বেশ আগে মানুষকে মটিভেশন নিয়ে একটা ট্রেনিং ক্লাসে যোগ দিয়েছিলাম ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। ওখানে একজন শিক্ষক বিষয়টা আমার মথায় এমন ভাবে ঢুকিয়ে দেন যে আজও তার চেহারা সহ কথাগুলো মনে পড়ে। তিনি ধর্মে কাদিয়ানী ছিলেন এবং ঐ সংক্ষিপ্ত সময়ের (এক মাসের প্রোগ্রাম) মাঝে ভদ্রলোক আমাকে টারগেট করেছিলেন যাতে তার মতে দীক্ষীত করতে পারেন। তিনি মানুষকে মটিভেশনের উপর পিএইচডি তাই সবগুলো কলাকৌশল নিশ্চয়ই ভাল করে জানতেন। কিন্তু তিনি আমাকে দিক্ষীত করতে পারেননি। তার পিএইচডি আমার উপর কার্যকর হয়নি। এর কারণ হয়তো তিনি বের করেছেন কিন্তু আমার উপর তার প্রভাব না পড়ার কারণ আমার মতে আমি ছিলাম জাগ্রত, ঘুমন্ত নয়। এজন্যই বলা হয় ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায় কিন্তু জাগ্রত মানুষকে জাগানো যায়না। এই কথাটা বুঝতে পিএইচডি করা লাগেনা, অতি সাধারণ একজন মানুষও বুঝে।
তো যা বলতে গিয়ে ঐ শিক্ষকের কথা বললাম তা হলো মটিভেশন। মানুষকে মটিভেশন করা আসলেই খুব একটা কঠিন কাজ। সত্যিই কঠিন। তার কথা অনুযায়ী সমাজে চার ধরণের মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ বসবাস করে। নতুন কিছুকে গ্রহণ করতে এক শ্রেণীর মানুষ সদা সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে। নতুন কোনো বিষয় (আইডিয়া বা প্রোডাক্ট ) সামনে এলেই তা যেহেতু নতুন তাই এটা সরাসরি তারা গ্রহণ করে ফেলে। কেবলমাত্র 'নতুন' এটাই তাদের বিবেচ্য হয়। আর কোনো দিকে তারা তাকিয়েও দেখেনা, ভালমন্দ যাচাই করেনা, বিচার বিবেচনাও করেনা। এমনকি এর বাহ্যিক সৌন্দর্যও তাদের কাছে ধর্তব্য হয়না। তারা নতুন কিছুকে শুধু 'নতুন' বলেই গ্রহণ করে নেয়।
সমাজের দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হলো তারা যারা প্রায়ই কিছু বিচার বিবেচনা করার ধার ধারেনা বা ক্ষমতাও রাখেনা। তারা অপরের দেখাদেখি নতুন কিছুকে গ্রহণ বা বর্জন করে। নতুন একটা ধারণা সামনে এলে তারা দেখে সমাজের আর কে কে কি সিদ্বান্ত নিয়েছে। যদি দেখে যে উল্লাখযোগ্য সংখক লোক বা তারা যাদেরকে পছন্দ করে তারা ঐ 'নতন'কে গ্রহন করেছে তাবে তারাও একে গ্রহণ করে ফেলে। ঐসব লোকেরা আসলে নিজেদের কোনো রং বা আকার ধরতে পারেনা। সব সময়ই তারা অনুকরণপ্রিয় হয় এবং অনুকরন করে আনন্দ লাভ করে। অমুক ভাবি ঐ শাড়ী কিনেছেন, আমারও চাই। এরা হলো সেই শ্রেণীর।
সমাজের আরেকটি শ্রেণির মানুষ হলো তারা যারা নতুন কিছু সামনে এলেই তা কেবল 'নতুন' বলেই সাথে সাথে বিচার বিবেচনা ছাড়াই গ্রহণ বা বর্জন করেনা। তারা বিষয়টিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে, পরীক্ষা নীরীক্ষা করে, যাচাই বাছাই করে। চিন্তা গবেষনা করে এবং পক্ষে বিপক্ষে, সুবিধা আসুবিধা, বাস্তব কি অবাস্তব, প্রায়োগিক এবং ব্যাবহারিক দিক থেকে ফিজিবল কিনা, আদর্শিক দিক থেকে মানাসই কিনা এসব কিছু ভাবে এবং চিন্তা গবেষনার ফলকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আখেরে ভাল হবে মনে করলে গ্রহণ করে অথাব বর্জন করে।
আবার একই সমাজে চতুর্থ একটি শ্রেণী আছে যারা একেবারে অন্ধ। এরাও প্রায় প্রথমোক্ত শ্রেণীর মতো তবে তারা এর উল্টো মানিসিকতার হয়। তারা নতুনকে কখনোই গ্রহণ করেনা। যতোই ভাল হোক, যতোই সুবিধজনক হোক তারা কোনো 'নতুন'কে গ্রহণ করবে না। ব্যবহার উপযোগী, বাস্তব, সুন্দর, টেকসই, আদর্শ সম্পন্ন্- য ই হোকনা কেনো তারা তাদের সেই পুরোনো ধ্যান ধারণাকে আঁকড়ে ধরে থাকে। তারা সবসময়ই গোঁড়া ঐতিহ্যবাদী হয়। বাপ দাদা থেকে প্রাপ্ত রুসুম রেওয়াজকে তারা এমনভাবে ধারণ ও বরণ করে রাখে যে, আপনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তারা তাদের কথা এবং কাজে অটল থাকে এবং এটাকেই তারা তাদের সফলতা বলে মনে করে।
আমার ধারণা বাংলাদেশে যারা জামায়াতে ইসলামীর সাথে একমত পোষন করেন তারা উপরোক্ত তৃতীয় দলের লোক। তারা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে চিন্তা ভাবনা করে, পরীক্ষা নীরীক্ষা করে, যাচাই বাছাই করে। চিন্তা গবেষনা করে এবং পক্ষে বিপক্ষে, সুবিধা আসুবিধা, বাস্তব কি অবাস্তব, প্রায়োগিক এবং ব্যাবহারিক দিক থেকে ফিজিবল কিনা, আদর্শিক দিক থেকে মানাসই কিনা এসব কিছু ভাবে এবং চিন্তা গবেষনার ফলকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। হাতে গুনা দুই চারজন হয়তো এর বাইরেও থাকতে পারেন কিন্তু আমার মনেহয় ৯৮% লোকই তৃতীয় শ্রেণীর মানসিকতা সম্পন্ন।
উপরের কথাগুলো বলার কারণ হলো বারিষ্টার রাজ্জাক সাহেবের লেখকে আমরা কে কিভাবে নিচ্ছি। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে অনেক আলাপ আলোচনা চলছে। এমন যে হবে সেটা জেনেই তিনি লিখেছেন। এ পর্যন্ত পত্রপত্রিকায় তার কোনো লেখা এখনো আমার চোখে পড়েনি। তিনি লেখেন না। হঠাত কেনো লিখতে গেলেন? আর লিখলেন এমন একটা বিষয়ে যা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের ভাইবোনদের মাঝে বেশ কথা বার্তা চলছিল। এর আগেও জামায়াতের আরেক নেতা জনাব কামারুজ্জামান সাহেবও এমন একটি লেখা দিয়ে আলোচনার সুত্রপাত ঘটান। কিন্তু তার লেখা জামায়াত বা ডানপন্থী কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি, হয়েছে আরেকটি ইসলাম বিরোধী পত্রিকায় এবং তাও কোনো সুত্র ছাড়া। তনি কি সত্যিই ঐ লেখা লিখেছেন, অথাবা কোনো চাপে পড়ে লিখেছেন সে ব্যাপারটা সতায়য়ন করা যায়নি যদিও লেখাটা তার বলেই বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। তিনি জেলে অবস্থান করায় তার লেখটা ততোটা গুরুত্ব পায়নি যতোটা পেয়েছে রাজ্জাক সাহেবের লেখা।
বারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বর্তমানে এমন অব্স্থানে আছেন যিনি বর্তমান জামায়াতের জেলের বাইরে থাকা নেতৃত্বের মাঝে সিনিয়রদের একজন এবং দেশে বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। বলতে গেলে আজকের জামায়াতের কর্মকান্ডকে তিনিই অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি বিশ্বের অনেক গুলো দেশ ভ্রমণ করেছেন, দেশে এবং দেশের বাইরে লেখাপড়া এবং পেশাগত করণেও তিনি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিশেষ করে ইসলামী রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্মন্ধে তার অভিজ্ঞতার ভান্ডার পরিপূর্ণ। দেশ বিদেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের সাথে তার ব্যক্তিগত পরিচিতি ও সম্পর্কও আছে। ইসলামী দুনিয়ার বাইরের দুনিয়া সম্মন্ধেও তার জানার পরিধী বিরাট। তিনিই জামায়াতের একমাত্র সেক্রেটারিয়েট মেম্বার যিনি লন্ডনের মতো আরামের জীবন ও পেশা ছেড়ে দিয়ে কেবল আল্লাহর দ্বীনের জন্য দেশে পরিবার পরিজন সহ ফেরত আসেন এবং দ্বীনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশে আসার পর থেকেই তিনি তার যোগ্যতা, মেধা, সময় ও শ্রমকে দ্বীনের জন্য নিয়োজিত রেখেছেন। এমন ত্যাগ ক'জন মানুষ করতে পারেন?
তার লেখাটা কি তার ব্যাক্তিগত মত না কি আরো কেউ কেউ তার সাথে আছেন? থাকলে কারা? তিনি কি কারো সাথে পরামর্শ করে এই লেখাটা প্রচার করেছেন নাকি কেবল তার নিজের ইচ্ছাতেই? এই লেখার ব্যাপারে দলীয় কোনো ফোরামে আলোচনা হয়েছে কি? না হলে তিনি কোন অথরিটিতে এমন একটি লেখা বাজারে দিলেন? দলের একজন বিশিষ্ট নেতা হিসাবে তিনি কি এটা করতে পারেন? রাজ্জাক সাহেবের লেখা নিয়ে কিছু ভাবতে গেলে উপরের বিষয়গুলো মনে রেখেই ভাবতে হবে নতুবা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হবার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতোমধ্যে তার লেখা নিয়ে ব্লগে বেশ ক'জন ভাই আলোচনা করেছেন। প্রায় সবগুলো লেখাই পড়েছি এবং কিছু কিছু মন্তব্য করতে চেয়েছি। কিন্তু কোথাও বিস্তারিত মন্তব্য করিনি কারণ আমার কথাগুলো বলতে হলে বেশ সময়ের দরকার নাহলে বুঝাতে পারবোনা। তাই, সবার লেখায় পৃথক পৃথক মন্তব্য না করে একসাথে আমার ভাবনা সবার সাথে শেয়ার করার জন্যই এই প্রচেষ্টা।
আরব বসন্তঃ আরবে বসন্ত ঋতু আসে কিনা আমি সঠিক জানিনা। মরুভুমিতে আবার বসন্ত! মরুতে বসন্ত নাই বলেই হয়তো আরবের গণজাগরণকে পশ্চিমারা এই নাম দিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশে যে বসন্ত ঋতু আছে তা অত্যন্ত স্পষ্টভাবেই সবার কাছে ধরা পড়ে। তাই যেখানে বসন্ত অলরেডি আছে সেখানে বসন্ত আনার কথা কি করে বলা যায়? দীর্ঘ দিনের স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আরবের মানুষেরা একটা শুধু ছিদ্র খুঁজছিল। বেলুনের ভেতরে আটকে রাখা বাতাস যেমন একটি ছিদ্র পেলেই বেরিয়ে আসতে চায়, আরবের অবস্থাও ঠিক তেমনি ছিল। তিউনিশয়া সে ছিদ্র দেখিয়ে দেয়, আর যায় কোথা? সব বাতাস একসাথে বেরিয়ে আসে। মনে রাখবেন, বেলুনের ভেতরে থাকা বাতাসে কিন্তু শুধু অক্সেজেন থাকেনা, বরং সবধরণের গ্যেসের সমন্বয়ে গঠিত বাতাস একটি যৌগ পদার্থ । ওখানে নানা নামের এবং ধর্মের গ্যাস থাকে যা মিলেই বাতাস নামক পদার্থ তৈরী । অর্থাত বলা যায়, ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষ ঐ আন্দোলনে শরীক হয়েছে যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শর লোক। শুধু সরকারের সুবিধাভোগী সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ভাগ লোক শরীক হয়নি।
কিন্তু আমাদের দেশে কি এমন অবস্থা? স্বাধীনতার আগের কথা এখানে না এনেই বলা যায়, বাংলাদেশের মানুষ আরবের মতো বেলুনে ছিলনা এবং এখনো নয়, শুধু ৭৪-৭৫ সাল বাদে। ৭৪-৭৫ সময়ে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা আরবের মতো ছিল বলেই ৭৫ সালের ঘঠনা ঘটেছে এবং তাও আরব বসন্তের মতো ছিল । ঐ সময়ও মানুষের সব ধরনের মৌলিক অধীকার হরণ করা হয়েছিল । এজন্য মানুষ তাদের অধীকার ফিরে পেতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। মাত্র ২/৩ বছরের দম বন্ধ অবস্থা এদেশের মানুষ সহ্য করতে পারেনি, বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। অথচ আরবরা যুগের পর যুগ ধরে এমন অব্স্থা সহ্য করেছে এবং বিপ্লব ঘঠাতে প্রায় অর্ধ শতাব্দি অপেক্ষা করতে হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন অবস্থা হলে বিপ্লবের জন্য এতোদিন অপেক্ষা করতে হতোনা কারণ বাংলাদেশের মানুষ অনেক সচেতন এবং অসহিষ্নু। এরা এতোদিন নিরবে নির্যাতন সয়ে যেতোনা।
