আমার ভাগ্য মোটামুটি। আমি মাত্র দুইজন বিখ্যাত ব্যাক্তিদের স্বপ্নে দেখেছি। মানে অন্তত এই দুইজনের সাথে আমার কি কথোপকথন হয়েছিল তা মনে আছে। এই দুইজন হলেন শাহরূখ খান আর হুমায়ূন আহমেদ। জাফর ইকবাল স্যারকেও মনে হয় দেখেছিলাম কিন্তু তাঁর সাথে কি কথা হয়েছিল তা মনে নাই। আরও দেখেছি জর্জ ডব্লিউ বুশকে। এই ব্যাটাকে নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তা করি না কিন্তু তারপরও ব্যাটা স্বপ্নে কি করে হাজির হল বুঝতে পারিনি। ব্যাটার সাথে কি কথা বলেছিলাম তা মনে নাই কিন্তু ব্যাটা যে আমার কাছে কিছু একটা সাহায্য চেয়েছিল আর ব্যাবহার খুবই অমায়িক ছিল এইটুকু মনে আছে।
যাইহোক এবার আসল বিখ্যাত দুইজন নিয়ে স্বপ্নের কথাটা বলি।
প্রথমে শুরু করি হুমায়ূন আহমেদের কথা।
হুমায়ূন আহমেদকে যখন দেখেছিলাম তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি। মানে একবছর আগের কথা। এসময় হুমায়ূন আহমেদের বই প্রচুর পড়তাম।
একদিন স্বপ্নে দেখি হুমায়ূন আহমেদ দুপুরে আমাদের পাশের বাসায় বেড়াতে এসেছে। স্বপ্নের পাশের বাসার সাথে বাস্তবের পাশের বাসার কোন মিল নেই।
হুমায়ূন আহমেদের জন্য দুপুরে প্রচুর খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হল। আমাকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। হুমায়ূন আহমেদ কিন্তু কিছুই খেলেন না।
খাওয়া শেষে হুমায়ূন আহমেদ একটা রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। এই রুমটার সাথে আমি পরিচিত। বর্তমানে আমি এই রুমেই থাকি। স্বপ্নে কিভাবে আমার রুম হাজির হল বলতে পারব না। হুমায়ূন আহমেদকে দাওয়াত দেয়া হলেও তাঁর লেখা নিয়ে কিন্তু কেউ কিছুই বলেছিল না। এতে তিনি কিছুটা বিরক্ত। তিনি সিগারেটের খোঁজ করলেন। অবাক হয়ে দেখলেন তাঁর কাছে কোন সিগারেট নেই। বাড়ির লোকজনের কাছে সিগারেটের কথা বলতেও লজ্জা লাগছে।
এমন সময় স্বপ্নে দেখলাম হঠাৎ আমি তার সামনে উপস্থিত।
আমি বললাম, আপনার জন্য সিগারেট এনেছি। বেনসন সিগারেট। (বাস্তবে কিন্তু আমি বেনসন সিগারেট চোখেও দেখিনি। শুধু বন্ধুদের মুখে নাম শুনেছিলাম আর হুমায়ূন আহমেদের বইতে পড়েছিলাম মনেহয়।)
হুমায়ূন আহমেদ সিগারেট পেয়ে খুবই খুশি হলেন।
আমি আমার বাসায় হুমায়ূন আহমেদের যতবই আছে সবগুলো কিভাবে যেন এক মুহূর্তের মাঝে হাজির করে তাঁর অটোগ্রাফ চাইলাম।
তিনি হাসিমুখে সিগারেট টানতে টানতে অটোগ্রাফ দিত লাগলেন। তবে কিছু বললেন না।
অটোগ্রাফ দেবার সময় আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এত গুছিয়ে লেখেন কি করে?
তিনি বললেন, গুছিয়ে লেখি না-কি। আমার কাছে তো লেখা খুবই অগোছাল লাগে।
স্বপ্নের এইটুকুই মনে ছিল। বাকিটুকু মনে থাকলে ভাল হত। কিন্তু কি আর করা!
যাইহোক, এবার শাহরূখ খানের কথা বলি।
শাহরূখ খানকে স্বপ্নে দেখেছিলাম যখন আইপিএল প্রথম শুরু হয়েছিল। তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি। কোলকাতা নাইট রাইডার্স প্রথম পাঁচটা ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে প্রথম দুইটাতে জিতলেও পরের তিনটাতে লাগাতার হেরেছিল।
তারপরের দিনের কথা। সেদিন আমি সকালে খাওয়া-দাওয়া ঠিকভাবে করি না দেখে আমার দাদু (দাদী) আমাকে একটু বকাই দিল। বকার পরিমাণ সামান্য হলেও দাদুর কথায় রাগ করলাম খুব।
রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে শুয়ে পড়লাম। রাগ করলে আবার আমার ঘুমাতে ইচ্ছা করে তখন ঘুম আসুক আর নাই আসুক।
তবে সেদিন সকাল নয়টার দিকে কিছুটা তন্দ্রার মত এসেছিল। তখনই দেখলাম শাহরূখ খানকে।
স্বপ্নে তখন রাত ছিল। চারিদিকে প্রচন্ড ভিড়। শাহরূখ খান আমাকে বলল, কেমন আছ?
ভিড় হলেও আমি শাহরূখ খানের গলা স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। অনেক কষ্টে বললাম, আপনি বাংলা বলতে পারেন?
শাহরূখ খান তার বিখ্যাত মুচকি হাসি দিয়ে বলল, আমি কলকাতা নাইট রাইরার্সের মালিক। আর আমি বাংলা বলতে পারব না কেন?
আমি আস্তে আস্তে বললাম, আপনি হঠাৎ আমার সাথে কথা বলছেন কেন?
শাহরূখ খান আবার তার বিখ্যাত মুচকি হাসি দিয়ে বলল, তোমাকে দেখে মনে হল তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ। শোন আমিও কিন্তু কষ্ট পেয়েছি। আমার টিম ম্যাচ হেরেই চলছে। কিন্তু তাই বলে তো আমি তোমার মত কেঁদে দিই নি। তাই না?
এতক্ষণে খেয়াল হল আমার চোখে পানি। দাদুর কথা শুনেই মনে হয়।
শাহরূখ খান বললেন, শোন এভাবে আর কাদবে না ঠিক আছে?
আমি চোখ মুছে বললাম, হুম...ঠিক আছে।
- কাদলে কিন্তু অনেক পিছিয়ে পড়তে হবে।
শাহরূখ খান আবার তার বিখ্যাত মুচকি হাসি দিল।
আরও মনেহয় কিছু কথা হয়েছিল। তা আর মনে নাই। স্বপ্ন হল শর্টটাইম মেমরি। এতটুকু যে মনে রাখতে পেরেছি সেটাই ভাগ্য। তবে ঘুম থেকে উঠে কিন্তু ঠিকই চোখে পানি পেয়েছিলাম। চোখ দুটো তখন ভীষণ জ্বালা করছিল।
এই দুইটা স্বপ্ন যে হুবহু এরকমই দেখেছিলাম তাও কিন্তু ঠিক মনে নেই।
প্রিয় ব্লগার আপু ও ভাইয়ারা, আপনারদেরও নিশ্চয়ই এরকম কিছু স্বপ্ন আছে। বিখ্যাত মানুষের সাথে স্বপ্ন থেকে থাকলে অবশ্যই জানাবেন কিন্তু। বাস্তবে হয়ত এনাদের সাথে জীবনেও কথা হবে না কিন্তু স্বপ্নে হলে ক্ষতি কি!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:২৪