somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - অবাক ফাল্গুন (পর্ব-২)

২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবাক ফাল্গুনঃ পর্ব-১

অবাক ফাল্গুনঃ পর্ব-৩

লোকগুলো সংখ্যায় বেশি না-তিনজন। বাসে উঠেই এদের মধ্যে একজন (সম্ভবত এদের নেতা) বলল, সবার কাছে যা কিছু আছে বাইর করেন-নাইলে কিন্তুক খবর আছে।
বাসের মধ্যে একজন বলল, আপনারা কি ছিনতাইকারী নাকি?
আমরা ছিনতাইকারী! আপনি তো আমাদের লজ্জা দিলেন। আমারা হলাম গিয়ে ডাকাত। ছিনতাইকারী দলের এত সাহস নেই। ওরা বাস লুট করার সাহস পায় না-আমরা পাই।
কিছুক্ষণের মাঝেই বাসের যাত্রীদের সবার পকেটের টাকা গুন্ডাদের হাতে চলে যেতে লাগল। তপু অবাক হয়ে ভাবল গুন্ডামী করা এত সোজা-তাও আবার বাসের মধ্যে-তাও আবার এত সকালে। তপু নীতুর দিকে তাকাল। নীতু চোখ বড় বড় করে গুন্ডাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মুখে কোন ভয়ও নেই আবার কোন আনন্দও নেই-তবে কৌতুহল আছে। এই অবস্থায় ওকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। মেয়েরা মনে হয় বহুরূপী। একেক সময় এদের একেক রূপ বের হয়। এই অবস্থায় সবচেয়ে সুন্দর লাগছে নীতুর চোখ দু’টি। মনে হচ্ছে, নীতুর দুই চোখ যেন দুটি ঘন কালো টলটলে পানির দীঘি।
তপু এই বিপদের সময় নীতুর চোখ নিয়ে এত ভাবছে কেন? ওর তো বিপদ নিয়ে চিন্তা করা উচিত। অবশ্য চিন্তা করবারও কিছু নেই। গুন্ডারা ওর কাছে টাকা চাইলে গুন্ডাদের হাতে টাকা দিয়ে দিলেই হবে। শুধু মোবাইলটা দেয়া যাবে না। মোবাইলটা তপুর অনেক প্রিয়। তাছাড়া মোবাইলটা আছে তপুর হাঁটুর পকেটে। ইদানিং প্যান্টের পকেট ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। তপুর মোবাইল এই সরু পকেটে রাখলে অসুবিধা হয় তাই মোবাইল হাঁটুর কাছে বড় পকেটে রেখেছে। মনে হচ্ছে-তপু একটা বুদ্ধিমানের কাজই করেছে।
তপু ওর মানিব্যাগের খোঁজে প্যান্টের পকেটে হাত দিল। বাস থেকে কি পরিমাণ টাকা খোয়া যাবে তা জেনে রাখা দরকার। কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে তপু বুঝল যে ও ভুল করে মানিব্যাগ আনেনি। তপু হাসবে নাকি কাঁদবে-বুঝতে পারল না। তপুর কাছে কোন টাকা নেই কিন্তু সেজন্য গুন্ডরা তো আর ওকে ছেড়ে দেবে না। ওকে না জানি কি করে!
বাসের যাত্রীদের মধ্যে দেবদাস একটু ঝামেলা বাঁধাল।
দেবদাসকে যখন গুন্ডারা সবকিছু দিতে বলল দেবদাস তখন বলল, আমি তোদের টাকা দেব কেন? তোরা কে রে?
গুন্ডাদের নেতা বলল, তোর সাহস কি বেশি হইছে? আমার নাম শুনিসনি? আমার নাম কানপাকা মজিদ।
চুপ কর। তোরা মনে করেছিস কি? তোদের মত ল্যাংড়া-চ্যাংড়া পোলাপান বাসে উঠে একটু ধমকাধমকি করবি আর আমি সবকিছু তোদের দিয়ে দেব। সাহস থাকলে কাছে আয়। তোদের তিনটাকে আমি একাই সাইজ করব। আমি জুডো জানি।
শালা! আমি তোর জুডোর খেতা পুরি! তুই কি আমারে রাস্তার যেই সেই গুন্ডা মনে করেছিস?
