অবাক ফাল্গুনঃ পর্ব-২
অবাক ফাল্গুনঃ পর্ব-৩
তপু এক জঙ্গলে ঢুকেছে। জঙ্গলে ঢোকবার কারণ তপু জঙ্গলে শিকার করতে এসেছে। হঠাৎ একটা অদ্ভূত জীব তপুর সামনে এসে দাড়াল। এটা কিছুটা মানুষের মত দেখতে কিন্তু আকারে তপুর দ্বিগুণ।
অদ্ভুত জীবটা বিকট গলায় তপুকে বলল, তুই কে?
তপু ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, কিছু মনে করবেন না ভাই, আপনি কে?
আমি এ জঙ্গলের রাজা। আমি লাঞ্চ করতে বের হয়েছি। লাঞ্চে আমি কুকুর ছাড়া সব কিছু খাই। তুই কে? তোকে তো আমি আগে দেখিনি।
তপু আরো ভয় পেয়ে গেল। তপু বলল, ভাই আপনি কোন জিনিসটা যেন খান না?
কুকুর।
জ্বি ভাই, আমিই হচ্ছি কুকুর। এখন কি আমি যেতে পারি? আমি কুকুর হলেও আমার কাছে হট-ডগ আছে। এটা খেয়ে দেখতে পারেন। হট-ডগকে আবার কুকুর ভাববেন না যেন।
এরমধ্যে কোত্থেকে যেন কুকুর হাজির হয়ে বলল, না না এ মিথ্যা বলেছে। আমি হচ্ছি কুকুর বিশ্বাস না হলে এই দেখেন আমার গলার স্বর। ঘেউ ঘেউ ঘেউ...
কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে তপুর ঘুম ভেঙে গেল।
তপু এতক্ষণ যাবৎ দুঃস্বপ্ন দেখছিল। দুঃস্বপ্ন নাকি মজার স্বপ্ন? এখন যেটা দুঃস্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে পরে সেই স্বপ্নের কথা মনে পড়লে সেটাকে মজার স্বপ্ন বলে মনে হতে পারে। আপাতত এখন স্বপ্নটা দুঃস্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে। দুঃস্বপ্ন থেকে ঘুম ভেঙে গেলে খারাপ লাগার কথা কিন্তু তপুর ভাল লাগে। তখন মনে হয় নিজের জীবনটা দুঃস্বপ্নের মত খারাপ নয়। ভাল স্বপ্ন থেকে ঘুম ভাঙলে বরং খারাপ লাগে।
বাস্তবের কুকুরের ডাক শুনে তপু স্বপ্নের কুকুরের চেহারা মনে করতে চাইল। কিন্তু চেহারা মনে আসছে না। শুধু লেজটা ছোট ছিল এটা মনে আছে। এত কিছু থাকতে লেজের কথা মনে থাকল কেন সেটাও এক রহস্য। মানুষের মস্তিষ্ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিকে মুছে দেয় আবার গুরুত্বহীন স্মৃতি মনে রাখে। মানুষ তার স্মৃতিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যারা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই আসলে মেধাবী।
তপু যদি আবার ঘুমায় তাহলে কি স্বপ্নের কুকুরটাকে দেখা যাবে? অবচেতন মন কি আবার কুকুরটাকে ফিরিয়ে আনবে? তপু ঠিক করল ও চেষ্টা করে দেখবে। এরকম চেষ্টা তো আগে করা হয়নি। কি অদ্ভূত চেষ্টা। জীবনের কিছু কিছু ঘটনা জীবনে পুনরাবৃত্তি হয়, স্বপ্নেরও কি হয়? মনে হয়- হয়।
কিন্তু তপু দ্বিতীয়বার ঘুমাতে পারল না। কুকুরটা আগের থেকেও বেশি জোরে ডাকছে। স্বপ্নের কুকুর দেখার চেষ্টা না করে বরং বাস্তবের কুকুরের ডাক নিয়ে চিন্তা করা যাক।
