বড় দুঃখে আজ লিখতে বসেছি। লিখতে বসেছি আমার সমাজ তথা আমার সমাজের মানুষের চিন্তা ভাবনা নিয়ে। প্রথমেই আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করে নিতে চাই, আমি বাঙালি হিসেবে জন্ম নিয়ে গর্বিত। আমার মনে কোন হীনমন্যতা নেই, আরো যদি কোন জন্ম থাকে তবে সেই জন্মেও আমি বাঙালি হয়ে জন্মাতে চাই।
কিন্তু আমি হাজার বার প্রার্থনা করি সেই বিধাতার কাছে, যিনি আমাদের জন্ম মৃত্যু আর সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ কর্তা, আমার পরবর্তী জন্মে (যদি থাকে) আমাদের সমাজ যেন কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়। তখন যেন পরশ্রীকাতরতা বিলীন হয়ে যায় আমাদের সমাজের মানুষজনের মন থেকে, যেন পরের গোলামী করার মানসিকতার পরিবর্তন হয়। আমি বলছি সেই গোলামীর কথা যা আমাদের অন্তর আর মজ্জায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল ইংরেজরা, তাদের দুইশত বছরের শাসন আমলে।
তারা আমাদের গোলামী করতে শিখিয়েছে, শিখিয়েছে ব্যবসায় থেকে দূরে থাকতে, যেন আমরা চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাই, কখনো আর শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে না পারি। তারা এটা করেছিল নিজেদের স্বার্থে, সে সময়ের নিম্ন মানসিকতার কিছু মানুষকে দলে টেনে নিয়েছিল নির্বিঘ্নে ব্যবসায় করার জন্য। তারা তাদের সেই পা চাটা কুকুরদের শিখিয়েছিল কি করে ব্যবসায় না করে শুধু অন্যের হুকুম পালন করেই আয়েশি জীবন যাপন করা যায় নিদেনপক্ষে জীবন ধারণ করা যায়। বাঙ্গালিদের ব্যবসায়িক মানসিকতা ধ্বংস করে দেওয়া ছিল তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। ইংরেজরা আমাদের উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে আজ ৬৮ বছর, কিন্তু আমরা কি পেরেছি আমাদের সেই গোলামী করার ইচ্ছেটাকে দূর করতে?
পারিনি। আমাদের সমাজ এখনো ব্যবসায়কে ভাল চোখে দেখেনা। আমাদের স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে এখনো শেখানো হয় কি করে ভাল একটা চাকরি পাওয়া যায়। শেখানো হয় কি করে নিজে নূন্যতম ঝুঁকি না নিয়েই পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া যায়। এটা শেখানো হয়না যে কি করে নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী হওয়া যায়, কি করে একটা ব্যবসায় দাড় করানো যায়, কারণ আমাদের সম্মানিত শিক্ষকরা এখনো শিক্ষকতা পেশাকে সেবা হিসেবে মেনে নিতে পারেননি, এখনো এটাকে সরকারের গোলামী হিসেবেই দেখেন। আমরা দূর থেকে যতই তাদেরকে মানুষ গড়ার কারিগর বলে থাকি, তারা কিন্তু তা ভাবেন না। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাদেরকে এই মনোভাব বদলাতে হবে। তাদেরকে এই মানসিকতা বদলাতে হবে নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে। সব ছাত্রদের না হোক অন্তত নিজের সন্তানকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিন, যেন ছাত্র জীবন শেষ করে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেই কিছু একটা করতে পারে। আর অভিবাবকদের প্রতি অনুরোধ, নিজের সন্তানকে ছোট কিছু একটা করতে দেখার মানসিকতা তৈরি করুন। সবার ছেলেই শিক্ষক ডাক্তার কিংবা অন্য কিছু হতে পারবেনা, এটা মেনে নিন।সবচেয়ে বড় কথা, ঘুষকে ঘৃণা করতে শিখুন, তাহলেই সরকারী চাকরীর পিছনে দৌড়ানো বন্ধ হবে।
আমাদের অভিবাবকরা পনেরো লাখ টাকা দিয়ে সন্তানকে চাকরি দিতে পারেন, কিন্তু ব্যবসায় করার জন্য পনেরো টাকাও দিতে প্রস্তুত না। কেন এমনটা হবে? ঘুষ কি অনৈতিক নয়? শ্রদ্ধেয় বাবারা, কেন আপনাদের কষ্টে সঞ্চিত টাকা ব্যয় করছেন নিজের সন্তানকে অবৈধ ভাবে জীবনে প্রতিষ্টিত করতে? নিজের সন্তানকে একটিবার প্রশ্ন করুন, কি সে করতে চায়। কারণ, সবার কাছে সফলতার সংজ্ঞা এক না ও হতে পারে।
শিক্ষা জীবন শেষ করা ভাইদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেই সৃষ্টিশীল চিন্তা করুন, ভাববেন না বিয়ে করার জন্য মেয়ে আপনি পাবেন। আপনার তৈরি করা একটা উদাহরণ আমাদের মত শত সহস্র যুবককে আপনাদের পিছন পানে চলতে সাহায্য করবে। একবার ভেবে দেখুন, একজন মুর্খ মানুষ যদি মুরগি, গরু কিংবা মাছের খামার করে স্বাবলম্বী হতে পারে, তবে আপনি আমার মত শিক্ষিত, আর পরিশ্রমী ছেলেরা কেন সফল হতে পারবনা?
আসুন না উদাহরণ তৈরী করি, ছোট ভাইদের জন্য, আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম আমাদের মনে রাখবে পথপ্রদর্শক হিসেবে। আমি আপনি না হয় ব্যর্থই হলাম, সফলতার একটা ইট তো জায়গামত বসিয়ে দিয়ে যাব! এটাই আমাদের সফলতা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৭