কানপাকা মজিদ পকেট থেকে স্লাইডিং চাকু বের করল। সেই চাকু খোলবার পর এত বিশাল হল যে সাইজ দেখে সবার আক্কেল গুরুম হয়ে গেল।
সবথেকে ভয় পেল দেবদাস। জুডোর কলাকৌশলে নিশ্চয়ই চাকু হাতিয়ে নেবার কৌশল আছে-কিন্তু এ মুহূর্তে দেবদাস মনে হয় সেটা ভুলে গেছে। সে কানপাকা মজিদকে হাতজোর করে বলল, মজিদ ভাই, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমারে মাপ করে দেন।
আমার নাম মজিদ না-কানপাকা মজিদ।
সরি, কানপাকা মজিদ ভাই।
কানপাকা মজিদ বাসে পিচিক করে থু থু ফেলে বলল, শাস্তি না পেয়ে তো তুই মাপ পাবি না।
আপনি যা বলবে তাই করব।
মজিদ চাকু ঘুরিয়ে বলল, আমি যে শাস্তি দেব তা না মানলে কিন্তু আরো ভয়ংকর শাস্তি হবে। এখন যা করতে বলব সাথে সাথে তাই করবি। করবি তো?
জ্বি অবশ্যই করব।
তাহলে যা, আমার ছ্যাপ দিয়া নাকে খঁত দে।
নাকে খঁতটা আবার কি?
নাকে খঁত বুঝিস না? তোর নাক আমার ছ্যাপে ডললেই সেইটা হবে নাকে খঁত।
অন্যান্য গুন্ডারা হেসে উঠল। দেবদাস বিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে আছে। কি করবে তা বুঝতে পারছে না।
কান পাকা মজিদ বলল, ঠিক আছে। তোর শাস্তি পরে দেওয়া যাবে, আগে বাসের টাকা তুলে নেই।
দেবদাসের পর তপুর পালা। কান পাকা মজিদ তপুর দিকে ফিরল। তপু মানিব্যাগ আনেনি। সম্পদ বলতে তপুর কাছে একটা মোবাইল সেট আছে। সেটাও আবার প্যান্টের হাঁটুর দিকের পকেটে। সেটা কানপাকা মজিদ খুঁজে পাবে বলে মনে হয় না। আর একটা সার্টিফিকেট আছে। সেটাকে তপু কানপাকা মজিদের অলক্ষ্যে সিটের নিচে রেখে দিল। সুতরাং খোয়ানোরও কিছুই নেই। কিন্তু তারপরও তপুর কেমন যেন ভয় ভয় করছে।
কানপাকা মজিদ তপুকে বলল, যা আছে সবকিছু তাড়াতাড়ি বাইর কর তাড়াতাড়ি। আমাগো হাতে সময় নাই।
ইয়ে মানে হয়েছে কি...
কি হইছে? কানপাকা মজিদ হুঙ্কার দিল।
মানে আমার কাছে তো কোন টাকা নাই।
টাকা নাই মানে? বাসে কি হুদাই উঠছস? টাকা নিয়ে উঠছ নাই?
হয়েছে কি আমি না মানিব্যাগ...
চুপ কর। ওই শামসু, তুই হালারে চেক কর তো। দেখি-হালার কাছে সত্যিই কিছু আছে কি-না।
শামসু এসে তপুর জামা প্যান্ট সবকিছু চেক করল। হাঁটুর দিকের পকেটে হাত দিল না বলে মোবাইলটা পেল না। সবশেষে কিছুই পাওয়া গেল না। কানপাকা মজিদ রেগে গেল।
হালার পুত-ফকিরনির বাচ্চা-তোর কাছে দেখি ফুডা পয়সাও নাই। রাস্তার ফকিরও তোর থেইক্কা ধনী।
আমি তো বলেছিলাম...