এখনকার বাংলাদেশের অবস্থা কি একটু চিন্তা করুন। এখানে কি আরবের মতো অবস্থা? এখানে কি ৯০-৯৫%% মানুষ সরকারের বিরোদ্ধে? জবাব অবশ্যই না। বাংলাদেশে এখনো কমপক্ষে ৩০% থেকে ৪০% মানুষ আঃলীগের পক্ষে আছে এবং তাদের সাথে আছে কিছু খুচরা দল ও সুবিধাভোগী গোষ্টি। তাদের কাছে দেশের মানুষকে জিম্মি করার মাতো অর্থ, সম্পদ এবং কৌশল কুক্ষীগত আছে। তারা প্রয়োজনে লগি বৈঠা নিয়ে সারা দেশ দখলে নিতে পারে। ন্যায় অন্যায়ের বিষয়টা এখানে গৌণ, দখলটাই মুখ্য।
এ ছাড়া এখানে কম হোক বেশী হোক, গণতান্ত্রীক একটা পরিবেশ ছিল এবং এখনো আছে। এমন কি সামরিক শাসনের সময়ও ঘরোয়া রাজনীতি নামে হলেও রাজনৈতিক চর্চা হয়েছে। নানা কোঠারী ভুক্ত হলেও পত্র পত্রিকাগুলো গণমানুষের কথা কিছুটা হলেও বলতে পেরছে। যদিও অনেক বাধা বিপত্তি রযেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড চলেছে এমনকি স্বৈরশাষনের সময়ও তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। আর ইসলামী আন্দোলন তো বরং সামরিক শাষনের সময় আরো বেশী করেই ভিত্তি গেঁড়েছে। গত ৪০ বছরের মধ্যে এবারের আওয়ামী শাষন কালেই হয়তো ইসলামী আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে শুধু জামায়াতই বড়ো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কিন্তু তবুও তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, তাদের পত্র পত্রিকা ও অন্যান্য মিডিয়া এখনো বন্ধ করা হয়নি। আরবের বিভিন্ন দেশে ইসলামী আন্দোলনের লোকদেরকে যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে তার তুলনায় বাংলাদেশ এখনো ভাল। না, আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি আওয়ামী শাষনকে ভাল বলছিনা বরং আমি দেখাতে চাচ্ছি যে, আমাদের দেশের অবস্থা আর আরবের অবস্থা এক নয়। ওখানে ইসলাম পন্থীদের সাথে সাথে অন্যান্য যেকোনো মতের লোকদের কোনো কার্যক্রমকেই বরদাস্ত করা হতোনা। সেজন্য দল মত নির্বিশেষে সবাই আনুস্টানিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ না হয়েও বেলুনের বাইরে বেরুনোর জন্য একটি সাধারণ লক্ষ্যে একই চিন্তার একটি মানসিক ঐক্ষ প্রতিষ্টিত হতে পেরেছিল এজন্য ছিদ্র যখন মিললো, তখন ডান বাম মধ্য উদার কট্টর নির্বিশেষে সবাই একসাথে ঐ ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো যার করণেই হঠাত বার্স্ট মেরেছে আর তাকেই বলা হচ্ছে বসন্ত। যদি শুধু ইসলাম পন্থীদেরকে নির্যাতন করা হতো তবে এমন হতোনা কারণ অন্যরা তখন সরকারের পক্ষে থেকে ইসলাম পন্থীদেরকে বরং যমের ঘরে পাঠিয়ে দিতো।
বাংলাদেশের অবস্থা কিন্তু সম্পুর্ণ ভিন্ন। এখানে কেবল মাত্র এবং আরো পরিস্কার করে বলতে গেলে একমাত্র জামায়াত ছাড়া জামায়াতের পক্ষ হয়ে একটা লোমও নাড়ানোর কেউ নেই। জামায়াতের প্রকৃত মিত্র বলতে কেউ আছে? না, নাই এবং আসলেই নাই। বরং এখন জামায়াতের উপর যে গরম পানির সয়লাব হচ্ছে তাতে কি আর কেউ একটু আহ উহ করছে? আহ উহ করছেতো না ই, বরং অধিকাংশ মতের লোকেরা বরং প্রচন্ড খুশীতে প্রকাশ্যে বগল বাজাচ্ছে আর সরকারকে আরো কঠোর হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে। কিছু লোক তাদের খুশী প্রকাশ্যে দেখাচ্ছে না কিন্তু মনে মনে মহা খুশী যার প্রমাণ গোলাম আজমরা গ্রেফতার হলেও জামায়াত ছাড়া কেউ টু শব্দটিও করেন নি। ওরা কিন্তু জামায়াতের সাহায্য ছাড়া একটি প্রোগ্রামও করতে পারেনা কিন্তু তলে তলে জামায়াতকে