somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন নকল প্রক্রিয়ায় ইন্তেকাল করি

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাউকে ইন্তেকাল করার ডাক দেওয়া অন্যায়, অবৈধ! কারো আহবানে উত্তেজিত হয়ে কেউ ইন্তেকাল করলে ফৌজদারি আইনে সে অপরাধী হবে, তাকে গ্রেফতার করা হবে! তারপরও আমি ইন্তেকালের আহবান করেছি অন্য কারণে। কেননা ইন্তেকাল শব্দটির সাথে বাংলাদেশের ছেলে-বুড়ো সবাই একযোগে পরিচিত। প্রতিদিন পত্রিকাতে ইন্তেকালের খবর পাওয়া যায়। মুসলমান মারা গেলে ঐ ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন বলে ঘোষণা করা হয়। সেভাবে ইন্তেকালের বিপরীতে মৃত্যু বরণ, মারা যাওয়া, দেহত্যাগ, প্রাণত্যাগ, প্রাণ-বায়ুত্যাগ, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ, ইহলোক ত্যাগ, পরলোকগত ইত্যাদি বুঝায়। 'মোহসীন আলী আর নেই' বলে টিভি পর্দায় লেখা দেখে সবাই বুঝেছে, মাননীয় মন্ত্রী মুহসীন আলী ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যু সংবাদ প্রচারে এটা একটা নতুন সংযোজন! হাল আমলের কিছু মানুষ ইন্তেকাল শব্দটিকে পরিহার করে চলতে ভালবাসে! হয়ত সেই কারণে নতুন নতুন বাক্যের সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও আমরা অনেকেই জানিনা যে, পুরো জাতিই নিজের অজান্তে রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টায় ইন্তেকাল নিয়ে ব্যস্ত। বাংলাদেশের সর্বত্র এখন ইন্তেকালের জয় জয়কার।

ইন্তেকাল শব্দটি মূলত আরবি। এই শব্দের প্রকৃত অর্থ হল, অর্থকড়ি স্থানান্তর, পরিবহন। মোগল শাসনামলে এই শব্দটি দেওয়ানী আদালত ও রাজস্ব বিভাগের অন্যতম পরিচিত শব্দ হয়ে উঠে। ব্রিটিশ আমলেও সরকার সেই পরিভাষা পরিবর্তন করেনি। মানুষ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে ভূমির মালিকানা পরিবর্তন, সম্পত্তির হাত বদল, রাজস্ব খাতের এক অর্থকে অন্যত্র স্থানান্তর করার পদ্ধতিকে ইন্তেকালি বলে। গাড়ীতে করে মানুষ আনা নেওয়ার পদ্ধতিকেও আরবীতে ইন্তেকাল বলা হয়। আজকের দিনে জমির নাম জারি করা হয়, সে নাম জারির পদ্ধতিকে দেওয়ানি আদালতের ভাষায় ইন্তেকালি করানো বলা হয়। যাদের কাছে এখনও পুরানা দিনের দলিল-দস্তাবেজ আছে সেখানে ইন্তেকাল শব্দের বহু ব্যবহার দেখে থাকবেন।

আবার বাংলা ভাষায় যে নকল শব্দটি ব্যবহার হয়, সেটিও ইন্তেকালের প্রতিশব্দ অর্থাৎ ইন্তেকাল শব্দটি তৈরি হয়েছে আরবি ‘নকল’ শব্দ থেকেই। বর্তমান বাংলাদেশে নকল ছাড়া তো ও শিক্ষা ব্যবস্থাই অচল। পণ্যে নকল, শিক্ষায় নকল, উৎপাদনে নকল, মানুষে নকল, ব্যবসায় নকল, উন্নয়নে নকল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের কোন জিনিষটাতে নকলের ব্যবহার নাই?