চুপ, একদম চুপ। তোর আজকে শাস্তি হইবে। ভীষণ কঠিন শাস্তি হইবে।
শামসু হেসে বলল, কি শাস্তি দেবেন ওস্তাদ?
দাড়া বলতাছি। ওই ফকিররার পুত-তুই তোর জামা খোল।
জামা খোলব?
তুই তোর জামা খুলবি-এইটাই হইল তোর শাস্তি। জামা খুইল্যা তুই ওইখানে নাকে খঁত দিবি। কানপাকা মজিদ ঐ জায়গাটা দেখাল যেখানে একটু আগে দেবদাসকে নাকে খঁত দিতে বলা হয়েছিল।
মানে কি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!
তোর আর বুইঝা কোন কাম নাই-তুই শুধু তোর জামাডা খোল।
কানপাকা মজিদ তপুকে অপদস্থ করতে ভীষণ মজা পাচ্ছে। এরকম মজা ও অনেকদিন পায়নি।
তপুর কাছে সবকিছু ঘোরের মত লাগছে। মানুষ যখন অনেক বিপদে পরে তখন সবকিছু ঘোরের মত লাগে। মনে হয়-এ জীবন আমার না-অন্য কারও। ঘোর লাগা মানুষ যেকোন কিছু করতে পারে। তপুও কি এরকম কিছু করবে?
তপু নাকে খঁত দেবার জায়গাটার সামনে গিয়ে দাড়াল। কানপাকা মজিদ ওর সাগরেদসহ তপুর পিছনে দাড়িয়ে হাসছে। বাসের যাত্রীরা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন বাসে একটা নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে-তপু আর কানপাকা মজিদ এর অভিনেতা।
তপু হঠাৎ করে ঘুরে দাড়াল। তারপর হেসে বলল, আমি নাকে খঁত দিব কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
কানপাকা মজিদ মুখ ভেঞ্চিয়ে বলল, লাট সাহেবের আবার শর্তও আছে দেখছি! কি শর্ত শুনি?
আমার নাকে খঁত দেবার আগে তোর নাকে খঁত দিতে হবে।
কানপাকা মজিদকে দেখে মনে হচ্ছে ও এইমাত্র যা শুনেছে তা বিশ্বাস করতে পারছে না।
ও হুঙ্কার দিল, কি বললি! তুই কি বললি!
কি বললাম শুনিসনি-আরেকবার বলতে হবে?
তুই জানিস আমি কে?
কেন জানব না। অবশ্যই জানি। আপনি হলেন জর্জ বুশ। আপনি বাংলাদেশ সফরে এসে গাড়ী হারিয়ে ফেলে চামচাদের নিয়ে বাসে উঠছেন।
বাসের যাত্রীদের মধ্যে অল্প কয়েকজন হেসে উঠল। কানপাকা মজিদ অবাক হল। এরকম পরিস্থিতিতে কেউ ঠাট্টা করতে পারে-এটা ওর ধারণার বাইরে ছিল।
আমার নাম কানপাকা মজিদ। আমার কান পাকা না-আমি যারে মারি তার কান পাকা হয়ে যায়-বুঝছস? তোর কানও আর কয়েক মিনিটের মধ্যে পাকা হয়ে যাবে।
আমার নাম ট্যারা তপু। আমি ট্যারা না-যে আমার সাথে লাগতে আসে সে ট্যারা হয়ে যায়- আর কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্যারা হয়ে যাবে।
কানপাকা মজিদ আর ওর সাঙ্গপাঙ্গরা বুঝতে পারল না যে তপু ওদের সাথে ঠাট্টা করছে নাকি সত্যি কথা বলছে। বাসের যাত্রীরা কিন্তু বুঝতে পারলÑতপু ঠাট্টা করছে। তারা হেসে দিল। তাদের হাসি দেখে মজিদও বুঝতে পারল। ও গেল ক্ষেপে।
মজিদ বলল, তোরে এখন আমি আর নাকি খঁত দেওয়াবো না।
তাই!