এখন সকাল সাতটা বাজে। এসময়ে কুকুরের ডাকার কথা নয়। কুকুর ডাকবে রাতে। রাতভর সে ডিউটি দিয়ে দিনে সে ঘুমাবে। মাঝে মাঝে চোখ মেলবে। বাইরে যদি একান্তই দেখার মত কোন জিনিস থাকে তাহলে সে তা দেখবে। দেখার পরে তা মনে রাখার মত কিছু হলে সে তা মনে রাখবে নয়তো মন থেকে মুছে ফেলবে। প্রাণী যত নিম্নস্তরের হয় তার স্মৃতিও হয় ততকম। কুকুরের অবস্থা ডলফিনের মত হলে কুকুরের জন্য বেশ সুবিধার হত। ডলফিন একচোখ খোলা রেখে ঘুমাতে পারে। একচোখ খোলা রেখে ঘুমালে ডলফিন স্বপ্ন দেখে কি করে? ইদানিং তপুর এই একটা সমস্যা হয়েছে-কোন কিছু দেখলেই ‘কি হয়েছে?’, ‘কিভাবে হয়েছে?’-জানতে ইচ্ছা করে। তপুর বয়স এখন সাতাশ বছর। এই বয়সে মনের ভিতর এত প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। প্রশ্ন থাকবে একটা চার বছরের শিশুর মধ্যে। একটা চার বছরের শিশু দৈনিক চারশটা প্রশ্ন করে-সাতাশ বছরের ছেলে তা করে না।
কুকুরটা অনবরত ডেকেই চলছে। ডাকের মধ্যেও কিছু বৈচিত্র আছে। ডাকটা অভিশাপের ডাক বলে মনে হচ্ছে। কুকুরটা কি কাউকে অভিশাপ দিচ্ছে? কুকুরটা অভিশাপ দিলে কার কাছে অভিশাপের কথা জানাচ্ছে? কুকুররা অবশ্য বেশি রকমের শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। কুকুররা মাত্র দশ রকমের শব্দ ব্যবহার করতে পারে। বিড়াল বরং কুকুরদের থেকে বেশি রকমের শব্দ ব্যবহার করতে পারে- একশ রকমের।
তপুর এখন স্বপ্নের কুকুরটাকে আর দেখতে ইচ্ছা করছে না। ওর বাস্তবের কুকুরটাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। বাস্তবের কুকুরটাকে দেখার জন্য তপু জানালা খুলল। কিন্তু জানালা খোলবার পরে তপু কোন কুকুর দেখতে পেল না। অথচ মাত্র এক সেকেন্ড আগেও কুকুরটা ডাকছিল।
তপু বেশ হতাশ হল। তপু বাস্তবের কুকুর কিংবা স্বপ্নের কুকুর- কোনটাকেই দেখতে পায় নি।ওর আজকের দিনটাই শুরু হল হতাশার মাঝ থেকে। সামান্য কুকুরের জন্য এর আগে তপু কখনও এতটা হতাশ হয়নি। অথচ দুটো কুকুরই তপুর ক্ষতিসাধন করেছে। বাস্তবের কুকুর তপুকে বাস্তবে ঘুম ভাঙিয়েছে আর স্বপ্নের কুকুর স্বপ্নে তার থেকে ভয়ংকর কাজ করেছে।
তপুর কাছে হঠাৎ করে স্বপ্নটা আর ভয়ংকর বলে মনে হল না। এখন মনে হচ্ছে স্বপ্নটা আরও বেশি সময় ধরে দেখতে পারলে মজা হত।
তপু স্বপ্ন নিয়ে এত সময় নষ্ট করছে কেন? আজ তো ওর স্বপ্ন নিয়ে ভাববার কথা নয়। আজকে তপুর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজটা হল ওকে আজ ইন্টারভ্যু দিতে যেতে হবে। অবশ্য ইন্টারভ্যু দিতে দিতে তপুর কাছে ইন্টারভ্যু গুরুত্বহীন হয়ে গেছে।
সবমিলিয়ে চারবার তপু ইন্টারভ্যু দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেকটা একইরকমের প্রশ্ন করা হয়েছে এবং একইরকমভাবে তপুকে চাকরি না পেয়ে চলে যেতে হয়েছে।
আজ তপু পঞ্চমবারের মত ইন্টারভ্যু দিতে যাবে। এজন্য ও কিছুটা উত্তেজনা বোধ করছে। কারণ আজ যদি ইন্টারভ্যুতে আগের জিনিসগুলোই জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে তপু কিছুটা কটু কথা বলবে। কথাটা কটুও হতে পারে-খারাপও হতে পারে আবার অপমানজনকও হতে পারে। এ কথা বলার পরিমাণ কম হতে পারে-আবার বেশিও হতে পারে। তপু তা কেয়ার করবে না-কিন্তু কিছু একটা না বলে ও চলে যাবে না।
