চেয়েছিলাম কি? নাহ। কিন্তু আজ সে সবই অতীত! আমি যদি তোমাদের সভ্য সমাজে ফিরেও যেতে চাই, কাউকে নিজের করে নিতে চাই সমাজ আর ধর্মের সব বিধান মেনে নিয়ে তবে ধর্ম চুপ থাকলও সমাজ, মানে তোমরা চুপ করে থাকবে না। পৃথিবীতে তোমাদের দাপট এতটাই প্রকট!
না, আমি আর তোমাদের কাছে ফিরে যেতে চাইনা, চাইনা আর সভ্য সমাজে বাস করতে, আমার জন্য এই আউট-ল জীবনই ভাল। হয়ত কেউ আমাকে কোন দিন মেরে ফেলবে, কোন নালায় অথবা নদীতে পরে থাকবে আমার মৃত দেহ, শিয়াল কুকুরে খেয়ে ফেলবে সাধের এই দেহ, হয়ত কবর হবে হয়ত হবে না, কিন্তু মৃত্যুর পরে কি এসে যায় তাতে! আমি তো তখন নিজেকে বাঁচাতেই ব্যস্ত থাকব, বলা ভাল কৃতকর্মের শাস্তি পেতেই ব্যস্ত থাকব।
আজ জ্যৈষ্ঠের শেষ ভাগে, সারাদিন আকাশ থেকে আগুন ঝরেছে, এখন রাতের বেলা চারপাশ কাঁপিয়ে ঝড়! মাত্র বাইরে থেকে এলাম, ঝড়ের মাঝেই, খেয়ে আসিনি, ভুলে গিয়েছিলাম। বাসায় ফল আছে, এক বন্ধুর উপহার দেওয়া লেবেল ছাড়া বিদেশি কয়েকটা মদের বোতল আছে, কিন্তু খেতে ইচ্ছা করছে না। অবশ্য খিদেও খুব বেশি নেই, না খেলেও আজ রাতটা চলেই যাবে। ভাবছি, একটা সময় ছিল যখন পকেটে টাকা থাকত না বলে খেতে পারতাম না, খিদের যন্ত্রণায় ঘুম ও আসত না, কত রাত শুধু না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি তার হিসেব নেই। তখন শুধু স্বপ্ন দেখতাম একদিন আমার অনেক টাকা হবে, তখন কখনোই আমাকে না খেয়ে কাটাতে হবে না, বাইরে থেকে এসে সব প্রস্তুত পাবো, কিন্তু হায়! আজ আমার সত্যি অনেক টাকা, এত টাকা যে আমার একদিনের আয় দিয়ে এদেশের সবচেয়ে দামী খাবারটাও যদি কিনি তাহলে আগামী বিশ বছর আমাকে খাবার নিয়ে ভাবতে হবে না। এখন আমি ইচ্ছে হচ্ছেনা বলে খাই না, মানুষের চাওয়ার কত পার্থক্য গড়ে দেয় সময়!
আজ মাহমুদ ভাইয়ের সাথে দেখা হল, অনেক দিন পরে, প্রায় বিশ বছর! এই মাহমুদ ভাইয়ের সাথে আমার খুব অল্প সময়ের পরিচয় ছিল, যখন ইন্টার-মিডিয়েটে পড়ি তখন, আমার কয়েকজন বন্ধুর সাথে উনার বাড়িতে যেতাম ফুর্তি করার জন্য। এত দিন যোগাযোগ ছিল না, জামাল ভাইয়ের কাছে থেকে নাম্বার নিয়ে আমাকে কল দিয়েছিলেন কত দিন আগে, দেখা করে কথা বলবেন। সেই দেখা আজ হলো। সিরিয়াস প্রবলেমে আছেন, বউ অন্য লোকের সাথে প্রেম করে, সে আবার এলাকার এক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের ভাই, তাই আমার কাছে এসেছেন একটা ব্যবস্থা করে দিতে, হাত পা ভেঙ্গে দিলেই হবে, সব চেয়ে ভাল হয় কোমর ভেঙ্গে দিলে, বললাম করে দিব। খরচ বাবদ ৫ দিয়ে গেলেন, বাকি ১৫ কাজ হয়ে যাওয়ার পরে। মনে প্রশ্ন জেগেছে তো পাঁচ কি? লাখ, এসব কাজে এমনি খরচ।
মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে আমার এই পথচলার শেষ কোথায়? উত্তর জানা নেই। কি হবে আমার এত সহায়-সম্পত্তির, তাও জানা নেই। আমার প্রথম প্রেম যাকে আমি আফ্রোদিতি বলে ডাকতাম, ওর কথা মাঝে মাঝে খুব মনে হয়। দুই সন্তানের জননী, সর্বশেষ কথা হয়েছিল দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পরে, আমাকে জানানোর জন্য ফোন করেছিল। তারপরে আর কোন যোগাযোগ নেই, সে আজ প্রায় ত্রিশ বছর আগের কথা। হয়ত এখন তার ছেলে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তাদেরও সন্তান বড় হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আমি এখনো তাকে মনে করি। হয়ত কত সুখেই না আছে! আচ্ছা ও কি কখনো আমাকে মনে করে, ওর কি মনে হয় সেইসব রঙ্গিন দিনের কথা! মনে হয় না! জানি ওর চোখ কখনো ভিজে উঠবে না আমায় ভেবে! জানি এসব কিছুই ওর হয়না। পৃথিবীতে শুধু অবুঝেরাই অতীত আঁকড়ে ধরে রাখে, আর বুদ্ধিমানেরা অতীতকে ভুলে যায়, আর ভুলতে পারে বলেই তারা সফল।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪০