এক
শম্ভু পাগলের সবচাইতে বড় শত্রু পিঁপড়া। সে যেখানেই যায় সেখানেই পিঁপড়ার আনাগোনা। সকালে শম্ভু যখন ঘুম থেকে উঠে তখন দেখে তার নাকের ডগায় দুই তিনটি পিপড়া বসে আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে যখন ডাস্টবিন থেকে খাবার সংগ্রহ করতে যায় সেখানেও দেখে পিঁপড়ারা তার খাবারে ভাগ বসিয়েছে। আধা খাওয়া কাঁঠাল, গলে যাওয়া আম, মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া পাউরুটি সব কিছু থেকেই অসং্খ্য পিঁপড়া বেরুচ্ছে, দেখে মনে হয় এটা যেন ওদেরই রাজ্য। শম্ভু এই এলাকার ছেলে তাতে তাদের একটু ও ভয় নাই।
প্রথম প্রথম যখন খাবারে পিঁপড়া পেত তখন শম্ভু ওর ভাই এলাকার চেয়ারম্যান আক্কেলের নাম বলে ভয় দেখাতো আর বলত, "হাড়ামী পিঁপড়ার বাচ্চা, আমার খাওন ছাইরা দে, নাইলে কিন্তু আক্কেলেরে কইয়া দিমু, তারপর দেখবি মজা, বিদেশ থাইকা আমার পাঠাইন্যা ট্যাকা যেমন খাইছে তেমনে তগডাও খাইবো "। শম্ভু পাগলের এই কথাতে পিঁপড়াদের কানে যায়নি, তারা বরং শম্ভুকে কামড়ে নিজেদের রাস্তা করে বাসার দিকে হাঁটা দিত। আর শম্ভু তা চেয়ে চেয়ে দেখত। কিন্তু দিন বদলের সাথে সাথে শম্ভুও পাল্টাতে লাগল। পাল্টে গেল মুখের ভাষাও। এখন শম্ভু আর মুখে বলেনা, যা করার হাতেই করে। তার খাবারে পিঁপড়ারা ভাগ বসাইতে আসলেই দেয় পিঁপড়ারে থাপ্পড়। থাপ্পড় দেয় আর বলে, "হাড়ামী পিঁপড়ার বাচ্চা এই দেখ এক থাপ্পরে তোগ কয়টা পিপড়া মাইরা ফালাইছি, তোরা আমারে কয়টা মারছত "।
দুই
নির্বাচনের দামামা বাজছে। শম্ভু পাগল এখন পিঁপড়াদের অন্য ভাষায় গালি দিতে আরম্ভ করলো। এখন পিঁপড়ারা যখন ওর খাবারে ভাগ বসায় তখন ওর ভাতিজা এসে ওর সাথে পিঁপড়া মারে। এখন শম্ভুদের উন্নতি হয়েছে। ভাইয়ের ভোট ব্যবসা রমরমা করতেই নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে শম্ভুকে ঘটা করে ঘরে তুলে এনে দুইজন চাকর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ২৪ ঘন্টা শম্ভুকে দেখাশোনা করে, কিন্তু শম্ভুর মানুষকে ভাল লাগেনা। সে পিপড়ার সাথেই যুদ্ধ করে খেতে চায়। তাই চাকরেরা বাধ্য হয়ে প্রতিদিন ওর খাবারে পিঁপড়া ছেড়ে দেয়। আর শম্ভু পিঁপড়া মারে আর বলে, "হাড়ামী পিঁপড়া, আমার ভাইয়ে যেমনে চিপা গলিতে নিয়া গিয়া রাসেলের মারছে, আমিও তোগ এমনেই মারমু"। শম্ভু কিভাবে যেন ভাইয়ের এমন কাজ দেখে ফেলেছিল। তাই ভাইয়ের কড়া নির্দেশ ছিল , সে যেন বাইরে বের হতে না পারে। কিন্তু পাগল আটকানো কি সহজ কথ শম্ভু একদিন রাতে বের হয়ে গেল সবার অলক্ষেই। তারপর সারা গ্রাম ময় ছড়িয়ে গেল, শম্ভুর ভাই খুন করছে। শম্ভু পাগল হইলেও মিছা কয়না। কয়েকদিন পরেই ভোট হল, ভোটে শম্ভুর ভাই পড়াজিত হল। আর পাগল শম্ভুকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়া হল। শম্ভুর জায়গা হল আগের সেখানেই।
রাত গভীর হল, আর গভীর ঘুমের মধ্যেই কেউ শম্ভুর মাথায় আঘাত করে চলে গেল। সকাল হল শম্ভু মাথায় আঘাত পেয়ে সে ব্যাথায় কাতরাতে লাগল। মাথা তুলে বসতে পারলনা। কেউ তাকে দেখতে এলনা, কিন্তু পিঁপড়া ঠিকই এল। আর শম্ভুর মাথার রক্ত খেতে যখন পিঁপড়া এল তখন শম্ভু অনেক কষ্টে আস্তে আস্তে বলতে লাগল,"হাড়ামী পিঁপড়া এতদিন আমার খাওন খাইছত, আর এখন আমার রক্ত খাইতে আইছত"।কিন্তু শম্ভু এবার আর পিঁপড়া মারতে পারলনা, কারন নিজের রক্ত নিজের খাবারনা সেটা শম্ভু বুঝেছিল। কিন্তু আর কেউ কি বুঝেছিল!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১০