তপু আরাম করে হাত-মুখ ধুল। হাত-মুখ ধোওয়ার একটা পদ্ধতি আছে যাতে আরাম করে হাত-মুখ ধোওয়া যায়-তপু এটা আবিষ্কার করেছে। তপু আরাম করে নাশতা করল-শার্টপ্যান্ট পড়ল-সার্টিফিকেটের ফটোকপি নিল-তারপর দরজা খুলে রুম থেকে বের হল। রুমের দরজাটা অদ্ভুত শব্দ করল। তপুর রুমের দরজাটার এক আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। তপু যতবারই দরজা খোলে ততবারই এটা ট্রান্সফরমার্স সিনামার রোবটের মত শব্দ করে। প্রথম যেদিন এবাসায় এসেছিল সেদিন তপু বেশ ভয়ই পেয়েছিল। এখন আর ভয় লাগে না বরং মজা লাগে। পৃথিবীর কোন দরজা কারিগর মনে হয় কোন যন্ত্র ছাড়া এমন দরজা বানাতে পারবে না।
তপু রাস্তায় বাস ধরে বাসে উঠল। ইন্টারভ্যু অফিস তপুর বাসা থেকে বেশ দূরে। যেতে অন্তত একঘন্টা তো লাগবেই।
তপু বাসে উঠে দেখল বাসের সব সিট লোকে ভর্তি। শুধু একটা মেয়ের পাশের সিট খালি। মেয়েটা তপুর বয়সী। তপুর এখন মেয়েটার পাশে বসতে ইচ্ছা করছে। বসার ইচ্ছা মেয়েটার জন্য নয়-সিটটার জন্য। এতদূর পথ বাসে দাড়িয়ে যেতে ইচ্ছা করছে না। মেয়েটাকে দেখেও মনে হচ্ছে না যে তপু ওর পাশে বসলে ও রাগ করবে। এখন সকাল আটটা। বাসের কেউ দাড়িয়ে নেই। শুধু তপু দাড়িয়ে। ভদ্রতা অনুযায়ী এখন তপুর কি করা উচিত? মেয়েটার পাশে গিয়ে বসবে নাকি বাসে দাড়িয়ে থাকবে?
তপু যখন এরকম চিন্তা করছিল তখনই পাশে তপুর বয়সী একটা ছেলে বাসে উঠে মেয়েটির পাশে বসতে গেল। সাথে সাথে তপুর সমস্যার সমাধান হলÑঐ ছেলেটা মেয়েটার পাশে বসতে গেলে তপু কেন বসতে পারবে না? তপু ছেলেটাকে বসতে না দিয়ে নিজে মেয়েটার পাশে বসল। ব্যাপারটাতে অবশ্য একটু ধস্তাধস্তি হল। ছেলেটার গায়ের জোর তপুর থেকে অনেক বেশিই ছিল। কিন্তু তপু কায়দা করে বাসের সিটে বসে পড়ল। বিনিময়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি উপহার দিল। তপু ভেবেছিল ওর এই হাসি দেখে ছেলেটা রেগে যাবে। কিন্তু ও রেগে গেল না। বরং কিছুটা মিইয়ে গেল। বাসের সবাই এখন বসে। কেবল ছেলেটা দাড়িয়ে। ছেলেটার জায়গায় তপুও থাকতে পারত। তপু মনে মনে ছেলেটার নাম দিল “দেবদাস”। এরকম নাম কেন দিল তা তপু জানে না। তপুর মনে হচ্ছে এরকম অবস্থায় ওর নাম দেবদাসই হওয়া উচিত। (ছেলেটাকে নিয়ে এত কথা বলার কারণ একটু পরেই জানা যাবে।)
সমস্ত ব্যাপারটা ঘটল চার থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে। যে মেয়েকে নিয়ে এতকিছু সে কিন্তু একবারও এদিকে তাকায় নি। মেয়েটা উদাস দৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল।
বাস আবার আস্তে আস্তে চলতে শুরু করল। এবার মেয়েটা জানালা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে পড়তে শুরু করল। ঠিক তখন বাসের বাইরে অন্য একটি মেয়ে মেয়েটিকে দেখে চিৎকার করে ডাক দিল, “এই নীতু।”
তবে বাসের মেয়েটি সেটা শুনতে পেল না। তপু কিছুটা অবাক হল। ও এখন মেয়েটার নাম জানে-কিন্তু মেয়েটা সেটা জানে না। মেয়েটার নাম হল নীতু। আসলেই কি নীতু? বাসের বাইরের মেয়েটা অন্যকোনো মেয়েকে ডাক দেয়নি তো?
তপু সিওর হতে পারছে না। মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারলে ভাল হত। মেয়েটাকে কি জিজ্ঞেস করা যায়না- এক্সকিউজ মি ম্যাডাম, আপনার নাম কি নীতু?
নাহ্, সেটা ভাল হবে না। একথা বলার পর মেয়েটার নাম যদি সত্যিই নীতু হয় তাহলে ও বলবে- আপনি সেটা জানলেন কি করে? তখন নাম জানার এবং নাম জেনে তপুর কি লাভ-সেই ইতিহাস বলতে হবে। এতকথা বলবার কি দরকার? তারথেকে বসে থাকাই ভাল।
তবে বসে থাকতেও তপুর ভাল লাগছে না। এভাবে বসে থাকলে পরে মনে হবে যে মেয়েটার নাম দিয়ে অন্তত কিছু ঠাট্টা করা যেতে পারত। এরকম সুযোগ কয়জনে পায়?
মেয়েটার দিকে তাকাতে ইচ্ছা করছে কিন্তু তপুর তাকাতে ভীষণ লজ্জা লাগছে। আশ্চর্য ব্যাপার! তপু ঠিক করেছে ও জীবনে বিয়ে করবে না আর এখন কি না ও মেয়েটার দিকে তাকাতে চাইছে। তবে বিয়ে করতে না চাইলে যে মেয়েদের সাথে কথা বলা যাবে না-এমন তো কোন কথা নেই।
মেয়েটা যে খুব সুন্দর-এটা তপু ঠিকই বুঝতে পারছে। বেশিরভাগ উপন্যাসে সুন্দরী মেয়েদের রূপের বর্ণনা সুন্দর করে লেখকরা দিয়ে থাকে। তাদের বর্ণনা পড়তে কখনো খারাপ লাগে না। তপুরও এখন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে মেয়েটার রূপের বর্ণনা দিতে ইচ্ছা করছে।
তপু যদি এখন হঠাৎ করে মেয়েটার নাম ধরে ডাক দেয় তাহলে তো বেশ মজাই হবার কথা? মেয়েটার নাম যদি সত্যিই নীতু হয় তাহলে মেয়েটা হয়ত এতই চমকে উঠবে যে ওর হাত থেকেই বই পরে যেতে পারে।
নীতু ভাল আছ? তপু বলল। হঠাৎ করেই বলল। তবে একথা জিজ্ঞেস করেই তপুর মনে হল ওর এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি। মেয়েটার হাত থেকে বইও পড়ে যায় নি। মেয়েটার নাম নীতু না হলে তপুর বেশ খারাপই লাগবে।
এক্সকিউজ মি! আমাকে বলছেন?
হ্যাঁ তোমাকেই। তোমার নামই তো নীতু-অন্য কারও নাম তো আর নীতু না। তপুর মনে টেনশন শুরু হয়ে গেছে।
আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?
তপুর মনে হল ও নোবেল প্রাইজ পেয়ে গেছে! নীতুই হল মেয়েটার নাম!
তপু অবাক হওয়ার ভান করে বলল, কি বলছ নীতু! আমি তোমার নাম জানব না?
আপনি আমাকে তুমি তুমি করেই বা বলছেন কেন?
এসব কি বলছ নীতু-আমি তোমাকে চিনি বলেই তো তোমাকে তুমি করে বলছি। তুমি আমাকে চিনতে পার নি?
আপনি বোধহয় কোথাও কোন ভুল করছেন।
ভুল আমি করিনি। ভুল করলে তোমার নাম বললাম কি করে?
আপনার নাম কি?
নামটাতো বলা যাবে না। দেখি তুমি বলতে পার কি না।
সত্যিই আপনি আমাকে চেনেন।
অবশ্যই।
একটু wait করুন তো। ভেবে দেখি- আপনাকে চিনতে পারি কি না।
এত ভেবে দেখার কি আছে নীতু? তোমার তো আমাকে দেখেই আমাকে নিতে পারার কথা।
নীতু কিছু বলল না। ও গভীর মনযোগ দিয়ে চিন্তা করছে। তপু এখন নীতুর দিকে তাকাতে পারছে। নীতুর চিন্তিত মুখ দেখতে তপুর ভালই লাগছে। সকালের আলো আর বাসের ছায়া নীতুর মুখে সুন্দর আলো-আধারীর কম্পোজিশন তৈরি করেছে। চিত্র শিল্পীরা এরকম ছবি দেখলে সাথে সাথে ছবি আঁকা শুরু করে দিতেন। নীতু নীল সালোয়ার কামিজ পরেছে। নীল রঙ তপুর প্রিয় রঙ। যেকোনো সময় আকাশের দিকে তাকালে নীল রঙ দেখতে পাওয়া যায়। নীল রঙ দেখলে নাকি মানুষের মস্তিষ্ক প্রশান্তির নির্যাস বের করে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়। নীতুরও কি নীল রঙ প্রিয়?
