তপু এক জঙ্গলে ঢুকেছে। জঙ্গলে ঢোকবার কারণ তপু জঙ্গলে শিকার করতে এসেছে। এর মধ্যে একটা অদ্ভুত জীব তপুর সামনে এসে দাড়াল। এটা কিছুটা মানুষের মত দেখতে কিন্তু আকারে তপুর দ্বিগুণ।
অদ্ভুত জীবটা বিকট গলায় তপুকে বলল, তুই কে?
তপু ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, কিছু মনে করবেন না ভাই, আপনি কে?
আমি এ জঙ্গলের রাজা। আমি লাঞ্চে বের হয়েছি। লাঞ্চে আমি কুকুর ছাড়া সব কিছু খাই। তুই কে? তোকে তো আমি আগে দেখিনি।
তপু আরও ভয় পেয়ে গেল। তপু বলল, ভাই আপনি কোন জিনিসটা যেন খান না?
কুকুর।
জ্বি ভাই, আমিই হচ্ছি কুকুর। এখন কি আমি যেতে পারি? আমি কুকুর হলেও আমার কাছে হট-ডগ আছে। এটা খেয়ে দেখতে পারেন। হট-ডগকে আবার কুকুর ভাববেন না যেন।
এরমধ্যে কোত্থেকে যেন কুকুর হাজির হয়ে বলল, না না এ মিথ্যা বলেছে। আমি হচ্ছি কুকুর বিশ্বাস না হলে এই দেখেন আমার গলার স্বর। ঘেউ ঘেউ ঘেউ...
কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে তপুর ঘুম ভেঙে গেল। তপু এতক্ষণ যাবৎ দুঃস্বপ্ন দেখছিল। দুঃস্বপ্ন নাকি মজার স্বপ্ন। এখন যেটা তপুর কাছে দুঃস্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে পরে সেই স্বপ্নের কথা মনে পড়লে সেটাকে মজার স্বপ্ন বলে মনে হতে পারে। আপাতত তপুর কাছে এখন স্বপ্নটা দুঃস্বপ্ন বলেই মনে হচ্ছে। দুঃস্বপ্ন থেকে ঘুম ভেঙে গেলে খারাপ লাগার কথা কিন্তু তপুর ভাল লাগে। তখন মনে হয় নিজের জীবনটা দুঃস্বপ্নের মত খারাপ নয়। ভাল স্বপ্ন থেকে ঘুম ভাঙলে বরং খারাপ লাগে।
বাস্তবের কুকুরের ডাক শুনে তপু স্বপ্নের কুকুরের চেহারা মনে করতে চাইল। কিন্তু চেহারা মনে আসছে না। শুধু লেজটা ছোট ছিল এটা মনে আছে। এত কিছু থাকতে লেজের কথা মনে থাকল কেন সেটাও এক রহস্য। মানুষের ব্রেইন অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিকে মুছে দেয় আবার গুরুত্বহীন স্মৃতি মনে রাখে। মানুষ তার স্মৃতিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যারা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই আসলে মেধাবী। তপু যদি আবার ঘুমায় তাহলে কি স্বপ্নের কুকুরটাকে দেখা যাবে? অবচেতন মন কি আবার কুকুরটাকে ফিরিয়ে আনবে? তপু ঠিক করল ও চেষ্টা করে দেখবে। এরকম চেষ্টা তো আগে করা হয়নি। কি অদ্ভুত চেষ্টা। জীবনের কিছু কিছু ঘটনা জীবনে পুনরাবৃত্তি হয়, স্বপ্নেরও কি হয়? মনে হয়- হয়।
কিন্তু তপু দ্বিতীয়বার ঘুমাতে পারল না। কুকুরটা আগের থেকেও বেশি জোরে ডাকছে। স্বপ্নের কুুকুর দেখার চেষ্টা না করে বরং বাস্তবের কুকুরের ডাক নিয়ে গবেষণা করা যাক। মানুষ সামান্য সময়ে যতকিছু না চিন্তা করতে পারে-তারচেয়ে বহুগুণ বেশি চিন্তা করতে পারে।
এখন সকাল সাতটা বাজে। এসময়ে কুকুরের ডাকার কথা নয়। কুকুর ডাকবে রাতে। রাতভর সে ডিউটি দিয়ে দিনে সে ঘুমাবে। মাঝে মাঝে চোখ তুলে দেখবে বাইরে কি হচ্ছে। বাইরে যদি একান্তই দেখার মত কোন জিনিস থাকে তাহলে সে তা দেখবে। দেখার পরে তা মনে রাখার মত কিছু হলে সে তা মনে রাখবে নয়তো মন থেকে মুছে ফেলবে। প্রাণী যত নিম্নস্তরের হয় তার স্মৃতিও হয় ততকম। কুকুরের অবস্থা ডলফিনের মত হলে কুকুরের জন্য বেশ সুবিধার হত। ডলফিন একচোখ খোলা রেখে ঘুমাতে পারে। একচোখ খোলা রেখে ঘুমালে ডলফিন স্বপ্ন দেখে কি করে?
কুকুরটা অনবরত ডেকেই চলছে। ডাকের মধ্যেও কিছু বৈচিত্র আছে। ডাকটা অভিশাপের ডাক বলে মনে হচ্ছে। কুকুরটা কি কাউকে অভিশাপ দিচ্ছে? কুকুরটা অভিশাপ দিলে কার কাছে অভিশাপের কথা জানাচ্ছে? কুকুররা অবশ্য বেশি রকমের শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। কুকুররা মাত্র দশ রকমের শব্দ ব্যবহার করতে পারে। বিড়াল বরং কুকুরদের থেকে বেশি রকমের শব্দ ব্যবহার করতে পারেÑ একশ রকমের।
তপুর এখন স্বপ্নের কুকুরটাকে আর দেখতে ইচ্ছা করছে না। ওর বাস্তবের কুকুরটাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। বাস্তবের কুকুরটাকে দেখার জন্য তপু জানালা খুলল। কিন্তু জানালা খোলবার পরে তপু কোন কুকুর দেখতে পেল না। অথচ মাত্র এক সেকেন্ড আগেও কুকুরটা ডাকছিল।
তপু বেশ হতাশ হল। তপু বাস্তবের কুকুর কিংবা স্বপ্নের কুকুরÑ কোনটাকেই দেখতে পায় নি।ওর আজকের দিনটাই শুরু হল হতাশার মাঝ থেকে। সামান্য কুকুরের জন্য এর আগে তপু কখনও এতটা হতাশ হয়নি। অথচ দুটো কুকুরই তপুর ক্ষতিসাধন করেছে। বাস্তবের কুকুর তপুকে বাস্তবে ঘুম ভাঙিয়েছে আর স্বপ্নের কুকুর স্বপ্নে তার থেকে ভয়ংকর কাজ করেছে।
তপুর কাছে হঠাৎ করে স্বপ্নটা আর ভয়ংকর বলে মনে হল না। এখন মনে হচ্ছে স্বপ্নটা আরও বেশি সময় ধরে দেখতে পারলে মজা হত।
-----চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১১ রাত ২:০৫