কিন্তু তোরে আমি এমন মাইর দেব যে মাইরের পর তুই নিজের চেহারা দেখে নিজেরে চিনতে পারবি না।
তাহলে আমার চেহারা হৃত্বিক রোশানের মত করে দে। দে না!
বাসের যাত্রীরা আবার হাসল। এবার হাসল আগের থেকে বেশি। মজিদ হতভম্ব। মজিদ বাসের পরিস্থিতি ভয়ংকর করে তুলতে চাইছে কিন্তু তপু সেটা হতে দিচ্ছে না। তপু বাসটাকে মজার আসর বানিয়ে ফেলছে। মজিদ কিছুক্ষণের মধ্যেই ওকে বুঝাবে য়ে ওর সাথে লাগবার পরিণতি কি ভয়ানক!
তুই আমার সাথে লাগতে চাস। তাই না? আমি কিন্তু বাঘের বাচ্চা...
আবে মইদ্দা (মজির পুনরায় হতভম্ব), বাঘ কি তোর মায়ের কাছে আসছিল নাকি তোর মা বাঘের কাছে গেছিল?
বাসের যাত্রীরা পুনরায় হেসে উঠল।
মজিদ বলল, তোর এতবড় সাহস...
হ্যাঁ, আমার এতবড় সাহস। কি করবি তুই?
তুই আমার গায়ে হাত দিয়ে দেখ না-আমি তোরে কি করি।
তপু মজিদ বা কান পাকা মজিদ বা মইদ্দার গায়ে হাত দিয়ে বলল, দিলাম গায়ে হাত-কি করবি?
সেই একই দৃশ্য আরেকবার হল। বাসের যাত্রীরা হাসছে আর মজিদ হতভম্ব হচ্ছে---
এবার সাগরেদরা ক্ষেপে বলল, তোর এতবড় সাহস! তুই...
থাম। তপু ওদের থামিয়ে বলল, এখানে বড়দের মধ্যে কথা হচ্ছেÑছোটরা এখানে নাক গলাবি না।
কি! তুই আমাগোরে...
তোরা থামতো। কানপাকা মজিদ তার সাগরেদকে থামতে বলল। তপুকে বলল, তুই আমার সাথে লড়তে চাস?
এতক্ষণে তপু আসল বিপদটা টের পেল। রাগের মাথায় তপুর এতকথা বলা মোটেই উচিত হয়নি। এখন কি তপু কানপাকা মজিদের কাছে মাপ চাবে? সেটা অবশ্য উচিত হবে না। তারথেকে যেভাবে আছে সেভাবেই চলতে থাকাই ভালো।
কি হল? কথা বলিস না ক্যান? কানপাকা মজিদ বলল।
তপু বলল, হ্যাঁ, আমি তোর সাথে লড়তে চাই।
ট্যারা তপু, তোরে মারামারির আগে শেষবারের মত দুইটা অপশন দিতাছি। এক নাম্বার অপশন হইল তুই আমাদেরকে তোর কাছে যা কিছু আছে তা দিয়ে বাস থেকে লাফিয়ে পড়বি। আর দুই নাম্বার অপশন হইল আমরা তোকে মেরে তোর কাছে যা কিছু আছে সব নিয়ে তোকে বাস থেকে ফেলে দেব। এখন তুইই বল, তুই কোনটা চাস?
