অনেকদিন পর আজ বাংলা সিনেমা দেখতে সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। সে যে সে সিনেমা না! "আশিকি"। ছোট কালে পড়তাম মহেশ গল্পের নামকরনের সার্থকতা বর্ণনা কর। ঠিক সেরকমই এই সিনেমার নামকরন পুরোপরি সার্থক।
যাহোক আমি আমার এক সাড়ে ছয় ফিট সাইজের বন্ধুরে নিয়ে রওনা দিলাম সিনেমা হল অভিমুখে। রাজশাহী শহরে কালের বিবর্তনে একটি মাত্র সিনেমা হল টিকে আছে নাম "উপহার" যেটা যেকোনো সময় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিকট চলে যেতে পারে। ছয়টার সো, সাড়ে পাঁচটার সময় সিনেমা হলের গেটে গেলাম সেখানে দেখি বিশাল লাইন! মনে হচ্ছে আমি সিনেমা হলে না এসে পাসপোর্ট অফিসে চলে আসেছি। বন্ধু আমার লাইনে দাঁড়ালো, কিন্তু একি! সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কাউন্টার খোলার কোন নাম গন্ধ নাই! কিছুক্ষণ পরে দেখি দুইজন টিকেট বিক্রি করছে ৫৯ টাকার টিকেট ৮০ টাকায়। একটু পরে দেখি আরো কয়েকজন টিকেট বিক্রি করতে শুরু করল! শুনলাম ওরাই নাকি কাউন্টারের লোক। ব্ল্যাকে বিক্রি করছে। বন্ধু তো চলেই যাবে আমি বললাম, এত দূর আসছ দেইখা যাও! কেনা হলো টিকেট। সিনেমা হলের ২য় তলায় সিট। শুরু হতে ১০ মিনিট বাকি আছে। ওখানে গিয়ে তো আমার চক্ষু কাঁঠাল গাছ! গেটম্যান যে আছে সেও টিকেট বিক্রি করছে! উনি দর্শকদের জন্য এত সুবিধা করে রেখেছেন ভাবাই যায় না! কষ্ট করে টিকেট কেটে নিয়ে আসার কি দরকার? উনার কাছে থেকে নিবে আর ঢুঁকে পড়বে, কিছু পেতে হলে তো কিছু দিতে হয়! এজন্য উনাকে টিকেট প্রতি ৩০ টাকা করে বেশি দিতে হবে এই আর কি!
যাহোক শেষ পর্যন্ত হলে প্রবেশ করে ২টা সিট দখল করতে পারলাম দুই বন্ধু তে! সকল লাইট নিভে গেল, বুড়ো মানুষের ঝাপসা দৃষ্টির মত প্রজেকশন শুরু হল! কিন্তু পর্দাই দেখি কলকাতার নায়ক দেব, সব ভেঙ্গে চুরে একাকার করে ফেলছে! আমি তো অবাক! সেকি এই সিনেমাতে আবার দেব আসলো কবে?? মারামারি পর্ব শেষ করে নাচা গানা শুরু করল!! এক টিকেটে দুই ছবি নাকি!!! একটু পরে বুঝলাম ব্যপারটা, অন্য মুভির ট্রেলার দেখাচ্ছে! কিন্তু কলকাতার সিনেমার কেন?? এবার পর্দায় জাতীয় পতাকা ভেসে উঠলো জাতীয় সঙ্গীত বাজতে শুরু করল! উঠে দাঁড়ালাম, দাঁড়িয়ে দেখি আমরা দুই বন্ধু আর কোনাই একজন দাঁড়িয়ে আছে ।
এবার শুরু হল সিনেমা, কি ভাবে শুরু হল মনে নাই! যে সিনেমার নামটাই নকল সেটা আসল হবে কিভাবে? শুরু থেকে যত দূর দেখেছি তার মধ্যে কোন বাংলা সিনেমার ছিটেফোঁটাও নাই! মনে হচ্ছে আমি বাংলাদেশে নাই কলকাতা এসেছি সিনেমা দেখতে। মনে হয় কলকাতার কোন সিনেমাতেও এত হিন্দি ব্যবহার করা হয় না। প্রথম হাফ দেখার পর আর গিলতে পারিনি। চলে আসছি! যতটুকু দেখেছি এর মধ্যে একটা সেকেন্ডও মৌলিক কিছু দেখি নাই! তামিল, তেলেগু, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, হাম তুম,ব্যান্ড বাজা বারাত ইত্যাদি সিনেমার একটা সমসত্ত্ব মিশ্রণ। আমি ভেবে পেলাম না মৌসুমির মত এত খ্যাতিমান একজন অভিনেত্রী কেন এই মুভিতে????
প্রথম হাফ দেখে আমার যা মনে আছে তা হলো নুসরাত আফা আঙ্গুররে সরি অঙ্কুশ রে চুম্মা দিতে যাইতেছিল (ইমরান আংকেলের সাথে শুরু করার প্রিপারেসন) আর থেমে যাচ্ছিল। আর একটু পরে দেখলাম চাদ্দর পইরা কানতেছে! মনে মনে বললাম পিউলি আছে না ৭২ ঘন্টা তো হয় নাই! এ ছাড়া আর কিছু মনে নাই!
আমার জীবনে এমন বিরক্তকর, ফাউল সিনেমা আমি দেখি নাই এর চাইতে জলিল আংকেলের খোঁজ লাখো গুনে ভাল! রাগে দুঃখে সিনেমার বাকি অংশ না গিলে চলে এসেছি! এভাবে চলতে থাকলে আর কিছু দিনের মধ্যে জাজ মাল্টিমিডিয়া, বাংলাদেশের সিনেমা তে বাজ ফেলিয়ে পুরো হিন্দি বানিয়ে দিবে। নিচ দিয়ে কলকাতার ভাষায় সাবটাইটেল উঠবে! বলি এখনও সময় আছে, এই ফাউল সিনেমাও হাউজ ফুল হয়, এভাবে চলতে থাকলে... কিছু একটা হবে!
শেষে এই সিনেমার পুরা ইউনিট টাকে আমার পক্ষ থেকে টুট টুট টুট! এবং নুসরাত ফারিয়া মাজহার আপুর কাছে একটা প্রশ্ন, আপনি কি কখনো বাংলা চলচিত্র দেখেছেন????