কয়েকজন সচেতন ব্লগারের ধারাবাহিক লেখার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে, টিপাইমুখি বাঁধের বিরুদ্ধে লেখাটি পুনঃ প্রকাশিত হল। চলুন দল মত নির্বিশেষে আমরা সবাই এই বাধ নির্মানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। কারণ এটা আমাদের বাঁচা মরার লড়াই। দেশের প্রাণ এই সব নদী বাঁচলে আমরাও বেঁচে থাকবো। সার্থক হবে আমাদের পুর্বপুরুষদের স্বাধীনতার জন্য আত্মদান।
প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধের স্থান
বরাক নদীর একটি দৃশ্য
এমন একটি দৃশ্যের কথা কল্পনা করুন তো, যেখানে খালেদা জিয়াকে ঘাড় ধরে তার সেনানিবাসের বাসা থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। অথবা হাসিনাকে কিছু সন্ত্রাসি জোর করে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করেছে। কি হতে পারে ফলাফল? জানি, সবার উত্তর প্রায় একই রকম হবে। এর বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীরা তৎক্ষনাৎ জঙ্গি আন্দোলনে নেমে পড়বে। চারিদিক মার মার কাট কাট রবে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে পড়বে। আগুণে পোড়ানো হবে যানবাহন, সরকারি অফিস আদালত। আক্রান্ত হবে সাধারণ মানুষ। জীবিত অবস্থায় অনেকেরই আর বাড়ি ফেরা হবে না। মোদ্দা কথা, এক ভয়াবহ অরাজকতা আর বিশৃংখলার সৃস্টি হবে।
কিন্ত কেন? কেননা শত নিন্দা আর অপবাদ সত্ত্বেও এই দুজনই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জীবিত দুই কিংবদন্তি। যাদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক ধারাকে কোন মতেই প্রবাহিত করা সম্ভব না। যত দোষেই দুস্ট হন না কেন, ঘুরে ফিরে দেশের মানুষ এ দুজনকেই তাদের নেত্রি হিসেবে স্বীকার করে, শ্রদ্ধা করে, ভালবাসে।
আবার যদি বাংলাদেশের বৃহত্তর স্বার্থের সাথে আর খালেদা বা হাসিনাকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়া যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোনদিকে ঝুকবে? যারা মনে করছেন, বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতি সমর্থনের পাল্লাটাই বেশি ভারি হবে, তাদের উপলব্ধি দেশপ্রেম প্রসুত হলেও, বাস্তবের সাথে সাংঘর্ষিক বটে। এই উপসংহারে পৌছানোর পেছনে যে যুক্তি কাজ করেছে, সে সমন্ধে একটু পরে আসছি।
ফারাক্কা বাঁধ সমন্ধে কম বেশি আমরা সবাই অবগত আছি। কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষার জন্য মাত্র ৪০ দিনের অনুমতি নিয়ে এই বাধ চালু করা হয়েছিল, সে খবরটাও পুরানো। এই বাঁধ, বাংলাদেশ তো ভালো, ওপারে আমাদের স্বজাতিয়দের জন্যও গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে, সেকথা বলাই বাহুল্য। তবে ফারাক্কার মরণছোবল থেকে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে রক্ষার তেমন কোন উদ্যোগই নেয়া হয় না। শুধু সময় সুযোগ বুঝে সস্তা ভারত বিরোধিতা করার জন্য নির্বাচনের আগে এই ইস্যুটি মাঠ গরমের হাতিয়ার বানানো হয়। তবে এই ইস্যুটি জাতিসংঘে তোলার 'অপরাধে' তৎকালিন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রি, তৎকালিন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু পরোয়ানায় সই পর্যন্ত করেছিলেন।
সম্ভবত প্রাণের ভয়ে এরশাদ-খালেদা-হাসিনা কেউই আর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বাইরে যাবার দুঃসাহস দেখাননি। আর এই তথাকথিক দ্বিপাক্ষিক আলোচনার নামে ভারত শুধু প্রহসন আর কালক্ষেপন করে চলেছে। আর ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরলে, আঃ লিগের আমলে একটা দয়াপরবশত পানি চুক্তি করেছে, সেখানে আবার কোন পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ছিল না। এ নিয়ে মহা গর্বে হাসিনা, কবি গুরুর কবিতার দুটি লাইন " আমাদের ছোট নদী চলে বাকে বাকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে" বলে দেশবাসিকে সান্তনা দিয়েছিলেন। ফারাক্কা নিয়ে আর সাতকাহন নয়। শুধু এতটুকু বলে রাখা ভালো যে, ফারাক্কার কারণে ফি বছর বাংলাদেশকে ৪ বিলিয়ান মার্কিন ডলারের ক্ষতি সহ্য করতে হচ্ছে।
এর পরেও আমাদের বিকার নেই।