আমি তিন নাম্বার অপশন টা চাই । আমি তোদেরকে মেরে তোদের গুন্ডামির সব টাকা নিয়ে তোদেরকে বাস থেকে ফেলে দেব।
কানপাকা মজিদ চমকে উঠল। বলল, তোর সাহস ভালো আছে কিন্তু বুদ্ধি নাই। আজকে তোকে এমন মাইর দেব যে তুই চিরদিন মনে রাখবি।
সিনামার ডায়লগ বাদ দিয়ে কাজের কথায় আয়। আমি তোর সাথে বাসের মধ্যে বসে মারামারি করতে পারব না।
আমারো তাই ইচ্ছা। বাইরে মারামারিতেই আসল মজা। ওই তোরা বাস থামা।
ড্রাইভার বাস থামাল।
কানপাকা মজিদ তপুকে বলল, আয় আমার সাথে।
কানপাকা মজিদ ওর একজন সাগরেদকে সাথে নিয়ে বাস দিয়ে নামতে লাগল। তপু গেল ওদের পিছনে পিছনে। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। বুদ্ধিটা একটু আগেই এসেছে। এখন কাজে লাগাতে পারলে হয়। কানপাকা মজিদের একজন সাগরেদ থাকল বাসের ভিতর।
তপু আগেই প্লান করে রেখেছিল। কানপাকা মজিদ যখন ওর একজন সাগরেদকে সাথে নিয়ে বাস দিয়ে নামতে গেল তখনই তপু বাসের দরজা আটকে দিল। বাসের ড্রাইভার তপু কি করতে চাচ্ছে তা বুঝতে পেরে সাথে সাথে বাস স্টার্ট করে দিল। কানপাকা মজিদ যাকে বাসের ভিতর রেখে গিয়েছিল তাকে বাস চলতে শুরু করা মাত্রই বাসের সবাই মিলে তাকে গণধোলাই দিল।
কানপাকা মজিদ ওর সাগরেদকে নিয়ে বাসের পিছে পিছে ছুটতে লাগল। ততক্ষণে বাস ওদের ফেলে রেখে বহুদূরে চলে গেছে। তখনও বাসের ভেতরে গুন্ডাদের চামচাকে সবাই মনের খায়েস মিটিয়ে পিটুনি দিচ্ছে।
তপু তখন তাদের বলল, থাক, ভাই বেচারাকে আর মাইরেন না।
একজন লোক বলল, ঠিক আছে, কিন্তু অরে আপনের কাছে মাফ চাইতে হবে।
মাফ চাইতে হবে না আমি মাফ করে দিয়েছি।
এতক্ষণে বাস যাত্রীদের তপুর ওপর খেয়াল হল। তপু বাসের মধ্যে হিরো বনে গেল। তারা সবাই মিলে তপুকে জড়িয়ে ধরল। ঠিক জড়িয়ে ধরল সেটা বলা যায় না-একধরণের হুটোপুটি হল আর কি!
বাসে থাকা অবস্থায় তপুকে মাথায় নিলে বাসের ছাদে তপুর মাথা ঠুকে যায় নাহলে বোধহয় সবাই তপুকে মাথায় নিয়ে নাচত। তবে মাথায় না নিয়েও যা করল তাও কম নয়। সবাই তপুকে জড়িয়ে ধওে চিৎকার করে বলতে লাগল, ট্যারা তপু ভাই, জিন্দাবাদ। ট্যারা তপু ভাই, জিন্দাবাদ।
তপু যতই বলে, ভাইরে আমারে ছাড়েনÑআমার নাম ট্যারা তপু না, কিন্তু কে শোনে কার কথা!
অবশেষে বাসের লোকদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে তপু যখন আবার নীতুর পাশে বসল নীতু তখন হাসতে হাসতে বলল, তুমি বেশ সাহসী ছেলে তো!
তাতে কি কোন সন্দেহ আছে?
নাহ্, সন্দেহ নাই। আমি জীবনে বাস্তবে যত সাহসী লোক দেখেছি তুমি তাদের মধ্যে তৃতীয়।
আগের দুইজন কে কে?
ওমা! আগের দুইজনের কথা তো আমি তোমাকে একবছর আগে বিশদ বিবরণ দিয়ে বলেছিলাম। তুমি এর মাঝে ভুলে গেলে?
তপু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, নীতু, তুমি কি সত্যিই আমাকে চেন?
নীতু তপুর মত নকল করে বলল, তাতে কি কোন সন্দেহ আছে?
আছে।
কেন আছে?
