জুয়ানিটা উইলসন পরিচালিত 'অ্যাজ ইফ আই অ্যাম নট দেয়ার' ছবিটি এমন এক সময় মুক্তি পেয়েছে যখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে Ratko Mladic এর বিচারকার্য চলছে। ২০১০ এ মুক্তি পাওয়া সার্বো-ক্রোয়েশিয়ান ভাষার আইরিশ এই চলচ্চিত্রটি ক্রোয়েশিয়ান লেখক Slavenka Drakulic এর একই নামের বেস্ট-সেলার উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
আইরিশ পরিচালক জুয়ানিটা উইলসনের প্রথম চলচ্চিত্র এটি। অল্প কিছু শর্টফিল্ম বানিয়ে আগেই নাম কুড়িয়ে ছিলেন তিনি, কিন্তু স্পটলাইটে এসেছেন 'অ্যাজ ইফ আই অ্যাম নট দেয়ার' ছবিটি দিয়ে। ইতিমধ্যেই অনেকগুলো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে ছবিটি। ৮৪তম অস্কার চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্যে এই ছবিটি এবার আয়ারল্যান্ড থেকে মনোনীত হয়েছে।
ছবির শুরুতেই দেখা যায় সদ্য ভূমিষ্ঠ এক শিশুকে। তারপরই ফ্ল্যাশব্যাক। সারায়েভোর স্বচ্ছল মুসলিম পরিবারের মেয়ে সামিরা (Natasa Petrovic ) শিক্ষিকা হিসেবে আসে প্রত্যন্ত এক গ্রামের স্কুলে। যে স্কুলের আগের শিক্ষিকা চাকরী ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সামিরা লক্ষ্য করে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে অনেকেই। এর কিছুদিন পরেই একদল সশস্ত্র বাহিনী এসে গ্রামের সব মানুষ এক্ত্র করে। মেরে ফেলে পুরুষদের আর ক্যাম্পে নিয়ে যায় নারী-শিশুদের। সেখানেই একদিন সামিরা দেখে কয়েকটি সৈন্য তিনজন যুবতী আর একটি বালিকাকে তাদের গ্রুপ থেকে নিয়ে যায়। সামিরার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না। জেনে যায় একদিন পালা আসবে তারও; আসেও। জীবনের বাহারি রঙগুলো মুহূর্তেই সাদা-কালোয় পরিণত হয়। সব স্বপ্ন মুছে যায়। কী যেন হারিয়ে যায় জীবন থেকে; কী যেন নেই; কেন যেন নেই; উত্তর কে দেবে? তারপর ক্যাম্পে পতিতাবৃত্তিতে নামে সামিরা। বিদ্রোহী সৈন্যদলের ক্যাপ্টেনের নজরে পড়ে যায় সে। ক্যাপ্টেন তাকে ব্যবহার করে একটা খেলনার মতো, যদিও সামিরার কাছ থেকে উষ্ণ ভালবাসা আশা করে সে। কিন্তু সামিরার কাছে ঘৃণা ছাড়া তখন আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।
একসময় যুদ্ধ শেষ হয়। ছাড়া পায় সামিরা। কিন্তু তখন সে সন্তানসম্ভবা। সামিরা মুক্তি পেতে চায় তার এই দুঃস্বপ্ন থেকে, কিন্তু অ্যাবর্শনের সময় পেরিয়ে গেছে ততদিনে। ছবি আবার ফিরে আসে বর্তমানে। নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত সেই সন্তানকে গ্রহণ করতে পারে না সামিরা। চলে টানাপোড়েন। আর এভাবেই ছবিটি শেষ হয় অপূর্ণাঙ্গ আর অর্ধোন্মোচিতভাবে। শেষ দশ মিনিটের ক্লাইমেক্স উদ্বিগ্ন করবে দর্শককে। আর ক্লাইমেক্সটিই ছবিটিকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়।
'৯২ এর বসনিয়ান গৃহযুদ্ধকালীন সময়কার পটভূমিতে ছবিটি নির্মিত। ১০৯ মিনিটের এই ছবিটিতে সংলাপ খুবই কম। বরং প্রচুর ডিটেইল চোখে পড়ে। ছবিটি দেখে মনে হবে কি প্রাচ্য কি প্রতীচ্য, পুরুষতান্ত্রিকতার কাছে নারীর মূল্যায়নে কোনো তফাৎ নেই। ছবিটির IMDb রেটিং ৭.৩ আর রোটেন টমেটোর রেটিং ৯২%। বোঝাই যাচ্ছে সমালোচকদের নিরাশ করেনি ছবিটি। চাইলে দেখে নিতে পারেন সময় করে।
ডাউনলোড টরেন্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:২৪