মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ
মূলঃ মোঃ এলফি নিশায়েম জুফেরি
( ইংরেজী থেকে অনুদিত)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-১)
আতাতুর্ক তুরস্কে ইসলাম ধ্বংস করেনঃ
ক্ষমতা গ্রহণের সাথে সাথে, তিনি সদম্ভে ঘোষণা করেন যে, ইসলামের সকল চিহ্ন তিনি তুর্কী জাতির জীবন থেকে ধ্বংস করবেন। শুধুমাত্র তখনই তুর্কী জাতি একটি আধুনিক, সম্মানীত ও প্রগতিশীল জাতিতে রূপান্তরিত হবে, যখন ইসলামের কর্তৃত্ব পরিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে ফেলা হবে। তিনি নির্ভীক এবং নির্লজ্জ ভাবে জনসাধারণের সামনে ইসলামকে আক্রমণ করে বক্তৃতার পর বক্তৃতা করতে থাকেন এবং বলেনঃ
“প্রায় পাঁচশত বছর ধরে একজন আরব শেখের তত্ত্ব ও বিধান এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অলস এবং অকর্মন্য উলামারা তার যে ব্যখ্যা করেছেন, তার ভিত্তিতে তুরস্কের ফৌজদারী ও দেওয়ানি আইন গড়ে উঠেছে । তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সংবিধানের ধরণ কেমন হবে, কেমন হবে প্রত্যেক তুর্কী নাগরিকের জীবনপ্রণালী, তার খাদ্যাভ্যাস, তাদের ঘুমাতে যাওয়া বা জেগে উঠার সময়, তাদের পরিচ্ছদের আকার, যে সকল ধাত্রী তাদের সন্তানদের জন্মদানে সহায়তা করেন তাদের কার্যসুচী, তারা স্কুলে কি শিখছে, তাদের আচার-ব্যাবহার, তাদের চিন্তা-চেতনা, এমনকি তাদের একান্ত সম্পর্কের অভ্যাস গুলোর ব্যাপারে। ইসলাম- একজন নীতিহীন আরবের (নাউযুবিল্লাহ!) ধর্মতত্ত্ব- এটি একটি মৃত ব্যাপার। সম্ভবত তা মরুচারী গোষ্ঠী গুলোর জন্যই মানানসই। আধুনিক প্রগতিশীল রাস্ট্র-ব্যাবস্থার জন্য এগুলো ভালো নয়। কিসের আল্লাহর ওহি ! কোনো আল্লাহ নেই ! ( নাউযুবিল্লাহ!) এগুলো হলো শুধু শৃংখল, যদ্বারা ধর্ম-তাত্ত্বিকেরা ও মন্দশাসকেরা জনগণকে শৃংখলিত করে। একজন শাসক যার ধর্মের দরকার হয়, সে দুর্বল। কোনো দুর্বলের শাসন করার অধিকার নেই।” [৩]
আব্দুল মজিদ যখন খলিফা হিসাবে নির্বাচিত হন, সেই সময় মুস্তফা কামাল পাশা পূর্ণাংগ ভাবে ঐতিহ্যবাহী অভিষেক অনুষ্ঠান করতে অস্বীকৃতি জানান। যখন সংসদ সদস্যরা এই ব্যাপারটি আলোচনা করার জন্য অধিবেশনে মিলিত হন, তখন মুস্তফা কামাল এই কথা বলে বিতর্ক সংক্ষিপ্ত করেন যে, “ খলিফার কোনো ক্ষমতা বা অবস্থান নেই, তিনি শুধু নিয়মতান্ত্রিক প্রধান”। যখন খলিফা আব্দুল মজিদ তার ভাতা বৃদ্ধির জন্য একটি দরখাস্ত পেশ করেন, মুস্তফা কামাল উত্তরে লিখেনঃ
“খিলাফত, আপনার প্রতিষ্ঠান, একটি ইতিহাসের স্মৃতি-চিহ্ন বৈ কিছুই নয়। এটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো যৌক্তিক কারন বিদ্যমান নেই। এটা একপ্রকার ধৃষ্টতা যে, আপনি আমার কোনো সচিবকে কোনো চিঠি লিখতে সাহস করেন।” [৪]
৩রা মার্চ, ১৯২৪, মুস্তফা কামাল খিলাফতকে স্থায়ী ভাবে বাতিল এবং তুরস্ককে সেকুলার রাস্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য সংসদে একটি বিল উত্থাপন করেন। কিন্তু এই বিল উত্থাপনের পুর্বেই তিনি বিচক্ষণতার সাথে সকল বিরোধীদের বন্দুকের নলের আওতায় নিয়ে আসা নিশ্চিত করেন এবং ঘোষণা করেন, তার কোনো কাজের সমালোচনা করা মৃত্যুদন্ড তুল্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে, তিনি বলেনঃ
