somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ সরকার ও ইসলাম: প্রসঙ্গ কথা।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের নেতা নেত্রীরা পরিস্কার করেছেন, ইসলামের সাথে তাদের বৈরীতা রয়েছে। ইসলাম যে তাদের গাত্রদাহের কারণ, তা নিয়ে আর কোন মানুষই এখন সন্দেহ পোষণ করে না।
তিরিশের দশকে তুরস্কের ইহুদি সন্তান কামালপাশা চরম সেকুল্যার চেতনায় উদ্বুব্ধ হয়ে তুরস্ক থেকে ইসলাম উচ্ছেদ করেছিলেন, অন্তত চেষ্টা করেছিলেন এবং সাময়িকভাবে সফলও হয়েছিলেন। তুরস্কের স্বাধীনতা ফেরত দেবার এই পূর্বশর্ত দিয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চ সরকার। আর ক্ষমতার স্বাদ পেতে কামাল সোৎসাহে সে শর্ত মেনে ইসলামকে তুরস্কে থেকে উচ্ছেদ করেিেছলেন।
আরব জাতীয়তাবাদের ধারনাটিও ইসলাম উচ্ছেদে ব্যবহৃত হয়। ধারনাটি সর্বপ্রথম ব্রিটিশ গোয়েন্দা ‘লরেন্স অব আরাবিয়া’ ও মিশরে তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার ম্যাকমিলান যৌথভাবে প্রণয়ন করে হেজাজের নেতা শরীফ হুসেইনের মাধ্যমে আরব উপদ্বীপে ছড়িয়ে দেন।
উদ্দেশ্য ছিল, ওসমানিয় খেলাফত থেকে আরবদের আলাদা করা। আরব ও তুর্কী, তারা যে দুটো আলাদা জাতি, সে বিষয়টিকেই প্রতিষ্ঠা করে ইসলামি খেলাফত থেকে মুসলমান আরবদের বের করার মাধ্যমে খেলাফতকে দূর্বল করা।
তারা আশাতীতভাবে সফলও হয়েছিল। আরব জাতিয়তাবাদকে কাজে লাগিয়েছিলেন মিশরের জামাল আব্দুন্নাসের থেকে শুরু করে সিরিয়ার হাফিজ, লিবিয়ার গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম আর জর্ডানের বাদশাহ হুসেন, সকলেই। কিন্তু পরিণতি কি হয়েছে, তা সকলেই জানেন।
এই আরব জাতিয়তাবাদের উপরে ভিত্তি করেই ইরাক, সিরিয়া এবং মিশরসহ প্রতিটি আরব দেশে অনৈসলামিক সেকুল্যার বা রাজতান্ত্রিক ইসলামবিরোধি সরকার ক্ষমতায় জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে মুসলিম জাতি সত্তার ক্ষতি করে চলেছে।
সেই একই প্রক্রিয়াটি এখন শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। নিকট প্রতিবেশী ভারত তার পূর্ব সীমান্তে মুসলিম জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত বাংলাদেশকে নিয়ে বড় সমস্যায় আছে। সমস্যাটি মনস্তাত্বিক, এবং বহুমাত্রিকও বটে। ভাষা-বর্ণ, কৃষ্টি-কালচার-ধর্ম, এতসব সামঞ্জস্যতা সত্তেও বাংলাদেশ যদি আদর্শিক পরিচয়, ইসলাম নিয়ে বিকশিত ও সুসংহত হতে পারে, তবে ভারতের জন্য সেটা হবে মারাত্বক মাথা ব্যাথার কারণ।
পাকিস্থানকে ভেংগে ভারত ভেবেছিল সে বড় নিশ্চিন্তেই থাকবে পূর্ব সীমান্ত নিয়ে। কিন্তু তা হয়নি। পূর্ব সীমান্তের ছোট্ট বাংলাদেশ, ভারত যতটা ভেবেছিল, তার চেয়েও বেশী আত্বসচেতন, স্বাধীনচেতা জাতি হিসেবে পরিপূষ্ঠ হচ্ছে দ্রুত। স্বাধীনতার পরে শত ব্যর্থতা সত্তেও বাংলাদেশের আশাতীত উন্নতী ও আন্তর্জাতিক অংগণে সতন্ত্র পরিচিতি ভারতের আশা ভংগ করেছে।
ভারতের পেটের মধ্যে থেকেও স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখা, জীবন মান উন্নয়ন করে চলা যায়, এমনটা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলো দেখলে তারাও উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশের মত একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে বেঁচে থাকতে চাইবে। ভারতের মাথা ব্যাথা সেখানেই।