নিঃশেষ করে দিতেই তৎপর। অতি সামান্য সংখ্যক লোক আছেন যারা হয়তো তাদের খুশী একেবারে মনের গহীনে রেখে মুখে কিছুটা বলেন কিন্তু তাও অতি মিন মিন করে। কিন্তু বাস্তবে জামায়াত ছাড়া আর সব দল ও মতের মানুষ জামায়াতের ধংশ কামনা করে এবং সেজন্য সব ধরণের চেষ্টা তদবিরও করে। হয়তো কেউ প্রকাশ্যে করে, কেউ কৌশলে করে। কেউ জামায়াতকে ব্যাবহার করার জন্য সাময়িক মায়াকান্না করেন কিন্তু তাদের কাজ দেখলে সুস্থ মস্তিষ্কের যে কেউই বুঝতে পারে যে এটা মায়ের দরদ নয়, সৎমায়ের কৌটিল্য। সুতরাং এখানে আরব বসন্তের মতো বাংলা বসন্তের খোয়াব দেখা কতোটুকু সঙ্গত তা ভালকরে বিবেচনা করা উচিত।
নাম পরিবর্তনঃ কেউ কেউ জামায়াতের নাম পরিবর্তনের কথাও বলেছেন। জামায়াত তো এই ক'দিন আগেও নিজেদের নাম পরিবর্তন করলো? কিন্তু ফল হলো কি? জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্থলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী করা হলো নির্বাচন কমিশনের চাপে। এর আগে তারা বার বার প্রশ্ন তুলতো জামায়াতের নামের শেষে বাংলাদেশ কেনো? এটা কি তাহলে আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠন? লিভার ব্রাদার্স বাংলাদেশ, বা কমিউনিষ্ট পার্টি অব বাংলাদেশ এর উদাহরণ দিয়ে তারা তখন জামায়াতকে কোনঠাসা করতে চাইতো। কিন্তু পরিবর্তনের পর দেশের পত্রিকাগুলো কিভাবে ঐ পরিবর্তনের সমালোচনা করেছিল পাঠন্কদের নিশ্চয়ই মনে আছে। সাথে সাথে গঠনতন্ত্রেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হয় আরপিও এর সাথে সামন্জস্য বিধান করতে। মুলত ঐ আরপিও ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতাকে আনুষ্টানিক ভাবে স্বীকার করিয়ে নেয়ার কৌশল। আর এই পরিবর্তনের কারণে দেশের প্রায় সবগুলো মিডিয়া জামায়াতে আর ইসলামের কথা নেই, আল্লাহর আইনের কথা নেই, আকিমুদ্বীন নেই ইত্যাদি বলা শুরু করলো। তারা এটাই বুঝাতে চাইলো যে জামায়াত শুধু নিরবাচন আর ক্ষমতার জন্যই সবকিছু বাদ দিয়ে দিয়েছে। ওরা আর ইসলামী দল না। অথচ ঐ সময়ে একই নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য সবগুলো ইসলামী দলই একই কাজ করেছে। ইসলামী শাষনতন্ত্র আন্দোলন থেকে 'শাষনতন্ত্র' শব্দটা বাদ দিতে হয়েছে। ৩৩ শতাংশ নারীদের দিয়ে দলের কমিটি করবে বলে ঘোষনা করতে হয়েছে। শরিয়ত কায়েম করা হবে এমন কথাগুলো বাদ দিতে হয়েছে। কিন্তু এইসব মিডিয়া কিন্তু ঐসব দলগুলোর সমালোচনা করেনি, শুধু জামায়াতেরই সমালোচনা করেছে। ভাগ্যিস, ঐ সময়ে সব ইসলামী দলগুলো নিজেরাও একই পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং করেছে বলেই তারা জামায়াতের বিরোদ্ধে কোনো ফতোয়া দেয়নি বা দিতে পারেনি। যদি তারা এসব না করতো তবে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে তখন তারা জামায়াতকে প্রকাশ্যে কাফির ফতোয়া দিয়ে বলতো এরা কোথাও ইসলামের নাম নিশানা রাখেনি। এখন যদি জামায়াত আবার নাম বদলে অন্য নাম নেয় তবে আরো বেশী করে সমালোচনা হবে। বলা হবে জামায়াত নাম নিয়ে মানুষকে আর বোকা বানানো যাবেনা বলে এখন ভিন্ন নামে 'নতুন বোতলে পুরনো মদ' নিয়ে সেই জামায়াতই জনগনকে ধোঁকা দিতে চায়। আর আমাদের ইসলামী দল ও বুজুর্গরা সেই সমালোচনার পালে আরো জোরে বাতাস দেবেন। কথায় বলে 'এমনিতেই নাচুনে বুড়ি আরো পেয়েছে মৃদঙের তালি'। আমাদের ফতোয়াবাজদের তখন আর পায় কে?