“যে কোনো মূল্যে প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে ….অটোমান সম্রাজ্য ছিল ভগ্ন ধর্মীয় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি উন্মাদীয় কাঠামো। খলিফা এবং উসমানী বংশের অবশিষ্ট দের সরে যেতে হবে। প্রাচীন ধর্মীয় বিচারালয় এবং বিধানাবলী অবশ্যই আধুনিক বৈজ্ঞানিক দেওয়ানী আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে সেকুলার সরকারী বিদ্যালয়ে পরিণত করতে হবে। ধর্ম এবং রাস্ট্রকে অবশ্যই পৃথক করতে হবে। তুর্কি প্রজাতন্ত্র অবশেষে সেকুলার রাস্ট্রে পরিণত হতে হবে।” [৫]
ফলশ্রুতিতে, বিলটি সংসদে বিনা বিতর্কে পাশ হয়, সাবেক খলিফা এবং তার পরিবার বর্গকে সুইজারল্যান্ডে নির্বাসনে পাঠানো হয়। নতুন সরকার তখন নিম্ন লিখিত আইন পাশ করেঃ
“নতুন তুর্কী সংবিধানের মুখবন্ধ নিবেদিত ভাবে আতাতুর্কের সংস্কারের কথা বলে এবং ১৫৩ নং ধারা এই সংস্কার থেকে পিছনে ফিরে যাওয়াকে পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করে। এখানে বলা হয়, ‘এই সংবিধানের কোনো ধারাকে অসাংবিধানিক বলে ব্যাখ্যা করা যাবেনা, নিম্ন লিখিত সংস্কার আইন গুলো প্রণীত হয়েছে তুর্কী সমাজকে সমসাময়িক সভ্য সমাজের স্তরে উন্নীত করার লক্ষ্যে এবং রাস্ট্রের সেকুলার চরিত্রের রক্ষা-কবচ হিসাবে কাজ করতে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সংবিধান গৃহীত হওয়ার দিন থেকেই এগুলো কার্যকর হবেঃ
১। শিক্ষা ব্যাবস্থা একীভূত করণ আইন ( এবং সেকুলার করণ) ৩রা মার্চ, ১৯২৪
২। টুপী আইন, ২৫শে নভেম্বর, ১৯২৫
৩। দরবেশদের খানকা ও স্মৃতি সৌধ বন্ধ এবং মাজার রক্ষণাবেক্ষণ কার্যালয় বিলুপ্তকরণ আইন এবং কিছু ধর্মীয় উপাধি বিলুপ্তকরণ আইন, ৩০ নভেম্বর, ১৯২৫
৪। বিবাহ সংক্রান্ত আইন, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ১৯২৬
৫। আন্তর্জাতিক সংখ্যা পদ্ধতি গ্রহণ আইন, ২০ মে, ১৯২৮
৬। তুর্কী অক্ষর গ্রহণ (ল্যাটিন বর্ণমালা) ও বাস্তবায়ন ( এবং আরবী অক্ষর) নিষিদ্ধ করণ আইন, ১লা নভেম্বর, ১৯২৮
৭। উপাধি বিলুপ্তকরণ আইন যেমন আফেন্দি, বেগ অথবা পাশা, ২৬ শে নভেম্বর, ১৯৩৪
৮। (দেশজ) পোশাক পরিধান নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আইন, ৩রা ডিসেম্বর, ১৯৩৪
পূর্ণরূপে আতাতুর্কবাদ প্রত্যাখ্যান ছিল অসম্ভব এবং ধারণার অতীত। এটা অসম্ভব, কারন সংবিধান তা নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে, এটা ধারনার অতীত, কারন অনেক প্রবীন ও নবীন সংস্কারের মারাত্মক পরিণতি ভোগ করেছে এবং পশ্চিমাকরণ প্রক্রিয়া তাদের অনেককে যাদুগ্রস্থ করেছিল যা সমৃদ্ধ জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। [৬]