মূলত নকল শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল রাজস্ব বিভাগ থেকে। কারো মূল দলীল হারিয়ে গেলে কিংবা পুড়ে গেলে মহা সমস্যায় পড়তে হত। তখন তো আর ফটোকপি মেশিন ছিলনা। তাই রাজস্ব বিভাগে দরখাস্ত করলে, সরকারী হেফাজত খানায় রক্ষিত অন্য মূল দলীল দেখে, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি আসল জিনিষটির বর্ণনা ও তথ্য হুবহু আরকে টি দস্তখত ও সিলের মাধ্যমে কাগজে লিখে দিতেন। দস্তখত ও সিল করা সেই দলীল কেই বলত ‘নকল’ কপি। সেখান থেকে আসল আর নকলের ব্যবহার শুরু হয়। শুধু তাই না, সরকারের রাজস্ব খাতে সরকারি বেতন ভুক্ত যে ব্যক্তিরা এই কাজ করত তাদের পেশার নামই ছিল ‘নকল’ পেশা। এসব কর্মকর্তারা আদালতে বসে ‘নকল’ করেন বলে অহংকারের সাথে বলে বেড়াত। সুতরাং বুঝা গেল, নকল হল সেই দলিল, যার মাধ্যমে আসল জিনিষের রূপ, পরিমাণ, গুন, স্থান ইত্যাদি প্রকাশ পায়। কিন্তু বর্তমানে নকলের সেই ঐতিহাসিক সম্মান-মর্যাদা নাই। বরং নকলে নকলে পুরো জাতি আজ বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত ও দিশেহারা।

বলছিলাম ইন্তেকালের কথা। যে অর্থে রাজস্ব মন্ত্রণালয়ে ইন্তেকাল শব্দের ব্যবহার, সে অর্থেই মানুষ মারা গেলে যে ইন্তেকাল বলে থাকে তা যথার্থ। কেননা মানুষ প্রকৃতই মরে না। সে জীবিত থাকে কিন্তু তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

মানুষ দুনিয়াতে আসার আগেও জীবিত ছিল,

আসার পরেও জীবিত থাকে

এবং মরার পরেও জীবন অব্যাহত থাকে

উপরোক্ত প্রতিটি ধাপে মানুষের একটি পর্যায়ের পরিবর্তন ঘটে, এই পরিবর্তনের নামই আরবি ভাষায় ইন্তেকাল তথা অবস্থার পরিবর্তন কিংবা স্থানান্তর।

কোন আবদুল্লাহ যখন মারা যায়, তখন ঘোষণা হয় মরহুম আবদুল্লা ইন্তেকাল করেছেন! অথচ তখনও আবদুল্লাহর মৃত দেহ সবার সামনে পড়ে আছে কিন্তু সেই দেহে আবদুল্লাহর প্রাণ নাই। সুতরাং বুঝা গেল সেই প্রাণের নামই আবদুল্লাহ, দেহের নাম আবদুল্লাহ নয়।

প্রাণ বাহন ছাড়া চলতে পারেনা, সেজন্য দুনিয়াতে আসার সময় আবদুল্লাহর সেই প্রাণকে দেহ নামক একটি বাহন দিয়ে চলতে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহর প্রাণ বহনকারী এই বাহনের মালিক আবদুল্লাহ নয়। সেজন্য দেহ হত্যা তথা আত্মহত্যা করার অনুমতি আল্লাহ কাউকে দেন নাই। যেভাবে ভাড়া করা গাড়ি কিংবা ভাড়ার বাড়ী ভাড়াটিয়া আগুন জ্বালিয়ে পুড়াতে পারেন না। তাকে গ্রেফতার করা হয়। শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়।

দেহ দুনিয়ার মাটি দিয়েই তৈরি, মাটির বিভিন্ন খনিজ উপাদান দিয়েই দেহ কোষের সৃষ্টি। সে জন্য দেহকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষকে মাটির উপর নির্ভরশীল হতে হয়। মানুষের প্রবৃত্তি ও দেহ চোখ, মুখ, জিহ্বা, নাক, কান মাটি থেকে সৃষ্ট জিনিষের প্রতি সর্বদা আকৃষ্ট থাকে। অবশেষে মানুষের ইন্তেকালের পরে সেই দেহটাকে মাটির কাছে সোপর্দ করে যেতে হয়। প্রাণটা প্রাণের জায়গায় জীবন্ত অবস্থায় ফিরে যায়, যেভাবে সে জীবন্ত অবস্থায় দেহে ফিরে এসেছিল।

ইসলামে রুহ তথা প্রাণের এই আসা যাওয়ার পর্যায়কে ইন্তেকাল বলে। মানুষ কখনও মরে না, তাকে তার হিসাবের মুখোমুখি হতেই হবে এই দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্তা আছে বলে ইসলামে মৃত্যু না বলে ইন্তেকাল শব্দের প্রয়োগ করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×