হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের খায়েশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপিকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় বড় দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে প্রতিষ্ঠিত করা। লালমনিরহাটে এক সৌজন্য সফরে গিয়ে নেতা-কর্মীদের কাছে তার এমন খায়েশের কথা জানালেন অকপটে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ শক্তিশালী দল, তাকে পেছনে না ফেলতে পারলেও বিএনপিকে পেছনে ফেলতে কাজ করতে হবে। এরশাদ আসলে ঠিক বলেননি। ভুল বলেছেন। আপাত দৃষ্টিতে ৫ই জানুয়ারির ভোটার ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হয়েছে সে সংসদে এরশাদ দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। এক অর্থে সংসদের হিসাব ধরেই দলগুলোর মান নির্ণয় করা হয়। এ কারণেই বলছি এরশাদ ভুল বলেছেন। তিনি তো দ্বিতীয় দল হয়েই আছেন। তবে বিএনপিকে পেছনে ফেলার কথা কেন? তাহলে এরশাদ কি এ হিসাব মেনে নিতে পারছেন না? তিনি নিজেকে কত নম্বর দল ভাবেন? তিন নম্বর? তাই তো বিএনপিকে পেছনে ফেলার কথা বলছেন। কিন্তু হয়ে যাওয়া ৯৭ উপজেলা নির্বাচনে তো তিনি যৌথভাবে ৫ নম্বর দলে নেমে এসেছেন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ৪২ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। ৩৪টিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। আর জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা ১২টিতে জয়ী হয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ। যৌথভাবে পঞ্চম স্থান দখল করেছে জাতীয় পার্টি আর আরেক আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে একটি করে উপজেলায়। এ হিসাবেও এরশাদ ভুল বলেছেন। তিনি বিএনপি নয়, এখন টক্কর দিতে হবে আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফের সঙ্গে। তাকে ডিঙিয়ে তারপর পাল্লা দিতে হবে জামায়াতের সঙ্গে। এরপর আসবে বিএনপির কথা। জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ হিসাব না করলেও জনগণ কিন্তু এ হিসাব কড়ায় গণ্ডায় করছে। তারা বলছে, জনসংহতি আর জাপার মধ্যে পার্থক্য নেই। জনসংহতি যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল, তেমনি জাতীয় পার্টিও রংপুরের আঞ্চলিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গাইবান্ধার লোকজন বলছেন, সাঘাটা উপজেলায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে। সেখানেও জাপা সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হওয়ার কথা ছিল না। এমনটা হলে শূন্য নিয়েই বসে থাকতে হতো জাপা চেয়ারম্যানকে। আর রংপুরের মানুষ এখন আর জাতীয় পার্টি বা আমাদের ছাওয়াল এরশাদ বলতে পাগল নন। তাদের সেই মোহ কেটে গেছে। দেশে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে এরশাদ টের পাবেন তিনি কোথায় আছেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তার যে নাটক দেশবাসী দেখেছে তাতে সবাই হিসাব মিলিয়ে নিয়েছে। অনেকে অনেক কথা বলছেন। কান পাতলেই সেসব কথা শোনা যায়। জনাব এরশাদ কান পেতে শুনুন দেশের মানুষ কি বলছে। আপনাকে নিয়ে কি মন্তব্য করছে। মানুষ প্রত্যক্ষ করছে আপনার অসহায় মুখ। সংসদে গোমরা মুখে বিরোধী দলের নেত্রী রওশনের পাশে বসে থাকতে দেখে কেউ কেউ হয়তো ভেবে বসতে পারেন তিনি বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতা। এরশাদকে রওশনের পাশেই বসতে হবে কেন? তিনি যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সেহেতু ট্রেজারি বেঞ্চের প্রথম সারিতেও তো তার স্থান হতে পারতো। যে যা ই বলুক, তাতে নেতাদের কি আসে যায়? তারা যা মনে করেন তা-ই করেন। তা-ই বলেন। এটাই যেন এ দেশের নিয়ম। কারণ তাদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। আগে পাঁচ বছর পর জনগণের কাছে যেতে হবে এ চিন্তা করে হলেও এমপি মন্ত্রিরা জনগণের সামনে হাসি মুখে যেতেন। কষ্ট করে হলেও ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করতেন। আর এখন তো সেটাও হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। যে অবস্থা মনে হচ্ছে নির্বাচন হবে, কিন্তু জনগণের কাছে যেতে হবে না এমন পরিস্থিতি হয়তো চলতে থাকবে। এতে কিন্তু জনগণ চিন্তিত না। তাদের চিন্তা যারা এসব করছে তাদের নিয়ে। আখেরে তাদের কতটুকু লাভ হবে এর হিসাব কষছে আমজনতা। আর প্রার্থনা করছে দেশটা যেন ভাল থাকে। দেশের মানুষ যেন সুখে থাকে। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত যেন পেট ভরে খেতে পারে। তারা এরশাদের মতো পঞ্চম থেকে এক লাফে দ্বিতীয় হতে চায় না। তারা চায় কষ্ট করে এগিয়ে যেতে। শ্রম মেধা আর মনন দিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিতে।