" দৈত্যাকার লোকটি সম্পুর্ন উলংগ হয়ে গেল। পাশ থেকে একজন এসে কেমন এক ধরনের পানি দিয়ে তাকে গোসল করিয়ে দিল। তারপর সে ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে কবরের ভেতরে নামতে উদ্যত হল। সাথে সাথে হাতে থাকা মশালগুলো নিভে গেল।...... ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরিফ আর শহীদ সে কুচক্রিদের হাত থেকে বেচে ফিরবে তো? এমন ভয়ংকর কালো যাদুর চর্চা কারা করে? কিভাবে Black Magic এর কবলে পরে দুই দুইটি পরিবার বিপদে পড়ল?
আট---
কবিরাজ মাথার খুলিটাকে নিয়ে সবার অলক্ষ্যে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল। তারপর দরজা লাগিয়ে ভেতরে কি করল তা আমাদের বুঝার উপায় ছিলনা। এদিকে আমারও একটা ব্যপার অবাক লাগছিল, যে গাছটার নিচে এই খুলিটা পাওয়া গিয়েছিল সে গাছটাও ইতোমধ্যেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। হতে পারে গাছের কাছে গর্ত করাতে গাছটার শিকর মরে গেছে। নতুন লাগানো গাছের তলায় এই রকম একটা আস্ত খুলি পুতে রাখাতে ব্যপারটা আমাদের সন্দেহের ঊর্ধ্বে ছিল কারণ সেখানকার মাটি আগে থেকেই আলগা ছিল। তবে এত জঘন্য এবং ভয়ংকর এই কাজের হেতু কি হেতু হতে পারে তা আমি জানতাম না। শহীদকে এই ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে ওর মুখটা কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল। আমকে শুধু এইটুকু বলল, এর পেছনে যাদের হাত থাকতে পারে, সে ব্যপারটা কিছুটা আচ করতে পেরেছে।
অন্যদিকে কবিরাজ প্রায় মিনিট দশেক ঘরে থাকার পর বের হয়ে এলেন। এবার কবিরাজের মুখটা অনেক ফ্যকাশে দেখাল। শহীদ কি বুঝে দৌড়ে গেল। লোকটা ওর উপরে প্রায় ঢলে পরল। তারপর খুব ধীর গলায় কাউকে ঘরে ঢুকতে বারণ করে টলতে টলতে রাস্তার দিকে চলে গেল। আমি ঘরটার মধ্যে উকি দিয়ে দেখলাম মাথার খুলির ভেতরের মগজ বাইরে বেরিয়ে এদিক সেদিক পরে আছে। আমি কোনমতে দরজায় তালা লাগিয়ে কবিরাজের পিছু পিছু ছুটলাম। যেয়ে দেখলাম শহীদ লোকটার সাথেই আছে। এই কালো জাদু কারা করতে পারে সে ব্যপারে ইনফরমেশন নিচ্ছিল। কবিরাজ কারো একটা নাম নিচ্ছিল কিন্তু শহীদ আমাকে দেখেই কেন যেন কথার ধারা পরিবর্তন করল। আমিও সে ব্যপারে আগ বাড়ালাম না। আমি বরং আমার বাবার ব্যপারে কি করা যায় সে প্রসঙ্গ তুললাম। কবিরাজ যা বলল তাতে আমার কিছু কথা সত্য মনে হল আর কিছু মিথ্যা মনে হল। কবিরাজ সেই মাথার খুলির ভিতরে শকুনের ডিম পচা অবস্থায় পেয়েছিল। আর এই পদ্ধতিতে যদি কাউকে টার্গেট করে জাদু করা হয় তাকে বাঁচানো খুব কষ্ট হয়ে যায়। কবিরাজ নাকি নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করেছিল আমার বাবাকে বাচাতে, কিন্তু তা করতে গিয়ে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে গেছেন। এই ব্যপারটা একেবারেই সত্যি। মাথার খুলিটা নিয়ে ঘরে ঢুকার আগ পর্যন্ত উনি বেশ সুস্থই ছিলেন।
নয়
এই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরে আমার বাবা এ জগতের মায়া ছেড়ে ওপারে চলে গেলেন। অবাক করার ব্যপার বাবা মারা যাবার দিন তিনেক পরে সেই অদ্ভুত কবিরাজও মারা গেলেন। আমার বাবা খুব শীঘ্রই মারা যাবেন সে ব্যপারটা ডাক্তার এবং আমরাও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। মারা যাবার আগে তার মাথার মগজ নাক দিয়ে বেয়ে বেয়ে পরছিল। কিন্তু কবিরাজের মৃত্যুর ব্যপারটা খুবই অদ্ভুত। তাকে তার বাড়ির পাশে ঝোপের তলায় ছিন্ন ভিছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাইরে আমার চাচী-মা কবিরাজ মারা যাওয়ার ঘটনাটা চিৎকার করে করে সবাইকে শোনাচ্ছিল। কবিরাজ মারা যাওয়াতে তার এত উৎফুল্ল হবার কি ছিল তাই আমি বুঝতে পারছিলাম না।
বাবা মার যাবার পরে মা একেবারে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কিন্তু বাবা নেই তা ভেবে আমার চোখ দিয়ে এক ফোটাও কান্নার পানি পড়ে ছিলনা। শেষ পর্যন্ত কবিরাজের কথাই বারবার আমার কানে বাজছিল। কেন জানি মনে হচ্ছিল আমার বাবার অসুখের পিছনে চচাদেরই হাত ছিল। শহীদ ঠিক কথাই বলেছিল। আমকেও ওরা মেরে ফেলতে চেয়েছিল।
আমি গতানুগতিক গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর কারণে বাংলা সিনেমা দেখা বন্ধ করেছিলাম। আজ আমার জীবনটা অনেকটা বাংলা সিনেমার কাহিনীর মতই হয়ে গেল। বাবার করূন মৃত্যু, বড় চাচা ভিলেন আর মাঝখানে নায়ক আমি। সুতরাং এই গল্পের শেষ হবে প্রতিশোধ দিয়ে।
দশ
আরিফকে আমি বারবার বলেছিলাম, ‘তুই ভিলেজ পলিটিক্স বুঝিস না”। এই ঘটনা গুলোর পেছনে তোর চাচার হাত আছে। কে শোনে কার কথা, এতগুলো ব্যপার চাক্ষুষ দেখার পরেও সে কূফরী কালাম কে তার বাবার মৃত্যুর কারণ হিসেবে মেনে নিতে পারছেনা। কবিরাজ আমাকে পরিষ্কার করে বলেছে ওদের বাড়ির মানুষ এই কাজ করেছে। আমার মনে হয় ঘটনা ধামাচাপা দেবার জন্য কবিরাজকেও ওরা খুন করেছে, যদিও গ্রামের লোকজন বলাবলি করছে যে, সেদিন জাদু নষ্ট করতে যাওয়াতে অশুভ সেই শক্তিটা তার এই বেহাল অবস্থা করেছে। কিন্তু একটা ব্যপারে আমি নিশ্চিত আরিফের চাচারা কালো জাদুতে পারদর্শী নয়। তাদেরকে এ ব্যপারে কে সাহায্য করতে পারে তা ভাবতেই আমার মনটা অজানা আতঙ্কে ছেয়ে যাচ্ছে।
তাহলে কি তপুও বুঝতে পেরেছে কে বা কার পরিবার এমন কাজের সাথে জড়িত। সেদিন রাতের সেই ঘটনার সাথে এর কী সম্পর্ক?
চলবে....
সেই কান্না (পর্ব এক)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