মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ
মূলঃ মোঃ এলফি নিশায়েম জুফেরি
( ইংরেজী থেকে অনুদিত)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-১)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-২)
ইতিমধ্যে বিরোধীদের গুড় গুড় ডাক তুর্কী জনগণের গর্জনে পরিণত হয়। অবশেষে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরন ঘটে, ১৯২৬ সালে পাহাড়ে বসতি স্থাপনকারী কুর্দী জাতি কামালের শাসন এবং কামাল পন্থিদের বিরূদ্ধে বিদ্রোহে ফেটে পড়ে। মুস্তফা কামাল পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো বিলম্ব করেননি। নির্দয় ভাবে তুর্কী নিয়ন্ত্রিত কুর্দিস্তানকে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করা হয়; গ্রাম গুলোকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়, পশু –পাল ও শস্য ধ্বংস করা হয়, নারী ও শিশুদের ধর্ষন ও হত্যা করা হয়। ৪৬ জন কুর্দি গোত্র প্রধানকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে, জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তাদের নেতা শেখ সাইদ সর্বশেষে মৃত্যু বরন করেন। তিনি জল্লাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, “ তোমার জন্য আমার কোনো ঘৃনা নেই। তুমি এবং তোমার প্রভু মুস্তফা কামাল আল্লাহর চোখে ঘৃণিত ! আমরা শেষ বিচারের দিন আল্লাহর সামনে হিসাব মিলাব।”
মুস্তফা কামাল এখন একজন পরিপূর্ণ স্বৈর-শাসক। তুর্কী জনগণ ফেইজ বা লাল টুপী ও পাগড়ি নিষিদ্ধ করণ, বাধ্যতামূলক ভাবে পশ্চিমা পোশাক পরিধান, ল্যাটিন বর্ণমালা, খ্রীস্টীয় পঞ্জিকা এবং রবিবার সরকারী ছুটি ইত্যাদী এর মত অনৈসলামিক সংস্কার গুলো শুধু মাত্র বন্দুকের নলের মুখে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। হাজারো ওলামা-মাশায়েখ এবং যারা তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল ছিল, তারা সবাই যে জিনিস গুলোকে পবিত্র জ্ঞান করত, তার ধ্বংস প্রত্যক্ষ করার পরিবর্তে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করাকে বেছে নিয়েছিল। তুর্কী জনগণ এমন কিছু চেয়েছিল এটা মনে করা হলো এক প্রকার ভ্রান্তি যা সত্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলনের তীব্রতার অনুমান মেলে, আতাতুর্কের নয় বার সামরিক আইন জারীর ঘটনায়। কোটি কোটি তুর্কী নাগরিক বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে এবং ছোট্ট শহরে এতটা হতাশ ছিল যে, কামালের নাম মুখে উচ্চারণ করা তাদের জন্য অভিশাপ ছিল। ১৯৩২ সালে মুস্তফা কামাল আইন জারী করেন যে, প্রত্যেক তুর্কি নাগরিক কে নামের সাথে বংশের নাম লিখতে হবে, যা ইউরোপ এবং আমেরিকাতে রীতি হিসাবে প্রচলিত। সে নিজের বংশগত নাম পছন্দ করেন আতাতুর্ক, যার অর্থ ‘তুর্কী জাতির পিতা’ ছয় বছর পর, তার স্বাস্থ্য পুরোপুরি ভেঙ্গে যায় এবং তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন, যা ছিলো মদ্যপানের কুফল।
‘psychopathic personality (জন্মগত মানসিক অস্থিরতা সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব)’ কে মনরোগ বিদ্যায় আবর্জনা ফেলার ঝুড়ি হিসাবে অভিহীত করা হয়। এতে ‘Psychotic (বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন অবস্থা গত মনোবিকার গ্রস্থ ব্যক্তি)’ পড়েনা, ‘psychoneurotic (স্নায়বিক বৈকল্যজনিত মনোরোগী) পড়েনা’ এই ঝুড়িতে তাদের ফেলানো হয় যারা নয় Psychotic, নয় psychoneurotic, নয় দুর্বল মনের ব্যাক্তি- তবুও অনেক বড় রকমের অস্বাভাবিকতা আছে। Psychopath কখনো psychotic নয়, নয় “বিকৃত মস্তিস্কের” অধিকারী ব্যাক্তি। সে জানে কোথায় সে আছে, সে কে, এখন কোন সময়; সে আমাদের সময়েই বাস করে, কোনো মনোবিকার গ্রস্থ ব্যাক্তির উদ্ভট জগতে নয়। তথাপি psychopath এর লক্ষণ গুলো তার পুরো চরিত্রকেই গ্রাস করে, যতটা psychosis এর ক্ষেত্রে ঘটে। psychopath এ বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি থাকেনা। মূলত সে বুদ্ধিমত্তায় গড়পড়তা মানুষের উপরে অবস্থান করতে পারে। এটা তার নষ্ট আবেগ, তার মানসিক গঠন, তার চরিত্র। সে শীতল,দুরে অবস্থান