এই লেখাটা লিখতে গিয়ে হঠাৎ নিজের ব্লগ পরিসংখ্যানটি চোখে পড়লো। বাপ রে ! লাখ খানেকবার পঠিত। আনন্দ হবার কথা। আমার সব লেখাই যে আবেগের উবর্ধে উঠে লিখতে পেরেছি এমনটি নয়। যতটা যত্ন নেবার দরকার ছিল, সেটিও করতে পেরেছি, এ দাবি করাটাও অন্যায় হবে। এর পরেও লাখ খানেক পাঠক, এক বা একাধিকবার এই অধমের সামান্য লেখা পড়ে আমাকে বাধিত করাতে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তবে আবেগি হোক কিংবা যৌক্তিক, লেখার সুযোগটা আমি ও অন্যান্য হাজারও লেখককে দেবার কৃতিত্বটা সামুর একান্ত্ নিজের। যাকে পাওনিয়ার বলে। সেই দেখানো পথেই আজ আরো নতুন নতুন বাংলা ব্লগের উপস্থিতি ঘটছে। ফলে দেশ ও প্রবাসের হাজার হাজার বাংলাদেশি নিজের কথাগুলিকে বলবার সুযোগ পাচ্ছেন।
যে কোন একটি বিশেষ ঘটনাকে চিরস্মরনীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর একটি বিশেষ দিনকে চিহ্নিত করাটা অনেকদিনের চল। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলা ব্লগ দিবস বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য একটি মাইলফলক। গত তিন বছর ধরে সামু বাংলা ব্লগ দিবস আয়োজন করে যে ধারা সৃস্টি করেছে, আশা করি বাকি বাংলা ব্লগগুলিও সেই ধারা সচল রাখবে। সেটি যুগপৎ হলে আরো বেশি আকর্ষনীয় হতো। তবে যেহেতু আমরা জাতিতে বাঙালি সেহেতু, সেটি হবার সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ।
শ্রেষ্ঠ ১০ ব্লগার চিহ্নিত করে সম্মাননা প্রদানের কাজটির উদ্দেশ্যে খুবই মহৎ। এভাবেই হয়তো ব্লগারদের আরো ভালো কিছু লেখার জন্য উৎসাহ যোগান দেবে।
অবশ্য অনেকে এই সম্মাননা প্রথার বিরুদ্ধে। তাদের যুক্তি যে স্বতঃস্ফুর্ত চিন্তা করে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের রাস্তায় এই সম্মাননা পাবার লোভটি অন্তরায় হয়ে দাড়াতে পারে।
এ বছর যারা শ্রেষ্ঠ সম্মাননয়া ভুষিত হয়েছেন, তাদের নিয়ে কিছু, শুধুমাত্র ইতিবাচক কিছু কথা বলবো। যেটা একান্ত আমার পর্যবেক্ষণপ্রসুত।
১, ইমন জুবায়ের ---- প্রাচীন ভারতের ইতিহাস নিয়ে আমার ফ্যান্টাসি আছে। সময় পেলে খুজে খুজে এ সংক্রান্ত ছবি, চলচিত্র কিংবা সচিত্র প্রতিবেদন উপভোগ করি। কল্পনাবিলাসি হয়ে সে সময়ের মধ্যে নিজেকে অবগাহন করে বাস্তবতা থেকে কিছুক্ষণের ছুটি নেই। এ সংক্রান্ত ইমন ভাইয়ের লেখাগুলি আমার সেই তৃষ্ণাকে অনেক খানিই মিটিয়ে থাকে। তিনি কস্ট করে যোগাড় করেন। আমরা বিনা কস্টে সেই প্রতিশ্রমের ফল খাই। প্রতিদানে তাকে শ্রেষ্ঠত্যের আসনে তো বসানোই যায়।
২, মাহমুদুল হাসান কায়রো --- ইনার সব লেখা পড়া হয়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের ডামাডোলে বিপর্যস্ত প্রবাসি বাংলাদেশিদের খবরাখবর নিয়ে তার রিপোর্টগুলি সময়োপযোগি হয়েছে। নিজের কস্ট উপেক্ষা করে লিবিয়ার সীমান্তে পড়ে থাকা অসহায় বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি তার মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত লেখাও পাঠিয়েছেন। তার সেই মহৎ উদ্দেশ্য এবং কস্টের বিপরীতে তাকে এই সম্মাননা প্রদানের কাজটি ভালো হয়েছে।
৩, জাহাজি পোলা --- শরৎচন্দ্রের সমুদ্রে সাইক্লোন পড়েননি এমন মানুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়। যারা পড়েননি, তাদের জন্য জাহাজি পোলার পেশাগত অভিজ্ঞতালব্ধ লেখাগুলি এ যুগের সমুদ্র সাইক্লোনের বা বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পারবে নির্দ্বিধায়। যারা পড়েছেন, তাদের জন্য ভিন্ন আঙ্গিকে সমুদ্রে সাইক্লোনের চিত্রটি দেখা দেবে। ( এই চান্সে নিজের ঢোল বাজাচ্ছি। ভরা বর্ষায় একবার পদ্মা মেঘনার মিলনস্থলে লঞ্চে ঝড়ের মুখে পড়েছিলাম। এর পর কোটি টাকা দিলেও আমি ওই আবহাওয়ায় সে মুখো হবো না। আর জাহাজি পোলার সেই পোষ্ট পড়ে আমাকে সৈকতে নেয়া যাবে, কিন্তু সমুদ্রে? সে গুড়ে বালি !)