এই সংস্কার কর্মসূচী গুলো বাস্তবায়নের সময়কালে, মুস্তফা কামাল পাশা লতিফা নামের ইউরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এক রমনীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তুরস্কের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যাকে তিনি পুরুষদের মতো পোশাক পরিধানের জন্য এবং পুরুষ ও নারীর পরিপূর্ণ সমতার দাবী করতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু যেই মুহুর্তে তিনি (লতিফা) তার অধিকার স্বচেতন মনোভাব প্রকাশ করা শুরু করেন এবং তার কাছে থেকে তার অবিশ্বস্ততার জন্য তাকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া পাপষের পরিবর্তে একজন সম্মানীত স্ত্রীর মর্যাদার জন্য পীড়াপিড়ি করেন, তিনি তাকে তালাক দেন এবং সরিয়ে দেন। এখানে পরিহাস যে পূর্বে কামাল নিজে ইসলামী তালাক পদ্ধতি বাতিল করেন, কিন্তু যখন তিনি স্ত্রীকে তালাক দেন, তা ইসলামী রীতি অনুসরন করে তালাক উচ্চারনের মাধ্যমেই তা করেন। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েক মাস পরেই ইসলামী তালাক বাতিল আইন রহিত করেন। [৭]
লতিফার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তার নির্লজ্জতা সকল সীমা ছাড়িয়ে যায়। এত বেশী মদপান করা শুরু করেন যে, তিনি একজন মাতাল ও নিশ্চিত মদ্যপে পরিণত হন। যৌনরোগ তার শরীরে বাসা বাঁধে। সুদর্শন তরুন ছেলেরা তার লালসার লক্ষ্যে পরিণত হয়, তার রাজনৈতিক সমর্থকদের স্ত্রী ও কন্যাদের প্রতি তার ব্যাবহার এমন আগ্রাসী পর্যায়ে পৌঁছে যে, তারা তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের তার হাতের নাগাল থেকে অনেক দুরে পাঠিয়ে দিতে থাকেন। মূলত, আতাতুর্কের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী মন্তব্য করেন যে,
“আমাদের সম্মানীত নেতার একটি বদভ্যাস আছে। তিনি নারীদের ভালবাসেন। এটা তার দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে। তাকে অবশ্যই প্রধান শিষ্টাচার কারী ব্যাক্তি হতে হবে।”[৮]
তার চরিত্র বর্ণনায় এইচ, সি, আর্মস্ট্রং লিখেছেনঃ
“মুস্তফা কেমাল পাশা সবসময় ছিলেন একজন নিঃসঙ্গ,একাকি মানুষ, একক হাতেই তার কার্য সম্পাদন করতেন। তিনি কাউকেই বিশ্বাস করতেননা। তার মতামতের বিরূদ্ধে অন্য কিছু কখনোই শুনতেননা। তাঁর সাথে কেউ দ্বিমত প্রকাশ করার সাহস দেখালে, তাকে তিনি অপদস্ত করতেন। সে সকল কর্ম তার ব্যাক্তিগত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র স্বার্থের আলোকে বিচার করতেন। তিনি তাৎক্ষণিক ভাবে হিংসা পরায়ন হয়ে উঠতেন। কোনো বুদ্ধিমান ও সক্ষম ব্যাক্তিকে তার জন্য বিপদজনক মনে করে সরিয়ে দিতেন। সে অন্য কারো সামর্থ্যের তিক্ত সমালোচক ছিলেন। অন্যের চরিত্রহানিতে বা তাদের কার্যকলাপ কে অবজ্ঞা করে তিনি বর্বর আনন্দ লাভ করতেন, যদিও বা সে ব্যাক্তি তার সমর্থকদের মধ্যে কেউ হয়। তিনি কাউকে দয়া ও মহানুভবতার সাথে কথা বলেছেন তা বিরল , আর যতটুকুই করেছেন, তাতেও অবজ্ঞা ও শ্লেষের মিশেল ছিল। তিনি কারো উপরই আস্থা রাখতেন না। তার কোনো ঘনিষ্ঠজন ছিলোনা। তার বন্ধুরা ছিল বদ প্রকৃতির নিম্ন চরিত্রের মানুষ, যারা তার সাথে শুধু মদ্য পান করতেন, কু-পরামর্শ দিতেন এবং তার দাম্ভিকতাকে উস্কে দিতেন। সকল মুল্যবোধ সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের কালো দিনগুলোতে তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা সবাই ছিলেন তার বিরূদ্ধে।”[৯]
যেহেতু কোন একনায়কই তার প্রতি পক্ষকে সহ্য করতে পারেনা, মুস্তফা কামাল পাশা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিনাশ করতে কোনো সুযোগই নষ্ট করেননি।