কেন আছে-সেটা তো তুমিই ভাল করে জান।
আমি কিভাবে জানি?
সেটাই তো আমি জানতে চাচ্ছি।
তুমি কি জানতে চাচ্ছ?
আমি জানতে চাচ্ছি-তুমি কি করে আমার নাম জানলে?
আমি কি করে তোমার নাম জানলাম সেটা তুমি জান না? এরমাঝেই ভুলে গেলে?
আচ্ছা, তুমি দেখি প্রত্যেক প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন করেই যাচ্ছ। একটা প্রশ্নেরও কি উত্তর দিবে না?
আমি কখন তোমার প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন করলাম?
এই যে করলে।
নীতু খিলখিল করে হেসে দিল।
তপু নীতুর হাসি দেখে ১০০% শিওর হল যে নীতু বাসে বসেই কোন না কোন ভাবে তপুর নাম জেনেছে।
তপু তো নীতুর পুরো নাম জানে না। নীতু কি তপুর পুরো নাম জানে?
তপু বলল, নীতু, আমার পুরো নাম বলতে পারবে?
হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে যে। আমি অবশ্যই তোমার পুরো নাম জানি। তোমার পুরো নাম হল-তপু হাসান। অ্যাম আই রাইট মিস্টার হাসান? এবার কিন্তু তোমার প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন করিনি।
তপু মিইয়ে গেল। কোনভাবেই রহস্য ভেদ হচ্ছে না। নীতু ওর পুরো নামও জানে।
নীতু বলল, তোমার নামটা কিন্তু যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং?
ইন্টারেস্টিং?
হ্যাঁ, তোমার নামের শেষে হাসান আছে বলেই তুমি মানুষকে হাসাও-তাই না?
আমি কখন মানুষকে হাসালাম?
এই যে-বাসের সব যাত্রীদের হাসালে-এখন আবার আমাকে হাসাচ্ছ। বলে নীতু খিলখিল করে হেসে দিল।
নীতু বলল, শোন তপু, তুমি কিন্তু যথেষ্ট চালাক ছেলে।
হঠাৎ একথা বললে কেন?
এমনি বললাম।
আমি এক মেয়েকে চিনি যে আমার থেকেও বেশি চালাক।
তোমার থেকেও যে বেশি চালাক-সেটা বুঝলে কি করে?
আমি ঐ মেয়েটার সাথে চালাকি করতে গিয়েই তো বুঝলাম যে ও আমার থেকে বেশি চালাক।
খুলে বল তো।
হয়েছে কি শোন- আমি সেদিন বাসে উঠে ওই মেয়েটার পাশের সিটে বসলাম। মেয়েটাকে কিন্তু আমি চিনি না। এর মধ্যে দেখি কি ঐ মেয়েটাকেই ওর এক বান্ধবী বাসের বাইরে থেকে তার নাম ধরে ডাক দিয়েছে। ঐ মেয়েটা কিন্তু ওর বান্ধবীর ডাক শুনতে পায়নি-আমি পেয়েছি। আমি চালাকি করে মেয়েটাকে ওর নাম ধরে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-ও আমাকে চেনে কি না।
নীতু হাসতে হাসতে বলল, তারপর কি হল?
তারপর মেয়েটা প্রথমে একটু অবাক হল। কিন্তু পরমুহূর্তেই ও আমার নাম বলে ফেলল। ও বলল ও-ও নাকি আমাকে চেনে।
নীতু অনবরত হাসছে। হাসতে হাসতেই বলল, তারপর তুমি কি করলে?
আমি বের করে ফেলেছিলাম যে ও কিভাবে আমার নাম বের করেছিল।
কিভাবে বের করেছিল?
সেটা তো তোমাকে বলা যাবে না। দেখি তুমি বের করতে পার কিনা।
নীতু মিটির মিটির করে হাসতে হাসতে বলল, হুম, এটা বের করা এমন কিছু কঠিন কাজ না। আসলে আমারো এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল তো তাই হয়তো আমি এর সমাধান বের করতে পেরেছি।
কি ঘটনা?