কারী, যেখানে প্রবেশ করা যায়না , সকলের থেকেই সে আলাদা, সকলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। সে বুদ্ধিমত্তার সাথে জানে, তার অপরাধের পরিণতি তার জন্য বা তার শিকারের জন্য কি হতে পারে, কিন্তু সে এই পরিণতি গুলো অনুভব করতে অক্ষম, আর তাই সে তার অপরাধ থেকে বিরত থাকেনা। সে কখনো লজ্জা কিংবা অনুশোচনায় ভোগেনা। সে যদি কখনো হত্যার জন্য ধরা পড়ে, সে ধরা পরার জন্য দুঃখিত হয়, হত্যার জন্য নয়। সে গুন্ডাদের জন্য একজন ভাড়া করা খুনীর কাজ করতে পারে, তার জন্য খুন করা কোনো ব্যাপার নয়। সে সমাজকে প্রত্যাখ্যান করে, সে এর প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা কে স্বীকার করেনা।সে সর্বদায় বিদ্রোহী। কারো সাথে সে কখনো স্থায়ী আবেগী সম্পর্কে জড়ায়না। তার যৌন জীবন উদ্দেশ্যহীন, এলোমেলো, সুযোগ সন্ধানী, সে যা চায়, তা হোলো যৌন তৃপ্তি, তার সঙ্গী/সঙ্গিনী কোনো ব্যাপার নয় …..কোনো গ্রহনযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায়না যে কতজন psychopath কে বন্দী করা গেছে, কিন্তু কেউ সন্দেহ করেনা যে, তাদের মধ্যেই সবচেয়ে বিপজ্জনক মানুষ জীবিত আছে। আর সে কারনেই জেলখানা গুলো এদের দিয়েই ভর্তি। [১১]
বর্ণে বর্ণে, শব্দে শব্দে এই হলো মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এর ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের যথাযথ বর্ণনা; শুধু পার্থক্য হলো, সে প্রকৃতপক্ষে যা ছিলো, তার পরিবর্তে শুধু একজন পরিপূর্ণ স্বৈরাচারী হিসাবেই স্বীকৃতি পেয়েছে, তবে কোনো কিছুই তাকে জাতীয় পর্যায়ের অপরাধ সংঘটন থেকে বিরত রাখতে পারেনি। মার্কিন বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিকদের চেয়ে কেউ বেশী তার একনায়কতন্ত্র কে স্বাগত জানায়নি। তাদের মধ্যে যারা ইহুদী, তারা তাকে সর্বোচ্চ প্রশংসায় ভূষিত করেছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের যে ঐতিহ্য আমেরিকার রয়েছে, তা কিভাবে একজন স্বৈরাচার দ্বারা কৃত নিষ্ঠুরতার সাথে সামঞ্জস্যশীল হতে পারে, এটা একটি অমিমাংসিত রহস্য, যতক্ষণ পর্যন্ত না পাঠক অনুধাবন করে, তাদের এই তথাকথিত মানবাধিকার তাদের দেশের জন্যই উৎসর্গীকৃত। কোনো অবস্থাতেই তা মুসলিম প্রধান দেশে রফতানী যোগ্য নয়। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম কখনোই এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসকদের সমর্থন দিতে দ্বিধা করেননি, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা কম্যুনিস্ট ব্লকের ছত্র ছায়ায় আশ্রয় নেয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে একনায়ক তন্ত্র বৈধ, যদি তা রাস্ট্রের আধুনিকীকরণকে সত্যায়ন করে। অনুন্নত দেশের জনগণ কে দেখা হয় খুবই পশ্চাদপদ, ঐতিহ্য নির্ভর, অজ্ঞ- মূর্খ, যারা তাদের ভাগ্য নিজেরা বেছে নিতে পারেনা। শুধুমাত্র জ্ঞানী সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কোনটা তাদের জন্য ভালো। পাশ্চাত্যকরণ হলো সর্বোচ্চ ন্যায় ধর্ম, কোনো নৈতিক ত্যাগই এটা অর্জনের চেয়ে বড় কিছু নয়। আর সে কারনেই, যে কোনো উপায়ে, চাই সে হোক নিষ্ঠুর স্বৈরতন্ত্র, তবুও তা আমেরিকা ও অন্যান্য পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের কৃপা ধন্য হয়, যদি তা ইসলামী মূল্যবোধের ও জীবনাচারের দ্রুত অবক্ষয় ঘটাতে সক্ষম হয়। [১২]
References:
[১১] John Bartlow Martin, Break Down The Walls: A Study of the Modern
American Prison (Ballantine Books, New York, 1953), pp. 259-261
[১২] See Myron Weiner (ed.), Modernization: the Dynamics of Growth, (Voice
of America Forum Lectures, Washington D.C., 1966)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৪)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (শেষ পর্ব)
RELATED READINGS:
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-১)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-২)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-৩)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২৬