আমি তখন খুব ছোট। বয়স কত হবে আর---৭/৮ বছর।
আমরা ২ ভাই ঘুমাতাম একটা ঘরে। পড়ার ঘর, আড্ডার ঘর, ঘুমাবার ঘর। খাওয়া-দাওয়া বাদে বাকী সব কিছু ওই ঘরকে ঘিরেই।
আমার ভাই আবার খুব রেগুলার। সকালে উঠেন। পড়তে যান স্যারের কাছে। হাঁতরে বেরুন। কিছুই করার না থাকলে বই নিয়ে বসে থাকেন।
আর আমি!!!!!
৮ টার আগে কোনদিন ঘুম থেকে উঠেছি এমন মনে পড়ে না।
কিন্তু ব্যাপার এইটা না। ব্যাপার হলো। সকালের দিকে গড়াতে গড়াতে খাট (আমাদের খাট ছিল না, চৌকি ছিল) থেকে নীচে পড়ে যেতাম। কিন্তু আমি এতোই ঘুম কাতুরে যে পড়ে নীচেই ঘুমিয়ে পড়তাম। সকাল ৭টার দিকে আমার ঘরের অন্যারা এসে দেখে যেত ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা! আমাকে নাকি নীচে দেখা যেত। তারপর আদর যত্ন করে উপরে তুলে দিত। যথাসময়ে মানে ৮টার পর আমার ঘুম ভাঙ্গলে মুখ হাত ধুয়ে নাস্তা করতে গেলেই কথা শুনতে হতো।
এতো বড় হয়েছে অথচ ঘুমাতে পারে না---নীচে পড়ে যায়!!!
যে যার মতো মজা নিত।
আমিও যথারীতি অস্বিকার। বলতাম আমিতো চৌকিতেই ছিলাম—কই নীচ থেকেতো উঠিনি।
কোনদিন স্বীকার করিনি।
একদিন মা’সহ বাকীরা সিদ্ধান্ত নিল আমাকে নিচে থেকে তুলে দিবে না। হাতে-নাতে ধরবে।
আগের রাতে ঘুমিয়েছি।
সকালে যথারীতি নীচে পড়ে গেছি। নীচে ঘুমাচ্ছি।
আমার মায়েরা অন্য ঘরে অপেক্ষা করে আছে আমাকে ধরবে।
আমার ঘুম ভাঙ্গল। আমি দেখলাম নীচে শুয়ে আছি। আমার বুঝতে বাকী রইল না আমার জন্য ফাঁদ পাতা হয়েছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে খেয়াল করলাম মা বা অন্যরা কোথায় আছে। আসে-পাশে কাউকে দেখলাম না।
টুপ করে চৌকিতে উঠে গেলাম। দিলাম ঘুম। কিছুক্ষন পর মা-খালাসহ সবাই এলো আমাকে ধরবে বলে। এসে দেখে আমি চৌকিতে আছি।
আমি আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠলাম।
দেখলাম সবাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাত-পা নাড়াচাড়া দিতে দিতে বিজয়ীর বেশে বাইরে বেড়িয়ে গেলাম।