কবি নজরুলের জন্ম বার্ষিকী চলে গেল। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার অবহেলিত নজরুলকে কিছুটা হলেও আমাদের মিডিয়া জগত স্মরণ করেছে। এর কৃতিত্বের দাবিদার বর্তমান সরকার। তারা রাষ্ট্রীয় ভাবে দিনটি উদযাপন করাতে রবীন্দ্র পুজারী মিডিয়া জগত কিছুটা হলেও স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া আমাদের জাতীয় কবি দুখুমিয়াকে কিছুটা হলেও কাভারেজ দিয়েছে। সরকারকে এই জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। রাজনৈতিক সরকারের হর্তাকর্তারা নিজেদের আখের গোছাতে এত ব্যস্ত থাকেন, এসব কবি সাহিত্যিকসহ জ্ঞানীগুণীজনকে স্মরণ করে নষ্ট করার মত সময় তাদের নেই।
নজরুলের এমন একসময় বাংলা সাহিত্যজগতে আবির্ভাব হয়েছিলো, যখন রবীন্দ্রনাথ নক্ষত্রের মত দ্যুতি ছড়াচ্ছিলেন। এই সময় একজন মুসলিম হওয়া সত্বেও নিজের অসাধারণ প্রতিভাগুণে সাহিত্যজগতে সম্পুর্ণ ভিন্ন একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরী করতে পেরেছিলেন। সারাটা জীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষদের মুক্তির জন্য। তাদেরকে নিয়ে তিনি এত ব্যস্ত ছিলেন, নিজের জীবনটা গুছানো সময় পাননি, সারা জীবন লড়াই করেছেন শোষকদের বিরুদ্দে। মানুষের মুক্তি সংগ্রাম করতে গিয়ে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার চেষ্টাও করেননি কখনও। এজন্য কলকাতার এলিট শ্রেণী নজরুলকে গরীবের কবি বলে উপহাস করত। নজরুলও তার জবাব দিয়েছিলেন কবিতার মাধ্যমে--
"....অমর কাব্য তোমরা লিখিও যাহার আছো সুখে।"
সত্যিই সারাটা জীবন তিনি অবহেলিত ছিলেন, নিদারুন অর্থ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে জীবনের শেষ দিন গুলোতে। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময়ে তিনি ছিলেন বাক্শক্তিহীন, সাহিত্য রচনা করতে পেরেছেন জীবনের অতি অল্পসময়। এই অল্প সময়েও বাংলা সাহিত্য জগতকে যা দিয়ে গেছেন, তার ঋণ বাংলাভাষীরা শোধ করতে পারবেনা কোন দিন। পশ্চিম বংগের টিভি চ্যানেল, পত্রপত্রিকা শুধু নজরুলকে নয়, রবীন্দ্রনাথকেও ভুলে গেছে। তাদের মিডিয়া জগত হিন্দী আগ্রাসনের কবলে পড়ে হারিয়ে ফেলছে নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে। তারা ভুলে গেলেও বাংলাদেশের ১৫ কোটি মানুষ নজরুলকে মনে রাখবে তাঁর অসাধারণ সাহিত্য কর্মের জন্য।
দুখুমিয়া, তোমাকে হয়ত অনেকে ভুলে গেছে। কিন্তু আমরা তোমাকে ভুলিনি, লক্ষ কোটি নজরুল ভক্ত ও গবেষকদের মনে তুমি থাকবে চিরদিন।
শেষ কথা হলো, যারা শুধু রবী বাবুকে নিয়ে মেতে থাকেন, তারা স্বীকার করুন আর নাই করুন, নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ আমাদের সাহিত্যজগতে স্ব স্ব স্থানে নিজস্ব স্বকীয়তায় চির দীপ্তিমান উজ্জ্বল তারকা, তোমাদেরকে আমরা মনে রেখেছি, রাখব যতদিন এই ভাষা থাকবে, দেশ থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