মানুষের বিবেক উবে গেছে। লাজ-লজ্জাহীনভাবে অবিবেচকের মতো কাজ করে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। তাহলে মানুষ কি মানুষ নেই! তারা কি আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছে? সে সময় মানুষের লজ্জা ছিল না। দিগম্বর হয়ে থাকতো নারী-পুরুষ। লজ্জা ঢাকতে হবে এমন ভাবনাও ছিল না। বস্তুও ছিল না। ধীরে ধীরে মানুষ লজ্জা উপলব্ধি করতে শিখেছে। উপলব্ধির পর গাছের লতা-পাতা দিয়ে লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগতে থাকে পৃথিবীতে। এখন মানুষ বিজ্ঞানের চরম শিখরে পৌঁছেছে। আব্রু ঢাকতে কত যে পন্থা এখন। নানা ডিজাইনের, নানা রংয়ের বস্ত্র এখন ঘরে ঘরে। এখন মানুষ আব্রু ঢাকে ঠিকই, কিন্তু লাজ শরম যে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। দুর্নীতি করে একের পর এক বিল্ডিং-বাড়ি করছে। গাড়ি হাঁকাচ্ছে। বড় গলায় আবার বলছে, আমার প্রতিদিনের আয় হাজার হাজার টাকা। কে না জানে, টাকা ছাড়া দেশে কিছু হয় না। বেশির ভাগ মানুষ আছে টাকার ধান্ধায়। একেবারে লাজ-লজ্জা ভুলে গিয়ে তারা ধান্ধায় নেমে পড়ে। এতে মানুষ মরলে মরুক, তাতে কি? যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে প্রকাশ্যে। গর্ব করে পিতারা বলে, আমার ছেলে শ্বশুর বাড়ি থেকে ডায়মন্ডের আংটি পেয়েছে ১১টি, হীরার চেইন, স্বর্ণের চেইন পেয়েছে ২৫টি, প্রাইভেট কারটির রং কত সুন্দর। এমন রংয়ের গাড়ি পাওয়া রেয়ার। আর ফার্নিচার যা দিয়েছে তা রাখবো কোথায় এনিয়ে ভাবছি। লাজ-লজ্জার মাথা খেয়েছে যেন। যেখানে যৌতুক নেয়া লজ্জার, সেখানে বুক ফুলিয়ে তিনি এসব বলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে সমাজে হাজারো মানুষ আছেন যারা যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। কখনো কখনো খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এমনও ঘটনা সমাজে দেখা গেছে একটি মাত্র সাইকেলের জন্য বিয়ের আসর থেকে বরকে তুলে নিয়ে গেছে তার লোভী পিতা। হায়রে মানুষ। আসলে মানুষের সংখ্যা দিন দিন সমাজ থেকে কমে যাচ্ছে। মানুষের মাঝ থেকে মনুষ্যত্ববোধ লোপ পাচ্ছে। যে কারণে সমাজে বাড়ছে নৈরাজ্য, অনাচার। মানুষের জীবন নিয়েও ছিনিমিনি খেলতে মানুষ ভাবে না। টাকার ধান্ধায় ওরা অন্ধ। না হয়, মহাখালীর টিবি গেটের পাশে ছাপড়া ঘর তুলে দিনের পর দিন ওয়ার্ডবয় আর আয়া মিলে চালিয়ে যাচ্ছে ক্যান্সার হাসপাতাল। তারা নিজেরাই দেন কেমোথেরাপি। অবিশ্বাস্য এমন তথ্য উদ্ধার করেছে র্যাব। আর ভুয়া ডাক্তার হিসেবে পরিচয়দানকারী ওয়ার্ডবয় আর আয়াকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রতারণা আর কাকে বলে। ভয়ঙ্কর এ জালিয়াতি করতেও তাদের বিবেক বাধা দেয়নি। মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে তাদের একটুও বুক কাঁপেনি। কেমন মানুষ তারা? এখন ক্যান্সার চরম ব্যাধি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে। একেবারে গ্রামে-গঞ্জেও ক্যান্সারের বিস্তার। কারণ কি? খাবারে ভেজাল, শাক-সবজি, ফলমূলে ফরমালিন নাকি ক্যান্সার ছড়িয়ে দিচ্ছে ঘরে ঘরে। একসময় শিক্ষকদের দেখলে সমাজ তাদের সামনে মাথা নত করতো। এখন শিক্ষকদের অনেকের কারণে তাদের সেই সম্মান হারাতে বসেছে। কারণ শিক্ষক নিজে ক্লাসে ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করে। রাজধানীর অভিজাত স্কুলের শিক্ষক পরিমলের কাহিনীতো সবারই জানা। এরপর দেশের বিভিন্নস্থান থেকে এমন অসংখ্য পরিমলের কাহিনীর খবর এসেছে। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে। কথা হলো, পরিমলরা কেন তৈরি হচ্ছে? তাদের বিবেক কেন তাদের নাড়া দিচ্ছে না? কেন এখনও পত্রিকায় খবর দেখতে হয় নিজ সন্তান তার বৃদ্ধ পিতাকে রাজপথে ফেলে রেখে গেছে। বিংশ শতাব্দীতে এসেও কেন পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হচ্ছে? এসব সন্তানকে কি বলে ডাকলে পিতা-মাতারা শান্তি পাবে। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার পরও কিভাবে ওইসব লোক মানুষের সামনে মুখ দেখায়। কেন্দ্র দখল, সিল মেরে জয়ী হয়ে কিভাবে তিনি সন্তুষ্ট হন? কিছুই বুঝি না। এভাবে জয়ী হয়ে তিনি যেন যুদ্ধে জয়ী এক বীরÑএমন ভাব দেখান। ধর্ষক প্রকাশ হওয়ার পরও সমাজে নিজেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এসবের পেছনেই লাজ-লজ্জা না থাকাকে দায়ী করা যায়। দাদা বললেন, তারা হয়তো, সেই উপমাÑলাজ, লজ্জা, ভয়/ এ তিন থাকতে নয়Ñকে পুঁজি করে নিয়েছে। তাই সমাজ পিছিয়ে যাচ্ছে আদিম যুগে। সামনে এগিয়েও আমরা এগুতে পারছি না। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? কিভাবে এসব থেকে সমাজকে মুক্ত করা যায়। এখনই ভাবতে হবে সবাইকে। ঘর থেকে এর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে হবে। আর এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।