'৭১ প্রসংগ ও ক্ষমাঃ এই বিষয়টি নিয়ে জনাব রাজ্জাক শুধু একটি কথায় সামান্য ইঙ্গিত দিয়েছেন। অতীতের ভুলের ক্ষমা চাইতে দোষের কিছু নাই। কথাটা শুনতে ভাল লাগে এবং এটা একটা পলাইটনেসও বটে। কিন্তু একটা কথা তো সবার মানা আবশ্যক যে, কোনো অপরাধ না করা সত্বেও আমি কিজন্য ক্ষমা চাইবো? যে অপরধ আমি করিনি সেজন্য ক্ষমা চাওয়া মানেই তো আমি অপারাধ করেছি একথা স্বীকার করে নেয়া। ৪০ বছর ধরে যে অপবাদ দেয়া হচ্ছে, তার জন্য ক্ষমা চাওয়া মানেই হলো আমি আপরাধ করেছি এবং যারা অভিযোগ করেছে তারা ঠিক বলেই মেনে নেয়া।
কেউ কেউ বলছেন, অপরাধ সরাসরি করেন নি কিন্তু পাকিস্তানীদের পক্ষ নিয়ে যা করেছেন তা বাংলাদেশের মানুষের বিরোদ্ধে ছিল বলেই ক্ষমা চাওয়া ভাল এবং এতে অতীতের গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানকে আপনি যদি সামনে রাখেন তবে বিষয়টি বিশ্লেষন করতে সুবিধা হবে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরেই তারা এই একটি কথা জামায়াত থেকে বের করার জন্য চেষ্টা করেই যাচ্ছে। সাংবাদিক নামক দুরাচারী ব্যাক্তিরা জামায়াত নেতাদের মুখের ভেতরে পারলে স্পিকার ঢুকিয়ে দেয়। আপনাদের স্মরণ আছে কি না যে, বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি কথাটা নিজামী সাহেবের মুখ দিয়ে বের করেই তারা দেশময় কি তথ্য সন্ত্রাস চালিয়েছিল? আবার দেশে কোনো রাজাকার নেই, কথাটা কি করে মুজাহিদ সাহেবের মুখ দিয়ে বের করা হয়েছেল তাও নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। এই কথাটাকে কি করে তারা মিডিয়া এবং রাজনৈতিক ভাবে ব্যাবহার করেছে তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? তারা এখনো চায় যে জামায়াত এই ফাঁদে পড়ুক এবং জীবনের তরে শেষ হয়ে যাক। তারা এখানে ঠিক স্পেনের রাজা ফাড়ডিনেন্ডের এপ্রিল ফুলের কৌশল অবলম্বন করছে। যেদিন জামায়াত ৭১ এর জন্য ক্ষমা চাইবে, ঠিক তাতক্ষনিক ভাবে তারা বলবে জামায়াত এতোদিনে স্বীকার করলো তারা ৭১ এ নারী ধর্ষন করেছে, লোটপাট অগ্নি সংযোগ ইত্যাদি করেছে। ওরা আত্নস্বীকৃত খুনী, আত্নস্বীকৃত যুদ্ধাপরাদী, আত্নস্বীকৃত স্বাধীনতা বিরোধী। তাদের রাজনীতি করার এমনকি এদেশের নাগরিক অধীকার পাবারও কোনো অধীকার নেই। তখন আর বিচারের মহড়া দেয়াও লাগবে না, স্বীকারুক্তিকে আদালতে নিয়ে আইন করে তাদের ইচ্ছা পুরণ করবে। যেভাবে আগষ্ট বিপ্লবের নায়কদেরকে তারা আত্নস্বীকৃত খুনী বলতো এবং ঐ স্বীকারুক্তির কারণে কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তি তদের বিচারের বিরোদ্ধে অবস্থান নিতে পারেনি ঠিক তেমনি জামায়াত যখনই একথা স্বীকার করবে তখনই জামায়াতের রাজনীতি করার অধীকার সহ সকল মৌলিক অধীকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করার মওকা তারা পেয়ে যাবে এবং যেহেতু নিজেরাই স্বীকার করেছেন সেজন্য অন্য কোনো দলও তার বিপক্ষে কথা বলতে পারবে না। নৈতিক ভাবেও জামায়াত মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না এবং নতুন প্রজন্মের কাছেও কোনো জবাব দেবার থাকবে না।
মিশর ও তুরস্কের উদাহরণ এবং নতুন উইং বা দল লেখার কলেবর বিরাট হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি কিন্তু সংক্ষিপ্ত করতে পারছিনা বলে পাঠকের কাছে ক্ষমা চাই। যারা ধৈর্য ধরতে পারবেন তারাই হয়তো লেখাটা পড়বেন। আর অধৈর্য হলে আমি আবারও ক্ষমা চাই।