অধুনা ভারত , বরাক নদীর টিপাই মুখে আরেকটি বাঁধ দিতে যাচ্ছে। যার ফলে আমাদের বৃত্তর সিলেট অঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা এবং তৎসংলগ্ন হাওড় বাওড় খাল বিল হতভাগ্যা পদ্মা নদীর ভাগ্য বরণ করবে। সবচেয়ে বিপদজনক খবর হলো আমাদের মেঘনা নদী তখন বাস্তবিকেই ধীরে বইবে। সামাজিক-অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগতভাবে এর পরিনাম যে কি ভয়াবহ হতে পারে, সেটাকে একমাত্র দুঃস্বপ্নের আরেক নাম বলা যায়।
এই বাঁধ তৈরির কি অজুহাত হিসেবে বলা হচ্ছে, আসামের বন্যা নিয়ন্ত্রন এবং জল বিদ্যুত উৎপাদন করে, উঃ পুর্ব ভারতের মানুষদের প্রভুত কল্যাণে এই বাধ নির্মিত হবে। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, আন্তর্জাতিক পানি আইন অনুসারে, ভাটির দেশের পুর্ণ সম্মতি ছাড়া এবং পরিবেশের ক্ষতি করে কোন দেশই একতরফাভাবে নদী শাসন করতে পারবে না। তবে পরিতাপের বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক আইন মানতে কোন দেশ বাধ্য নয়। এখানে জোর যার মুল্লুক তার হিসেবেই এই আইন প্রযোজ্য। ভারতের তুলনায় আমাদের অর্থনৈতিক-সামরিক বা খুটির জোর অল্প বলে, আমাদের মার খেয়ে যেতেই হচ্ছে।
উঃ পুর্ব ভারতের অধিবাসিদের নাকের সামনে টিপাইমুখি বাধের মুলো ঝুলিয়ে রাখা হলেও, তারা পঃ বঙ্গের অধিবাসিদের মত ভোলেননি। তাই এই বাধের বিরুদ্ধে সেখানে তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে। মনিপুরের ২০টি প্রভাবশালি সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠন, "একশন কমিটি এগেইনস্ট টিপাইমুখ ড্যাম" এর ব্যানারে রাজপথে নেমেছেন। কারণ এতে উঃপুর্ব ভারতের লাভের চেয়ে লোকসানটাই বেশি হবে। আর প্রভুত ক্ষতি হবে পরিবেশের। বিস্তারিত লিখছি না, তবে মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুতত্ত্ববিজ্ঞানের অধ্যাপক সইবাম ইবোতম্বির মন্তব্যে প্রণিধানযোগ্য
"Tipaimukh Dam Is A Geo-tectonic Blunder Of International Dimensions"
বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন
Click This Link
আর একশন কমিটি এগেইনস্ট টিপাইমুখ ড্যাম এর আন্দোলন নিয়ে পড়ুন এখানেঃ
Click This Link
ফিরে আসছি পুরানো প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের স্বার্থের বিপরীতে যদি খালেদা বা হাসিনাকে দাড় করানো যায় তবে জনসমর্থনের পাল্লাটা খালেদা-হাসিনার দিকেই বেশি ঝুকবে। তা না হলে, খালেদা হাসিনার কিছু হলে যদি আমরা মারমুখি প্রতিবাদি হতে দ্বিধা না করি, তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য এত বড় প্রত্যক্ষ হুমকি মোকাবেলায় আমরা এমন নিস্পৃহ কেন?
না, আমি মোটেও বলছি না, যে ফারাক্কা বা টিপাইমুখ বাধের প্রতিবাদে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধাংদেহি মনোভাব দেখাতে হবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের রহস্যজনক নিরবতাকেও তো সমর্থন করা যায় না। আর পররাস্ট্রমন্ত্রি কিংবা পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রির আচার আচরনে মোটেও বুঝবার উপায় নেই, যে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের কেউ।
তাহলে আমাদের করনীয় কি? আন্তর্জাতিক আইন মানতে ভারত বাধ্য নয়। ওদিকে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির চোখের মণিও ভারত। তাই এব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ্যে বিশ্ব মোড়লের সমর্থন পাওয়াও সম্ভব নয়। যুদ্ধ করার মত শক্তি আমাদের নেই। তাহলে কি বসে বসে দেশের এই সর্বনাশ চেয়ে চেয়ে দেখাটাই আমাদের নিয়তি?
আমি লক্ষ্য করেছি, নবীণ প্রবীণ মিলিয়ে এই ব্লগে প্রচুর মেধাবি এবং ধীমান ব্লগার আছেন। তাদেরকে অনুরোধ করবো, এই সর্বনাশ রোধে আমাদের করনীয় নিয়ে কিছু কথা বলতে। কেননা এক ফারাক্কার কারণে আমাদের যা সর্বনাশ হয়েছে, তার কুফল কিন্ত আস্তিক-নাস্তিক, কিংবা আঃলিগ বি এন পি, কেউকেই বাছবিচার করেনি। টিপাইমুখে বাধ নির্মিত হলে, সেই কুফল আপামর জনগণকেই ভুগতে হবে।
এব্যাপারে আমার মত হলো, আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলা। এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদি আন্দোলনে, এই ইস্যুটি সম্পৃক্ত করা। সেই সাথে পঃ বংগ এবং উঃ পুর্ব ভারতের সাধারণ মানুষকে এই আন্দোলনে যুক্ত করা। এর বাইরে কোন ফলপ্রসু উপায়, আমার এই সাধারণ বুদ্ধিতে কুলাচ্ছে না। ধন্যবাদ।