আমি সেদিন এক বাসে উঠেছিলাম। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে আমার পাশে বসল। ছেলেটা হঠাৎ করে আমার নাম ধরে ডাক দিয়ে বলল আমি ওকে চিনতে পেরেছি কি-না।
তারপর-তারপর কি হল?
ছেলেটা কিন্তু বোকা।
বোকা!
হ্যাঁ, বোকা। কারণ ও একটা সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছিল। সার্টিফিকেটে ওর নাম লেখা ছিল। আমি ওর সার্টিফিকেটে লেখা নাম দেখে ওর নাম ধরে ডাক দিলাম। ছেলেটা তো হতভম্ব...
বুঝতে পেরেছি তারপর কি হয়েছে।
বুঝতে পারলেই ভাল। নীতু এখনো মিটির মিটির করে হাসছে।
নীতু, আমি কিন্তু বোকা না।
তুমি বোকা-সেটা আমি বলেছি না-কি! তোমাকে তো আমি একটু আগেই চালাক বললাম। আমি বলেছি ওই ছেলেটা বোকা ছিল।
তপু নিজের সার্টিফিকেটের দিকে তাকাল। সার্টিফিকেটে ওর নাম স্পষ্ট করে দেয়া আছে-“তপু হাসান।”
তপু এত সহজ জিনিসটা কেন বুঝতে পারল না-সেটা বুঝতে পারছে না।
তপু বলল, আচ্ছা, তুমি কিন্তু আমাকে ঐ ছেলেটার নাম বলনি?
তুমিও তো আমাকে ঐ মেয়েটার নাম বলনি?
নিজের নাম ভুলে গেছ না-কি?
তুমিও নিজের নাম ভুলে গেছ না-কি?
তপু আর নীতু দুজনেই হেসে দিল।
তপু কিছুক্ষণ পরে বলল, নীতু-এখন তো তুমি জান যে তুমি আমার পরিচিত নও। এখন কি তুমি আমাকে তুমি করে বলবে নাকি আপনি করে বলবে।
পরিচিত নই-সেটা বললে কি করে? এখন তো আমরা পরিচিত।
এটাকে কি পরিচিত বলে?
তাহলে কোনটাকে বলে?
তাও তো কথা!
তাহলে বুঝেছেন জনাব, আমি এখন থেকে আপনাকে তুমি করেই বলব।
ও।
রাগ হলে না-কি?
না না, রাগ হব কেন? আসলে তোমার মত...
কি হয়েছে? আমার মত কি?
না। কিছু না।
তুমি যা বলতে চেয়েছিলেÑতা কিন্তু আমি বুঝে ফেলেছি।
কি বুঝেছ?
সেটা তো বলা যাবে না।
নীতু, তুমি অতিরিক্ত বুদ্ধিমান!
মোটেই না!
কেন?
আমি বুদ্ধিমান না-আমি বুদ্ধিমতী-বুঝেছ। নীতু খিলখিল করে হেসে দিল।
তপু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
কি হল কথা বলছ না যে।
আচ্ছা, মেয়েদের হাসিকে “খিলখিল” আর ছেলেদের হাসিকে “হা হা” বলে কেন?
হঠাৎ একথা বললে কেন?
এম্নিই বললাম।
আমি কিন্তু বুঝতে পেরেছিÑতুমি একথা বললে কেন?
কি বুঝছ?