একটি দ্বীনি আন্দোলনকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে হুট করেই তা নেয়া ঠিক না, উচিতও না। চিন্তা ভাবনা করেই তা নিতে হয়। আমাদেরকে দেখতে হবে তুরস্ক, মিশর আর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং সর্বোপরি দ্বীনি ময়দানের মিল অমিল কি? দীর্ঘ দিনের সেক্যুলারাইজেশনের ফলে তুরস্কে ইসলামের অবস্থাটা একটু দেখুন। ওখানে ইসলামী কোনো ইনস্টিটিউটের নাম নিশানা ছিলনা। শিক্ষা ব্যাবস্থায়ও মানুষকে ইসলাম শিখানোর কোনো ব্যাবস্থা ছিলনা। এমনকি ব্যাক্তিগত ভাবেও ইসলাম চর্চা করার মতো পরিবেশ ছিলনা। এর মধ্যে ইসলাম পন্থিরা নিজেরা মানুষের মাঝে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করেছেন। ওখানে আমাদের মতো বহুমুখী শিক্ষা ব্যাবস্থাও ছিলনা যাতে করে একদল কৌমী, একদল খারেজী, একদল আলিয়া ইত্যাদি ফেরকা বিদ্যমান। ইসলাম পন্থীরা প্রায় এককভাবে ধীরে ধীরে মানুষকে শিক্ষীত করেছেন। কদু খাওয়ার মাসআলা নিয়ে শত শত গ্রুপে তারা বিভক্ত ছিলনা এবং এখনো নয়। আমি বলতে চাচ্ছি অন্তত বাংলাদেশের মতো বিভক্তি নেই ওখানে। মিশরেও প্রায় তেমনি অবস্থা। ইসলাম পন্থীদের মাঝে কেবল বড়ো দু'টি দলই কার্যত আছে। ইখোয়ানের প্রতিদ্বন্দি হিসেবে সালাফিরা থাকলেও আমাদের দেশের মতো বেয়াড়া নয় তারা। কথায় কথায় কাফির ফতোয়া দেয়ার ঘঠনা ওখানে তেমন নেই। আর সামাজিক কাজের বেলায় তুরস্ক আর মিশরের তুলনায় বাংলাদেশে জামায়াত এখনো অনেক অনেক পিছনে। দুই দেশেই ইসলাম পন্থীরা সামাজিক কাজের মাধ্যমে জনগনের কাছে পৌঁছে গেছেন যা তাদেরকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে সাহায্য করেছে।
বাংলাদেশের ইসলাম পন্থীদের মাঝে কতো দল তার সঠিক হিসাব আমার মনে হয় কেউ জানেনা। জামায়াত বাদে আরো কতোযে দল আর গ্রুপ আছে তার ঠিক ঠিকানা নাই। ওরা নিজেরা পরস্পর বিরোধীতা করলেও জামায়াত বিরোধীতার ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ। পীর পন্থী, মাজার পন্থী, লাউয়া পন্থী বলেন আর হাক্কানি আলেমই বলেন, সবাই নাস্তিকদের চেয়েও জামায়াত বিরোধীতায় কম নয় বরং একটু বেশীই বলা যায়। যদিও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে কেবল জামায়াতই এগিয়ে এবং সমাজের ভাল একটি অংশ জামায়াতকে সমর্থন করে কিন্তু সার্বিক বিচারে জামায়াত বড়োজোর ১০% মানুষের সমর্থন রাখে। বাকী ৯০% মানুষ জামায়াতকে সরাসরি সমর্থন করেনা। ইলেকশনের ব্যাপার এখানে ধর্তব্য নয়। এমন একটি বাস্তব অবস্থায় শুধু মিশর আর তুরস্কের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা কি করে বুদ্ধিমানের কাজ হবে?
আর জামায়াতের সাফল্য ব্যার্থাতা নির্ণয়ের মাপকাটির ব্যাপরেও কথা আছে। জামায়াত কি যেন তেন করে ক্ষমতায় যাবার জন্য কাজ করে? যারা জামায়াতের জন্য কাজ করেন তারা কি শুধু জামায়াতকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য কাজ করেন? যদি তারা তা করেন তবে আমি বলবো, তাদের জন্য জামায়াত না, তারা অন্য কোনো দলের তালাশ করুন। অথচ যারা জামায়াতে যোগ দেন তারা বুঝে শুনে একথা মেনে নিয়েই যোগ দেন যে, আল্লাহ চাইলে হয়তো ক্ষমতা দিতেও পারেন, না ও পারেন। কিন্তু একজন কর্মী হিসেবে আখেরাতে মুক্তির জন্যই তারা জামায়াতে যোগ দেন এবং শ্রম, মেধা ও সম্পদ খরচ করেন। তাদের একটিই উদ্দেশ্য তাকে আর তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। জামায়াত যদি কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় না যায় তাহলে কি জামায়াত ব্যার্থ? অবশ্যই না। তাহলে ক্ষমতায় যাবার জন্য এতো তাড়াহুড়া কেনো? মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরণের জন্য এখন থেকে জামায়াত নতুন উদ্যমে সামাজিক কাজে মন দিতে পারে এবং তা ই এখন সময়ের দাবী। জনগনকে আস্তায় না এনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখা ঘোড়ার আগে গাড়ী জুড়ে দেয়ার শামিল।
