শুনেছি AIUB তে নাকি জুতা না পরলে ঢুকতে দেয়না। সামনের চেকপয়েন্টেই দারোয়ান আটকিয়ে দেয়! এই দিকে ওইখানে আমার প্রগ্রামিং কন্টেস্ট। এই ধরণের বিপদে পড়লে অন্যরা সাধারণত যা করে তা হল অন্য কারো কাছ থেকে জুতা ধার করে নেয়। হলে জুতার মালিকদের তাই খুব কদর। দুর্ভাগ্য বসত আমি সেই মালিক শ্রেনীর সদস্য নই। কিন্তু শ্রমিক শ্রেনী হয়েও লাভ হয়না। হলে আমার সমান মাপের পাওয়ালা খালি এক জনই আছে, জুয়েল। শ্রমিক শ্রেনীরও অধম। সেই বেচারা মাস খানেক আগে আমারই একটা স্যান্ডেল নিয়েই একটু রিপিয়ার টিপিয়ার করে চালাচ্ছে কোন রকমে।
হলের পোলাপাইন এর এই এক দোষ। টিউশনী করে যা পাবে সব দিয়ে ঠাটারী বাজারের স্টারে গিয়ে মুরগীর টিক্কা অথবা ঢাকাকলেজের সামনে গ্যালাক্সিতে গিয়ে পেস্তা বাদাম দিয়ে ... খেয়ে শেষ করে ফেলবে। পোশাক আশাক এর দিকে তাই কারো নজর নেই। সেরকম ট্রেডিশনও নেই। কেউ যদি এক দিন ভুল করে জামাটা জাস্ট একটু ইন করে চলে আসে তাইলেই শেষ। পুরাটা দিন পচানি খেতে হবে অন্য সবার কাছে। তাই এখানে যার স্যান্ডেল যত ছেড়া। সে তত বস। স্যান্ডেল এর বদলে হাওয়াই চপ্পল পড়লে আরো বস!
তো এইরকম বস পাবলিক সেজেই রওনা দিলাম AIUB এর দিকে। আমার কন্টেস্টের টি শার্ট টা আগের দিন কোন এক কারণে আমি পাইনি। পেয়েছি বুয়েট থেকে মাইক্রোতে উঠার সময়। গায়ে তাই যথারীতি আমার সেই বাম পকেট ছেড়া রঙ জ্বলা ফতুয়া। মনে একটা আশা ছিল কন্টেস্টের জামা পড়ে গেলে দারোয়ান হয়ত কিছু বলবে না। কিন্তু মাইক্রো এর মধ্যে যে জামা চেঞ্জ করে নিব সে উপায় নেই। আমাদের মাইক্রোতেই উঠেছে বুয়েটের নারী কন্টেস্টান্ট দল। তাদের সামনে আমার এই ‘ভেরি অ্যাট্রাক্টিভ’ বডি বের করে ফতুয়া খুলে গেঞ্জী পরতে সাহস হচ্ছেনা। ‘জ্যাটাক’ আর ‘এক্স’ এর অ্যাড গুলা আমিও তো দেখেছি নাকি?
সময়মত পৌছে গেলাম বনানীর ভার্সিটি পাড়ায়। টীমমেট দের বললাম আমারে ঘিরে হাটতে যাতে দারোয়ান না বুঝে যে আমি খালিপা। এই ভাবে কোন রকমে সেই যাত্রা রক্ষা পেলেও অই দিন আমার চোখ গেল খুলে! মনে হল! হায়, এ কোন দেশে আসিলাম!! কত বর্ণের কত গন্ধের এবং কত ভাবের মেয়ে যে এ দেশে আছে এইটা এই ভার্সিটি পাড়ায় না আসলে জানতামই না সারা জীবন। তারা যখন সামনে দিয়ে যায় তাদের দিকে তাকালে তাদের চোখে একটা ভাষা ফুটে উঠে। চোখ দুটো যেন ইংরেজীতে আমাকে বলতে থাকে, “হোলি কাউ!! হট ইজ দিস!!”। আমি একটু লজ্জা পেয়ে যাই। তার পর আবার গ্রাম থেকে আসা মজনু মিয়া যেভাবে প্রথম শহরের বিজলী বাতি দেখে সেভাবে তাদের দেখি। এইটা দেখতে দেখতে আমার সোল পরিশুদ্ধ হতে থাকে। কিন্তু এদিকে ডান পায়ের স্যান্ডেলের সোল বিট্রে করে। বড়ই বিপদ! আমার স্যান্ডেল সোলহীন হলেও আমি যে হৃদয়হীন ফেলনা না সেটা বুঝানোর জন্য তাড়াতাড়ি আমার সেই ফতুয়ার উপর দিয়েই কন্টেস্টান্ট দের গেঞ্জীটা পড়ে ফেলি।
সে যাত্রায় ভালয় ভালয় ফিরে আসতে পারলেও স্যান্ডেল বেচারার বিট্রেতে খুবই মেজাজ খারাপ হয়। তাই সেই শালাকে পিটিয়ে পাটিয়ে একটু টাইট দেওয়ার জন্য দিয়ে আসি হলের রেসিডেন্ট চর্মকারের কাছে। পরদিন সকালে ক্লাসে যাবার আগে স্যান্ডেল নিতে গিয়ে দেখি স্যান্ডেল দুটাকে দেখতে একেকটা মোষের মত লাগছে!! ঘটনা ব্যাখ্যা করে চর্মকার। “স্যার সোল দুইটা পুরা নষ্ট হয়ে গছিল। তাই খুলে পুরা বাদ দিয়ে দিসি”। আমি বলি “বাদ দিছ ভাল কথা মানিক, কিন্তু এইটা কি বাত্তি লাগাইছো পাঁচ ইঞ্চি উচা! এমনিতেই লম্বার চোটে ফ্যানে বাড়ি খাই!!”... “স্যার একে বারে খাটি জিনিস দিছি। টায়ার, মাইক্রো বাসের টায়ার!!”
আরে এই হালায় করছে কি!! স্যান্ডেলের নিচে মাইক্রোবাসের টায়ার লাগায়া দিসে! কিন্তু আমার সেই টায়ার ওয়ালা স্যান্ডেল হলে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তাই সেটা আর পরে চেঞ্জ করা হয়নি। কিন্তু তার পর এক দিন বাধ্য হই সেটা চেঞ্জ করতে।
টিউশনি তে যাবার পর স্টুডেন্ট বলল.... সে আরেক গল্প পরে বলবোনে।
(চলবে)