ভোরের আলো না ফুটতেই কাকেরা তাদের দলপতি কবি কাকের বাসার সামনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেছে। এটা তাদের নিত্যকার অভ্যাস। তবে অনান্য দিনের চাইতে আজকের দিনটি আলাদা ছিল। এ হট্টগোলের পেছনে বয়সে বড় কাকদের চাইতে বাচ্চা কাকদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল। আজকে তাদের আনন্দ আর ধরছেনা। বেশ কয়েক দিন পর আবার তাদেরকে কা-পাঠশালায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বুদ্ধিমান মানুষের অনুকরণে যে পাঠশালা খোলা হয়েছিল তা বন্ধ ছিল বেশ কয়েকদিন। আপাতত তাদের খাবারের অভাব নেই। এইবার প্রচন্ড গরমে মাকাল ফলগুলো পেকেছে বেশ তাড়াতাড়ি। তাই ঝোপ ঝাড়ে কাকের পান্তাভাতের অভাব নেই।
কা-পাঠশালা নিয়ে কাকদের মাঝে ব্যপক উৎসাহ দেখা গেলেও আলসে নিমাই কাক এতে বেশ বিরক্ত। এত সকালে তার ঘুম থেকে উঠবারই কথা না। অন্যসব কাকেরা যেখানে নিজেদের বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে কা-পাঠশালায় যাচ্ছে। সেখানে নিঃসন্তান নিমাই কাক ঘুমানোর ভান ধরে ঘাপটি মেরে আছে। নিমাই কাকের প্রতিবেশী কন্ঠি কাক নিজের তিনটি বাচ্চাকে বেশ শাসাতে শাসাতে নিয়ে গেল। যাবার সময় মুরুব্বী নিমাই কাককে ডাকতে ভুল করল না।
কাকের বাচ্চারা ঠিক সময়ে পাঠশালায় হাজির হলেও বুদ্ধিমান মানুষের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিজেদের পাঠশালায় যেতে চরম অনীহা। কা- পাঠশালার সেই মস্ত বড় বট গাছটির নিচ দিয়ে হ্যাদা আর ভ্যাঁদা নামের দুই ছোকড়াকে তাদের মা কানে ধরে পাঠশালার দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেখে কাকেরা বেশ বিস্মিত হল।
যথা সময়ের বেশ কিছু সময়ের পর জাতীয় সংগীত গাওয়ার জন্য মানুষের বাচ্চারা পাঠশালা মাঠে কখনো শৃঙ্খল আবার কখনো বিশৃঙ্খল ভাবে দাড়িয়ে পড়ল। যখন সংগীত শুরু হল, তখন তাদের কেউ উচ্চস্বরে, কেউবা বেসুরা গলায় আবার কেউ মুখ বুঝে গান গাইতে থাকল। অন্যদিকে বটগাছের উপরে কাকের বাচ্চারা নিশ্চুপে স্থির ভাবে আছে। কন্ঠি কাক নিয়ম মাফিক কা-সংগীত শুরু করল। সবই ঠিকঠাক চলছিল, ভেজাল বাধাল, কন্ঠী কাকের বেজম্মা বাচ্চা কোকিল কাক। সে অনান্য কা- বাচ্চার মত বেসুরা কর্কশ কন্ঠে গান গাইতে পারেনা। সে মিহি গলায় মধুর কন্ঠে (কাকদের মতে ফালতু গলায়) গান গায়। ইতিমধ্যে কাকেরা এ নিয়ে কানাঘুষা করছিল যে, আসলেই কোকিল কাক তাদের মত কাক কিনা। নাকি সে কোকিল পাখি? কিন্তু কন্ঠী কাক তা মানবে কেন? সে একসাথেই তিনিটি ডিম থেকে তিনটি বাচ্চা পেয়েছিল। তারপর এদের পেলে পুষে বড় করেছে।
আজ এমন দিনে কাকদের কোকিল কাককে নিয়ে বেশি ভাববার সময় ছিলনা। যত দ্রুত সম্ভব পাঠ দান শুরু করতে হবে। কিন্তু শান্তিপ্রিয় মানুষের বাচ্চারা শ্রেনী কক্ষে ঢুকেই তুমুল হট্টগোল শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ চলে যাবার পরেও শ্রেনী কক্ষে শিক্ষক এলোনা। সে সুযোগে বাচ্চারা আরও চিৎকার করতে লাগল। অন্যদিকে হট্টগোলের রাজা কা-বাচ্চারা পাঠশালায় এসে এক্কেবারে চুপ হয়ে গেছে। পাঠশালার গুরু কবি কাকও বেশ গম্ভীর হয়ে বসে আছে। কিন্তু তারা যে বুদ্ধিমান মানুষকে অনুসরন করে শিখতে চায়, মানুষের বাচ্চাদের পাঠদান শুরু না করলে কা-বাচ্চারা শিখবে কিভাবে?
চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