পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হচ্ছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও বর্তমান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। মন্ত্রী সরাসরি না বললেও পদত্যাগ করেছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
পদত্যাগ করেছেন কি না—প্রথম আলো ডটকমের এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু বিষয়ে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে চাই না। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং আমি যাঁদের শ্রদ্ধা করি তাঁরা বিভিন্ন সময় আমাকে বলেছেন, তদন্ত চলাকালে আমার মন্ত্রী পদে থাকা উচিত না। আমি সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। কার্যকর ব্যবস্থাও নিয়ে ফেলেছি। আমি দায়িত্বে থাকব না।’ তিনি বলেন, ‘তবে তদন্তে প্রমাণিত হবে আমি নির্দোষ। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। দুদক, কানাডার পুলিশ ও বিশ্বব্যাংক—যে যতই তদন্ত করুক না কেন, আমাদের দুর্নীতিতে জড়াতে পারবে না। আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। স্বচ্ছতা, আন্তরিকতা ও দ্রুততার সঙ্গে পদ্মা সেতুর কাজ করেছি।’
তদন্তের স্বার্থে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন কি না—এমন প্রশ্নের কোনো সরাসরি জবাব দেননি সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাতির উদ্দেশে একটি চিঠি লিখেছিলাম। সেখানে ইঙ্গিত দেওয়া আছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংক ও জাতি—সবাই দেখেছে।’
তাহলে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকছেন, নাকি মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি মন্ত্রী থাকব কি না, সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছে। আর দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা দিয়েছেন। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এদিকে আজ সৈয়দ আবুল হোসেন আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দেননি। কী কারণে তিনি যোগ দেননি, তা এখনো জানা যায়নি।
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের ওপর বিশ্বব্যাংকের চাপ ছিল এবং এখনো আছে। গতকাল রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পদ্মা সেতুর ঋণ পেতে শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের চারটি প্রস্তাবই মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কারণ, পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ সংগ্রহের জন্য সরকার এখনো বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ১২০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী গতকাল আরও বলেছেন, ‘গোল্ডস্টেইনের (বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর) দেওয়া চার প্রস্তাবের মধ্যে চতুর্থটি মেনে নেওয়া একটু অসুবিধা ছিল। আমরা চেষ্টা করছি, এটাও কীভাবে সমাধান করা যায়।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তা-ই যদি হয়ে যায়, তাহলে শিগগিরই আমরা শুরু করতে পারি।’ চতুর্থ শর্তটি ছিল তদন্ত চলাকালে সরকারি দায়িত্ব পালন থেকে সরকারি ব্যক্তি অর্থাত্ আমলা ও রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের ছুটি দেওয়া।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নিয়ে যে সময় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, সে সময় সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রথম আলো