“গোপন পুলিশ বাহিনী তাদের কাজ করেছে। নির্যাতন, পায়ের তলায় বেত্রাঘাত, অথবা যে কোন পন্থায়, যা তাদের পছন্দ হতো, গ্রেফতারকৃত রাজনৈতিক নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য বল প্রয়োগে তাদের স্বীকারোক্তি আদায় করতেন এবং যথেষ্ট প্রমাণ(?) সংগ্রহ করতেন। তাদের বিচার কার্য পরিচালনার জন্য একটি স্বাধীন বিচারিক আদালত মনোনীত করা হয়েছিল। যথাযথ প্রক্রিয়া বা প্রমাণের তোয়াক্কা না করে আদালত তাদের ফাঁসির রায় দিতেন। মৃত্যু পরোয়ানা মুস্তফা কামালের বাসভবন ‘খান কায়া’ তে তার স্বাক্ষরের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হতো। এই মৃত্যু পরোয়ানা গুলোর একটি ছিল আরিফের। আরিফ, তার একজন বন্ধু ছিল, যিনি তার সাথে ঝগড়া করে বিরোধী পক্ষের সাথে যোগ দিয়েছিলো, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের কালো দিন গুলোতে মোস্তফা কামালের পাশে শর্তহীন আনুগত্য নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন- তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যার কাছে কামাল তার হৃদয় খুলে দিয়েছিলো এবং যার সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিলো। জনৈক ব্যাক্তি, যিনি সেই সময় মুস্তফা কামালের সামনে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বর্ণনা করেন যে, যখন তার কাছে এই পরোয়ানা এলো, গাজীর ধুসর মুখোশে ঢাকা চেহারায় কোন ভাবান্তর ঘটেনি; তিনি কোনো মন্তব্য করেননি; তার মধ্যে কোন দ্বিধার চিহ্ন ছিলোনা। সেই সময় তিনি ধুমপান করছিলেন। সিগারেটটি ছাইদানির উপর রাখলেন এবং আরিফের মৃত্য পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন, যেন এটা ছিলো তার প্রাত্যহিক কোনো দাপ্তরিক কাগজ, যা তিনি স্বাক্ষর করে পরবর্তী কারো কাছে প্রেরণ করলেন...। সকল কাজ তিনি সুচারু রূপেই সম্পাদন করেন। সেই রাত্রে ‘খান কায়া’ তে তিনি বল পার্টিরও আয়োজন করেন। প্রত্যেকের উপস্থিতি সেখানে সেখানে কাম্য ছিলো—বিচারক বৃন্দ, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য বৃন্দ, রাস্ট্রদূত গণ, সকল বিশিস্ট ব্যাক্তি বর্গ, সকল সুন্দরী রমনীরা। পুরো আঙ্কারা অবশ্যই উদযাপন করবে... নিরবে নাচ শুরু হলো, এক লন্ডন টেইলরের হাতে বানানো অনবদ্য সান্ধ্য পোশাকে সজ্জিত গাজী এক কোণায় একজন কুটনীতিকের সাথে কথা বলতে বলতে দাঁড়ালেন। অতিথিরা তাকে দেখে সতর্কতার সাথে নড়ে চড়ে বসলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তার মেজাজের অবস্থা প্রকাশ করেন, তাদের অবশ্যই সন্তর্পনে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নিম্ন স্বরে কথা বলতে হবে; তিনি বিষন্ন থাকলে অতিথিদের জন্য আনন্দ প্রকাশ বিপজ্জনক হতে পারে। কিন্তু গাজী সেদিন খুবই খোশ-মেজাজে ছিলেন। এটা কোনো ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ রাস্ট্রীয় উৎসব ছিলোনা। এটা হতে যাচ্ছিল উচ্ছাসেপূর্ণ আনন্দমুখর রাত। “ আমরা আজ মজা করব! আমরা বাঁচব, আমরা জীবন্ত হব!”, তিনি চিৎকার করতে করতে একজন আগন্তকা রমনীকে জড়িয়ে ধরেন এবং যুগলবন্দী অবস্থায় নাচের ফ্লোরে