৪, শায়মা-- এ যে সেই অপ্সরা সেটা জানতে আমার অনেকদিন লেগে গিয়েছিল। অপ্সরার লেখা পড়তাম। খাদক হিসাবে আমার যে দুর্নাম সে কারণেই চিত্র দর্শন ও পঠনের লোভে ওর পোষ্টে যেতাম। সাধ্যের বাইরে বলে, ঘোলেই তৃপ্তি মেটানো আর কি ! তবে এই যান্ত্রিক জীবনে, হাজার ব্যাস্ততা আর জীবন সংক্রান্ত কমপ্লিকেশনের মাঝেও মেয়েটা যে তার মনের সরলতা আর চাঞ্চল্যকে ধরে রাখতে পেরেছে, তাতে ওকে অবশ্যই সম্মাননা দেয়াই যায়। ( রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে আমার একটা লেখা হয়তো ওকে আঘাত করে থাকতে পারে। সে কারণে ওকে আমার কোন পোষ্টে আর দেখি না।) তবুও আমার শুভকামনা থাকলো ওর প্রতি।
৫, ফিউশন ফাইভ --- পঞ্চ পান্ডবের দ্রৌপদির মত এই নিকটিও শুনেছি ৫ জন ব্যাবহার করে। তবে এই ৫ জনের মধ্যে একজনের লেখার হাত এবং বিষয়বস্তু নির্বাচন আমার কাছে ভালো লেগেছিল।
Click This Link
৬, ডিস্কো বান্দর--- কাঠখোট্টা মানুষ বলে তার রম্য লেখাগুলির সবটাই পড়া হয়নি। যতটুকু পড়েছি, হাসতেই হয়েছে। মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কাজটাই সবচেয়ে কঠিন । সেই মহা কঠিন কাজটা যিনি করতে পেরেছেন, তিনি অবশ্যই সম্মাননার যোগ্য।
বাকিদের মধ্যে
রেজোয়ানার লেখা পড়া হয়নি।
আরিয়ানার প্রবাস সংক্রান্ত কয়েকটা লেখা পড়েছি। বেশ গোছালো।
আলিম আল রাজি -- ভিকারুন্নেসা ইস্যুতে শক্ত জনমত গঠনে তার লেখার প্রশংসা করতেই হয়।
আসিফ মহিউদ্দিন -- দুঃখিত ইনার ব্যাপারে একটিও ইতিবাচক কথা বলার মত কিছুই খুজে পাচ্ছি না।
সম্মাননা পাবার যোগ্যদের মধ্যে অবশ্য আরো বেশ কিছু ব্লগার ছিলেন। বিভিন্ন শাখায় আলাদা করে সামনের বছর এই সম্মাননা প্রদান করলে মন্দ হতো না।
৩য় ব্লগ দিবসে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রের দুজন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক অংশ নিয়েছিলেন।তাদের মধ্যে ডঃ আনিসুজ্জামান একাধিকবার সামুর অতিথি হয়ে এসেছেন। তিনি ব্লগিং করেন না বা ব্লগিং জানেন না কথাটা শুনে মর্মাহত হতে হলো। যে বিষয়ে তিনি জানেন না, সে বিষয়ে কথা বলতে তাকে আনাটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি।আর একজন অত্যন্ত মেধাবি মানুষ হিসাবে ব্লগিং সমন্ধে তার জানাটা কি খুব সময় সাপেক্ষ ছিল? এ বিষয়ে আমন্ত্রকদের একটা দ্বায়িত্ব ছিল বলে আমি মনে করি।
উপস্থাপক হিসাবে কৌশিক ভাইয়ের পাশাপাশি একজন নারী থাকলে ভালোই হতো। আর স্ক্রীপ্ট বিহীন উপস্থাপনায় কথায় জড়তা আসবেই।
যেহেতু সামু এবার যৌথভাবে ব্লগ দিবস পালন করলো, সেহেতু আসন সংকুলানের দিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। আসন না পেয়ে ব্লগাররা দাঁড়িয়ে থাকবেন, অথবা বাইরে বসে নিজেদের ভেতর আড্ডা দেবেন, ব্যাপারটা ব্লগারদের অথবা আয়োজনদের, কারো জন্যই কাম্য বা সম্মানের নয়।
পুনশ্চঃ ইয়ে মানে খাওয়া দাওয়ার আয়োজনটা আরেকটু ভালো করলে হতো না?