ফুলের সার্থকতা কোথায়? নিজে বিকশিত হয়ে অপরকে সুবাস বিলানো আর দৃষ্টিকে বিমোহিত করা। কিন্তু যে কলি লোকচক্ষুর অন্তরালে ফুল হয়ে ঝরে পড়ে তার কি কোন মূল্য আছে? নেই, তার সে যতই পাগল করা ঘ্রাণ থাক না কেন!
যৌবনে আমি সুবাস বিলানো ফুল হতে চেয়েছিলাম। সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রিয় হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিধিবাম, আমি কলি থেকে ফুল হয়ে ঝরে গেলাম, বিশেষ একটি শ্রেণি শুধু আমার কদর করল। আমার ঘ্রাণ আছে, বিশেষ এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বড়ই মিষ্টি সে ঘ্রাণ, কিন্তু তোমাদের সেই ভদ্র সমাজে ‘শব পুষ্পের’ মতই আমার কদর। ‘শব পুষ্প’! সে ও এক প্রকার ফুল, বছর বছর অপেক্ষা করতে হয় একটি ফুলের জন্য, কিন্তু যখন এ ফুল ফোটে তখন এমনি বিদঘুটে এক গন্ধ ছড়্য যে আশেপাশে মানুষ থাকাই দায়! কিন্তু এই ফুলের সৌন্দর্যেও পাগল একদল পুষ্পপ্রেমী। আমাকে যারা ভালবাসে, যারা আমার সংস্পর্শে এসেছে এবং আমাকে বুঝতে পেরেছে তারাও এই বিশেষ শ্রেণীর বিরল এক প্রজাতি।
আমি শূন্য থেকে এই পর্যায়ে এসেছি। অন্ধকার জগতে আমার পূর্বপূরূষের কারো বিচরণ ছিল না, তাই প্রাথমিক ভাবে কারো সহযোগিতা পাইনি। নিজে ঠকেছি, শিখেছি, মার খেয়েছি-দিতে শিখেছি, প্রতারিত হয়েছি-প্রতারণা করেছি, ধীরে ধীরে, যুগের পড়ে যুগ অক্লান্ত চেষ্টা আর মেধার সমন্বয়ে আমি আজ এখানে। কোন আক্ষেপ নেই জীবন নিয়ে, কেন এমন হল তা কারো কাছে অনুযোগ করতে চাইনা। আমি সফল, যদিও আমার সংজ্ঞায়, কিন্তু কজনই বা জীবন সায়াহ্নে এসে বলতে পারে যে জীবনটাকে আমি উপভোগ করতে পেরেছি? আমি সেই বিরলতমদের একজন যে বড়মুখ করেই এটা বলার সামর্থ রাখি।
ভাবছ, কেন আমি এত এত বছর আড়ালে থেকে, জীবনের শেষভাগে এসে সব প্রকাশ করে দিচ্ছি? কোন অনুশোচনায়? না, বরং গর্বে। আমি বলতে চাই আমার মত যাদেরকে তোমার ঐ সমাজ অচ্ছুৎ করে রেখেছে, তাদেরকে যদি একটি সুযোগ দেওয়া হত তবে ওরা তোমাদের সমাজের এক একজন সভ্য এবং সম্মানিত সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করত। কারণ তারা সবাই তোমাদের তথাকথিত মেধাবীদের চেয়ে হাজারোগুণ মেধাবী।
ভাবছ নিজের অপরাধের সাফাই গাইছি? না, আমি শুধু সত্য তোমাদের সামনে তুলে ধরছি। এই সমাজ যেভাবে পক্ষপাতিত্ত্ব, স্বজনপ্রীতির দিকে ঝুঁকেছে, আমি আশংকা করি অচিরেই এই সমাজের সবাই অপরাধী না হয়ে যায়। আমার তো বেলা ফুরালো, অন্ধকারের ডাক চলে এল বলে, নিজেদের অধিকার নিজেরাই বুঝে নাও, এটাই সর্বোচ্চ সময়।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৪৮