পৃথিবীতে যা-ই মহামূল্যবান, দুর্মূল্য কিংবা বিরল তাকেই লোকে সোনার হরিণ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। সে হিসেবে মানব চারিত্রিক গুণাবলির প্রধানতম একটি গুণ ‘সততা’কেও অনেকেই এখন সোনার হরিণের কাতারে ফেলতে শুরু করেছেন। প্রশ্ন হলো, কেন? সততা মহামূল্যবান এটা পুরোপুরি সত্যি। মানুষের শরীরে সৌন্দর্য রচনাকারী অলংকারগুলো যেমন প্রত্যেকেরকাছেই মহামূল্যবান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে, তেমনি চরিত্রের প্রধানতম অলংকার সততাও তার চেয়ে বেশি বৈ কম মহামূল্যবান নয় কখনোই। কিন্তু ‘দুর্মূল্য’ কিংবা ‘বিরল’- এ কথা বলা হচ্ছে কেন? তবে কি সততা আজ এমন এক জায়গায়পৌঁছে গেছে যে ইচ্ছে করলেই এর দর্শন লাভ কিংবা সহজেই একে করায়ত্ত করা সম্ভব হচ্ছেনা কারও পক্ষে?
সততাকে হাল-জমানায় এই যে বিলুপ্তপ্রায় বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে- এর পেছনে কিন্তু হাজারটা কারণ আছে। মুরব্বিরা এখন কনিষ্ঠ কাউকে দেখলেই প্রার্থনা করেন, ‘সৎ হও বাছা, ভালো মানুষ হও’। কথা হচ্ছে সৎ কি হওয়া লাগে? আচ্ছা, মানুষ কি কেউ কখনো অসৎহয়ে জন্ম নেয়? না, অসৎ হয়ে কেউ জন্ম নেয় না। বরং নিষ্পাপ শিশু তার বয়স বৃদ্ধির সময়ে পরিচিত-অপরিচিতজনদের সঙ্গে স্বাভাবিক মেলামেশা এবং সামাজিকতার হাজার নিয়মে যখন বাধা পড়তে থাকে, তখনই তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হয়। এই নির্দিষ্ট লক্ষ্য সহজে জয় করা সম্ভব না। হাজারও প্রাপ্তি দিয়ে জীবন সাজানোর জন্য দুনিয়ার কঠিন বাস্তবতার কাছে নিজেকে আ্তসমর্পণ করে এসব মানুষের মধ্যে থেকেই কেউ কেউ লোভ-লালসা-মোহ ইত্যাদির কারণে প্রবৃত্তির স্বাভাবিকসততার পথ ছেড়ে অসততার দিকে সহজেই পা বাড়িয়ে দেয়। নিজেও নিজেকে পরিণত করে অসৎ মানুষ হিসেবে।
আমরা কি অসৎ হয়ে যাচ্ছি?
প্রয়োজনের সময় মোবাইলে একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, তুই কোথায়? কিন্তু লোকটি হয়তো আপনাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে। তাই সে তার বাড়িতে অবস্থান করলেও অনায়াসে জানিয়ে দিল, দোস্ত আমি তো এখন দূরের অমুক জায়গায়। আগামী সপ্তাহে আসব। এটি যে এক ধরনের দারুণ অসততা সে হয়তো স্বীকারই করবে না!
ফেসবুকে আপনার দশ-বারোটা অ্যাকাউন্ট। হয়তো একটির যাবতীয় তথ্য-পরিচয় সত্য, বাকিগুলো ভুয়া। কিন্তু এসব দিয়েই মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে যাচ্ছেন। ঠিক ঠিকই নিজের স্বার্থ আপনি হয়তো হাসিল করে নিচ্ছেন। কিন্তু একবারও কি আপনার মাথায় এসেছে যে অসততার দিক দিয়ে এটিও কম মারা্তক নয়? আসলে চাই বা না চাই, খুব অল্প প্রয়োজনেও আমরা যে অসততার বিরাট বাজার সৃষ্টি করে দিচ্ছি, এ কথা কেউ একটিবারও ভাবছি না। আর এসব ক্ষুদ্র অসততার হাজারটা অভ্যাসই বৃহৎ অসততার পথে আমাদের চরিত্রকে খুব সহজেই চালিত করে নিয়ে যাচ্ছে।
সৎ থাকা কি কঠিন?
আপনার জীবনযাপন এবং চাহিদার মাপকাঠিই নির্ধারণ করে দেয় আপনি কতটুকু সৎ থাকতে পারবেনকি আদৌ পারবেন না? তবে এটি মনে রাখবেন, সততা হলো মনীষীদের গুণ। আর নিজের সত্তার ভেতর থেকে অসততার শেকড়গুলো উপড়ে ফেলে আপনি নিজেও খুব সহজেই এই কাতারে পৌঁছে যেতে পারেন। সততার মূল্য নিরূপণ করতে গিয়ে কেউ কেউ বলেন, সততা নাকি যাবতীয় সম্পদের চেয়েও অধিক মূল্যবান! তাই আপনার যদি সততার শক্তি থাকে, পার্থিব সম্পদ না থাকলেও দুঃখ পাবেন না। কারণ, আপনি এমন এক সম্পদের মালিক যে সম্পদটি অনেকেরই নেই।
> সংকলিত ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৫