তবে নীতুকে আর ঝামেলায় ফেলতে ইচ্ছা করছে না। এরকম সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে মজা করা যায় না। ও আবার তপুকে ব্লাকমেইলার ভাবল না-তো! এরকম ভাবলে তো সমস্যা! এরকম মনে করে থাকলে মেয়েটা কোন উদ্ভট কান্ড ঘটিয়ে বসতে পারে। তারথেকে বরং নীতুকে সত্যি কথাটা বলে ফেলাই ভাল।
তপু নীতুকে সত্যি কথাটা বলতে চাইল। ঠিক তখনই নীতু বলে উঠল, ও হ্যাঁ হ্যাঁ, তোমাকে চিনতে পেরেছি। তোমার নাম তপু। তাই না?
তপু মনে মনে এক হাজার পাওয়ারের খাবি খেল। এক হাজার পাওয়ারের খাবি হল তপুর কাছে সবচেয়ে বড় খাবি। এরকম খাবি তপু জীবনে খুব কমই খেয়েছে। নীতুর তপুকে চিনতে পারার সম্ভবনা অসম্ভব টু দি পাওয়ার অসম্ভব। মানে পাওয়ারের সঠিক সংখ্যা বলাও অসম্ভব।
কি হল কথা বলছ না কেন?
না মানে তুমি আমাকে চিনতে পেরেছ-এটা বিশ্বাস হচ্ছিল না তো তাই...
কেন? বিশ্বাস করতে পারবে না কেন?
আরে এই মেয়ে দেখি তপুর মতই তুমি তুমি করে কথা বলছে।
তপু বলল, তোমার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল-তুমি বুঝি কখনোই আর আমাকে চিনতে পারবে না।
আরে না না, চিনতে পারব না কেন? আসলে এক বছর আগে তো তোমার মুখে দাড়ি ছিল। এখন তো আর দাড়ি নেই তাই চিনতে পারিনি।
তপু অবাক হল। তপু জীবনে মুখে দাড়ি রাখেনি। তপু কি এখন নীতুকে আসল কথা বলে দেবে?-নাকি এভাবে মিথ্যা পরিচয়েই কথা চলতে থাকবে?
নীতু বলল, তোমাকে দেখে কিন্তু বেশ অবাক হয়েছি। তুমি একদম আগের মত নেই। আজকে তুমি এটা কি পড়েছ-নীল সার্ট আর সাদা প্যান্ট! নীল সার্ট ঠিক আছে কিন্তু সাদা সার্ট পরলে কি মনে করে? তোমাকে তো স্কুলের ছেলেদের মত দেখাচ্ছে। তোমার মুখে একটা ললিপপ থাকলে খুব মানাত- বুঝছ? হি হি হি...
নীতু হাসছে আর কথা বলছে। তপুর প্রথমে বিরক্তি লাগলেও এখন কিছুটা ভয় লাগছে-আবার নীতুর হাসি দেখতে ভালোও লাগছে। নীতু কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন মেয়ে নাতো? এসব মেয়েদের ক্ষেপিয়ে তুললে এরা অন্যদের ক্ষতি করে।
ধ্যাত, তপু এসব কি ভাবছে? তপুকে এখন এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে হবে। এজন্য এখন ওকে স্ট্রেইট কিছু কথা নীতুকে শুনাতে হবে। তাহলেই মামলা ডিসমিস-খেল খতম।
তপু নীতুকে বলবে, দেখুন, আপনার সাথে এতক্ষণ আমি মজা করছিলাম আর এজন্য আমি খুবই দুঃখিত। আপনাকে আমি চিনি না-আপনিও নিশ্চয়ই আমাকে চেনেন না। আপনি কি দয়া করে বলবেন যে আপনি কি করে আমার নাম জানলেন?
তপু এই কথা নীতুকে যেই বলতে গেল তখনই বাস থেমে গেল। বাসে কিছু হেংড়া-চেংড়া টাইপের লোক ঢুকল। বাসে এরা ঢোকবার পরেই বাসের লোকজন বুঝে ফেলল যে এদের কোন কু মতলব আছে- কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে-
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১১ রাত ২:০০