দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যাওয়ার প্রতিটি স্তরেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা। বৈধ বা অবৈধ যে প্রক্রিয়াই হোক, হয়রানি হওয়ার কথা্ শোনা যায় এবং এমন হয়রানির ক্ষেত্রে বরাবরই রিক্রুটিং এজেন্ট/এজেন্সির নাম সামনে চলে আসে।
এখন প্রশ্ন হলো রিক্রুটিং এজেন্ট/এজেন্সির খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়ে বিদেশ যেতে না পারলে করণীয় কী? আপনার টাকা/ক্ষতিপূরণ আদায় করবেন কিভাবে?
কেউ যদি দালালদের বা তথাকথিত রিক্রুটিং এজেন্ট/এজেন্সি দ্বারা প্রলুব্ধ বা প্রতারিত হয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা প্রদান করেন সেক্ষেত্রে কাঙ্খিত ভিসা না পেলে বা বিদেশ না যেত পারলে দ্রুত আআনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩ এর আলোকে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩ এর ৩১ ও ৩৩ ধারায় সুনির্দিষ্টভাবে অপরাধ ও সাজার কথা উল্লেখ রয়েছে।
ধারাঃ ৩১। কোন ব্যক্তি বা রিক্রুটিং এজেন্ট—
(ক) এই আইন বা বিধির বিধান লঙ্ঘন করিয়া অপর কোন ব্যক্তিকে কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশে প্রেরণ বা প্রেরণে সহায়তা করিলে বা চুক্তি করিলে;
(খ) কোন ব্যক্তিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করিয়া কোন অর্থ বা মূল্যবান দ্রব্য গ্রহণ করিলে বা গ্রহণ করিবার চেষ্টা করিলে;
(গ) কোন অভিবাসী কর্মীর পাসপোর্ট, ভিসা বা অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র বৈধ কারণ ব্যতীত আটকাইয়া রাখিলে;
(ঘ) প্রতারণামূলকভাবে অধিক বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধার মিথ্যা আশ্বাস প্রদান করিয়া কোন ব্যক্তিকে অভিবাসন করাইলে বা অভিবাসনের নিমিত্ত চুক্তিবদ্ধ হইতে প্রলুব্ধ করিলে অথবা অন্য কোনভাবে প্রতারণা করিলে;
উহা অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড এবং অন্যূন ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ধারাঃ ৩৩। কোন ব্যক্তি বা রিক্রুটিং এজেন্ট কর্তৃক বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে নিয়োগকারী বা বিদেশ হইতে চাহিদাপত্র, ভিসা বা কার্যানুমতিপত্র সংগ্রহে অবৈধ পন্থা গ্রহণ করিলে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উহা ক্রয়-বিক্রয় করিলে উহা অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে এবং তজ্জন্য তিনি 1[অন্যূন ২ (দুই) বৎসর এবং অনধিক ৭ (সাত) বৎসরের সশ্রম কারাদণ্ড] এবং অন্যূন ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
এমন অপরাধ হলে মামলা কোথায় করবেন?
কোন অপরাধ সংঘটিত হইলে কোন ব্যক্তি থানায় বা সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারাধীন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।
বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবেঃ
বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্ট/এজেন্সি দ্বারা প্রতারণা এড়াতে প্রথমেই খোঁজ নিতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের বিষয়টা। দেশে বর্তমানে লাইসেন্স প্রাপ্ত ১৪৩৪ টি রিক্রুটিং এজেন্ট/এজেন্সি রয়েছে। যেগুলোর তালিকা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইডে রয়েছে।রিক্রুটিং এজেন্ট/এজেন্সি দ্বারা প্রতারণার আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করার স্বার্থে অবশ্যই লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে করার চেষ্টা করবেন। উভয় পক্ষের মধ্যে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে কোন চুক্তি সম্পাদিত হলে তার একটি মূল কপি নিজের নিকট সংরক্ষণ করবেন। পারলে এই ধরনের চুক্তি করার পূর্বেই আইনজীবীর শরণাপন্ন হওয়া উত্তম। চুক্তিতে নিজস্ব সাক্ষী রাখবেন। চুক্তিটি সহজবোধ্যভাবে করবেন এবং তাদের দেওয়া চুক্তিটি না পড়ে, না বুঝে স্বাক্ষর করা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, চুক্তির মেয়াদের মধ্যে কাজ না হলৈ দ্রুত আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ (কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)
লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