সেটা তো বলা যাবে না।
না-বললে নাই, আমার কিছু আসে যায় না।
রেগে যাচ্ছ কেন? ঠিক আছে আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিÑআমার মনে হয় কি ছেলেরা মুখ খোলা রেখে হাঁ করে হাসেÑএজন্যই ছেলেদের হাসিকে বলে “হা হা” আর মেয়েরা মুখ বন্ধ করে দরজায় খিল দেওয়ার মত করে হাসেÑ এজন্যই মেয়েদের হাসিকে বলে “খিলখিল।” ওদের হাসিতে শুধু দাত দেখা যায় মুখের ভেতরেরটা দেখা যায় না।
এই বলে নীতু খিলখিল করে হাসল। দেখা যাচ্ছে মেয়েটা একটুতেই হেসে দেয়।
আমার যুক্তি তোমার পছন্দ হয়েছে।
নাÑহয়নি।
না হলে তো কিছুই করার নাই।
নীতু, আমি তোমার নাম জানার এই সোজা ব্যাপারটা ধরতে পারলাম না কেন?
নীতু হি হি করে হেসে বলল, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি বুঝতে পারবে। পরে যখন দেখি তুমি কিছুই বুঝতে পারছ না সেটা দেখে এত মজা লাগছিল যে বলে বোঝাতে পারব না।
তপু অস্পষ্ট স্বরে বলল, “বুদ্ধিমতী” মেয়ে।
কিছু বললে!
না, কিছু না। নীতু, ইয়ে মানে আমার মোবাইলটা খুঁজে পাচ্ছি না। তোমার মোবাইলটা একটু দেবে? কল দিয়ে দেখতাম কোথায় আছে।
ওহ, সিওর।
নীতু ওর মোবাইলটা তপুকে দিল।
তপু মোবাইলটা নিয়ে ওর নিজের নাম্বারে কল দিল। তপুর আসলে অন্য উদ্দেশ্য আছে। মোবাইলটা হাঁটুর পকেটে ছিল যে কারণে গুন্ডারা এটা নিতে পারেনি। মোবাইলটা তপুর সেই পকেটে বেজে উঠল।
নীতু বলল, পেয়েছ?
হ্যাঁ, এই তো আমার মোবাইল।
আমি মোবাইলের কথা বলছি না।
তাহলে?
নীতু হাসতে হাসতে বলল, আমি বলছি আমার মোবাইল নাম্বারের কথা। নাম্বারটা পাবার জন্যই তো এতকিছু করলে। তাই না?
তপু লজ্জায় লাল হয়ে গেল। নীতু সত্যি কথা বলেছে। কিন্তু নীতু বুঝতে পারল কি করে?
নীতু আবারো হি হি করে হেসে বলল, থাক, আর লজ্জা পেতে হবে না। আমি এম্নিতেই পরে তোমার সাথে কথা বলতে চাইতাম। তুমি অনেক সাহসী ছেলে তো তাই।
তপু আরও লজ্জা পেল।
নীতু বলল, বাব্বা, আর লজ্জা পেতে হবে না। এম্নিতেই মুখ টমেটোর মত লাল হয়ে গেছে। ছেলেরা লজ্জা পেলে না মুখটা টমেটোর মত হয়ে যায় আর মেয়েরা লজ্জা পেলে মুখ আপেলের মত হয়ে যায়। এর কারন কি বলতে পারবে?
এর জবাবে তপুর মুখ আরো টমেটোর মত হয়ে গেল।
এরমধ্যে বাস থামল। নীতুর ইউনিভার্সিটিতে যাবে। বাস সেখানে এসে গেছে।
আবার দেখা হবে। ইচ্ছা হলে ফোন করো। আমি কিন্তু করব না। নীতু বলল।
ঠিক আছে।
না করার কারণ জানতে চাইলে না?
না করার কারণ কি?
সেটা ফোন করলেই বলব।
একটা কবিতা শুনবে?
কি কবিতা?
“চলতে চলতে হল দেখা
চলতে চলতে পরিচয়,
তারপর যখন হবে একা-
তখনই হবে পরিণয়।”
এর মানেটা কি? তপু এর মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝল না। এর মধ্যে ও আবিষ্কার করল-নীতু চলে গেছে। তপুর মনে হল নীতুর সাথে কথা বলার চাইতে কানপাকা মজিদ শ্রেণীর লোকেদের সাথে কথা বলা অনেক সহজ।

চলবে----


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১১ দুপুর ২:৩৮
২০টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×