বহু বহুদিন আগের কথা, নবকুমার ইনষ্টিটিউশন থেকে সবেমাত্র এসএসসি পাশ করেছি (৯৫ সালে)। আশা করে ছিলাম ভালো ফলাফল হবে কিন্তু আশা আমার পুরোপুরি ভেঁেঙ্গ গেল, আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়াতে ভালো কোন কলেজে ভর্তির চান্স পেলাম না, তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে ড. শহিদুল্লাহ ডিগ্রি কলেজ এ ভর্তি হলাম। একমাত্র আমি ছাড়া, আমার স্কুল বন্ধুরা কেউ এই কলেজে ভর্তি হয়নি। যাইহোক, যথাসময়ে কাশ শুরু হলো, কাশ করি কিন্তু মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও, কলেজে কারো সাথে তেমন কথা-বার্তা বলতাম না। এমন করে পেরিয়ে গেল কয়েক মাস, ধীরে ধীরে সবার সাথে মিশতে শুরু করলাম, মোটামুটি সবার সাথে একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠল। কারো সাথে এমন হলো যে একে অপর কে তুই তুই বলে কথা বলি। আমার আবার একটি বদ অভ্যাস ছিলো, স্কুল বা কলেজে কখন বই’র ব্যাগ বহন করতাম না। সবসময় একটি রাফ খাতা ও পকেট নোটবুক ব্যবহার করতাম। কলেজের সবগুলো কাশ করতে আমার ভালো লাগত না, তাই কয়েকটি কাশ ড্রপ দিতাম, কিন্তু বন্ধুদের কে বলে দিতাম তোমরা যা কিছু লিখো না কেন আমার রাফখাতায় ও লিখে দিও। কাশ থেকে যখন স্যার বা ম্যাডাম বাহির হয়ে যেতেন তখন আমি প্রবেশ করিতাম। খাতা খুলে দেখতাম বন্ধুরা সুন্দর করে পড়াগুলো নোট করে রেখেছে। এমন করে আমার দিনগুলো ভালোভাবেই অতিবাহিত হচ্ছিল। সবার সাথে সারাদিন হাসি-ঠাট্টা, আনন্দ-উল্লাস করে দিন কাটাতাম। একদিন বাসায় রাত্রে পড়ার টেবিলে পড়তে বসেছি, রাফখাতা ও নোটবুক চেক করছি যে, আজ কি কি পড়তে হবে, নোটবুকের পৃষ্ঠা শেষ থেকে উল্টাতে শুরু করি প্রথম দিকে, হঠাৎ চোঁখে, কালো কি যেন দেখতে পেলাম, আবার সেই পৃষ্ঠায় ফিরে গেলাম, দেখি সুন্দর করে লেখা ছোট্ট একটি কবিতা। কবিতাটি যা লিখা ছিলো তাই লিখে দিলাম
ঝড়া বকুল
তুমি চলে যাবে
ঝড়া বকুলের পথে,
এলোচুলে ভালোবাসা,
ভালোবাসা,
যত মাজার জিনিষই হউক না কেন,
ভালোবাসলেই, হারাতে হয়।
তাই তো, তোমায় আমি
ভালোবাসবোনা,
তবেই তো, ঘুড়ে-ফিরে
তুমি আমায় নিয়ে ভাববে ?
সাথে সাথে রাফখাতা ও নোটবুক চেক করতে শুরু করলাম হাতের লেখা মেলানোর জন্য কিন্তু কারো হাতের লেখার সাথেই এই হাতের লেখার মিল খুজে পাইনি। একেবারে অপরিচিত হাতের লেখা। ভাবতে লাগলাম কে হতে পারে কিন্তু ভাবনায় তালগোল পাকিয়ে ফেলি কাউকে খুজে না পেয়ে। কাশে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিলাম, সবার খাতাই কথার ফাকফোকরে দেখতে লাগলাম কিন্তু কারো হাতের লেখার সাথে মিল খুজে পেলাম না। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি ভাবি সবসময় ”ইনি কে” ?