সে কথারই প্রকাশ ঘটালেন মাত্র দু’দিন আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতীয় বাহিনীর ইষ্টার্ন কমান্ডের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় জেনারেল জ্যাকব। তার মতে, একাত্তর সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে পাকিস্থান ভাংগা হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি।
আশাভঙ্গ থেকেই ভারত উঠে পড়ে লেগেছে বাংলাদেশের মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরাতে। আর এ কাজে সে ব্যবহার করছে বাংলাদেশে তাদের আশীর্বাদপূষ্ঠ সরকারকে। গাদ্দার জেনারেল মইনুদ্দীনকে দিয়ে এ ধারা শুরু। জনপ্রিয় ইসলামি মাহফিলগুলো বন্ধ করে দিয়েছে তখনই।
আর এখন এ সরকার ইসলামি শিক্ষা আর আক্বিদাকেই কলুষিত করে চলেছে। সংবিধান থেকে আল্লাহর উপরে আস্থা তুলে দিয়ে জাতিয় পরিচিতির মূলেই কুঠারাঘাত করেছে! ধর্মহীন শিক্ষানীতি প্রণয়ন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসন থেকে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের দূর করা, প্রশাসনে ইসলামের নিষ্ঠাবান অনুসারীদের চিহ্নিত করে সরিয়ে দেয়া, সমাজে ইসলামপন্থীদের ‘দেশবিরোধি’ হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে।
প্রশাসনে অমুসলিমদের বেছে বেছে নিয়োগ দেয়া, নিজেদের পোষা কিছু আত্ববিক্রিত আলেম দিয়ে ইসলামকে বিকৃত করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ইসলামের ষষ্ঠ খলিফা হিসেবে প্রচার, বিসমিল্লাহ’র চেয়ে ‘জয়বাংলা’তে বরকত বেশী, এমন ধৃষ্ঠতাপূর্ণ কথা বলা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এক চরম মিথ্যাবাদী ধিকৃত ব্যক্তিকে ডিজি বানিয়ে সেখানে অর্ধ উলংগ নর্তকী নাচানো, মুসলমানদের রক্ত থেকে জিহাদের চেতনা মুছে দিতে হবে, এমন উদ্ভট ও ধৃষ্ঠতাপূর্ণ উক্ত করানো হয়েছে তাকে দিয়ে।
সর্বশেষে খোদ ধর্ম প্রতিমন্ত্রীকে দিয়েই বলানো হলো, প্রিয় রাসুল সা: নাকি মুর্তি পূজার জন্য মসজিদের অর্ধেক ছেড়ে দিতেন, বর্তমান সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করছে বাংলাদেশে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মসজিদগুলোর অর্ধেক হিন্দুদের মুর্তি পূজার জন্য ছেড়ে দিতে হবে!
যে রাসুল সা: এর আগমণই হয়েছিল বিশ্ব থেকে মুর্তিপূজার উচ্ছেদ করতে, সেই রাসুল সা: এঁর নামে এমন মিথ্যাচার কোনদিন কোন কাফেরও করেনি। যে ধৃষ্ঠতা দেখালো আমাদের মন্ত্রী মহোদয়। এসব কোন বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। বরং এগুলো করা হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে। উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশের মানুষের মনে-মনন, চিন্তা-চেতনা থেকে ইসলাম সরিয়ে দেয়া।
এমনটা করতে পারলেই দেশের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বটুকু তারা পূরোপূরি কব্জা করতে পারে। যতক্ষণ বাংলাদেশের মানুষের মন-মননে ইসলামের শিক্ষা, জিহাদের জজবা টিকে আছে, ততক্ষণ তাদের সে আশা পূরণ হবার নয়। এ উপলব্ধি থেকেই এত আয়োজন।
প্রশ্ন হলো, তাদের সেই আশা কি পূরণ হতে দিতে পারে মুসলমানরা? উত্তরটা কোন আত্বসচেতন মুসলমানকে বলে দিতে হবে না। এই আত্বসচেতনতা লালন করা এবং তার আলোকে প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়াটাই হবে আজকের দিনে প্রতিটি বাংলাদেশী, প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×