গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ মানুষটির মুখ দিয়ে আশ্চর্য এই ঘটনাটির বর্ননা শুনে উপস্থিত সকলে অবাক না হয়ে পারলনা। ছেলে, বুড়ো প্রায় সকলেই তার সাথে এক মত। কারণ গ্রামে আশি বছর আগে যে চাটা বাবা এসেছিলেন তা প্রকট সত্য। তিনি বিনে পয়সায় রাত বিরাতে গ্রামের বসন্তে আক্রান্ত রোগীদের চেটে দিতেন। অনেকে নাকি জানতই না চাটা বাবা কখন এসেছে। চাটা বাবার চিকিৎসাতেই নাকি অনেকে ভাল হয়েছিল। যখন গ্রাম থেকে বসন্ত পালালো, চাটা বাবা কোথায় যে গায়েব হলেন তা আর কেউ জানতে পারেনি। সেই চাটা বাবা আবার গ্রামে এসেছেন রোগ বালাই দূর করতে। আর সেই যুগের চাটা বাবার প্রতক্ষ্য সাক্ষী রহিমা বুড়ি নিজেই আজ সাক্ষীরূপে। বিশ্বাস না করে কি উপায় আছে!
রহিমা বুড়ির আরোগ্য লাভের দুই দিন পর, মধু মিয়ার বাড়িটির নাম আশেপাশের পনের বিশ গ্রাম ছড়িয়ে পড়ল। অনেকেই আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে মধু মিয়ার বাড়ির সামনে ভিড় করতে লাগল। কিন্তু মধু মিয়া নির্বিকার। সে নতুন ধান্দা পেয়েছে, বিনে পয়সাতে চাটা বাবাকে সে বিকাবে না। এমনিতেই মধু মিয়ার মুখে মধুর অভাব নেই। তার কথাতেই লোকেরা অনেক কিছুই করতে প্রস্তুত। তার উপড়ে তার শ্যলক এসে জুটেছে। সে রীতিমত ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে যে, “রহিমা বুড়ি মিষ্টি নিয়ে আসাতেই চাটা বাবা তার চিকিৎসা করেছেন। নইলে এ চিকিৎসা হত না”। মানুষের এত কিছু ভাববার সময় ছিলনা। তারা প্রায় সকলেই চাটা বাবাকে এক নজর দেখতে চায়। কিন্তু মধু মিয়া চিকিৎসার উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকেই ঘরে ঢুকতে দেবেনা। কিন্তু উপস্থিত সকলেই চাটা বাবাকে দেখতে পাগল প্রায়। মধু মিয়া সে সুযোগকেই কাজে লাগাল। সে নতুন ফন্দি করল, যে যত বেশী টাকা দিতে রাজি সে তত আগে চাটা বাবার সানিধ্য লাভ করবে।
প্রথম দিন সৈভাগ্যবান হলেন দূর গ্রাম থেকে আসা এক চেয়ারম্যান সাহেবের বৃদ্ধা মা। সেই প্রথমে চাটা বাবার সান্নিধ্যে যাবার সুযোগ পেলেন। ঘরে ঢুকবার আগেই মধু মিয়ার স্ত্রী গারো তরল জাতীয় কিছু দিয়ে পা ধুয়ে দিলেন।
বুড়ী ঘোরের মধ্যে ছিল। সে এর ভাল মন্দ কিছুই বুঝতে পাড়লনা। সে এগুলো কে নিয়ম কানুন মনে করল। যথারীতি রাত হলে, তাকে একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া হল। বেশ পরিপাটি বিছানায় ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হল। রাত বড়লে বাতি নিভিয়ে দেয়া হল। এখানেই গোল বাধল। বৃদ্ধা বাতি না জ্বালিয়ে ঘুমুতে পারেনা। এটা নাকি তার বদঅভ্যাস। কিন্তু মধুমিয়ার স্ত্রী কিছুতেই তা মানলো না। সে বরং সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগল, "চাটা বাবা পবিত্র মানুষ, তিনি অন্যের সাথে দেখা দেন না "।
যেমন কথা তেমনই হল। রাত বাড়তে থাকলো। বৃদ্ধার ভয় উতসাহ দুটোই বাড়তে লাগল। কিন্তু এই বয়সে দুই কিলো পথের ভ্রমন ক্লান্তি তাকে ঘুমের ঘোরে নিয়ে গেল।
গভীর রাতে খুব বাজে একটা দুর্গন্ধে বৃদ্ধার ঘুম কিছুটা ভেংগে গেল। সে ঘুম ঘুম চোখে প্রথমে একটু ভয় পেল। একটু পরেই সে টের পেল, কেউ তার পা চাটছে। নিশ্চই চাটা বাবা চলে এসেছেন। কিন্তু তার শরীর থেকে এমন বিশ্রী দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে কেন? যাই হউক বাবার মস্ত বড় জিহ্বার চাটুনি মন্দ লাগছিল না। তার দাড়ির আলতো ঘর্ষনে বেশ সুরসুড়িও হচ্ছিল। তবে কি সে তার ব্যামো থেকে আরোগ্যলাভ করছে?
চলবে...........
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৮