নৃত্য করতে থাকেন। একের পর এক সকল অতিথি তাকে অনুসরণ করতে থাকেন, তারা সবাই নাচতে থাকেন, তারা যদি না নাচতেন, গাজী তাদের নাচাতেন। গাজী আজ সর্বোচ্চ প্রফুল্ল মেজাজে আছেন। তার চারিদিকে সঙ্গী-সঙ্গিনীদের মধ্যে তিনি দ্রুততার সাথে উন্মাদনা জাগিয়ে চলেছেন এবং নাচের ফাঁকে ফাঁকে তিনি তাদের পানীয় সরবরাহ করে চলেছেন . . . চার মাইল দুরে আঙ্কারার মহা চত্বরকে এক ডজন আর্ক ল্যাম্পের সাদা আলোয় আলোকিত করা হয়েছে। এর চারপার্শে এবং রাস্তার উপর মানুষের বিশাল জমায়েত হয়েছে। আর্ক লাইটের নীচে জেল খানার পাথুরে দেয়াল, সেখানে কাঠের এগারটি বৃহৎ তেপায়া খাড়া করা হয়েছে। প্রত্যেক তেপায়ার নিচে একজন করে মানুষ যাদের হাত পিছ মোড়া করে বাঁধা এবং গলায় একটি করে ফাঁসির রজ্জু, মুস্তফা কামাল পাশার রাজনৈতিক বিরোধীরা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। পিন পতন নিরবতায়, প্রত্যেক দোষী ব্যাক্তি একে একে জনতার উদ্দেশ্যে কথা বলছেন। একজন একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন, আর একজন প্রার্থনা করলেন, অপরজন চিৎকার করে বললেন, তিনি তুরস্কের একজন অনুগত সন্তান ছিলেন ….। ‘খান কায়া’ তে অধিকাংশ অতিথি চলে গিয়েছে, কামরা গুলো সিগারেট, গড়িয়ে পড়া মদ আর মাতালদের নিঃশ্বাসের বোটকা গন্ধে ভরপুর। মেঝে গুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো সিগারেটের বাট এবং টেবিল গুলোর ওপরে এলোমেলো ভাবে পড়ে ছিলো তাস এবং টাকা। মুস্তফা কামাল ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা হাঁটলেন এবং জানালার বাইরে তাকালেন। তার চেহারা ছিলো ঋজু ও ধুসর; বিবর্ণ চোখ জোড়া ভাবলেশ হীন; সেখানে শ্রান্তির কোনো চিহ্ন ছিলোনা, তার সান্ধ্য পোশাক ছিলো চির মনোহর। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন যে, ফাঁসি কার্যকর সম্পন্ন হয়েছে। তেপায়ার নীচে ঝুলন্ত দেহ গুলো নিথর হয়েছে। অবশেষে তিনি প্রমান করলেন তিনি সবার উপরে। তার শত্রুরা আজ নিস্তব্ধ, গুঁড়িয়ে গেছে অথবা মৃত। [১০]
References:
[৩] Ibid., pp. 199-200
[৪] Ibid., p. 201
[৫] Ibid., pp. 207-208
[৬] Nuri Eren, Turkey Today and Tomorrow: An Experiment in Westernization
(Praeger, New York, 1963), pp. 100-102
[৭] Ahmadi al-Aziz, Mustafa Kamal Ataturk: Ideologi Dan Kesan Ke Atas Rakyat
Turki (Usnie Publisher, 2002), p. 30
[৮] As cited in ibid., p. 28
[৯] H. C. Armstrong, Op. Cit., pp. 213-214
[১০] Ibid., pp. 229-236
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৩)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (পর্ব-৪)
মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও তার ইসলাম বিদ্বেষ (শেষ পর্ব)
RELATED READINGS:
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে (পর্ব-১)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-২)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( পর্ব-৩)
কামাল আতাতুর্ক কে ছিলেন ইহুদী? ফ্রী-মেসন ?-শেকড়ের সন্ধানে ( শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২৬