রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে ধ্রুবতারা। তার সাহিত্য নিয়ে বিতর্ক করাটা অর্থহীন। যদিও অনেকে তার সাহিত্যে তিনি সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে উঠতে পারেননি বলে দু:খ প্রকাশ করেন। আমাদের সমাজে আবার রবী বাবুর অতি ভক্তরা পারলে তাকে দেবতার চেয়েও উঁচু আসনে বসিয়ে দিতে চান, যা দেখলে হয়ত তিনি নিজেও লজ্জা পেতেন। এইসব রবি বাবুর দাসেরা বাংগালী সংস্কৃতির নাম দিয়ে যাবতীয় হিন্দু সংস্কৃতিকে আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিতি করতে অন্তহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যিক হিসাবে অনেক উঁচু মাপের হলেও মানুষ হিসাবে তিনি একজন গোঁড়া উঁচু বর্ণের হিন্দুদের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। যখন বংগ ভংগের কথা আসলো, তখন যেসব উগ্র হিন্দুত্ববাদিরা তাদের আধিপত্যের অবসান হবে বলে বংগ ভংগের বিরোধিতা করেছিলেন রবি বাবু তাদের মধ্যে অন্যতম। তাদের দাবী ছিলো দুই বংগের অংগচ্ছেদ করা যাবেনা, তাহলে পূর্ববংগের পশ্চাতপদ জনগোষ্ঠির উপর হিন্দুদের জমিদারিত্বের অবসান ঘটবে, মুসলমানরা তাদের হারানো অধিকার ফিরে পাবে, এটা কিছুতেই হতে দেয়া যায়না। আমাদের দেশে এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে যে সব জমিদার বাড়ি বিদ্যমান তাদের মধ্যে মুসলমান জমিদারের দেখা পাওয়া সাপের পাঁচ পা দেখার মত বিরল; যদিও ইংরেজ আমলেও এই জনপদে মুসলমানরা ছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইংরেজ শাসনের শেষের দিকে মুসলমান নেতাদের দাবীর মুখে যখন বৃটিশরা পূর্ববংগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা করলো, তখন মহান হিন্দু বাবুরা হায় হায় করে উঠলেন, তাদের সব শেষ হয়ে গেলো বলে। কুলি মজুর মুসলমানরা শিক্ষিত হবে- এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি তারা। এই কারণে যে সব উগ্র হিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন, তাদের অন্যতম মদদ দাতা ছিলেন আমাদের মহান সাহিত্যক রবি বাবু। বংগ ভাংগা প্রতিরোধ করার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি গান রচনা করেছিলেন। তার মধ্যে একটি হলো আমাদের জাতীয় সংগীত, আরেকটি হলো:
বাংলার মাটি, বাংলার জল,
.............ধ্ণ্য ধ্ণ্য হোক.....।
আজকাল রবি বাবুর কিছু দাস নতুন ইতিহাস রচনা করার চেষ্টা করছে প্রভুর বড়ত্ব জাহির করার জন্য। তাদের বলি, মনটাকে আবর্জনামুক্ত করুন, আর কত মিথ্যার বেশাতি ছড়াবেন। অবশ্য মিথ্যার মধ্যে যাদের বসবাস, তাদের কাছে মিথ্যাই সত্য। আমার প্রশ্ন হলো যে সাহিত্য রচিত হয়েছে পূর্ব বাংলার জন্ম ঠেকানোর জন্য, কালের নির্মম পরিহাসে সেটিই আজ আমাদের জাতীয় সংগীত। এ ব্যাপারে আবার কথা বলতে গেলে তকমা লেগে যাবে মৌলবাদি, স্বাধীনতাবিরোধী বলে।
জাতীয় সংগীত বদল- নিয়ে এখন আলোচনা করা মানে মৌচাকে ঢিল ছোঁড়া। শুনেছি বংগবন্ধু জাতীয় সংগীত-
'আমার সোনার বাংলা..."
পরিবর্তন করে
"ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা---"
এই মনমুগ্ধকর সংগীতটিকে জাতীয় সংগীত করতে চেয়েছিলেন। তার আগেই তিনি নিহত হন। তিনি পরিবর্তন করে গেলে হয়ত আজকে এত বিতর্ক হতোনা। তবে এখন এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক না করাই উত্তম।
ড: মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায়- 'মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি - এই তিনটি পরম শ্রদ্ধার বস্তু' - কথাটি সবার মনে রাখা প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৭