এই আলোচনায় আমি এটাও বলতে চেয়েছি যে, মিশরের মতো জামায়াত রাজনৈতি ময়দান থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে আরেকটা ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি ( বা অন্য যে কোনো নামেই হোক) করেও কোনো লাভ হবে না বলেই মনে হয়। এই সেদিন লন্ডনের কিছু লোক সেভ বিডি নামে একটা ওয়েভ সাইটে জামায়াতের নির্যাতিত নেত্ববৃণ্দের পক্ষে প্রচারণা চালান। ওরা চাইছিলেন নিজেদেরকে আড়াল করে কাজ করতে। কিন্তু বিরোধীরা ঐ ওয়েব সাইটের ডমেইন কার নামে কিনা হয়েছে তা খুঁজে বের করে প্রচার করলো যে ওরা সবাই জামায়াতের লোক। সুতরাং আমাদের দেশে এমনকি যে কোনো দেশেই মানুষকে বোকা বানানোর কথা চিন্তা করা ঠিকনা এবং এটা প্রমানিত যে, মানুষকে হয়তো কিছু সময়ের জন্য বোকা বানানো যায় কিন্তু সব সময়ের জন্য না। আর ইসলাম কি মানুষকে বোকা বানানো সমর্থন করে? মানুষকে বোকা বানিয়ে ইসলাম প্রতিষ্টা করবেন?? এও কি ইসলাম পন্থীরা ভাবতে পারেন? ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি যে ইখওয়ানেরই সংগঠন, ইখওয়ানের লোকেরাই ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টি তা কি কেউ জানেনা? অবশ্যই জানে। মিশরের সবাই তো জানেই এমনকি আমাদের দেশের মনুষও জানে, জানে আমেরিকা এবং ঈসরাইলও। সবাই জানে এবং জেনে শুনেই তারা ইখোয়ানকে ভোট দিয়েছে। ঠিক আমাদের দেশেও মানুষ যখন জামায়াতকে ভালবাসবে তখন যে নামেই জামায়াত মানুষের কাছে যাক, তারা কাছে টানবে। তার আগে অবশ্যই মানুষের কাছে জামায়াতকে যেতে হবে।
রশিদ ঘান্নুষির লিবারেলিজমঃ তিউনিশিয়ার ধর্মীয় অবস্থা আমার সঠিক জানা নেই তাই এনিয়ে বাক বিতন্ডায় যেতে চাইনা। তবে যেটুকু জানি, তিউনিশিয়া হলো ইউরোপের মানুষের জন্য একটি পর্যটন দেশ। তারা পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে বিরাট আয় করে। এটাকে বিপর্যস্ত করে তিউনিশিয়া অর্থনৈতিক ভাবে টিকতে পারবেনা বলেই ঘান্নুষি ইসলামি আইন বাস্তবায়নে হবে না বলে ঘোষনা দিয়েছেন। আমাদের দেশে জামায়াত বা তার এফিলিয়েটেড দল এমন ঘোষনা দিয়ে দেখুক? সাথে সাথে সবগুলো মাদ্রাসা, হুজরা এবং খানকা থেকে কাফির ফতোয়া লাখে লাখে বের হবে। হুজুররা তো ফতোয়া দেবেনই, এমনকি কমিউনিষ্টরাও ফতোয়া দিয়ে ভাষিয়ে দেবে। জীবনে আর কখনো জামায়াত ইসলামের নাম নিতে পারবে না এমন অবস্থা হবে।
তাহলে রাজ্জাক সাহেব কেনো এসব লিখলেন? আগেই বলেছি, জনাব রাজ্জাক সাহেব অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং চৌকষ লোক। জামায়াতের জন্য তার ত্যাগ কোনো অবস্থায়ই কারো সাথে তুলনা করার নয়। এই তিনিই এমন এক সময় এই লেখাটা লিখলেন যখন জামায়াতের সব নেতারা জেলে আর তিনি নিজেই বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে তাদের মুক্তির জন্য দৌড়াচ্ছেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। তার মনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে একথা বিশ্বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তার এই লেখাকে কেন্দ্র করে দলে বিভক্তি হতে পারে একথা কি তিনি চিন্তা করেন নি? নাকি চিন্তা করেও বিশেষ কোনো কারনে এমন লিখেছেন? আমরা হয়তো জানিনা , কিন্তু তিনিই জানেন ভাল। তিনি হয়তো এমন কোনো ইনফরমেশন জানেন যাতে করে দলকে আগেই পরবর্তী পরিস্তিতির জন্য তৈরী করার জন্যই কাজ করছেন। তার কাছে হয়তো এমন ইনফরমেশন আছে যাতে এই সময়ে, যখন দলের কোনো বৈঠকও করা যাচ্ছেনা , কেউ অফিসে যেতেও পারছেন না, এমনকি মার্কিন রাষ্ট্র দূত জামায়াতের আফিসে যাবার এপোয়েন্টমেন্ট করেও তা বাতিল করতে হয়েছে, তখন কৌশলে আমাদেরকে একটি বার্তা দিলেন। বর্তমানে দেশের সামরিক, বেসামরিক, পাবলিক ও প্রাইভেট ইনস্টিটিউট গুলো যে হারে এবং অবিশ্বাস্য দ্রুততার সাথে সেকুলারাইজড হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতের কথা আমাদের চেয়ে কেণ্দ্রে কাজ করা লোকেরা বেশী জানবেন বলেই মনে হয়। এমনও হতে পারে যে, আগামীতে যা ঘটতে যাচ্ছে সেজন্য আমাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে বললেন।
আল্লাহু আ'লাম।
http://sonarbangladesh.com/blog/aynasha/92600