেন যে, তুরস্কের কৃষকদের কাছে আল্লাহ সত্য ছিল, যেখানে তাদের কাছে জাতীয়তাবাদের কোনো মূল্য ছিলনা। সেই জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, আল্লাহকে তার শাসনে, জাতীয় স্বার্থে প্রচার পরিচালক বানাতে। আল্লাহর সাহায্যে জনসাধারণ কে মোহামেডান হওয়া থেকে বিরত রাখবে এবং তাদের তুর্কীতে পরিণত করবে। যখন আল্লাহর মাধ্যমে তার স্বার্থ সিদ্ধি হয়ে যাবে, তিনি তাঁকে ত্যাগ করবেন (নাউযুবিল্লাহ)।


আতাতুর্ক, একটি জাতির পুনর্জন্ম
লর্ড কিনরস, ১৯৬৫
পৃষ্ঠা ৪৩৭:

কামালের জন্য, ইসলাম এবং সভ্যতা ছিল পরষ্পর বিরোধী পরিভাষা। “ যদি শুধু” সে একবার এক মুহুর্তের জ্বলে উঠা নিন্দুকের অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে বলেছিল, “ আমরা তাদের খৃস্টান বানাতে পারতাম !” তার তুরস্ক সংস্কারকৃত ইসলামিক রাস্ট্র হওয়ার ছিলনা, যার জন্য অনেক মুমিন অপেক্ষা করছিলঃ এটা ছিল, সুলতানের মত শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার সমেত দারুন ভাবে প্রতিস্থাপিত রাস্ট্র, সামরিক বাহিনী যার সমর্থন দিচ্ছিল এবং পরিচালনায় ছিল এর নিজস্ব বুদ্ধিমান আমলাতন্ত্র।

পৃষ্ঠা ৪৭০:

তার সংগীত রুচির বিদারণ আবির্ভুত হয় ইস্তানবুলে, যেখানে দুইটি বাদ্যযন্ত্রী দল ছিল, একটি তুর্কী এবং অপরটি ইউরোপীয়ান, তাদেরকে পার্ক হোটেলে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। সার্বক্ষণিক বাঁধার সাথে তিনি তাদের বাজনা শুনছিলেন, তিনি একবার একদলকে থামতে বলেন তো অপরদলকে বাজাতে বলেন। অবশেষে যখন তার সুরার নেশা তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল, তিনি ধৈর্য হারালেন এবং এই বলে রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করার জন্য উদ্যত হলেন যে, “ এখন তোমরা চাইলে, দু দলই একসাথে বাজাতে পার।”
অন্য আর এক সন্ধ্যায়, বিপরীতমুখী এক মসজিদের মুয়াজ্জিনের আজানের শব্দ শুনে ক্রোধান্বিত হন, কারন তা তার নৃত্য গীত-বাজনার শব্দের সাথে সংঘর্ষশীল ছিল, তিনি আদেশ করেন, মসজিদের মিনার ধ্বংস করতে- এটা সেই আদেশ গুলোর একটি যা পরেরদিন সকালে বাতিল করা হয়েছিল।


পৃষ্ঠা ৩৬৫:

তার পরিচয় নিয়ে পরবর্তি কিছু বছর মানুষ সন্দিহান ছিল। আনাতোলিয়াতে কিছু সৈন্যকে পরিদর্শনের সময় তিনি জিজ্ঞাসা করেন, “ উপাস্য কে? এবং তিনি কোথায় থাকেন?”
সৈন্যরা তাকে খুশী করতে উদ্বিগ্ন ছিল, একজন বলল, “ উপাস্য হলো মুস্তফা কামাল পাশা। তিনি আংকারাতে থাকেন।”
“ কোথায় তোমাদের আংকারা?” কামাল আবার জিজ্ঞাসা করেন,
“ আংকারা ইস্তানবুলে অবস্থিত” উত্তর ছিল।
লাইনের শেষের দিকে তিনি আরো এক সৈন্যকে জিজ্ঞাসা করেন, “ মুস্তফা কামাল কে?
উত্তর ছিল, “ আমাদের সুলতান”

(সমাপ্ত)

পুনশ্চঃ আপনারা কি জানেন মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক একজন ইহুদী বংশধর?

আজ পর্যন্ত মুসলিম, আমুসলিম সবাই তার প্রকৃত পরিচয় নিয়ে একটি মারাত্মক সন্দেহে নিপতিত ছিল। কিন্তু অধুনা কিছু প্রমাণ আবিস্কৃত হয়েছে, যা থেকে বলা যায় কামাল শুধু একজন অ-মুসলিমই ছিলেন না, একজন গুপ্ত ইহুদী ছিলেন।

তবে আজ আর নয়। আপনাদের ভালো লাগলে ভবিষ্যতে অন্য কোন সিরিজে এ ব্যাপারে লিখার ইচ্ছা আছে 'ইন শা আল্লাহ'।

RELATED READINGS:

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-১)

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-২)

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-৩)

কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×