পৃথিবী শুধু বিজয়ীদের কথাই মনে রাখে। তাই অল্প কয়েক দিনেই যে নিশোর মন জিতে নিল তাকেই সবাই মনে রাখবে, এমনকি নিশো নিজেও। আমাকে ভুলে যাবে, ভুলে যাবে ২ বছর ধরে প্রতিদিন যে কমপক্ষে ১২-১৪ ঘন্টা কথা হত, ভুলে যাবে ও ফোন না দিলে আমার কষ্ট হয় এটা, সব ভুলে যাবে। ভুলেই তো গেল এখনি। মাত্রইতো ৫ দিন হল বিয়ের, এর মাঝে আমাকে একবার ও কল দেয়নি। জানতে চায়নি আমি কেমন আছি। গতকাল আমি নিজেই কল দিয়েছিলাম, কিন্তু বেশিক্ষণ কথা বলেনি। কষ্টের কোন ছাপ শুনতে পাইনি অর কন্ঠে।
আর কষ্টের ছাপ থাকবেইবা কেন?! ও নাকি যেমন চেয়েছিল তেমন বর পেয়েছে, আমাকে তো কখনো ভালইবাসেনি, দু:খ কেন পাবে! নিশো তুমি এত পাষাণী জানা ছিল না। কি করে পারলে আমাকে ছেড়ে আর একজনের হাত ধরে চলে যেতে? আমিতো তোমায় বারণ করেছিলাম।
রাতে ঘুমাতে পারিনা গত কয়েকদিন যাবত। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় ও যেন ওর বরের কোলে ঘুমিয়ে আছে। সারারাত আর ঘুম আসেই না।
তোমার বিরুদ্ধে কার কাছে নালিশ করব বলো? কেউ যে নাই, কাউকেই পাশে পাইনি। যে বন্ধুদের আপন ভাবতাম তারাই যে তোমার বিয়েতে দাওয়াত খেতে গেল! আর কে আপন আছে বলো?
নিশো তুমিতো সব জানতে, জানতে তুমি চলে গেলে আমি এলোমেলো হয়ে যাব। আমার সব ঝাপসা হয়ে যাবে, তোমার চেয়ে বিশ্বস্ত কেউ যে নেই আমার, তুমি গেলে তো গেলেই, আমার সবটুকু সুখ কেড়ে নিয়ে চলে গেলে। ভাবলে না আমাদের এত সুন্দর অতীতের কি হবে! অতীতকে তুমি অবশ্য খুব কমই মূল্যায়ন করতে।
আমি ভেবে পাইনা যে, আমার চেয়ে কি করে ওই ছেলেটাই তোমার কাছে বেশী গুরুত্ব পেল, কেন আমার কথা না ভেবে চলে গেলে একটা অচেনা ছেলের সাথে! কি এমন বেশী যোগ্যতা তার? একটা চাকরি করে এই? এটাই কি একজন মানুষ কে মূল্যায়ন করার মানদণ্ড? ভালবাসা কি কিছুই না? ওই ছেলেটার কি খুব বেশী টাকা? নাকি আমার চেয়ে খুব বেশী স্মার্ট? তুমি তো বলতে তোমার খুব বেশী টাকা লাগবেনা। তাহলে কি দেখে মন দিলে? আমার কি টাকা নেই? আমার চেহারা কি এতই বাজে? নাকি মানুষটাই আমি খুব বেশী খারাপ?
আমিতো তোমাকে ভালবেসেছি। জানিনা তুমিও ভালবাসতে কিনা। হয়ত বাসোনি, তাই বুঝবেও না কি কষ্ট যে হচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন কি নেই, আমার জীবনটাই। মনে হয় এটা বুঝি স্বপ্ন, আর আমি ঘুমিয়ে আছি। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখব তুমি এখনো আমারই আছো। ঈশ! যদি এটা সত্যি হত!
তোমাকে তো আমি অন্য দশটা মেয়ের মত ভাবিনি। অন্ততপক্ষে তোমার একজন বান্ধবীর মত, যে একই সময়ে বেশ কয়েকটা ছেলেকে নাচিয়ে বেড়াচ্ছে। তোমাকে নিজের বলেই জানতাম, তাই কষ্টটাও বেশী হচ্ছে।
জানি প্রশ্ন গুলোর উত্তর পাবো না। তুমি কখনো পড়বেইনা। কিন্তু আমি যে তোমাকে নিয়ে এত্তগুলো স্বপ্ন দেখেছি। সব গুলই যে ভেঙে গেল! ওই ছেলেটাকে বিয়ে না করলেই কি হত না? আমি তোমার অপেক্ষাতেই থাকব, হয়ত কখনো তুমি আসবেনা, কিন্তু জেনে রেখো আমার হৃদয়ের দরজা তোমার জন্য চিরকাল খোলা থাকবে। আমি হৃদয়ের অন্ধকার গহীনে পিদিম জ্বালিয়ে বসে থাকব সারাক্ষণ, কেন জানো? কখনো যদি তুমি আসো, যে পথ ভুলে না যাও।
জানো, আব্বাকে আমি খুব ভয় পাই, আম্মাকেও। তারপরেও আমি তাদেরকে তোমার কথা বলেছিলাম, কিন্তু তুমি তো আমাকে একটু সুযোগ ও দাওনি, একটু সময় ও দাওনি।
কত যে কথা জমা হয়েছে আমার মনে, শুধু তোমাকে বলার জন্য। আর কাউকে না, কিন্তু তোমার তো আর সময়েই হবেনা।
নিশো, রাতে তুমি ঘুমাও কি করে? আমার জন্য অন্তরটা কেপে উঠেনা? মনে হয়না যে, এ আমি কার সাথে শুয়ে আছি, এ তো অচেনা একজন?! কি করে জড়িয়ে ধরো তুমি? খারাপ লাগেনা? আমাকে তো কখনো তোমার হাতটাই ধরতে দিতে না।
তুমি বলো যে, তোমার চেয়ে ভাল কাউকে নাকি আমি পাবো! তুমিই আমার সাথে প্রতারণা করলে, আর কে ভাল হবে?
চলে এসো না আমার কাছে। তোমাকে সারা জীবন আগলে রাখব, তোমার গোলামী করব। বিয়ে হয়ে গেছে তো কি হয়েছে? আমার কাছে শরীরটাই সব নয়, তুমি আর তোমার মনটাই সব। আমাদের বাড়িতেও তুমি খুব ভাল থাকবে, কেউ তোমাকে কিছু বলার সাহস পাবেনা। আমাদের বাড়িতে তো লোকজনই কম। কে আর কি বলবে?
নিশো, জানিনা আগেও তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলেছ কিনা। কিন্তু বিয়ের আগে ১৮ তারিখ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত তুমি বেশ কিছু মিথ্য বলেছ। তুমি বলেছ তোমাকে ছেলে দেখতে আসেনি। অথচ তোমাকে ১৫ তারিখ দেখে গেছে, তুমি বলেছ তুমি তোমার কোন আপুর ফোনে ছেলের ছবি দেখেছ। কি লাভ হল?
২৯ তারিখ আমার সবচেয়ে বেশী চিন্তা হচ্ছিল তোমার জন্য। নিজের যতটুকু খারাপ লাগছিল তার চেয়েও বেশি। প্রথমদিন তুমি কেমন করে শ্বশুর বাড়িতে থাকবে, কে তোমার সাথে কেমন ব্যবহার করবে এটা ভেবেই খারাপ লাগছিল।
রাত বাড়লেই মনে হয় আর বুঝি সকাল হবেনা। তোমাকে কতদিন ধরে দেখিনা! সেই ২১ তারিখ দেখেছিলাম, কি করে থাকি বলো তো! আর যে দিন কাটে না। আজ ভেবেছিলাম তুমি ক্যাম্পাসে আসবে, কিন্তু আসোনি। আমিও যাইনি। কি হবে গিয়ে? তুমিই তো নেই।
নিশো, আমি যে আর পারছিনা। চলে আসো প্লিজ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৪